চলমান কাশ্মীর সংকট সমাধানে ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে চায় পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ আলোচনা শুরুর পরিবেশ সৃষ্টি করতে নয়াদিল্লিকে আহ্বান জানিয়েছেন।

বুধবার পাকিস্তান অধিকৃত আজাদ কাশ্মীরের বিধানসভার বিশেষ সেশনে ভাষণ দিয়েছেন শেহবাজ। সেখানে তিনি বলেন, আমরা কাশ্মীরসহ অন্যান্য যাবতীয় সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চাই। ভারতের উচিত ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের চিন্তা-ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসা এবং জাতিসংঘে প্রদান করা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সংলাপের জন্য এগিয়ে আসা। সূত্র: এমএসএন

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভারতের আধা সামরিক বাহিনী সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে আত্মঘাতী বোমা হামলা ঘটে। এতে নিহত হন অন্তত ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান। হামলার মূল হোতা ছিল পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই মোহাম্মদ।

ওই ঘটনার ৬ মাস পর ৫ আগস্ট পার্লামেন্টে ভোটের ভিত্তিতে সংবিধান থেকে ৩৭০ নম্বর ধারা বিলোপ করে নয়াদিল্লি। সে ধারাটিতে জম্মু এবং কাশ্মীরকে ‘স্বায়ত্বশাসিত রাজ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। সাংবিধানিক ধারা বিলোপ করে জম্মু-কাশ্মিরকে সরাসরি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়।

এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনেন। এখনও সেই অবস্থাই চলছে।

বুধবারের বক্তব্যে শেহবাজ বলেন, দক্ষিণ এশিয়া এবং উপমহাদেশের সার্বিক স্থিতিশীলতার স্বার্থেই পাকিস্তান ও ভারতের সংলাপ শুরু করা উচিত। এ প্রসঙ্গে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর ঐতিহাসকি সফরকে স্মরণ করেন তিনি। ১৯৯৯ সালের সেই সফরে পাকিস্তানে এসে ‘লাহোর ঘোষণা ১৯৯৯’ স্বাক্ষর করেছিলেন বাজপেয়ী।

গত কয়েক বছর ধরে সামরিক খাতকে শক্তিশালী করছে ভারত; বুধবারের বক্তব্যে তারও সমালোচনা করেছেন শেহবাজ। সেই সঙ্গে কাশ্মীরের জনগণের প্রতি পাকিস্তানের আদর্শগত, কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, ভারত নিজেদের সামরিক খাতকে সমৃদ্ধ করছে; কিন্তু এটি উপমহাদেশের আঞ্চলিক শান্তি এবং স্থিতিশীলতা আনতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। উন্নয়নের জন্য শান্তি ব্যতীত আর কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, কাশ্মীর সংকট সমাধানের একমাত্র পথহলো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজোল্যুশন মেনে সেখানকার জনগণকে স্বাধিকার প্রদান করা। কাশ্মীরের জনগণের প্রতি আমাদের আদর্শগত, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন চিরদিন অব্যাহত থাকবে।

 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

আমেরিকার মোড়লগিরির ট্রাম্প আরও খোলামেলা করে দিলেন

ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটা দিকের জন্য আমরা তাঁকে ধন্যবাদ দিতে পারি। তিনি একেবারে পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে আমেরিকা কখনোই ‘নিয়মভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা’ টিকিয়ে রাখার উপযুক্ত পুলিশ ছিল না।

আমেরিকাকে বরং এক গ্যাংস্টার সাম্রাজ্যের প্রধান বলাই ভালো। সারা বিশ্বে তাদের আট শতাধিক সামরিক ঘাঁটি আছে। স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে তারা ‘বিশ্বের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ’ চায়।

আপনি যদি আমেরিকাকে মেনে চলেন, তাহলে ঠিক আছে। আর যদি তা না করেন, তাহলে আপনাকে সরিয়ে দেওয়া হবে। গত শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তাঁকে প্রকাশ্যে অপমান করা হয়েছে হোয়াইট হাউসে। সাংবাদিকদের সামনেই।

অনেকে ভাবছেন, এটা তো খুব খারাপ হলো। কিন্তু এর চেয়েও খারাপ তো হয়ে গেছে আগেই। আর তা হলো ইউক্রেন ও রাশিয়ার লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু। এই যুদ্ধ একদমই দরকার ছিল না। আমেরিকাই এই যুদ্ধ তৈরি করেছে গত বিশ বছর ধরে ন্যাটোর মাধ্যমে। এই যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল একটাই—বিশ্বকে দেখানো, আমেরিকাই বস। ঠিক যেমন তারা ইরাকে করেছিল।

হেনরি কিসিঞ্জার একবার বলেছিলেন, আমেরিকার শত্রু হওয়া বিপজ্জনক, কিন্তু আমেরিকার বন্ধু হওয়া আরও ভয়ংকর।

জেলেনস্কি সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। গ্যাংস্টারদের সাম্রাজ্য এমনই হয়। আপনাকে তারা কাজ করাবে। এরপর যখন দরকার ফুরাবে, ছুড়ে ফেলে দেবে। ঠিক যেমন হলিউড সিনেমায় দেখা যায়।

জো বাইডেনের আমলে জেলেনস্কিকে আমেরিকা কাজে লাগিয়েছে। রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনে আমেরিকার একটা কাজের লোক দরকার ছিল। এখন তার পরিণতি কী হলো, সবাই দেখছে।

ন্যাটো বারবার ইউক্রেনকে নিজেদের আওতায় নেওয়ার চেষ্টা করেছে। রাশিয়া বারবার সতর্ক করেছে যে এটি তার অস্তিত্বের জন্য হুমকি হতে পারে। রাশিয়া কখনোই চাইবে না আমেরিকা তার সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র বসাক। ঠিক যেমন ১৯৬০-এর দশকে কিউবার সীমান্তে সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্র বসানোকে আমেরিকা একেবারে বরদাশত করেনি।

ইউক্রেনে শান্তিচুক্তি হলে আমেরিকা রাশিয়াকে নিজের পক্ষে এনে নতুন এক নিরাপত্তা–কাঠামো তৈরি করবে, যা চীনের একক প্রভাবকে আরও দুর্বল করে দেবে।

এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের জনগণ নিজেদের শান্তির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করেছিল ভলোদিমির জেলেনস্কিকে। তাঁর মূল প্রতিশ্রুতি ছিল দেশে গৃহযুদ্ধ বন্ধ করা। এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। পশ্চিম ইউক্রেনের রাশিয়াবিরোধী ‘জাতীয়তাবাদী’ গোষ্ঠী এবং পূর্ব ইউক্রেনের রুশভাষী জনগণের মধ্যে বিরোধের মধ্য দিয়ে এর সৃষ্টি। কিন্তু শিগগিরই জেলেনস্কি তাঁর সেই শান্তির প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প জেলেনস্কিকে ‘একজন স্বৈরশাসক’ বলেছিলেন। এ অভিযোগ কিছুটা সত্য হতেও পারে। কারণ, আমেরিকা চেয়েছিল, জেলেনস্কি সেই ধরনের নেতা হোক যে তাদের প্রয়োজনে কাজ করবে। যদিও অনেক ইউক্রেনীয় চেয়েছিল অন্য কিছু।

এখন বাইডেন চলে গেছেন। নতুন প্রশাসন এসেছে। নতুন মাফিয়া ‘ডন’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে জেলেনস্কি দিয়ে কাজ হচ্ছে না। কিন্তু এর পেছনে খরচ হচ্ছে অনেক বেশি। ওদিকে রাশিয়া কোনোভাবে দুর্বল হয়নি। বরং শক্তিশালী হয়েছে। এখন নতুন কৌশল দরকার।

জেলেনস্কি মনে করছিলেন যে তিনি আমেরিকার প্রিয় ‘গুন্ডা’। আর তখনই তিনি হোয়াইট হাউসে গিয়ে এক কঠিন পাঠ শিখলেন—মাফিয়া শিষ্টাচারের শিক্ষা। জানলেন যে তিনি ঠিকমতো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারেন না।

ট্রাম্প এখন ইউক্রেনে শান্তিচুক্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন। শান্তি আসুক আর না সুক, আসল কথা হলো এই চুক্তির পেছনে আছে মূলত অর্থনৈতিক লাভের হিসাব। ট্রাম্পের মতে, রাশিয়া এই যুদ্ধে জয়ী হয়েছে। অবশ্য পশ্চিম বিশ্ব তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগিয়ে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে চাইলে অন্য কথা। বাস্তবে, এই যুদ্ধের পেছনে যে শক্তি কাজ করছে, তা হলো টাকা।

এখন ট্রাম্পের চাপে একটা শান্তিচুক্তি হয়তো হবে। সেই চুক্তির ভিত্তি হবে ইউক্রেনের সম্পদ—বিরল খনিজ, কৃষিজমি এবং অন্যান্য খাত। আর এই সবই ব্যবহৃত হবে একটি শক্তিশালী দেশের প্রভাব প্রতিষ্ঠার জন্য। জেলেনস্কি এখন এটা বুঝতে পেরেছেন। বুঝতে পেরেছেন যে তিনি এবং ইউক্রেনের জনগণ এক প্রতারণার শিকার হয়েছেন। মাফিয়া সংগঠনের সঙ্গে হাত মেলালে এ রকমই হয়।

ট্রাম্পের পূর্বসূরিরা যেখানে ইউক্রেন এবং গাজা সমস্যা সমাধানকে বিশ্বশান্তি বা এরকম সব গালভরা নামে ডাকত। ট্রাম্প সেখানে সরাসরি বলেছিলেন যে এই অঞ্চলগুলো শুধু আমেরিকার ভূরাজনৈতিক কৌশলের অংশ। তিনি কোনো রকম আড়াল না রেখেই পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে ইউক্রেন এবং গাজা তার দেশের বৈশ্বিক স্বার্থের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ।

হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প একথা আবার বলেছেন, ‘আমরা ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ ব্যবহার করব। এসব ব্যবহৃত হবে আমাদের বিভিন্ন কাজে, যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অস্ত্র ব্যবস্থাপনা ও সামরিক ক্ষেত্রে। এগুলো আমাদের দরকার।’

এই বক্তব্যে ট্রাম্পের লক্ষ্য পরিষ্কার—যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধ শেষ করা এবং রাশিয়ার প্রবৃদ্ধি ঠেকানো। রাশিয়া ইউক্রেনের যত বেশি অঞ্চল দখল করবে, আমেরিকার ভাগে তত কম জায়গা থাকবে খনিজ সম্পদ লুট করার জন্য। এ জন্যই ট্রাম্প যুদ্ধ শেষ করতে এমন মরিয়া।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকা ও ন্যাটোর এই যুদ্ধ একই সঙ্গে চীনের সঙ্গে খনিজ সম্পদ নিয়ে লড়াইয়ের গভীর কৌশলের অংশ। গত বছর মার্কিন কংগ্রেসের একটি কমিটিতে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য ‘সামরিক খনিজের প্রাধান্য’ নিয়ে আলোচনা করেছিল। আমেরিকার মূল লক্ষ্য ছিল চীনের প্রভাব রুখে দেওয়া এবং ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়াকে আরও একবার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনা।

এখানে ট্রাম্পের লক্ষ্য হচ্ছে ইউক্রেনের ভূখণ্ড কাজে লাগিয়ে পশ্চিমে একটি নতুন নিরাপত্তা–কাঠামো তৈরি করা। তা করে রাশিয়াকে আমেরিকার পক্ষে আনা যাবে। আবার চীনের একচেটিয়া প্রভাবকেও চাপের মধ্যে ফেলা যাবে। রাশিয়া ও চীন একত্র হয়ে নতুন এক শক্তিশালী জোট তৈরি করেছে। এই জোটের নাম ব্রিকস। এতে আছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

ব্রিকস আমেরিকার বৈশ্বিক আধিপত্যের বিপরীতে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়তে চাচ্ছে। ইউক্রেনে শান্তিচুক্তি হলে আমেরিকা রাশিয়াকে নিজের পক্ষে এনে নতুন এক নিরাপত্তা–কাঠামো তৈরি করবে, যা চীনের একক প্রভাবকে আরও দুর্বল করে দেবে।

ট্রাম্পের আচরণ অশালীন হতে পারে। কিন্তু তিনি যে সাম্রাজ্য পরিচালনা করছেন, তা আগেও দুনিয়াজুড়ে ক্ষমতার লড়াই চালিয়েছে। ট্রাম্পও সেই কাজ করছেন। তবে আরও খোলামেলাভাবে।

জোনাথন কুক লেখক, সাংবাদিক

মিডিল ইস্ট আই থেকে নেওয়া ইংরেজির সংক্ষেপিত অনুবাদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উইলিয়ামসন মানেই কি ওয়ানডে ফাইনালে ব্যর্থতা
  • সিকদার গ্রুপের ৪২টি বিও হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ
  • মাগুরার ঘটনা গোটা মানবতার ওপর ছুরিকাঘাত: জামায়াতের আমির
  • সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনে চাকরির আবেদন করুন দ্রুত, বেতন স্কেল ৫০,০০০-৭১,২০০ টাকা
  • চুয়াডাঙ্গায় টিসিবির পণ্য নিয়ে বিরোধে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১
  • আইসিসি টুর্নামেন্টে ‘রাজা’ ভারত, ‘রানি’ নিউজিল্যান্ড
  • এনসিপি জনগণের দল, তাদের টাকায় পরিচালিত হবে
  • স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হলে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠতে পারবে না
  • আমেরিকার মোড়লগিরির ট্রাম্প আরও খোলামেলা করে দিলেন
  • ফাইনালে আম্পায়ার থাকছেন যারা