গাজা খালি করার প্রস্তাব জাতিগত নির্মূল হিসেবে দেখা হবে: মালয়েশিয়া
Published: 6th, February 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা খালি করতে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির যেকোনো প্রস্তাবকে জাতিগত নির্মূল ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে মালয়েশিয়া।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়ে জানানোর পর গতকাল বুধবার এক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা জানিয়েছে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, মাতৃভূমি থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক সরানো বা বাস্তুচ্যুতির যেকোনো প্রস্তাবের শক্ত বিরোধিতা করছে মালয়েশিয়া। এমন অমানবিক কর্মকাণ্ড জাতিগত নির্মূল এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের একাধিক সনদের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে।
আরও পড়ুনগাজাকে দখলে নেওয়ার ট্রাম্পের পরিকল্পনায় কী আছে২২ ঘণ্টা আগেমধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে মালয়েশিয়া।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সংঘাত নিরসনে দীর্ঘদিন ধরে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে কথা বলছে কুয়ালালামপুর। ইসরায়েলের সঙ্গে মালয়েশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, তিনি ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক শাখার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলেছেন। তবে সংগঠনটির সামরিক শাখার সঙ্গে মালয়েশিয়ার কোনো সংযোগ নেই।
আরও পড়ুনউদ্ধার অভিযান শুরুর পর গাজায় নিহতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৬২ হাজারে০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এদিকে মালয়েশিয়ার প্রতিবেশী ও বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়া গতকাল বুধবার জানিয়েছে, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি কিংবা জনমিতির পরিবর্তনের কোনো উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করেছে জাকার্তা।
আরও পড়ুনফিলিস্তিন সংকট: দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নিয়ে আলোচনার কথা বললেন ট্রাম্প২৮ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অভিবাসী নির্বাসনে যুদ্ধকালীন আইন ব্যবহারের অনুমতি পেলেন ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় বসার পর অভিবাসীদের ওপর খড়্গহস্ত হয়েছেন। তিনি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করছেন। এমনকি এই কঠোরতার শিকার হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীসহ বহু অভিবাসী। দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পকে যুদ্ধকালীন ক্ষমতার আইন ব্যবহার করে অভিযুক্ত অপরাধ চক্রের সদস্যদের দ্রুত নির্বাসন দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। এই অনুমতি এখনকার জন্য বা সাময়িক সময়ের জন্য দেওয়া হয়েছে। সোমবার এই রায় দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই অভিবাসীরা অপরাধচক্র ত্রেন দে আরাহুয়ার সদস্য। যুক্তরাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে অনিয়মিত যুদ্ধ ও আগ্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিল অপরাধচক্রটি। ফলে তাদের এই আইনের আওতায় দেশ থেকে বের করে দেওয়া যেতে পারে।
যদিও ট্রাম্প প্রশাসন এই রায়কে জয় হিসেবে দেখছে, বিচারপতিরা আদেশ দিয়েছেন যে, নির্বাসিতদের তাদের অপসারণ বা নির্বাসন চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ দিতে হবে। ট্রাম্প এই রায়কে ‘আমেরিকায় ন্যায়ের একটি মহান দিন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আমাদের জাতির আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রেখেছে’, একজন প্রেসিডেন্টকে, যেই হোক না কেন, আমাদের সীমান্ত রক্ষা এবং আমাদের পরিবার ও দেশের সুরক্ষার ক্ষমতা দিয়েছে।
গত ১৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের একটি নিম্ন আদালত অস্থায়ীভাবে ভেনেজুয়েলার অভিযুক্ত গ্যাং সদস্যদের এল সালভাদরে নির্বাসন বন্ধ করেছিল। রায়ে বলা হয়েছিল, স্বল্প ব্যবহৃত ১৭৯৮ সালের বহিঃশত্রু আইন (এলিয়েন এনিমিস অ্যাক্ট) ব্যবহার করে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর আরও তদন্ত প্রয়োজন।
এ আইনটি সর্বশেষ ব্যবহার করা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে শত্রু দেশগুলোর নাগরিকদের আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই আটক বা নির্বাসনের ব্যাপক ক্ষমতা দেয়। আইনটি ১৭৯৮ সালে পাস হয়, যখন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করছিল, তারা ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে।
ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, সব নির্বাসিতই ত্রেন দে আরাহুয়ার সদস্য। এই শক্তিশালী আন্তর্জাতিক অপরাধী গোষ্ঠীটির অপহরণ, চাঁদাবাজি, সংঘবদ্ধ অপরাধ, মাদক পাচার এবং চুক্তিভিত্তিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। একে ট্রাম্প সম্প্রতি বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করেছেন।
মার্কিন অভিবাসন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আটকদের ‘সতর্কভাবে যাচাই করা’ হয়েছে এবং গ্যাং সদস্য হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পর এল সালভাদরে পাঠানো হয়েছে। তবে অনেক নির্বাসিতের কোনো মার্কিন অপরাধমূলক রেকর্ড নেই বলে আদালতের নথিতে স্বীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থার এক কর্মকর্তা।
নির্বাসিতদের কয়েকজন আত্মীয় বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই মানুষগুলো ভুলভাবে অভিবাসন অভিযানে ধরা পড়েছেন এবং তারা নির্দোষ। অনেক পরিবার বলেছে, শুধু উল্কির কারণে তাদের প্রিয়জনদের গ্যাং সদস্য হিসেবে ভুলভাবে শনাক্ত করা হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা এবং কিছু আইন বিশেষজ্ঞ এই আইন প্রয়োগকে নজিরবিহীন বলেছে। কারণ এটি আগে শুধু তখনই ব্যবহৃত হয়েছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল, যা মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী কেবল কংগ্রেসই করতে পারে।