Samakal:
2025-04-10@01:15:41 GMT

জলে-স্থলে মূর্তিমান আতঙ্ক

Published: 6th, February 2025 GMT

জলে-স্থলে মূর্তিমান আতঙ্ক

মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে দীর্ঘদিন ধরে সংঘটিত বহু অপরাধের নেতৃত্ব দিয়েছে কানা জহির। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ অনেক মামলা থাকলেও তাকে গ্রেপ্তারে তৎপরতা না থাকায় নদী ও স্থল পথে জহির এখন মূর্তিমান আতঙ্ক।

বালুবাহী বাল্কহেড থেকে বিট তোলার মধ্য দিয়ে উত্থান নৌ-ডাকাত জহিরুল ইসলাম ওরফে কানা জহিরের। মূলত নৌ-ডাকাত বাবলা নিহত হওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে ওঠে কানা জহির। আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিপক্ষের সঙ্গে গোলাগুলিতে লিপ্ত হয় জহির ও তার সহযোগীরা। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন রিফাত ও রাসেল ফকির নামের দু’জন। এ ঘটনার পাঁচ দিন পর গত মঙ্গলবার কানা জহিরকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়েছে।

জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের কালিরচর গ্রামের মাহমুদ মিয়ার ছেলে জহির ইসলাম। জন্ম থেকে তার ডান চোখ কানা হওয়ায় সবাই তাকে কানা জহির নামে চিনে। গজারিয়া, বেলতলী, চর আবদুল্লাপুর ও মোহনপুর পুলিশ ফাঁড়ির আশপাশে চলে তার সব অপকর্ম। মাদক বেচাকেনা, চাঁদাবাজি, চুরি-ডাকাতি ও মেঘনা নদীতে রাতে অবৈধভাবে বালু তোলাসহ নানান অপকর্ম চালাচ্ছে জহির।

জানা গেছে, কানা জহিরের ভয়ংকর রূপ চোখে পড়ে মূলত রাতে। জহির একা নয়, তার একটি বাহিনী রয়েছে। জহির ও তার ছোট ভাই এবং বাহিনীর অন্য সদস্যরা রাতে মেঘনায় অবৈধভাবে বালু তোলে ও নৌযানে ডাকাতি করে। এ ছাড়া বিভিন্ন চরে গরু চুরি, ডাকাতি থেকে শুরু বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করে তারা।

নদী তীরবর্তী গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের কালিরচর থেকে শুরু করে কালিপুর-ষাটনল, নাসিরাচর হয়ে মোহনপুর পর্যন্ত ডাকাতি এবং মাদক সরবরাহ করে কানা জহিরের সিন্ডিকেট। জহিরের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে তার আপন ভাই আঙুল কাটা শাহিন। সশস্ত্র শাহিন ও জহির দিনের বেলা অবস্থান করে কালিরচরসহ আশপাশের কয়েকটি চরে। বকচর থেকে কালিরচর পর্যন্ত শাহিন এবং কালিরচর থেকে নাসিরাচর ও মোহনপুর পর্যন্ত জহির তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, কানা জহির একসময় নৌ-ডাকাত বাবলা গ্রুপের হয়ে কাজ করত। কিন্তু পরে জহির ও তার ভাই শাহিন নিজেরাই তৈরি করে ডাকাত দল। চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও ডাকাতির বখরা আদায় করা তাদের মূল কাজ। জহির ও তার বাহিনীর অত্যাচারে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিনযাপন করছেন।

জানা গেছে, গত ১৯ ডিসেম্বর রাতে কানা জহির চাঁদপুরের মেঘনা নদীর মোহনপুর এলাকায় তার দলবল দিয়ে ডাকাতের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। খবর পেয়ে চাঁদপুরের নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ড ওই এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় জহিরের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি বিনিময় হয়। একপর্যায়ে কানা জহির পুলিশের আক্রমণে টিকতে না পেরে অস্ত্র, স্পিডবোট এবং গোলা বারুদ রেখে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে পালায়। পরে পুলিশ ও কোস্টগার্ড জহিরের ব্যবহৃত স্পিডবোট, কাটা বন্দুক, দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র উদ্ধার করে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত শনিবার খবর পেয়ে মেঘনার নৌ-ডাকাত কানা জহির ও তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্য কালিরচর গ্রামের বাচ্চু মেম্বারের বাড়ি-সংলগ্ন মেঘনা নদীতে অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কানা জহিরসহ পাঁচ সহযোগী স্পিডবোটে করে পালাতে চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ তাদের পিছু নিলে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে কানা জহির ও তার সহযোগীরা। এ সময় পাল্টা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ ঘটনায় কানা জহির ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মুন্সীগঞ্জ সদর থানার পৃথক দুটি মামলা করা হয়।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি এম সাইফুল আলম বলেন, কানা জহির একজন আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সরদার। তার বিরুদ্ধে গজারিয়া, ষাটনল, মতলব উত্তর, চাঁদপুর ও লৌহজং থানায় হত্যা, ডাকাতিসহ ১৮টি মামলা রয়েছে। চরাঞ্চলের দুর্গম স্থানে অবস্থান করায় কানা জহিরকে গ্রেপ্তারে বিলম্ব হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ল রচর ম হনপ র সহয গ

এছাড়াও পড়ুন:

সংকটাপন্ন বনাঞ্চলে আবার পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ 

কক্সবাজারে ৭০০ একর বনভূমিতে এবার ডিজিটাল পার্ক স্থাপন করতে চায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এ বনটিতে রয়েছে ৫৮ প্রজাতির দুর্লভ বৃক্ষ এবং বিপন্ন হাতি, বানরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর বাস। তার পরও তাতে চলছে পার্ক স্থাপনের তোড়জোড়।

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের পূর্ব পাশে ঝিলংজা মৌজার এ জমি স্থায়ী লিজ, ভাড়াভিত্তিক অথবা চুক্তিভিত্তিক লিজ নেওয়ার জন্য বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে বি-কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড নামের এ প্রতিষ্ঠানটি। গত রোববার এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি বন অধিদপ্তর থেকে কক্সবাজার বিভাগীয় বন কার্যালয়ে এসে পৌঁছেছে। চিঠিতে সরেজমিন তদন্ত করে মতামতসহ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। 

কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১১ নভেম্বর ওই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে সিইও নাদিরা আক্তার এ আবেদন করেন।

মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন ঝিলংজা বনভূমির এ এলাকাটি প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন। শুধু তাই নয়, ৭০০ একর এ বনভূমি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ স্থাপনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নামে বন্দোবস্ত দিয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ভূমি মন্ত্রণালয় বনভূমির এই বরাদ্দ বাতিল করে।

চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন ৭০০ একর বনভূমি লিজ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছে একটি প্রতিষ্ঠান। তারা আবেদনে জমিটি পতিত বলে উল্লেখ করেছে। বাস্তবে পুরো জায়গাটি প্রাকৃতিক বনসমৃদ্ধ পাহাড়ি এলাকা। 

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বি-কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও নাদিরা আক্তারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল ও মেসেজ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে সোমবার সন্ধ্যায় তাঁকে আবারও ফোন করলে একজন রিসিভ করে এ প্রতিবেদককে জানান, কক্সবাজারে পর্যটকদের বিনোদন দেওয়ার জন্য জনস্বার্থে পার্কটি নির্মাণে আবেদনটি করা হয়েছে। সরকার জায়গাটি দিলে করব, না দিলে আমরা করব না। 

তাঁর এ বক্তব্যটি নাদিরা আক্তারের বক্তব্য বলেও জানান তিনি। নিজেকে ঢাকার একজন ব্যবসায়ী দাবি করে তিনি নাম বা বিস্তারিত পরিচয় দেননি।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ১৯৯৯ সালে ওই ঝিলংজা মৌজার বনভূমিসহ কক্সবাজার সদর ও সাগর সৈকতকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ অনুসারে ইসিএ এলাকায় কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ, প্রতিবেশ-পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো তৎপরতা চালানো নিষেধ। কিন্তু ২০২১ সালে ওই বনভূমিকে খাস জমি দেখিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দিয়েছিল ভূমি মন্ত্রণালয়।

কক্সবাজারভিত্তিক পরিবেশ সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) তথ্যমতে, ‘কক্সবাজার জিয়াউর রহমান ডিজিটাল পার্ক’ স্থাপনের জন্য আবেদনকৃত জায়গায় ৫৮ প্রজাতির বৃক্ষ আছে। এর মধ্যে আছে গর্জন, চাপালিশ, তেলসুর, মোস, কড়ই, বাটনা, ভাদি, বহেরাসহ অনেক দুর্লভ প্রজাতির গাছ। এ ছাড়া বন্যপ্রাণীর মধ্যে এশীয় বন্যহাতি, বানর, বন্যশূকর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও পাখি রয়েছে এ বনভূমিতে। 

ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) প্রধান উপদেষ্টা আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ১৯৯৯ সালে ঝিলংজা মৌজাকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে বনভূমির গাছ কাটাসহ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন নিষিদ্ধ করা হয়। ৭০০ একর রক্ষিত বনও এই সংকটাপন্ন এলাকার অন্তর্ভুক্ত। পাশাপাশি সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদ এবং জাতিসংঘ জীববৈচিত্র্য সনদে বন সংরক্ষণের অঙ্গীকার রয়েছে। দেশের বনভূমির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায় নতুন করে এ বনভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া জনস্বার্থবিরোধী।

১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকার এ এলাকাটি রক্ষিত বন ঘোষণা করে। বন বিভাগ এত বছর ধরে এটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে। বিপন্ন এশীয় বন্যহাতিসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণীর নিরাপদ বসতি এই ঝিলংজা বনভূমিতে। বন আইন অনুযায়ী, পাহাড় ও ছড়াসমৃদ্ধ এই বনভূমির ইজারা দেওয়া বা না দেওয়ার এখতিয়ার শুধু বন বিভাগের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ