মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে দীর্ঘদিন ধরে সংঘটিত বহু অপরাধের নেতৃত্ব দিয়েছে কানা জহির। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ অনেক মামলা থাকলেও তাকে গ্রেপ্তারে তৎপরতা না থাকায় নদী ও স্থল পথে জহির এখন মূর্তিমান আতঙ্ক।
বালুবাহী বাল্কহেড থেকে বিট তোলার মধ্য দিয়ে উত্থান নৌ-ডাকাত জহিরুল ইসলাম ওরফে কানা জহিরের। মূলত নৌ-ডাকাত বাবলা নিহত হওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে ওঠে কানা জহির। আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিপক্ষের সঙ্গে গোলাগুলিতে লিপ্ত হয় জহির ও তার সহযোগীরা। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন রিফাত ও রাসেল ফকির নামের দু’জন। এ ঘটনার পাঁচ দিন পর গত মঙ্গলবার কানা জহিরকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়েছে।
জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের কালিরচর গ্রামের মাহমুদ মিয়ার ছেলে জহির ইসলাম। জন্ম থেকে তার ডান চোখ কানা হওয়ায় সবাই তাকে কানা জহির নামে চিনে। গজারিয়া, বেলতলী, চর আবদুল্লাপুর ও মোহনপুর পুলিশ ফাঁড়ির আশপাশে চলে তার সব অপকর্ম। মাদক বেচাকেনা, চাঁদাবাজি, চুরি-ডাকাতি ও মেঘনা নদীতে রাতে অবৈধভাবে বালু তোলাসহ নানান অপকর্ম চালাচ্ছে জহির।
জানা গেছে, কানা জহিরের ভয়ংকর রূপ চোখে পড়ে মূলত রাতে। জহির একা নয়, তার একটি বাহিনী রয়েছে। জহির ও তার ছোট ভাই এবং বাহিনীর অন্য সদস্যরা রাতে মেঘনায় অবৈধভাবে বালু তোলে ও নৌযানে ডাকাতি করে। এ ছাড়া বিভিন্ন চরে গরু চুরি, ডাকাতি থেকে শুরু বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করে তারা।
নদী তীরবর্তী গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের কালিরচর থেকে শুরু করে কালিপুর-ষাটনল, নাসিরাচর হয়ে মোহনপুর পর্যন্ত ডাকাতি এবং মাদক সরবরাহ করে কানা জহিরের সিন্ডিকেট। জহিরের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে তার আপন ভাই আঙুল কাটা শাহিন। সশস্ত্র শাহিন ও জহির দিনের বেলা অবস্থান করে কালিরচরসহ আশপাশের কয়েকটি চরে। বকচর থেকে কালিরচর পর্যন্ত শাহিন এবং কালিরচর থেকে নাসিরাচর ও মোহনপুর পর্যন্ত জহির তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, কানা জহির একসময় নৌ-ডাকাত বাবলা গ্রুপের হয়ে কাজ করত। কিন্তু পরে জহির ও তার ভাই শাহিন নিজেরাই তৈরি করে ডাকাত দল। চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও ডাকাতির বখরা আদায় করা তাদের মূল কাজ। জহির ও তার বাহিনীর অত্যাচারে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিনযাপন করছেন।
জানা গেছে, গত ১৯ ডিসেম্বর রাতে কানা জহির চাঁদপুরের মেঘনা নদীর মোহনপুর এলাকায় তার দলবল দিয়ে ডাকাতের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। খবর পেয়ে চাঁদপুরের নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ড ওই এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় জহিরের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি বিনিময় হয়। একপর্যায়ে কানা জহির পুলিশের আক্রমণে টিকতে না পেরে অস্ত্র, স্পিডবোট এবং গোলা বারুদ রেখে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে পালায়। পরে পুলিশ ও কোস্টগার্ড জহিরের ব্যবহৃত স্পিডবোট, কাটা বন্দুক, দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র উদ্ধার করে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত শনিবার খবর পেয়ে মেঘনার নৌ-ডাকাত কানা জহির ও তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্য কালিরচর গ্রামের বাচ্চু মেম্বারের বাড়ি-সংলগ্ন মেঘনা নদীতে অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কানা জহিরসহ পাঁচ সহযোগী স্পিডবোটে করে পালাতে চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ তাদের পিছু নিলে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে কানা জহির ও তার সহযোগীরা। এ সময় পাল্টা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ ঘটনায় কানা জহির ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মুন্সীগঞ্জ সদর থানার পৃথক দুটি মামলা করা হয়।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি এম সাইফুল আলম বলেন, কানা জহির একজন আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সরদার। তার বিরুদ্ধে গজারিয়া, ষাটনল, মতলব উত্তর, চাঁদপুর ও লৌহজং থানায় হত্যা, ডাকাতিসহ ১৮টি মামলা রয়েছে। চরাঞ্চলের দুর্গম স্থানে অবস্থান করায় কানা জহিরকে গ্রেপ্তারে বিলম্ব হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ল রচর ম হনপ র সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠকসহ আটক ২, দেশীয় অস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধার
নারায়ণগঞ্জ শহরের ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে যৌথ বাহিনীর অভিযানে জিদান নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সংগঠকসহ দুইজনকে আটক করা হয়েছে। এসময় জিদানের কাছ থেকে ৪ পিছ ইয়াবা ও একটি সুইস গিয়ার চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।
আটককৃতরা হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা সংগঠক মো. জিদান ও ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের দালাল ইকবাল হোসেন। রোববার (৯ মার্চ) দুপুরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যৌথবাহিনী এ অভিযান চালায়। পরে আটককৃতদের সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আটক জিদানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হাসপাতালের দালালি, ইয়াবা বিক্রি ও সেবনসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনার পর মো. জিদানকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় অতি সামান্য আহত হয় জিদান। আহত হওয়ার সুবাদে নারায়ণগঞ্জ-৩০০ শয্যা বিশিস্ট হাসপাতাল তথা খানপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় সে। চিকিৎসা নেয়ার সময় হাসপাতালের দালাল চক্রের হোতা নুরুল ইসলামসহ অন্যদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে তার।
পরবর্তীতে সুস্থ হয়ে দালালদের গডফাদার নুরুল ইসলামের সাথে মিলে হাসপাতালের ঔষুধ চুরি, হাসপাতালে বসে ইয়াবা সেবন ও বিক্রি সহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। এমন বেশ কিছু অভিযোগের প্রেক্ষিতে যৌথ বাহিনী তার বিরুদ্ধে গোপন তদন্ত শুরু করে। তদন্ত করতে গিয়ে তারা জিদান ও তার সহযোগীদের নানা অপকের্মর সত্যতা পায়।
যারা গোপনে তদন্ত করছিলেন তারা খবর পান একটি কক্ষে জিদান ও তার সহযোগীরা ইয়াবা সেবন করছে। এসময় তারা ঐ কক্ষে প্রবেশ করলে জিদান ও তার সহযোগীরা তাদেরকে আটকে রেখে নির্যাতন করে। মারধরের শিকার ব্যক্তিরা যৌথ বাহিনীকে বিষয়টি জানালে তারা অভিযান পরিচালনা করে চারজনকে উদ্ধার করে এবং জিদান ও তার এক সহযোগী ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে।
জিদানের ব্যাগ থেকে একটি সুইস গিয়ার ও ৪ পিছ ইয়াবা উদ্ধার করে যৌথ বাহিনী। পরে তাদের দুজনকে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জিদান হোসেন ছাত্রনেতার পরিচয়ে হাসপাতালের স্টাফদের হুমকি দিয়ে আসছিলেন এবং নানা অনৈতিক সুবিধা আদায় করছিলেন। পাশাপাশি, তিনি হাসপাতালের অভ্যন্তরে ইয়াবা সেবন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগী সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ করলে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালায় এবং ঘটনাস্থল থেকে তাদের আটক করা হয়।
এদিকে, আটকের পরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জিদান হোসেনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার ঘোষণা দেয়। জেলা কমিটির আহ্বায়ক নিরব রায়হান ও সদস্য সচিব মোহাম্মদ জাবেদ আলম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সংগঠনের নীতি ও আদর্শের পরিপন্থী কাজে লিপ্ত থাকার কারণে জিদান হোসেনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো। বহিষ্কৃত ব্যক্তির কোন ধরণের অপকর্মের দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নারায়ণগঞ্জ জেলা নিবে না। জেলায় দায়িত্বরত সকল পর্যায়ের ব্যক্তিদের তার সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
তারা আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কখনো চাঁদাবাজ, দখলদারীত্ব, অবৈধ কারবারি, নীতি-আদর্শ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি, রাষ্ট্র বিরোধী, আইন বিরোধী কার্যকলাপ সমর্থন করে না। যদি কেউ এতে জড়িত আছে বলে প্রমাণিত হয় তবে তার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নারায়ণগঞ্জ জেলা দায়বদ্ধ থাকবে না এবং তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ আইনত ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে কোন প্রকার আপত্তি থাকবে না।
নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এমএ বাশার বলেন, দুপুর ১২ টার সময় দালাল ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা আসেন। তারা সাদা পোষাকে থাকায় তাদের সাথে হাসপাতালের একজন স্টাফ নজরুলের সাথে তাদের কথা কাটাকাটি হয়।
এসময় নজরুল তাদেরকে এক রুমে বসতে বলেন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে নজরুলসহ দালাল চক্রের বেশ কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে আমি সেনাবাহিনীকে জানালে তারা হাসপাতালের স্টাফ নজরুলকে ছেড়ে দেয়।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন জানান, জিদান হোসেন নামে এক ছাত্র সংগঠক ও তার সহযোগী ইকবাল হোসেনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। তাদের কাছ থেকে একটি সুইস গিয়ার ও ৪ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।