কনুইব্যথা বা এলবো পেইন একটি সাধারণ ও পরিচিত সমস্যা। নানা কারণে কনুইয়ে ব্যথা হতে পারে। এসব কারণ এবং এ সমস্যার চিকিৎসা সম্পর্কে আসুন জেনে নেওয়া যাক:
চোট বা আঘাত: পড়ে যাওয়া, সরাসরি আঘাত লাগা থেকে হাড় ফেটে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে কনুইয়ে।
টেন্ডিনাইটিস: এটি প্রদাহজনিত সমস্যা। এটি নানা রূপে দেখা দিতে পারে, যেমন টেনিস এলবো। এটি কনুইয়ের অতিরিক্ত ব্যবহার ও বেশি পরিশ্রম বা কুনইয়ের বাইরের পেশির ওপর চাপ পড়ার কারণে হয়। আবার গল্ফার এলবো হয় কনুইয়ের ভেতরের দিকের পেশিতে বেশি চাপ পড়ার কারণে।
আর্থ্রাইটিস: অস্থিসন্ধির প্রদাহজনিত রোগ, বিশেষ করে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা অস্টিওআর্থ্রাইটিস কনুইকেও আক্রান্ত করতে পারে।
বার্সাইটিস: কনুইয়ের জয়েন্টের বারসা বা তরলভরা থলি ফুলে গেলে বা প্রদাহ হলে বুঝতে হবে বার্সাইটিস হয়েছে।
স্নায়ুর সমস্যা: হাতের পেছনের দিকের আলনা স্নায়ুর ওপর চাপ পড়লে কনুইসহ হাতে ব্যথা বা অসাড়তা হতে পারে।
ফ্র্যাকচার বা হাড় ভেঙে যাওয়া: আঘাতের কারণে হাড় ভেঙে গিয়েও কনুইয়ে ব্যথা হয়।
লক্ষণকনুইয়ের ব্যথা মৃদু থেকে তীব্র হতে পারে এবং নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। পুরো হাতেও ছড়াতে পারে এটি।
কনুইয়ের চারপাশ ফুলে যেতে পারে।
কনুই বাঁকানো বা সোজা করতে কষ্ট হয়।
অসাড়তা বা ঝিনঝিন অনুভূতি। বিশেষ করে স্নায়ুর সমস্যায় এ রকম মনে হয়।
চিকিৎসাপ্রাথমিক চিকিৎসা (আরআইসিই পদ্ধতি): কনুইকে বিশ্রাম দিন এবং ভারী কাজ এড়িয়ে চলুন। ব্যথার স্থানে ১৫ থেকে ২০ মিনিট বরফ দিন, দিনে ৩ থেকে ৪ বার। ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ দিয়ে কনুইয়ে হালকা পেঁচিয়ে রাখুন। হাত উঁচু করে রাখুন, যাতে ফোলা ভাব কমে।
ওষুধ: ব্যথা কমাতে সেবন করা যায় প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেনজাতীয় ব্যথানাশক। আর্থ্রাইটিস থাকলে প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে কর্টিকোস্টেরয়েড সেবন করা যায়।
ফিজিওথেরাপি: মাংসপেশি ও স্নায়ুর ব্যথা কমানোর পাশপাশি কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধারে ফিজিওথেরাপি খুবই কার্যকর।
ইনজেকশন: টেনিস বা গল্ফার এলবোতে কর্টিকোস্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে।
অস্ত্রোপচার: যদি হাড় ভেঙে যায়, স্নায়ুর চাপে সমস্যা হয় বা আর্থ্রাইটিস গুরুতর হয়, তবে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
সতর্কতা ও প্রতিরোধঅতিরিক্ত ভারী কাজ এড়িয়ে চলুন।
কাজের সময় সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখুন।
পেশির শক্তি বাড়াতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
ক্রীড়া বা অন্যান্য কাজের আগে হালকা অনুশীলন বা ওয়ার্মআপ করুন।
ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে বা কোনো জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
চবিতে ধর্ষণবিরোধী মিছিলে নারী শিক্ষার্থীকে ‘ভুয়া’ বলে হট্টগোল
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ধর্ষণবিরোধী সমাবেশে হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। রোববার রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ হট্টগোল হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে সমালোচনা করে বক্তব্য দেওয়া নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জানান, সারাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের প্রতিবাদে প্রথমে বিক্ষোভ সমাবেশ ডেকেছিল একদল শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন ফেসবুকে এটির প্রচারণা চালান। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে জিরো পয়েন্টে এটি হওয়ার কথা ছিল। অন্যদিকে চলমান হেনস্তা ও ধর্ষণের শাস্তি ফাঁসির দাবিতে সাড়ে ছয়টার মশাল মিছিলের ডাক দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা।
ছাত্রীদের এই মিছিলটি বিজয় চব্বিশ হলের (সাবেক জননেত্রী শেখ হাসিনা হল) সামনে থেকে শুরু হয়। পরে তারা প্রীতিলতা ও নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরী হল (সাবেক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল) ঘুরে প্রীতিলতা হল সংলগ্ন জামাল নজরুল ইসলাম সড়কে আসে। আর ছাত্রদের মিছিলটিও জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে কাটা পাহাড় সড়ক হয়ে জামাল নজরুল ইসলাম সড়কে আসে। সেখান থেকে ছাত্র ও ছাত্রীদের মিছিলটি এক হয়ে দক্ষিণ ক্যাম্পাস ঘুরে আবার জিরো পয়েন্ট এলাকায় পৌঁছায়। সেখানে সমাবেশ হয়। এতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এই বক্তব্য দেওয়া নিয়েই সেখানে হট্টগোল হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নয় ছাত্রীর বহিষ্কার নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা চলছে। বহিষ্কৃত ওই ৯ ছাত্রীর একজন ছিলেন সুমাইয়া শিকদার। তিনি সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার এক পর্যায়ে হট্টগোল শুরু হয়। সুমাইয়া শিকদার তার বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ফেসবুক পোস্ট নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন।
এই সমালোচনার জেরে সমাবেশে অবস্থানকারী একটি অংশ ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেন। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ উপস্থিত অন্য শিক্ষার্থীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।
জানতে চাইলে সমাবেশে থাকা ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আরমান হোসেন বলেন, সুমাইয়া শিকদার বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী। তাই তার বক্তব্য দেওয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে কয়েকজন। আবার এটা ছিল এই ধর্ষণবিরোধী কর্মসূচি। সারাদেশে নারীদের নিরাপত্তার দাবিতে এই কর্মসূচি ছিল। এটি আমাদের ক্যাম্পাসের বিষয় ছিল না। এখানে একটা গোষ্ঠী ক্যাম্পাসের বিষয়গুলো এনেছে বলে আরেকটা গোষ্ঠী এর প্রতিবাদ করেছে।
এ বিষয়ে সুমাইয়া শিকদার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ছাত্রীদের হানি ট্র্যাপার বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। একজন প্রক্টর নারীদের ইঙ্গিত করে এই ধরনের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে আমি বিষয়টি বলতে যাচ্ছিলাম। তবে কথা শেষ করার আগেই একদল ইচ্ছাকৃভাবে হট্টগোল করেছে।