ফিলিস্তিনের গাজা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপত্যকার বাসিন্দারা। তাঁদের কাছে ট্রাম্পের পরিকল্পনা রীতিমতো অবিশ্বাস্য লাগছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে গাজা নিয়ে এক বিস্ময়কর পরিকল্পনা তুলে ধরেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উপত্যকাটির মালিক হবে যুক্তরাষ্ট্র। তাঁরা গাজার উন্নয়ন করবেন। গাজা হবে সারা বিশ্বের মানুষের বাড়ি। তবে কীভাবে ও কোন কর্তৃত্ববলে গাজার নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র নিতে পারে, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেননি ট্রাম্প।
ইসরায়েল-হামাসের ১৫ মাসের গাজা যুদ্ধে ৪৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন লক্ষাধিক। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন গাজার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ।
৫২ বছর বয়সী আবু ফিরাস গাজার বাসিন্দা। তিনি এখন থাকছেন উপত্যকার উপকূল এলাকার একটি তাঁবুতে। তাঁর বসতবাড়ি খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলে। ইসরায়েলি হামলায় তাঁর বসতবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যুদ্ধে তিনি ৮০ জন আত্মীয়স্বজনকে হারিয়েছেন।
বাড়িঘর পুনর্নির্মাণে সাহায্য চান ফিরাস। কিন্তু তিনি গাজা ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চান না।
আরও পড়ুনগাজাকে দখলে নেওয়ার ট্রাম্পের পরিকল্পনায় কী আছে২১ ঘণ্টা আগেদ্য গার্ডিয়ানকে ফিরাস বলেন, ‘আমরা মরব, তা–ও এই ভূমি ছেড়ে যাব না।’
মাতৃভূমির বিনিময় অর্থ দিয়ে হয় না বলে মন্তব্য করেন ফিরাস।
গাজাকে দুর্ভাগ্য, মৃত্যু ও ধ্বংসের প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেছেন ট্রাম্প। তাঁর দাবি, এই জায়গা ছেড়ে যেতে আগ্রহী ফিলিস্তিনিরা। তবে গাজাবাসী ট্রাম্পের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের আগেও গাজাবাসীর জীবন কঠিন ছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ স্থানগুলোর একটি গাজা। ইসরায়েলি অবরোধ, হামাসের কঠোর শাসন, অর্থনৈতিক স্থবিরতার মধ্য দিয়ে বছরের বছর বছর কাটিয়ে এসেছেন গাজাবাসী। তবে এত প্রতিকূলতার মধ্যেও গাজাবাসী উপত্যকার ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে গর্ববোধ করে এসেছেন।
আরও পড়ুনগাজার দখল নিতে চান ট্রাম্প০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫৫০ বছর বয়সী রামজ গাজার বাসিন্দা। তিনি চার সন্তানের পিতা। তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি যেখানেই চলে যান না কেন কিংবা সুন্দর শহরে বসবাসের যতই চেষ্টা করুক না কেন, নিজ শহর, নিজ ভূমি ছাড়া তিনি কখনোই শান্তি পাবেন না।
রামজ বলেন, ‘এত ধ্বংসের পরও আমরা শেষ পর্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে ও মরতে এখানে, আমাদের ভূমিতেই থাকব।’
আরও পড়ুনগাজা খালি করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঢুলির ঘর ভাঙচুরের অভিযোগ প্রবেশপথে কাঁটাতারের বেড়া
টিনের খুপরি ঘরে বয়োজ্যেষ্ঠ মা আঙুর বালা ও বাবা বিশ্বনাথ মণ্ডলকে নিয়ে বসবাস ৩০ বছরের তরুণ বিদ্যুৎ মণ্ডলের (৩৫)। তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঢোল বাজিয়ে যা আয় করেন, তা দিয়ে চলে সংসার। বসতবাড়ির জমি নিয়ে প্রতিবেশী অধীর বাড়ৈর সঙ্গে আদালতে মামলা চলছে তাদের। এরপরও তাঁর ঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। তারা কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের ভালুকা পূর্বপাড়া এলাকার বাসিন্দা। এর আগে সোমবার প্রবেশপথসহ সড়কের ধারে কয়েকশ মিটার কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী বিদ্যৎ। কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন প্রতিবেশী অধীর বাড়ৈ (৬০)। তিনি একই এলাকার মৃত অবিনাশ বাড়ৈর ছেলে। তিনি ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। জমি দাবি করে ২০০২ সালে কুষ্টিয়া আদালতে রেকর্ড সংশোধনী মামলা করেন অধীর বাড়ৈ। দীর্ঘ শুনানির পর আদালত ২০২৪ সালের ২৮ নভেম্বর বিদ্যুতের পক্ষে রায় দেন। তখন অধীর আপিল করায় বিষয়টি বিচারাধীন রয়েছে। এরই মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরাওয়ের পাশাপাশি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল।
মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, কৃষ্টপুর-পূর্বাশা মোড় সড়কের পাশে ঢুলি বিদ্যুতের বসতবাড়ি। এর প্রবেশপথসহ সড়কের পাশে কাঁটাতারের বেড়া। তাঁর ঘরের চাল ও বেড়া ভাঙা। সেগুলো পড়ে রয়েছে মাটিতে। আসবাব অগোছালো। পানির টিউবওয়েলটি নেই।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাঁর মা আঙুর বালা বলছিলেন, ‘আমরা গরিব ও নিরীহ মানুষ। আদালতে মামলা চলছে। তবুও অধীর লোকজন নিয়ে এসে কাঁটাতারের বেড়া দিছে। আমাকে মারধর এবং ভাঙচুর করে স্বর্ণালংকারসহ জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। কলডাও (টিউবওয়েল) নিয়ে গেছে।’ ঢুলি বিদ্যুৎ মণ্ডল বলেন, ‘আদালত রায় আমার পক্ষে দিলেও তারা ক্ষমতা দেখিয়ে লোকজন এনে ভাঙচুর করেছে। বিচারের আশায় থানায় অভিযোগ দিয়েছি।’
অভিযোগের বিষয়ে অধীর বাড়ৈ বলেন, ‘বিদ্যৎরা বেশি জমি দখল করে নিয়েছে। সেজন্য আমি কাঁটাতারের বেড়ে দিয়ে ঘেরাও দিয়েছি। ভাঙচুর বা লুটপাট করিনি।’ সাবেক ইউপি সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এতেম আলী বলেন, ‘দাগটির ৪৮ শতাংশ জমির মধ্যে ৩৪ শতাংশ বিদ্যুতের বাবার কেনা। বাকি অংশ অধীরের ছোট ভাই অন্যের কাছে বিক্রি করে ভারতে চলে গেছেন। এখন অন্যায়ভাবে অধীর অশান্তি সৃষ্টি করছেন। এর একটি সমাধান হওয়া দরকার।’
লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।