তরল পদার্থে ভরা বোতল দুটি পাশাপাশি রাখা। রং প্রায় একই; কিন্তু তরল দুটি ভিন্ন। বোতল দুটির ঢাকনা সরিয়ে নাকের কাছে নিতেই একটিতে পেট্রলের গন্ধ পাওয়া গেল। অপরটিতে কোনো গন্ধ নেই। গন্ধহীন বোতলটিতে আসলে খাওয়ার পানি রাখা। পটুয়াখালীর কলাপাড়াবাসী বেঁচে আছেন পেট্রলের মতো হলদেটে এই পানি খেয়ে।
জানা গেল, এই অদ্ভুত রঙের পানি ওঠে গভীর নলকূপ থেকে। যুগের পর যুগ খাওয়া, রান্না, গোসলসহ গৃহস্থালির সব কাজে নিয়মিত এই পানি ব্যবহার করছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মানুষ। পানির এই রঙের সঙ্গে তাঁরা এমনভাবে অভ্যস্ত, যেন পানির এটাই আসল রং। মোস্তাক মিয়া নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা তো বলেই বসলেন, কলাপাড়ার গভীর নলকূপের পানির মতো মিঠাপানি তিনি আর কোথাও খাননি।
তবে কলাপাড়ায় প্রথম যাওয়া যে কেউ এই ‘সুস্বাদু’ পানি দেখেই আঁতকে উঠবেন। মুখে দিতে বা ব্যবহার করতেও দ্বিধায় পড়বেন। এমনই একজন কলাপাড়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো.
প্রকৌশলী ইব্রাহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পানির এ অবস্থা নিয়ে আমি চিন্তাভাবনা করছি। শিগগির ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে আলাপ করে একটি ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমার।’ এই পানিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে কি না, সে ব্যাপারে তাঁর পরিষ্কার ধারণা নেই এবং এ বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নিচ্ছেন।
যুগের পর যুগ খাওয়া, রান্না, গোসলসহ গৃহস্থালির সব কাজে নিয়মিত এই পানি ব্যবহার করছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মানুষ। পানির এই রঙের সঙ্গে তাঁরা এমনভাবে অভ্যস্ত, যেন পানির এটাই আসল রং।কেন পানি রঙিন
গবেষকেরা কলাপাড়ার এই পানিকে খড় রং বা ‘স্ট্র কালার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ভূগর্ভের পানির এমন রং হওয়ার পেছনে লিগনিন বা ট্যানিন নামের রাসায়নিক যৌগকে দায়ী করেছেন তাঁরা। লিগনিন মূলত উদ্ভিদের কোষপ্রাচীরের একটি জৈব রাসায়নিক উপাদান। এটি লিগনাইট কয়লা বা সাব বিটুমিনাস কয়লা নামক জৈব পদার্থ থেকে উদ্ভূত।
‘বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ভূগর্ভের পানি রঙিন হওয়ার মূল কারণ: একটি প্রাথমিক গবেষণার ফলাফল’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ ইউনিট, ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আটজন গবেষক গবেষণাটি করেন। ২০২১ সালের গবেষণাটি যুক্তরাজ্যভিত্তিক এনভায়রনমেন্টাল পলিউট্যান্টস অ্যান্ড বায়ো–অ্যাভেইলেবিলিটি জার্নালে প্রকাশিত হয়। গবেষকেরা পটুয়াখালীর কলাপাড়া, বরগুনা সদর ও বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার পানি নিয়ে গবেষণার কাজটি করেন।
কলাপাড়ার মতো উপকূলীয় এলাকায় ধীরে ধীরে পলি জমা এবং টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়ার কারণে মাটির গভীরে পানির সঙ্গে এসব রাসায়নিক মিশে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে তা নিশ্চিত করে বলতে হলে বড় পরিসরে গবেষণা প্রয়োজন।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও পানি–গবেষক সৈয়দা ফাহলিজা বেগমএই তিন এলাকার গভীর নলকূপের পানিতে লিটারে গড়ে লিগনিন রয়েছে ২ দশমিক ৭২ মিলিগ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ৫ মিলিগ্রাম। এর পাশাপাশি প্রতি লিটার পানিতে গড়ে ৩৯ মিলিগ্রাম সালফেট, ৭৭৬ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১ দশমিক ৬৭ মিলিগ্রাম আয়রন ও শূন্য দশমিক ১২ মিলিগ্রাম ম্যাঙ্গানিজের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বলা হয়েছে, পানিতে লিগনিনের পরিমাণ শূন্য দশমিক ৯৩০ এবং মোট জৈব কার্বনের পরিমাণ শূন্য দশমিক ৬০৬–এর বেশি হলেই পানি তীব্র খড় রঙের হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, ওই তিন এলাকার মধ্যে কলাপাড়ায় ‘খড় রং’-এর তীব্রতা বেশি। এখানে ভূগর্ভের যত বেশি গভীর থেকে পানি তোলা হয়, খড় রঙের পরিমাণ তত বাড়ে। ভূগর্ভের শূন্য থেকে ১৮ ফুট পর্যন্ত, অর্থাৎ অগভীর পানিতে এ রকম রং নেই। ৭২১ ফুট থেকে রঙের পরিমাণ বাড়তে থাকে।
হাজার বছর ধরে ইউরোশিয়ান প্লেট টেকটোনিকের নড়াচড়ার ফলে গাছপালা ও জীবজন্তু ভূগর্ভে চলে যেতে পারে। সেগুলো থেকে লিগনিন ও সাববিটুমিনাস কয়লা ভূগর্ভের পানিতে মিশে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও পানি–গবেষক সৈয়দা ফাহলিজা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কলাপাড়ার মতো উপকূলীয় এলাকায় ধীরে ধীরে পলি জমা এবং টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়ার কারণে মাটির গভীরে পানির সঙ্গে এসব রাসায়নিক মিশে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে তা নিশ্চিত করে বলতে হলে বড় পরিসরে গবেষণা প্রয়োজন।’
গবেষকেরা কলাপাড়ার এই পানিকে খড় রং বা ‘স্ট্র কালার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ভূগর্ভের পানির এমন রং হওয়ার পেছনে লিগনিন বা ট্যানিন নামের রাসায়নিক যৌগকে দায়ী করেছেন তাঁরা।গভীরে লিগনিন, অগভীরে আর্সেনিক
হলদেটে পানি ব্যবহারের প্রভাব জানতে কলাপাড়ার অন্তত ১৫ বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়েছে প্রথম আলোর। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন বলেছেন, তাঁরা এই পানি পান করার কারণে কোনো ধরনের সমস্যায় পড়েননি। বাকি ১০ জন কোনো না কোনো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন বলে জানান। চুল পড়া, গ্যাস্ট্রিক, খড় রঙের প্রস্রাব এবং চুলকানির মতো সমস্যা হচ্ছে তাঁদের। তবে সরাসরি পানির কারণেই এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত নন।
চুলকানির কথাই উঠে এসেছে সবচেয়ে বেশি। কলাপাড়ার বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা এমন সমস্যার কথা বলেছেন। ধুলাসার ইউনিয়নের কাউয়ার চরের বাসিন্দা আলাউদ্দিন চৌকিদার বলেন, ‘চুলকানি তো লাইগ্গাই রইছে। হ্যার মইদ্যে আবার শুরু হইছে গ্যাস্ট্রিক। ডিপ টিউবলের পানির জন্যই এমন হইছে বইলা মনে হয়। হ্যার লাইগ্গা টিউবলের পানি খাওয়া শুরু করছি।’
আলাউদ্দিনের বাড়ি থেকে ১০০ মিটারের মধ্যেই নিত্য ব্যবহারের জন্য একটি অগভীর নলকূপ বসিয়েছিল একটি বেসরকারি সংস্থা। আশপাশের সবাই এখন সেই পানিই পান ও ব্যবহার করছেন। হাতে নিয়ে দেখা গেল, অগভীর নলকূপের এই পানি স্বাভাবিক পানির মতোই বর্ণহীন। তবে কলাপাড়ায় অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি আছে বলে জানালেন উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জিহাদ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সেখানকার সব নলকূপের পানি পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তবে যেগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে, সেগুলোকে লাল ও সবুজ রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।
চুলকানি তো লাইগ্গাই রইছে। হ্যার মইদ্যে আবার শুরু হইছে গ্যাস্ট্রিক। ডিপ টিউবলের পানির জন্যই এমন হইছে বইলা মনে হয়। হ্যার লাইগ্গা টিউবলের পানি খাওয়া শুরু করছি।ধুলাসার ইউনিয়নের কাউয়ার চরের বাসিন্দা আলাউদ্দিন চৌকিদারগত নভেম্বরে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে সাড়ে আট হাজারের বেশি মানুষ চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত আড়াই হাজার, মানে প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ সেখানে চুলকানির চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শংকর প্রসাদ অধিকারী। তিনি বলেন, ‘আমি এই হাসপাতালে যোগ দেওয়ার পর থেকেই চুলকানি ও অ্যালার্জিজনিত রোগী বেশি পাচ্ছি। এর মূল কারণ কী সে সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা নেই। তবে কলাপাড়ার ভূগর্ভস্থ পানির কারণে এটি হতে পারে বলে আমার সন্দেহ।’
আগে উল্লেখিত গবেষণায়ও এই পানির কারণে এসব স্বাস্থ্য সমস্যার কথা উঠে এসেছে। গবেষকেরা কলাপাড়া, বরগুনা সদর ও পাথরঘাটা উপজেলা থেকে ৯টি করে মোট ২৭টি গভীর নলকূপের পানি পরীক্ষা করেন। পাশাপাশি এসব পানি নিয়মিত পান এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহার করেন—এমন ৮১ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তবে গবেষণায় বলা হয়, কলাপাড়া ও পাথরঘাটা ছাড়া কেবল বরগুনা সদরের সাক্ষাৎকারদাতাদের বেশির ভাগ অ্যালার্জি, গ্যাস্ট্রিক, উচ্চ রক্তচাপ, মূত্রনালিতে জ্বালাপোড়া, ডায়াবেটিস, লাল রঙের প্রস্রাব, গরম অনুভূতি, লিভার সিরোসিস এবং ঘন ঘন মলত্যাগের চাপের মতো অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন।
গবেষণাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বরিশাল আঞ্চলিক পানি পরীক্ষাগারের জ্যেষ্ঠ রসায়নবিদ সামসুদ্দিন আহম্মদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পানি পরীক্ষার পাশাপাশি খুবই ছোট পরিসরে স্বাস্থ্যগত প্রভাব দেখার চেষ্টা করেছি। তাই সুনির্দিষ্ট কোনো প্রভাব সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা আমরা পাইনি। এ নিয়ে বড় পরিসরে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে জরিপ করা প্রয়োজন। রাসায়নিক উপাদান (লিগনিন) ঠিক কী কারণে ভূগর্ভের পানির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে, সেটি নিয়েও বড় পরিসরে গবেষণা প্রয়োজন।’
আমি এই হাসপাতালে যোগ দেওয়ার পর থেকেই চুলকানি ও অ্যালার্জিজনিত রোগী বেশি পাচ্ছি। এর মূল কারণ কী সে সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা নেই। তবে কলাপাড়ার ভূগর্ভস্থ পানির কারণে এটি হতে পারে বলে আমার সন্দেহ।স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শংকর প্রসাদ অধিকারীঅন্যান্য গবেষণা কী বলছে
উদ্ভিদ যখন বৃদ্ধি পায়, তখন এর কোষগুলোতে লিগনিন জমা হয়। কোষগুলোকে শক্ত করা ও উদ্ভিদের কাঠ গঠন করার কাজ করে এই লিগনিন। এ কারণে গাছ শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারে এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতা, যেমন পোকামাকড়ের আক্রমণ, ছত্রাকের সংক্রমণ এবং সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে।
দ্য আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন–এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিগনিন মানুষের পাকস্থলি, ক্ষুদ্রান্ত্র বা বৃহদন্ত্র কোথাও হজম হয় না। কিন্তু এটি শরীরের বিপাক প্রক্রিয়ার বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। বিপাকপ্রক্রিয়া এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে লিগনিন ও ট্যানিন উপকারী হতে পারে। তবে অতিমাত্রায় লিগনিন গ্রহণ করলে হজমের সমস্যা হতে পারে বলেও ১৯৭৮ সালের গবেষণাটিতে উল্লেখ করা হয়।
এর বাইরে কাঠ থেকে আহরিত লিগনিন খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহারের সম্ভাবনা দেখেছেন টেকনিক্যাল রিসার্চ সেন্টার অব ফিনল্যান্ডের গবেষক পিরিটা নিয়েমি। হাসান সদেগিফার ও আর্থার রাগাউসকাস নামের দুজন গবেষক লিগনিনকে অতিবেগুনি রশ্মির প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁরা এটিকে সানস্ক্রিন, প্যাকেজিং ফিল্ম, বার্নিশ, রং, জীবাণু সুরক্ষা থেকে শুরু করে লোশন ও ক্রিমের মতো বাণিজ্যিক পণ্যে ব্যবহারের বিষয়ও উল্লেখ করেছেন।
আবার পারসেম নামে নিউইয়র্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠান তাদের ‘সেফটি ডেটা শিটে’ লিগনিনকে চোখের জন্য অস্বস্তিদায়ক পদার্থ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। নিশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করলে শারীরিক অস্বস্তি, অতিমাত্রায় গিলে ফেললে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে সেখানে।
তবে কোনো গবেষণাতেই লিগনিনের ক্ষতি বা উপকারের বিষয়ে সরাসরি কোনো আলোচনা নেই। লিগনিনের বিষয়ে প্রায় সব গবেষকই পরবর্তী সময়ে আরও বিশদ গবেষণার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন।
পানির এই রঙের কারণে এত দিন মানুষের মধ্যে তেমন ভাবান্তর না হলেও কয়েক বছর ধরে কলাপাড়ার সচেতন মানুষেরা পানি নিয়ে উদ্বিগ্ন। খাওয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য পানি পরিশোধনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন তাঁরা।ভূগর্ভস্থ পানিতে গাছের জৈব রাসায়নিক উপাদানের সংমিশ্রণ নিয়ে জাপানে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের অধ্যাপক তাজউদ্দিন শিকদার। কলাপাড়ায় পানির বিশেষ ওই রং সম্পর্কে তিনি বলেন, লিগনিন বা ট্যানিনের মতো উদ্ভিদের রাসায়নিক উপাদানগুলো নির্দিষ্ট ফর্মে থাকে না। অন্যান্য পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়া করে একটা সময়ের পর সেটি পরিবর্তিত হয়।
২০১১–১২ সালের দিকে ইন্দোনেশিয়ার পিট ফরেস্টের ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে গবেষণা করার সময় তিনি গাছ থেকে পানিতে মিশে যাওয়ার পদার্থ পরীক্ষা করতে গিয়ে হিউমিক অ্যাসিডের উপস্থিতি লক্ষ্য করেন। তাজউদ্দিন শিকদার বলেন, গাছের বিভিন্ন উপাদান ভূগর্ভস্থ পানির সঙ্গে মিশে দীর্ঘমেয়াদি রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে এই হিউমিক অ্যাসিড তৈরি করেছিল। হিউমিক অ্যাসিড মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তিনি আরও বলেন, যেহেতু পটুয়াখালীর ভূগর্ভস্থ পানিতে গাছের রাসায়নিক যৌগ লিগনিন দ্রবীভূত হয়েছে, ফলে সেখানে রাসায়নিক বিক্রিয়া হলে পানিতে কোনো বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে কি না, সে ব্যাপারে বিশদ গবেষণা প্রয়োজন।
বিক্রি বেড়েছে পানি পরিশোধন যন্ত্রের
পানির এই রঙের কারণে এত দিন মানুষের মধ্যে তেমন ভাবান্তর না হলেও কয়েক বছর ধরে কলাপাড়ার সচেতন মানুষেরা পানি নিয়ে উদ্বিগ্ন। খাওয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য পানি পরিশোধনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন তাঁরা।
গত নভেম্বরে কলাপাড়া সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দিয়েছেন ফাতেমা হেরেন। কলেজে যোগ দেওয়ার পর তিনি প্রথমেই গভীর নলকূপ বন্ধ করে দিয়ে পানি পরিশোধনযন্ত্র স্থাপন করেছেন বলে জানান। ফাতেমা হেরেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কলাপাড়ায় এসেই প্রথম যে খটকাটা লাগে, সেটি পানি নিয়ে। পানির এমন রং দেখে প্রথম দিকে সেটি আমি ব্যবহারই করিনি। বোতলজাত পানি কেনা শুরু করি, পরে পানি পরিশোধনের যন্ত্র বসিয়েছি।’
কয়েক বছর আগেও কলাপাড়ায় পানি পরিশোধনযন্ত্রের তেমন চাহিদা ছিল না। তবে পাঁচ–ছয় বছর ধরে মানুষ এই যন্ত্র কিনছেন। বর্তমানে কলাপাড়া পৌরসভার সাত–আটটি দোকানে পানি পরিশোধনযন্ত্র বিক্রি হচ্ছে। তবে আনাস করপোরেশন নামের একটি দোকানের বিক্রি সবচেয়ে বেশি। কলাপাড়া প্রেসক্লাব ভবনের নিচতলার এই দোকান দুই বছর আগে চালু হয়। দুই বছরে দোকানটি থেকে তিন শতাধিক পানি পরিশোধনযন্ত্র বিক্রি হয়েছে বলে জানান দোকানমালিক জাকির হোসেন।
অধ্যাপক ফাতেমা হেরেন বলেন, পানির বিষয় নিয়ে সব মহলের সচেতন হওয়া দরকার। কেননা, পানির এই রং তো স্বাভাবিক না। এটার একটা সুরাহা না করে দিনের পর দিন এই পানি খাওয়া ও ব্যবহার করা উচিত হবে না। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
আমি কলাপাড়ায় এসেই প্রথম যে খটকাটা লাগে, সেটি পানি নিয়ে। পানির এমন রং দেখে প্রথম দিকে সেটি আমি ব্যবহারই করিনি। বোতলজাত পানি কেনা শুরু করি, পরে পানি পরিশোধনের যন্ত্র বসিয়েছি।কলাপাড়া সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ফাতেমা হেরেনউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ য ও পর ব ব যবহ র করছ ন প ন র এমন র প ন র এই র চ হ ন ত কর ব যবহ র র কল প ড় য় কল প ড় র র পর ম ণ র জন য পর ক ষ এই প ন পদ র থ কর ছ ন উপজ ল বরগ ন সরক র দশম ক সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ হল থেকে মোছা হলো শেখ পরিবারের সদস্যদের নাম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৩টি হল থেকে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম মুছে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার রাতের বিভিন্ন সময়ে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এর আগে রাত ৯টার দিকে ক্যাম্পাসে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাঙা ম্যুরালে ক্ষমতাচ্যুত সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার পোস্টার ঝুলিয়ে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে জুতা নিক্ষেপ করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত শেখ হাসিনার পোস্টারে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচিতে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীরা বলেন, সম্প্রতি ফ্যাসিবাদের মূল নায়ক হাসিনা ভাষণ দেওয়ার ঘোষণা দেন। তাই হাসিনার ঘৃণাসূচক প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এরপর একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ‘শেখ রাসেল হলের’ সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে ‘শেখ পরিবারের’ নামে কোনো স্থাপনা থাকবে না জানিয়ে ঘোষণা দেন তাঁরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভাষণ না জুতা, জুতা জুতা’; ‘ফ্যাসিবাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’; ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’; ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’; ‘দালালি আর করিস না, পিঠের চামড়া থাকবে না’; ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সবুজ রঙের কালিতে ঢাকা হয়েছে শেখ রাসেল হলের নামের একাংশ। আজ সকালে তোলা