বাজেট নিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে প্রস্তাব–সুপারিশ চাইল এনবিআর
Published: 6th, February 2025 GMT
আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে আয়কর–সম্পর্কিত বিভিন্ন আইন ও বিধি সংশোধন, সংযোজন বা পরিবর্তনের জন্য দেশের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রস্তাব ও সুপারিশ আহ্বান করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের কাছে গত সোমবার পাঠিয়ে তাদের প্রস্তাব ও সুপারিশ চেয়েছে এনবিআর। সংস্থাটি জানায়, রাজস্ব আহরণের অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে আয়করসহ অন্যান্য প্রত্যক্ষ কর জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। প্রত্যক্ষ করব্যবস্থাকে আরও যুগোপযোগী ও অংশীদারত্বমূলক করার লক্ষ্যে ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, রাজস্ব আদায় কার্যক্রমে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের প্রচেষ্টাকে এনবিআর অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। এ জন্য ব্যবসায়ীদের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে আয়করসহ অন্যান্য প্রত্যক্ষ করসংক্রান্ত আইন ও বিধির ওপর সুচিন্তিত মতামত, প্রস্তাব ও সুপারিশ আহ্বান করা হয়েছে।
বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতি, চেম্বার ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠানো চিঠিতে মোট চারটি বিষয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মতামত চেয়েছে এনবিআর। বিষয়গুলো হচ্ছে ২০২৩ সালের আয়কর আইন; ২০২৪ সালের উৎসে কর বিধিমালা ও অন্যান্য বিধিমালা; ২০০৩ সালের ভ্রমণ কর আইন এবং ১৯৯০ সালের দান কর আইন।
এসব বিষয়ে প্রস্তাব ও সুপারিশ করার জন্য চিঠিতে ছক তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এনবিআরের করনীতি শাখার কাছে (হার্ড কপি) সুপারিশ ও প্রস্তাব পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া সরাসরি ই–মেইলের মাধ্যমেও প্রস্তাব–সুপারিশ পাঠানো যাবে।
উল্লেখ্য, চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে শুল্ক–করে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত পূরণের জন্য। এর মাধ্যমে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে, যা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ছয় মাসে ব্যাংক থেকে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার
ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া বেড়েছে। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস জুলাই-ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলো থেকে সরকার ৬ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা নিট ঋণ নিয়েছে। এতে গত ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংক থেকে নেওয়া সরকারের ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা।
শুধু ব্যাংক নয়, সরকারের ব্যাংক-বহির্ভূত ঋণও বেড়েছে। চলতি প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ব্যাংকের বাইরে থেকে ২৪ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা নিট ঋণ নিয়েছে সরকার। যদিও গত অর্থবছরের একই সময়ে নিট ঋণ নেওয়া হয়েছিল ৭ হাজার ৯০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস জুলাই-ডিসেম্বরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা, যা এর আগের গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৯ গুণ বেশি। ওই সময়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৫৬ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের সরকারের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতেই চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার কোনো ঋণ নেয়নি; বরং গত জুলাই-ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংককে ৫৮ হাজার ১১৬ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে সরকার।
প্রতিবেদনের তথ্য হচ্ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকার বিশেষ বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সার ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ ১২ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। গত অর্থবছরে এ বাবদ ৩৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছিল সরকার।
অন্যদিকে ব্যাংকিং খাতের বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের সরকারি সিকিউরিটিজ কেনার আগ্রহ বাড়ার কারণেও ঋণ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ২৪ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ায় সরকারের ব্যাংক–বহির্ভূত মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ১৩০ কোট টাকা।
সাধারণত সরকার সঞ্চয়পত্র ইস্যুর মাধ্যমে ব্যাংক-বহির্ভূত উৎস থেকে ঋণ নেয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙানোর প্রবণতা বেড়েছে। সে জন্য চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ না বেড়ে উল্টো তা ২ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা কমেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে কমেছিল ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুযায়ী, পুরো অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। তার মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেবে ৯৯ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক–বহির্ভূত খাত থেকে ঋণ নেবে। যদিও অর্থবছরের প্রথমার্ধেই ব্যাংক–বহির্ভূত খাত থেকে ঋণ পুরো বছরের পরিকল্পনার চেয়ে ৬ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা ঋণ বেশি নিয়ে ফেলেছে।