রংপুরের পীরগঞ্জে ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ৫৫টি ইটভাটা। আইন অমান্য করে বনবিট এলাকা, বিদ্যালয়, সড়ক ঘেঁষে এসব ভাটা গড়ে উঠলেও ব্যবস্থা নেয় না প্রশাসন। এদিকে ভাটায় উর্বর মাটি ব্যবহার হওয়ায় কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালানো হলেও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ ভাটার কার্যক্রম।
পরিবেশ অধিদপ্তর-রংপুরের সহকারী পরিচালক কমল কুমার বর্মণের দাবি, নীতিমালার আলোকে ইটভাটা স্থাপন না করলে আবেদন করলেও ছাড়পত্র দেওয়া হয় না। এর পরও ছাড়পত্র ছাড়া ইটভাটা চালানোর অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযান চালিয়ে অবৈধ ও পরিবেশসম্মত নয়– এমন সব ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলায় ৫৫টি অবৈধ ইটভাটার মধ্যে ৪৪টিতে ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে। ১৯০টি ভাটা গড়ে উঠেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘেঁষে। চৈত্রকোল ইউনিয়নের ৯টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে পালগড় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শালটি শমস দিঘী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে রয়েছে মকবুল ইসলামের এমইউবি ভাটা; বড়দরগাহ্ ইউনিয়নের ডাসারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২শ মিটার দূরে জোয়াদ মণ্ডলের জেবিএফ ভাটা; কুমেদপুর ইউনিয়নের বাজে শিবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেঁষে রয়েছে সহকারী শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক সাজু মাস্টারের এবিএস নামে ২টি ভাটা। একই ইউনিয়নে রয়েছে ফারুক মণ্ডলের এফএমবি ভাটা। মদনখালী ইউনিয়নের কাদিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাদিরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, লক্ষ্মীপুর নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৫শ মিটারের মধ্যে রয়েছে শহিদুল ইসলাম, মাজহারুল ইসলাম মাস্টার এবং মোস্তাফিজার রহমান মানিক মণ্ডলের ভাটা। টুকুরিয়া ইউনিয়নের মোনাইল দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছাতুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছাতুয়া দাখিল মাদ্রাসা ও ছাতুয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক থেকে দেড়শ গজের মধ্যে সবুজ মিয়ার এসআরএম ইটভাটা।
বড়আলমপুর ইউনিয়নের তাঁতারপুর গুচ্ছগ্রাম সংলগ্ন আবুল কালামের পিকেবি ভাটা, পীরগঞ্জ সদর ইউনিয়নে মকিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গঙ্গারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১শ মিটারের মধ্যে দুটি ইটভাটা রয়েছে। শানেরহাট ইউনিয়নের ২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘেঁষে রয়েছে এইচএনআর ভাটা ও জোয়াদ মণ্ডলের জেবিএফ ভাটা। মিঠিপুর ইউনিয়নে একবারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে সাদেকুল ইসলাম সাদার এমএস ব্রিকস, কাশিমপুর দারুল আমান দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৩০ মিটার দূরে আনিছার রহমানের পিবিএস নামে ইটভাটা রয়েছে। চতরা ইউনিয়নের চতরা উচ্চ বিদ্যালয়, চতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চতরা আলিম মাদ্রাসা, চতরা এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং, চতরা ২০ শয্যা মা ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মাত্র ২শ গজের মধ্যে রয়েছে অনিক ব্রিক্স।
এসব ভাটার সামনে নামমাত্র কয়লা রেখে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ। ধোঁয়ায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ভাটার কাঠ, মাটি পরিবহনে নিয়োজিত গাড়ি চলাচলের সময় ধুলাবালি ওড়ে সব সময়। ধুলাবালি ও ধোঁয়ায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ইট, মাটি পরিবহনে ব্যবহৃত ভারী যানবাহনে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তা। ছোট-বড় গর্ত আর মাটি-কাদায় পিচ্ছিল রাস্তায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
এমএসপি ইটভাটার মালিক ফারুক মণ্ডল, ইএসপির আফতাবুজ্জামান আতা ও এমএইচবির মিজানুর রহমান জানান, তারা কাঠ খুব একটা ব্যবহার করেন না। তবে আগুন ধরে রাখতে কয়লার পাশাপাশি খড়ির ব্যবহার করতেই হয়।
কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান জানান, ইটভাটায় কৃষিজমির উর্বর মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব জমিতে অতিরিক্ত খরচ করে চাষাবাদ হলেও কাঙ্ক্ষিত ফসল পাওয়া যায় না।
বন কর্মকর্তা মিঠু তালুকদার জানান, ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো নিষেধ। এর পরও অনেকে ভাটার সামনে কয়লা সাজিয়ে রেখে কাঠ ব্যবহার করছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা বেগম জানান, কিছু ভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইট ভ ট প র সরক র ল ইসল ম ছ ড়পত র ইটভ ট
এছাড়াও পড়ুন:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ হল থেকে মোছা হলো শেখ পরিবারের সদস্যদের নাম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৩টি হল থেকে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম মুছে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার রাতের বিভিন্ন সময়ে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এর আগে রাত ৯টার দিকে ক্যাম্পাসে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাঙা ম্যুরালে ক্ষমতাচ্যুত সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার পোস্টার ঝুলিয়ে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে জুতা নিক্ষেপ করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত শেখ হাসিনার পোস্টারে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচিতে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীরা বলেন, সম্প্রতি ফ্যাসিবাদের মূল নায়ক হাসিনা ভাষণ দেওয়ার ঘোষণা দেন। তাই হাসিনার ঘৃণাসূচক প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এরপর একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ‘শেখ রাসেল হলের’ সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে ‘শেখ পরিবারের’ নামে কোনো স্থাপনা থাকবে না জানিয়ে ঘোষণা দেন তাঁরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভাষণ না জুতা, জুতা জুতা’; ‘ফ্যাসিবাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’; ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’; ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’; ‘দালালি আর করিস না, পিঠের চামড়া থাকবে না’; ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সবুজ রঙের কালিতে ঢাকা হয়েছে শেখ রাসেল হলের নামের একাংশ। আজ সকালে তোলা