ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘বৃত্তের বাইরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষার প্রশংসা’ করলে তিনি তা উপভোগ করেন।  যখন এটি গাজার প্রসঙ্গে এলো, অর্থাৎ মঙ্গলবার ট্রাম্প যেভাবে তাঁর পরিকল্পনার কথা জানালেন, তাতে তিনি বৃত্তের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে মনে হয়নি; এটা স্পষ্টত ছিল পুরো বৃত্তকেই অস্বীকার করা। 

গতকাল বুধবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন পিটার বেকার, যিনি ১৯৯৬ সাল থেকে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্টদের অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহ করে আসছেন। এতে বলা হয়, গাজা দখল করে এর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া, ফিলিস্তিনিদের আবার বাস্তুচ্যুত করা এবং পুরো উপত্যকাকে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে মনোরম স্থানে পরিণত করতে ট্রাম্পের পরিকল্পনার ঘোষণা যেন তাঁর কোনো টেলিভিশন শোয়ের মতো বিষয়! এক বা দুই দশক আগে তিনি এসব শো করতেন। গাজা নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা উস্কানিমূলক, অস্বাভাবিক, ষড়যন্ত্রমূলক ও আপত্তিকর; মোটেও প্রেসিডেন্টসুলভ নয়।  

হোয়াইট হাউসের এ মেয়াদে ট্রাম্প আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি নির্লজ্জ ধারণার দিকে এগোচ্ছেন। তিনি উনিশ শতকের প্রথাগত উপনিবেশবাদী বৈশ্বিক মানচিত্রের দিকেই আবার যুক্তরাষ্ট্রকে টেনে নিচ্ছেন। প্রথমত, তিনি গ্রিনল্যান্ড কেনার কথা বলেন; তারপর কানাডায় আগ্রাসনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন; তিনি পানামা খালের নিয়ন্ত্রণও চান। এরই মধ্যে ট্রাম্প মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে ‘আমেরিকান উপসাগর’ করার প্রস্তাব করেছেন। এবার তিনি মধ্যপ্রাচ্যের ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি যুদ্ধক্ষেত্রকে দখলের পরিকল্পনার কথা বলছেন। এর আগে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমন পরিকল্পনা নেননি।    

কোন আইনে ট্রাম্প এটা করবেন, তার কোনো বিবরণ তিনি দেননি। এমন কোনো আইন নেই, যা যুক্তরাষ্ট্রকে আরেক জনেগোষ্ঠীর ভূমি দখল অথবা জোরপূর্বক সেখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে দেওয়ার অনুমতি দেয়। এটা করলে তা হবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। বলা বাহুল্য, ২০ লাখ ফিলিস্তিনিকে পুনরায় স্থানান্তর হবে বিশাল পরিবহন ও আর্থিক চ্যালেঞ্জের কাজ। এর জন্য প্রয়োজন পড়বে হাজার হাজার মার্কিন সেনার। এ ছাড়া সহিংস সংঘাত তো ঘটবেই। 

এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর আমেরিকান প্রগ্রেসের জ্যেষ্ঠ ফেলো সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও জো বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা এন্ড্রু মিলার বলেন, ‘এটা বাস্তবিক অর্থে অত্যন্ত ধারণাতীত একটি নীতির প্রস্তাব, যা এর আগে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে আমি শুনিনি।’ 

এদিকে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ দিন ধরে ট্রাম্প গাজা নিয়ে আকাশকুসুম পরিকল্পনার কথা জানিয়ে আসছেন। তিনি বলছেন, গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, এটা পরিষ্কার করতে হবে। এ জন্য সেখানকার সব বাসিন্দাকে সরে যেতে হবে। মিসর ও জর্ডান যেন তাদের নিয়ে নেয়। এরই মধ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। সফরকালে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক হয় নেতানিয়াহুর। এর পরই তিনি নতুন বার্তা দিলেন। তা হলো, যুক্তরাষ্ট্র পুরো গাজা দখল করে নেবে। 

হালকাভাবে বিষয়গুলো বলছেন, শুরুতে এমনটা মনে হলেও এখন এটি নিয়ে তাঁর কঠোর হওয়ার বার্তা প্রকাশ পাচ্ছে। এ দুই নেতা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন নিয়ে সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। তারা আন্তর্জাতিক আইনের মুখে চপেটাঘাতের পরিকল্পনা করছেন। 

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, জোরপূর্বক কোনো এলাকার মানুষকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ফিলিস্তিনি ও আরবরা এটাকে ‘জাতিগত নিধন’ ছাড়া অন্য কিছু হিসেবে দেখছেন না। এ কারণে আরব দেশগুলো কঠোরভাবে এর বিরোধিতা করে আসছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

গাজীপুরে নিলামের টাকা আত্মসাত করল বিএনপি নেতা

গাজীপুরের শ্রীপুরে মো. মাইজ উদ্দিন (৫০) নামের এক বিএনপির নেতার বিরুদ্ধে মাদ্রাসার আধা পাকা ভবন ও নিলামে গাছ বিক্রির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার (৯ মার্চ) সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে উপজেলার নান্দিয়া সাঙ্গুন আদর্শ দাখিল মাদ্রাসার সহ সুপার আবু হায়দার মো. নোমান লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযুক্ত মাইজ উদ্দিন উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে ও কাওরাইদ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসার আধা পাকা পুরনো টিনশেড ঘর ও গাছ বিক্রির নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় নিলামের জামানতের টাকাগুলো মাদ্রাসার মাওলানা নূরুল হকের কাছে জমা রাখা হয়। বিএনপির নেতা লোকজন নিয়ে এসে শিক্ষকের কাছে রাখা টাকাগুলো নিয়ে যান।

আরো পড়ুন:

নারী-শিশুদের প্রতি বাড়তে থাকা সহিংসতা উদ্বেগজনক: সালাহউদ্দিন

আ.লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার নিয়ে রাজশাহীতে বিএনপির ২ পক্ষের সংঘর্ষ

নান্দিয়া সাঙ্গুন আদর্শ দাখিল মাদ্রাসার সহ সুপার আবু হায়দার মো. নোমান অভিযোগ করে জানান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সামনে খোলা নিলাম হয়। সেখানে ৬ জন জামানত জমা দেন। তাদের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যক্তির টাকা জামা রাখা হয় মৌলভী শিক্ষকের কাছে। শিক্ষা কর্মকর্তা চলে যাওয়ার পর বিএনপির নেতা লোকজন নিয়ে এসে নিলামের টাকা নিয়ে যান। টাকা ফেরত চাইতে গেলে হুমকি দেন।

শ্রীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘মাদ্রাসার নিলামের টাকা লুটের বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে আমাকে জানানো হয়েছে। লুট হওয়া টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’’ 

এ ব্যাপারে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, ‘‘মাদ্রাসার নিলামের জামানতের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’
 

ঢাকা/রফিক/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ