ইতালিতে ভাগ্য পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে যাত্রাপথে লিবীয় উপসাগরে নৌকা ডুবে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে মাদারীপুরের সুজন ফরাজীসহ বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি তরুণের। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের ময়দানে ড্রোন হামলার শিকার হয়ে নিহত হন নাটোরের হুমায়ুন কবির। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দালালদের প্রতারণার শিকার হয়ে ভাগ্যান্বেষী তরুণদের মৃত্যু নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, ইতালি গিয়ে ভাগ্য ফেরাতে চেয়েছিলেন সুজন ফরাজী। বাবা রাজি না হওয়ায় তাঁকে না জানিয়ে ফুফুর কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা নিয়ে সুজন ফরাজী ইতালি যাত্রা করেছিলেন। কিন্তু ইতালি যাওয়া তাঁর হয়নি। ৫৬ জন আরোহী নিয়ে নৌযানটি ২৫ জানুয়ারি ভূমধ্যসাগরে ডুবে গেলে ২৩টি লাশ সৈকতে ভেসে আসে। এর মধ্যে সবাই যে ডুবে মারা গেছেন, তা নয়। ফরিদপুরের কামারখালীর হৃদয় হাওলাদারের বাবা মিন্টু হাওলাদার জানিয়েছেন, ২৪ জানুয়ারি রাতে তাঁদের জাহাজে করে ইতালি নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ছোট বোটে করে নিতে চাইলে অনেকে বোটে উঠতে চাননি। যাঁরা উঠতে চাননি, তাঁদের গুলি করে হত্যা করেছে। যাঁরা উঠেছেন, তাঁরা ডুবে মারা গেছেন।

কী ভয়াবহ পরিস্থিতি! যে দালালদের খপ্পরে পড়ে দেশের তরুণেরা বিদেশে গিয়ে হারিয়ে যান, তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। জনশক্তি রপ্তানির নামে একশ্রেণির দালাল বিদেশে ভাগ্যান্বেষী তরুণদের খুঁজে বের করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার মজুমদারকান্দি এলাকার মনির শেখ নামের এক দালাল সুজনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকায় ইতালি নেওয়ার চুক্তি করেছিলেন। লিবিয়ায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মাদারীপুর ও ফরিদপুরের অন্তত ১২ জন আছেন বলে স্বজনদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

দালালদের একটি চক্র লিবিয়ায় ইতালিগামী তরুণদের বন্দিশিবিরে আটক করে নির্যাতন চালায়। দেশে থাকা স্বজনদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করার পরই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, গত দেড় বছরে লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশালা থেকে মুক্ত করে ৪ হাজার ২০০ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এখনো হাজারের বেশি অবৈধ বাংলাদেশি আটকে আছেন লিবিয়ায়। ১০ বছর ধরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে যাঁরা ইউরোপে যান, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৮৪ হাজার বাংলাদেশি এভাবে সমুদ্রপথে ইউরোপে গেছেন। প্রতিবছর গড়ে অন্তত ১০০ বাংলাদেশি নৌকা ডুবে মারা যান।

অভিবাসনবিষয়ক বিশ্লেষক আসিফ মুনির ডয়চে ভেলেকে বলেন, এর সঙ্গে শুধু দেশীয় নয়, আন্তর্জাতিক চক্রও জড়িত। প্রত্যেকের ১৬ থেকে ২০ লাখ টাকা লাগে। কিন্তু এই টাকা খরচের পর অনেকেই বিপদে পড়েন, মারা যান, বন্দী হন, ক্যাম্পে আটক হন।

সরকার আন্তর্জাতিক চক্রকে ধরতে না পারলেও দেশি চক্রকে তো ধরতে পারে। সরকার কি কেবল হতভাগ্য যুবকদের লাশ দেশে এনে দায়িত্ব শেষ করবে? যারা ভাগ্যান্বেষী তরুণদের বিদেশে নিয়ে লাশ বানায়, তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেবে না? এই দালাল চক্রের পেছনে কিছু অনুমোদিত জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জড়িত, যাদের মাধ্যমে তারা বিদেশে লোক পাঠিয়ে থাকে।

অতীতে এ রকম অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কেননা এ চক্রের সঙ্গে জড়িতদের অনেকেই ছিলেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত প্রভাবশালী। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি নিতে হবে।

বিদেশে মানব পাচার বন্ধ করতে হলে এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতেই হবে। বাংলাদেশি তরুণদের এই মৃত্যুযাত্রা সরকারকে অবশ্যই থামাতে হবে। তরুণদের জন্য ভালো কর্মসংস্থান সৃষ্টিই এই মৃত্যুযাত্রা থামানোর সবচেয়ে ভালো বিকল্প।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আট মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১১২৪ কোটি টাকা

চলতি অর্থবছরের আট মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জে রেমিট্যান্স এসেছে ৯২ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ১২৪ কোটি ৫২ লাখ ৫৯ হাজার ৭২৮ টাকা। এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে গত আগস্ট মাসে—১৪ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। চলতি অর্থবছরে জনশক্তি রপ্তানিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ নবম স্থানে আছে বলে জানিয়েছে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস।

সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রবাসে যাওয়ার প্রবণতা শুরু হয় আশির দশকে। নব্বইয়ের দশকে বিদেশগামীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ভর করে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি উৎপাদন, শিক্ষা ও চিকিৎসা সব ক্ষেত্রেই পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। জেলার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন প্রবাসীরা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তের পর অনেকে জেলে গেছেন বা এলাকা ছেড়েছেন। ফলে, হুন্ডি মার্কেট এখন আগের মতো নেই। হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা কমেছে। তাই, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসছে বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার, আগস্ট মাসে ১৪ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার, সেপ্টেম্বরে ১৩ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার, অক্টোবরে ১১ মিলিয়ন ডলার, নভেম্বরে ৯ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, ডিসেম্বরে ১৩ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৯ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১১ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৯ কোটি ২০ লাখ ডলার। 

আরো জানা গেছে, গত চার অর্থবছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে—১১৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০২ মিলিয়ন ডলার, ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৯১ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় এসেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে।

জেলা কর্মস্থান ও জনশক্তি অফিসের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রায় ৩২ হাজার ৫০০ জন বিদেশে গেছেন। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মো. আখলাক-উজ-জামান জানিয়েছেন, এ জেলা থেকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৮৩৭ জন ও ফেব্রুয়ারিতে ৪৪০ জনকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। 

তিনি বলেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন ও অভিবাসী কর্মীদের কল্যাণ ও নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করাই আমাদের কাজ। বিশ্ববাজারের চাহিদার ভিত্তিতে যথাযথ কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং সুষ্ঠু ও সুসংহত অভিবাসন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কর্মপ্রত্যাশীদের নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

ঢাকা/শিয়াম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সৌদি রাষ্ট্রদূতকে আরও বেশি জনশক্তি নেওয়ার আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
  • এআই’র তৈরি ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ায় আত্মহত্যা করেন সুলতানা, দাবি স্বজনদের
  • অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতাল ঘেরাও স্বজনদের
  • চাঁপাইনবাবগঞ্জে আট মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১১২৪ কোটি টাকা