Prothomalo:
2025-02-06@06:14:58 GMT

যৌক্তিক সমাধানে আসাটা জরুরি

Published: 6th, February 2025 GMT

চাকরিতে কোটা সংস্কারে শুরু হওয়া আন্দোলন দেশে অভূতপূর্ব একটি অভ্যুত্থানের ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই সেই আন্দোলন শুরু করেছিলেন। দুঃখজনক হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতেই এখনো অযৌক্তিক কোটাপদ্ধতি থেকে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নিয়ে বিতর্ক আগেও ছিল, এখন আরও বেশি জোরালো হয়েছে। ইতিমধ্যে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি আশাব্যঞ্জক।

ভর্তি পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য আলাদা কোটা সংরক্ষিত আছে, যেটি পোষ্য কোটা নামে পরিচিত। আর্থসামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকা শিক্ষক–কর্মকর্তাদের সন্তানেরা কেন এই কোটাসুবিধা ভোগ করবেন, তা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে। কারণ, কোটা হচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য। তবে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মতো একেবারে নিম্নশ্রেণির কর্মচারীদের জন্য সেটি ভেবে দেখা যেতে পারে। কারণ, সেসব পরিবার শিক্ষাদীক্ষায় পিছিয়ে থাকে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম পরিচ্ছন্নতাকর্মীই থেকে যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের মুখে পোষ্য কোটা বাদ দেওয়া হলেও সেই সব নিম্নশ্রেণির কর্মচারীর কথা বিবেচনা করে তাঁদের জন্য সামান্য কোটা রাখা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে প্রতিবাদের মুখে সেই কোটাও বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এবার শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখোমুখি অবস্থানের মুখে পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক যে সুবিধা রয়েছে, সেটা বিবেচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠনের কথাও উল্লেখ করা হয় সিদ্ধান্তে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কয়েকজন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে অনশনে বসার পর সোমবার এ ঘোষণা দেন উপাচার্য। ওই ঘোষণায় অনির্ধারিতসংখ্যক পোষ্য কোটার পরিবর্তে ৪০টি কোটার কথা উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া একজন ব্যক্তি একবারের জন্য এ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা ওই অনশন ভাঙেন।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্ত মেনে নেননি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং পরদিন তাঁরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। সেখানে কর্মকর্তা–কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে পুরো পোষ্য কোটাপদ্ধতি বাতিলের দাবিতে আবার বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণার পর আনন্দ প্রকাশ করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁরা এখন সন্দেহ প্রকাশ করছেন।

যা–ই হোক, আমরা আশা করব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উভয় পক্ষের সঙ্গে বসে এবং সবার সম্মতি নিয়ে একটি যৌক্তিক সমাধানে আসবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন। আমরা মনে করি, পোষ্য কোটা নিয়ে প্রশ্নের সুরাহা হওয়া উচিত। বৈষম্যমূলক কোনো কোটাব্যবস্থা থাকতে পারে না। যুক্তিতর্ক ও আলোচনার মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

পোষ্য কোটা নিয়ে মুখোমুখি জাবির শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

পোষ্য কোটা বাতিল ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবস্থান নেন।

এরপরই দুপুর পৌনে ২টার শিক্ষার্থীরা বটতলা থেকে একটি মিছিল বের করে বিভিন্ন হল, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে অবস্থান নেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।  

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীদের অনশনের মুখে পোষ্যকোটা সংস্কারের প্রতিবাদে কর্মবিরতি ঘোষণা করে মিছিল নিয়ে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে আসেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেখানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনা জানাজানি হলে দুপুর পৌনে ২টার বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বটতলা এলাকা থেকে একটি মিছিল নিয়ের করে বিভিন্ন হল, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের দাবিতে মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা মেরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরোধ করে রাখেন।

বিক্ষোভে ‘দাবি মোদের একটাই পোষ্য কোটার বাতিল চাই’, ‘হলে হলে খবর দে পোষ্য কোটার কবর দে’, ‘সংস্কার না বাতিল,  বাতিল বাতিল’, ‘শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

এর আগে, সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১২ টায় পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে অনশনরত শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক সংস্কারের আশ্বাস দিলে অনশন কর্মসূচি থেকে সরে আসেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। 

এদিকে, বিকেলে উপাচার্য রেজিস্ট্রার, ট্রেজারার ও প্রক্টরসহ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে এলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের উপর্যুপরি স্লোগানে উপাচার্য কোন কথা বলতে পারেননি। তবে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের মাঝে ছাত্রদলের কর্মীরা প্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা করেছেন বলে অভিযোগ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে চার দফা দাবি উত্থাপন করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দাবি না মানা হলে পরবর্তীতে আরো কঠোর কর্মসূচিতে দেওয়ার হুশিয়ারি দেন তারা।

দাবিগুলো হলো- পৌষ্য কোটা সম্পূর্ণ  বাতিল করতে হবে; আজ যারা কর্মচারীদের আন্দোলন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ ও শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের চিহ্নিত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চাকরিচ্যুত করতে হবে; পরবর্তীতে কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারী যদি ক্যাম্পাস অচল করার ঘোষণা দেয় তাদেরও চাকরিচ্যুত করতে হবে এবং ব্যাংক হিসাব স্থগিত করতে হবে।

আন্দোলনরত ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহরাব তূর্য বলেন, “দুদিন অনশন করার পর প্রশাসন যৌক্তিক সংস্কারের আশ্বাস দিলে আমরা কর্মসূচি স্থগিত করি। এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে আজ কর্মকর্তা–কর্মচারীরা মিছিল করে এবং আমাদের একজন শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করেন। এখন আমাদের একটাই দাবি, পোষ্য কোটা বাতিল করতে হবে। উপাচার্য কোন সিদ্ধান্ত দিতে না পারলে আমরা আগামীকাল থেকে পুরো জাহাঙ্গীরনগর অচল করে দেব।”

কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভে অফিসার সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান বাবুল উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। তিনি আশুলিয়া থানা বিএনপির সহ-সভাপতি এবং তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বহিষ্কৃত কর্মকর্তা।

আন্দোলন নিয়ে শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সোহেল রানার ফেসবুক পোস্ট

এছাড়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গুপ্ত সংগঠনের এ, বি, সি টিম বলে অভিহিত করেছেন শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সোহেল রানা। এক ফেসবুক পোস্টে এ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ভিডিওচিত্র শেয়ার দিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।

অন্যদিকে, পোষ্য কোটার জন্য আগের সব সুযোগ-সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে বুধবার থেকে লাগাতার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কর্মকর্তা–কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুর রহমান বাবুল বলেন, “পোষ্য কোটা একটি প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা। বাংলাদেশের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই এ সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। যতদিন পর্যন্ত পূর্বের সুযোগ-সুবিধা পুনর্বহাল করা না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের লাগাতার কর্মবিরতি চলবে।”

বিকেল সাড়ে পাঁচটায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রশাসনিক ভবন ছেড়ে চলে গেলেও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সেখানেই অবস্থান করতে দেখা গেছে। সমস্যার সমাধানে শিক্ষার্থীদের কাছে সময় চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সেই বহিষ্কৃত প্রভাষক তামান্না গ্রেপ্তার
  • দ্বিতীয় দিনের মতো অনশনে মিল্ক ভিটার শ্রমিকরা
  • চাকরি স্থায়ীর দাবিতে মিল্ক ভিটা শ্রমিকদের অনশন
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা
  • পোষ্য কোটা নিয়ে মুখোমুখি জাবির শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
  • আজও জড়ো হচ্ছেন তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা, ষষ্ঠ দিনে গড়াল অনশন