‘আমি ২০০৫ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তাম। সেবার শেষবারের মতো আমাদের প্রকাশনীকে বইমেলায় অংশ নিতে দেখেছি। এই ২০২৫ সালের বইমেলায় দেখছি ও বিক্রি করছি আমাদের প্রকাশনীর বই।’ আইসিএল পাবলিকেশনের প্রতিনিধি ওয়াহেদুজ্জামান আহমেদ ২২ বছর পর মেলায় অংশ নিতে পেরে গতকাল বুধবার এ অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
প্রথম দিন থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণে আইসিএল পাবলিকেশনের স্টলে পাঠকের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এ ছাড়া স্টলের পাশে একটা ছবি তোলার বুথ করা হয়েছে, সেখানে আগ্রহ নিয়ে সব বয়সীকে ছবি তুলতে দেখা যায়।
এ বছর ৪০-এর অধিক ইসলামিক বইয়ের স্টল মেলায় স্থান পেয়েছে। বিগত সময়গুলোতে এরা বাধার সম্মুখীন হতেন বলে অভিযোগ ছিল। এবার সেই বাধার জায়গাটা আর দেখা যাচ্ছে না। পাঠকের মধ্যেও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
‘পাঠকরা বই ও লেখকের নাম উল্লেখ করে জিজ্ঞেস করছে, আছে কিনা’– পাঠকের বই খোঁজার বিষয়ে জানতে চাইলে এ কথা জানান সিয়ান পাবলিকেশন লিমিটেডের বিক্রয় প্রতিনিধি শাব্বির আহমাদ। তাদের প্রকাশনীর ওয়েবসাইটে যেমন বই খোঁজ করছেন পাঠক, তেমনি মেলায়ও এসে খুঁজছেন। এটি সবচেয়ে বেশি আশাব্যঞ্জক দিক হিসেবে দেখছেন তিনি।
আলোর ভুবন প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মো.
মাঝবয়সী পাঠকের মধ্যে বেশি ধর্মীয় বই খোঁজা ও কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখা গেছে। নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাঠক বলেন, ‘আগের মেলাগুলোতে তো ইসলামী বই ট্যাবুর মতো ছিল। এসে খুঁজতে গেলে পাশের মানুষ আড়চোখে তাকাত, যেন অ্যালিয়েন আমি। এবার সেখান থেকে একটু স্বস্তি পেয়েছি। নিজের পছন্দমতো বই খুঁজতে পারছি।’
মোড়ক উন্মোচন
লেখক ও সাংবাদিক আহম্মদ ফয়েজের ২৫টি দৈনিক পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠার প্রতিবেদন নিয়ে ‘সংবাদপত্রে জুলাই অভ্যুত্থান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। বাংলা একাডেমির শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে গতকাল বিকেল ৪টায় বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন। প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ এবং সাংবাদিক সালাউদ্দিন শুভ্রসহ অনেকে বক্তব্য দেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনে সংবাদমাধ্যমগুলোর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ভূমিকাই ছিল। ১৪ জুলাই পর্যন্ত কোটা আন্দোলন ছিল। ১৬ জুলাই থেকে সেটি সরকার পতনের আন্দোলনের দিকে ধাবিত হয়। এরপর পত্রিকাগুলো নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে শুরু করে। অনেকে অনলাইন থেকে তাদের প্রতিবেদন সরিয়ে নিলেও পত্রিকাগুলো আমরা আর্কাইভ করার ব্যবস্থা করে রাখি। ডিজিএফআই পত্রিকাগুলো চালাত। তারা আমাদের বিরুদ্ধে লিখতে বাধ্য করত। সে সময় যেসব গণমাধ্যম সরকারের পক্ষে কাজ করেছে, সেটি বাধ্য হয়ে বা আদর্শিক কারণে হোক, সে বক্তব্য তারা প্রকাশ করছে না।’
৯৮টি নতুন বই
মেলায় গতকাল নতুন বই এসেছে ৯৮টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হোসেন আবদুল মান্নানের স্মৃতিকথা ওস্তাদ, বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত জোবাইদা নাসরীনের গবেষণাধর্মী বই নারী ও লিঙ্গ রাজনীতি, পাঠক সমাবেশ থেকে প্রকাশিত সতীনাথ ভাদুড়ির উপন্যাস ঢোঁড়াই চরিত মানস, শোভা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত আবদুল হাই শিকদারের প্রবন্ধ গ্রন্থ জ্যোতির্ময় জিয়া এবং কালো মেঘের দল।
মঞ্চে ছিলেন যারা
গতকাল বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘হোসেনউদ্দীন হোসেন : প্রান্তবাসী বিরল সাহিত্য-সাধক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। শহীদ ইকবালের সভাপতিত্বে এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আহমেদ মাওলা। আলোচনায় অংশ নেন আবুল ফজল।
আহমেদ মাওলা বলেন, গভীর জীবনবোধ, ইতিহাস-চেতনা এবং প্রাগ্রসর চিন্তাশক্তি হোসেনউদ্দীন হোসেনকে সৃষ্টিশীল ও বিরল সাহিত্য-ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। কৃষক পরিবারের সন্তান পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন তিনি। তাঁর কর্মজীবন যেমন বৈচিত্র্যময়, লেখালেখির ক্ষেত্রেও ছিলেন বহুমুখী।
আবুল ফজল বলেন, হোসেনউদ্দীন হোসেন মানুষ হিসেবে ছিলেন অত্যন্ত সাধারণ। বিস্তৃত পঠন-পাঠন ও জ্ঞানের গভীরতা তাঁর লেখালেখির জগৎকে সমৃদ্ধ করেছে।
সভাপতির বক্তব্যে শহীদ ইকবাল বলেন, হোসেনউদ্দীন হোসেন ছিলেন একজন সহজাত লেখক। কবিতা দিয়ে সাহিত্যজীবন শুরু করলেও গদ্যের জগতে প্রতিভার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন।
গতকাল ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন এবং কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক শিবলী আজাদ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি আতাহার খান এবং আলমগীর হুছাইন। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী বুলবুল ইসলাম, মো. আরিফুর রহমান, তাপসী রায়, পাপড়ি বড়ুয়া, ফারাহ হাসান মৌটুসী, মো. হারুনুর রশিদ, কামাল আহমেদ ও নুসরাত বিনতে নূর।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল আহম দ ইসল ম বইয় র গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
বিচার ও স্বীকৃতি দাবি, অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের শাহবাগ অবরোধ
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যরা গণহত্যার বিচার ও সরকারি স্বীকৃতির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে তারা এই অবরোধ করেন। এতে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন সাধরণ জনগণ।
এসময় তারা শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করারও আহ্বান জানান।
পরিবারগুলোর অভিযোগ, তারা গত কয়েক মাস ধরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করা চেষ্টা করে আসছেন, তবে তাদের সে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
তাদের দাবিগুলো হচ্ছে— প্রতিটি হত্যার বিচারের লক্ষ্যে আসামিদের ১০ দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার নিশ্চিত করতে হবে; শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে; শহীদ পরিবারের দ্রুত পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়া শহীদ পরিবারের ন্যায্য সম্মানি শহীদ পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে প্রদান করতে হবে; শহীদ পরিবারের মাসিক সম্মানীর দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে এবং শহীদদের বীরের মর্যাদা দিতে হবে।