গোপালগঞ্জে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় কলেজ ছাত্র দুই বন্ধু নিহত হয়েছেন।  

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহত দুই বন্ধু হলেন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের ইরাজ খানের ছেলে ওয়ালিদ খান (১৯) ও একই গ্রামের হুমায়ুন মোল্লার ছেলে সিয়াম মোল্লা (১৯)। তারা দু’জনেই কাশিয়ানীর রামদিয়া সরকারী কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান জানান, গোপালগঞ্জ শহর থেকে দুই বন্ধু মোটর সাইকেলে বাড়ি যাচ্ছিল। এ সময় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপীনাথপুরে পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটর সাইকেলটি মহাসড়কের পাশের খাদে পড়ে যায়। এতে দুজন মারত্মক আহত হন। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ওয়ালিদ খানকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত সিয়াম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। 

বাদল//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ প লগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

সম্প্রসারণবাদী নীতির পথে কি হাঁটছেন ট্রাম্প  

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকস্মিক বক্তব্য বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দিয়েছে। হঠাৎ করেই তিনি বলে বসলেন, তিনি চান, যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিক এবং এর পুনর্গঠন করুক। আপাত তাঁর এই বক্তব্য আকস্মিক মনে হলেও আসলে মোটেই তা নয়। ট্রাম্প প্রশাসনের সম্প্রসারণবাদী আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হচ্ছে তাঁর এই বক্তব্য।

ট্রাম্প দুই সপ্তাহের কিছুটা বেশি সময় আগে দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে ফিরে এসেছেন। এর পর থেকে তিনি ও তাঁর প্রশাসনের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে, তাঁর ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতি ‘আরও আমেরিকা’ নীতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন নতুন ভূখণ্ড যুক্ত করার কথা বলছেন। আবার তিনি বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের বিষয়ে হস্তক্ষেপ বা চিরস্থায়ী যুদ্ধে জড়াবেন না বলছেন।

গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে� গাজাকে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টি তোলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভবিষ্যতে সেটিকে একটি অবকাশযাপন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। তাঁর মতে, সেখানে সারা বিশ্বের মানুষ সম্প্রীতির পরিবেশে বসবাস করবেন।

ট্রাম্পের এই বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বজুড়ে মানুষকে বিস্মিত ও হতবিহ্বল করে তুলেছে। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্পের কথাবার্তা বিশেষ করে কানাডা–মেক্সিকোর মতো ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গে দেওয়া–নেওয়ার ভাষায় যেভাবে কথা বলছেন, তাতে একটা জিনিস পরিষ্কার—তিনি ব্যবসায়িক সুবিধা আদায়কে বড় করে দেখছেন। গত সোমবার ‘মার্কিন সার্বভৌম সম্পদ তহবিল’ গঠনের প্রস্তাব থেকে এই বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে উঠেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনার কথা তুলেছেন। ডেনমার্ক থেকে গ্রিনল্যান্ড কিনে নেওয়ার বা জোর করে নেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হওয়ার কথা বারবার বলেছেন। রয়টার্স/ইপসস জরিপে কানাডাতো বটেই, খোদ তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টির মধ্যেও এর পক্ষে সমর্থন খুব একটা নেই।

একই সময়ে ট্রাম্প তাঁর সীমান্ত নিরাপত্তার দাবি মেনে না নিলে কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর অর্থনৈতিক খড়্গ চাপিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

ট্রাম্প গাজায় বসবাসরত ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে অন্য কোথাও পাঠানোর কথা বলেছেন। তাঁর কথা হচ্ছে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ১৬ মাস যুদ্ধের পর গাজা এখন বসবাসের অযোগ্য। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, ট্রাম্পের এই বক্তব্য জাতিগোষ্ঠী নিধনকে উসকে দেবে। তারা ট্রাম্পের এই বক্তব্যের নিন্দাও জানায়।

মঙ্গলবার ট্রাম্পের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আবাসন ব্যবসায়ীর মতো কথা বলেছেন। এই খাতের তিনি একজন বড় ব্যবসায়ীও বটে। অবশ্য একই সঙ্গে তিনি গাজার ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের কষ্টের কথাও স্বীকার করেছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, ‘আপনি এটাকে অবিশ্বাস্য এক আন্তর্জাতিক জায়গায় পরিণত করতে পারেন। আমি মনে করি, গাজা উপত্যকা অবিশ্বাস্য এক সম্ভবনাময়ী জায়গা।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি মনে করি, পুরো বিশ্ব, সারা বিশ্বের প্রতিনিধিরা সেখানে যাবেন, থাকবেন, সেখানে বসবাস করবেন। ফিলিস্তিনিরাও সেখানে যাবেন, বসবাস করবেন। অনেক মানুষ সেখানে বসবাস করবেন।’

ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার গত বছর গাজাকে সাগরপাড়ের ‘মূল্যবান’ সম্পদ বলে উল্লেখ করেছিলেন।

প্রচলিত ধারার বাইরে ভিন্ন রকম চিন্তা করায় ট্রাম্পের প্রশংসা করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। কিন্তু ট্রাম্পের প্রস্তাবের আইনি বৈধতা নিয়ে কোনো নেতাই কথা বলেননি।

আটলান্টিক কাউন্সিলের মিডলইস্ট প্রোগ্রামের জ্যেষ্ঠ পরিচালক উইল ওয়েসলার বলেন, ট্রাম্প গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে খুব গুরুত্ব না–ও দিতে পারেন। তিনি তা–ই করতে পারেন, সচরাচর তিনি যা করেন। তিনি এটিকে দর–কষাকষির চূড়ান্ত কৌশল হিসেবে নিতে পারেন।

ওয়েসলার বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর সাধারণ কৌশল অনুসরণ করছেন। সামনে যে আলাপ–আলোচনা শুরু হবে, সেখানে নিজের উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষটা অন্যভাবে ঠিক করে নিচ্ছেন। ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে এই কৌশল তিনি কাজে লাগাতে পারেন।

‘সুখকর ইতি’ টানা কঠিন

ট্রাম্পের নতুন সুপারিশে মধ্যপ্রাচ্যে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।

ওয়াশিংটন সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারনাশনাল স্টাডিজের মিডলইস্ট প্রোগ্রামের প্রধান ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা জন অল্টারম্যান বলছিলেন, ‘ওয়াও’। ট্রাম্প বললেন আর গাজার মানুষ চলে গেলেন। তিনি বলেন, গাজার মানুষ স্বেচ্ছায় ওই অঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।

ফিলিস্তিনের প্রচুর মানুষ এখন এই গাজায় থাকেন। তাঁরা এক সময় বর্তমান ইসরায়েল থেকে বাধ্য হয়ে এখানে এসেছিলেন। আর কখনোই তাঁরা ইসরায়েলে নিজেদের ভূখণ্ডে ফিরে যেতে পারেননি।

অল্টারম্যান বলেন, ‘আমি সন্দিহান, গাজার মানুষ তাঁদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন, এমনকি গাজা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলেও। গাজাকে খালি করে নতুন করে ব্যাপক উন্নয়নের চিন্তাভাবনা এবং এখানে সুখকর কোনো ইতি টানার কল্পনা করাটাও আমার পক্ষে কঠিন।’

২০০৫ সালে ইসরায়েলি সৈন্য ও ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ২০০৭ সালে গাজার ক্ষমতায় আসে। কিন্তু এই উপত্যকা এখনো ইসরায়েলি দখলদারত্বের মধ্যে রয়ে গেছে বলা চলে। ইসরায়েল ও মিসর গাজায় আসা–যাওয়ার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের বিষয়ে সমর্থন করে আসছে, যেখানে নিরাপদ ও স্বীকৃত সীমান্তের দুই পারে মানুষ বসবাস করবেন। ফিলিস্তিনিরা পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকা নিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র চায়। ১৯৬৭ সালে আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যুদ্ধের সময় ইসরায়েল এসব ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছিল।

নেতানিয়াহুর সফরের প্রতিবাদে মঙ্গলবার কয়েক শ বিক্ষোভকারী হোয়াইট হাউসের বাইরে জড়ো হন। গাজা নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্যের পর এই বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়। নেতানিয়াহু দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে প্রত্যাখ্যান করে আসছেন।

বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেন—‘ট্রাম্প, বিবির জায়গা কারাগারে, ফিলিস্তিন বিক্রির জন্য নয়।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে ট্রাম্প বিদেশে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন এবং বিদেশের কোনো কিছুতে না জড়িয়ে নিজেদের সীমান্তকে সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধের বড় কারণ ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র নয়।

হোয়াইট হাউসে আসার পর ট্রাম্প প্রথম নথিপত্রহীন অভিবাসীদের ধরপাকড় ও দেশ থেকে বহিষ্কার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের আকার ছোট করার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। নির্বাচনী প্রচারে এই দুটি বিষয় নিয়েই তিনি বেশি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

রয়টার্স/ইপসসের জরিপ মতে, ট্রাম্পের নির্বাচনী বক্তব্যে সম্প্রসারণবাদের কথা ছিল না। ট্রাম্প ও তাঁর রিপাবিলকান মিত্রদের জন্য এটি রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। কারণ, ভোটাররা তাঁদের এই নীতির সঙ্গে নেই।

গত জানুয়ারিতে ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর রয়টার্স/ইপসস পরিচালিত ওই জরিপে বলা হয়, গ্রিনল্যান্ড বিক্রির ব্যাপারে ডেনমার্কের ওপর চাপ প্রয়োগের কৌশলকে মাত্র ১৬ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন সমর্থন করেন। পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সমর্থন করেন মাত্র ২৯ শতাংশ মার্কিন।

পশ্চিম গোলার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড সম্প্রসারণ করার অধিকার আছে—এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত ২৯ শতাংশ মার্কিন। নতুন ভূখণ্ড রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি ব্যবহার করা উচিত বলে একমত পোষণ করেন ১৫ শতাংশ রিপাবলিকানসহ মোট উত্তরদাতার ৯ শতাংশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ