৩০ ফুট গভীর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয় যে গ্রামের মানুষকে
Published: 6th, February 2025 GMT
বেশ কিছু বড় টিলার সন্নিবেশে গড়া পাড়ায় অন্তত ২০০ মানুষের বাস। এসব মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহারের পানির উৎস হিসেবে সেখানে আছে একটি মাত্র চাপকল। ৭ বছর আগে তিন মাসের চেষ্টায় প্রায় ৩০ ফুট গভীর একটি কূপ খনন করে তার ভেতর বসানো হয়েছে চাপকলটি। বর্ষাকালে এ চাপকলের পানিতে এখানকার মানুষের কোনোমতে চললেও গরমকাল এলেই শুরু হয় পানির তীব্র ভোগান্তি। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ফাল্গুন-চৈত্র মাসে এই চাপকলে আর পানি পাওয়া যায় না। তখন বাধ্য হয়ে এক-দেড় কিলোমিটার দূরের জনবসতি থেকে পানি সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে হয় পাড়াবাসীর। সুপেয় পানির এমন সংকট মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের ঘেড়ামারা গ্রামের আজিজনগর এলাকায়।
৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সরেজমিনে আজিজনগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বড় কয়েকটি টিলার ওপর আলাদা বাড়ি করে বসতি গড়েছে অন্তত ২০০ মানুষ। এসব মানুষের নিত্যদিনের পানির চাহিদা মেটাচ্ছে পাড়ার মাঝখানে ৩০ ফুট গভীরে খনন করা একটি কূপের নিচে স্থাপন করা একটি চাপকল। মাটির সিঁড়ির ধাপ বেয়ে নিচে নেমে পালা করে সে চাপকল থেকে পানি সংগ্রহ করতে দেখা যায় পাড়ার নারীদের।
সেখানে কথা হয় কূপের চাপকল থেকে পানি নিতে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী রাবেয়া খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকাটি কোনো বিচ্ছিন্ন জনপদ নয়। তবু এখানে কোনো ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পৌঁছায় না। এখানে চলাচলের ভালো রাস্তা নেই, বিদ্যুৎ নেই , পানির সংকট নিত্যদিনের। টিলা প্রকৃতির এলাকা হওয়ায় এখানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কিছুটা নিচে। তাই পুরো পাড়ার মানুষের ব্যবহারের জন্য নিজেরা স্বেচ্ছাশ্রমে তিন মাস ধরে গভীর একটি কূপ খনন করে তার নিচে একটি চাপকল বসিয়েছি। বর্ষাকালে কোনোমতে চললেও গরমকাল আসতেই এই চাপকল থেকে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে যায়। তখন দূরদূরান্ত থেকে পানি এনে রান্নাবান্না, খাওয়া, গোসলসহ সব ধরনের কাজ সারতে হয়। সত্যি কথা হচ্ছে, গরমকাল এলে পানির সংকটের কারণে পাড়ার মানুষ এক দিন পরপর গোসল করে। এখানে একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করে দিলে আমাদের এই সংকটের অবসান হতো।’
এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘করেরহাট ইউনিয়নের আজিজনগর এলাকায় একটি পাড়ায় মানুষের পানিসংকটের বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। জায়গাটি পরিদর্শন করে দ্রুত সেখানে পানিসংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব আমরা।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
২৫ বছর পর বদলা নিয়ে চ্যাম্পিয়ন ভারত
জাদেজার ব্যাটের ছোঁয়ায় বল সীমানা পার হতেই হুড়মুড় করে মাঠে ঢুকে পড়েন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। ক্রিজে থাকা লোকেশ রাহুল ও রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে উদযাপনে মেতে ওঠেন তারা। এর পরই স্মারক হিসেবে স্টাম্প সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এভাবে সংগৃহীত দুটি স্টাম্প চলে যায় রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির হাতে। দুবাই স্টেডিয়ামের সবুজ জমিনে দু’জন স্টাম্প দিয়ে ডান্ডিয়া খেলা শুরু করেন। দুই কিংবদন্তির এমন অভিনব উদযাপন ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পোস্টার হয়ে রইল।
ভারতের এটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির তৃতীয় শিরোপা। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে ২৫ বছর আগের বদলার পাশাপাশি কিউইদের বিপক্ষে আইসিসি ইভেন্টের ফাইনালে পরাজিত হওয়ার ইতিহাসও পাল্টে দিয়েছে ভারত। দুবাই স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের ২৫১ রান ১ ওভার হাতে রেখে ৬ উইকেটে টপকে যায় তারা। রোহিতের নেতৃত্বে ৯ মাসের ব্যবধানে এটি ভারতের দ্বিতীয় আইসিসি ট্রফি। ৭৬ রানের দারুণ ইনিংস খেলে সামনে থেকে শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন অধিনায়ক রোহিত; ইনিংসটির জন্য ফাইনালসেরাও হয়েছেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের রাচিন রবীন্দ্র আসরের সর্বোচ্চ ২৬৩ রান ও ৩ উইকেটের জন্য টুর্নামেন্টসেরা হয়েছেন।
কিউইদের ২৫১ রান তাড়া করতে নেমে দুরন্ত গতিতে শুরু করে ভারত। জেমিসনকে ছয় মেরে শুরুটা করেন রোহিত শর্মা। ৪১ বলে তিনি পৌঁছে যান হাফ সেঞ্চুরিতে। অধিনায়কের দাপটে ১৭ ওভারেই ১০০ রান তুলে নেয় ভারত। রোহিত-শুভমান ওপেনিং জুটির ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, হেসে-খেলে ফাইনাল জিততে যাচ্ছে ভারত। এর মধ্যে শুভমানের একটি ক্যাচ ফেলেন ড্যারেল মিচেল। শেষ পর্যন্ত গ্লেন ফিলিপস বাজপাখির মতো উড়ে গিয়ে ক্যাচ ধরে ফেরান শুভমানকে। পরের ওভারেই এলবি হয়ে যান দুরন্ত ছন্দে থাকা বিরাট কোহলি। সেটা ছিল কিউই স্পিনার মিচেল ব্রেসওয়েলের প্রথম ডেলিভারি। এর পর এগিয়ে এসে রাচিন রবীন্দ্রকে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হয়ে যান ৮৩ বলে ৭৬ রান করা রোহিত। মাত্র ১৭ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে আচমকা চাপে পড়ে যায় ভারত। তবে চতুর্থ উইকেটে শ্রেয়াস আয়ার ও অক্ষর প্যাটেল ৬১ রান যোগ করে দলকে ভালো অবস্থানে পৌঁছে দেন। এর মধ্যে ৪৪ রানের সময় শ্রেয়াসের লোপ্পা ক্যাচ ফেলেন জেমিসন। নতুন জীবন অবশ্য কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। মাত্র ৪ রান যোগ করে স্যান্টনারের বলে রাচিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে আসেন শ্রেয়াস। এর পর অক্ষর প্যাটেল ক্যাচ দিলে আবার কিছুটা চাপে পড়ে যায় ভারত। তখনও উইকেটে ছিলেন লোকেশ রাহুল ও হার্দিক পান্ডিয়া। ঠান্ডা মাথায় ব্যাট চালিয়ে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান তারা। জয় থেকে ১১ রান দূরে থাকা অবস্থায় জেমিসনের হাতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে আসেন পান্ডিয়া। জাদেজাকে নিয়ে ফিনিশিং দেন রাহুল।
টসে জিতে নিউজিল্যান্ড যেভাবে ব্যাটিং শুরু করেছিল, তাতে মোট রান কমই হয়েছে বলা যায়। উইলি ইয়াং ও রাচিন রবীন্দ্র ৭.৫ ওভারে ৫৭ রান তুলে নিয়েছিলেন। তবে পরবর্তী পাঁচ ওভারের মধ্যে ইয়াং, রাচিন ও উইলিয়ামসনকে তুলে নিয়ে দারুণভাবে খেলায় ফিরে আসে ভারত। ইয়াংকে এলবির ফাঁদে ফেলে ভারতের মুখে প্রথম হাসি ফোটান তুরুপের তাস হয়ে ওঠা বরুণ চক্রবর্তী। এমনিতে রোহিতের প্রধান স্পিন অস্ত্র হলেও গত কয়েক দিন ধরে বরুণের আলোয় কিছুটা ঢাকা পড়ে গিয়েছিলেন কুলদীপ যাদব। সে ক্ষোভেই কিনা পর পর দুই ওভারে রাচিন ও উইলিয়ামসনের উইকেট তুলে নিয়ে কুলদীপ বুঝিয়ে দিলেন তাঁর ধার। ১৮ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় কিউইরা। টম লাথামও বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি, জাদেজার বলে এলবি হয়ে যান। তবে পঞ্চম উইকেটে ড্যারেল মিচেল ও গ্লেন ফিলিপস ৫৭ রান যোগ করে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেন। এর পর ষষ্ঠ উইকেট ড্যারেল মিচেল ও মিচেল ব্রেসওয়েল ৪৬ রান যোগ করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতেই ড্যারেল মিচেল বেশ মন্থর ব্যাটিং করেন। ৬৩ রান করতে তিনি ব্যয় করে ফেলেন ১০১ বল। এর মধ্যে ৩৮ রানের সময় রোহিত শর্মার হাতে একটি জীবনও পেয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ব্রেসওয়েলের হাফ সেঞ্চুরিতে আড়াইশ পার করে কিউইরা। ৪০ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। তাঁর জন্যই শেষ ১০ ওভারে ৭৯ রান তোলে কিউইরা।
কিউইদের ২৫১ রানে আটকে দিতে প্রত্যাশামতোই মূল ভূমিকা পালন করেন স্পিনাররা। ভারতের চার স্পিনার ৩৮ ওভারে ১৪৪ রান ব্যয় করে ৫ উইকেট তুলে নেন। আর দুই পেসার ১২ ওভারে ১০৪ রানে উইকেট তোলেন মাত্র একটি। অক্ষর প্যাটেলের দুই ওভার বাকি রাখায় হয়তো আক্ষেপে পুড়বেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। আর নিউজিল্যান্ড আক্ষেপ করবে দলের সেরা বোলার ম্যাট হেনরিকে না পাওয়ায়। সেমিতে পাওয়া কাঁধের চোট থেকে সেরে উঠতে পারেননি ডানহাতি এ পেসার।