নওগাঁ সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি আটক
Published: 6th, February 2025 GMT
নওগাঁর সাপাহার সীমান্ত থেকে সিরাজুল ইসলাম (৪২) নামে বাংলাদেশিকে আটক করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে তাকে আটক করা হয়। সিরাজুল উপজেলার উত্তর পাতাড়ী গ্রামের ওসমান আলীর ছেলে।
সিরাজুলের স্ত্রী এজেলা খাতুন জানান, মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর স্বামী ভারতে গিয়েছিলেন। এর পর সকালে সবাই ফিরে এলেও সিরাজুল আর ফেরেননি। যারা ফিরে এসেছেন, তাদের কাছ তাঁর স্বামীর আটকের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, কয়েকজন বাংলাদেশি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে গরু আনতে যায়। গরু নিয়ে তারা ৪৪/১ এস পিলার এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন থানার নাইরকুড়ী বিএসএফ ক্যাম্পের টহলরত জোয়ানরা ধাওয়া করে। এ সময় অন্যরা পালিয়ে এলেও সিরাজুলকে বিএসএফ ধরে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে বিজিবি ১৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সীমান্তের শূন্যরেখায় বাবা-মেয়ের সাক্ষাতের যে দৃশ্য হৃদয়ছোঁয়া
প্রায় চার দশক আগে বাংলাদেশে বিয়ে হয় ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার মেয়ে মহিলা বেগমের (৫৭)। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের আগে সহজেই যাতায়াত করতে পারতেন। ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় স্বজনদের দেখাসাক্ষাৎ। এরপর পাসপোর্ট-ভিসা করে কয়েকবার বাবা-মায়ের কাছে গেছেন। সম্প্রতি কিছুদিন ধরে ভিসা না পাওয়ায় বাবা-মায়ের সাক্ষাৎ পাচ্ছিলেন না।
সম্প্রতি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা সীমান্তের শূন্যরেখায় স্বামী ও স্বজনদের নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মহিলা বেগম। সেই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে আবেগঘন ক্যাপশন দিয়ে সেই ভিডিও শেয়ার করছেন। শূন্যরেখায় শতবর্ষী বাবা ও মেয়ের পরস্পরকে ছুঁয়ে দেখার ভালোবাসাময় দৃশ্য সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
১ মার্চ স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে মুঠোফোনে কথা বলে শূন্যরেখায় বাবা-মেয়ের হৃদয়স্পর্শী সাক্ষাৎ ঘটে। এতে সহায়তা করেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা। এ সময় মহিলা বেগমের সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বামী নজমুল হকসহ (৭৫) স্বজনেরা। ভারত থেকে এসেছিলেন তাঁর বাবা সপিজ উদ্দিন (১০৭), মা অফিলা খাতুনসহ (৯০) স্বজনেরা।
নজমুল হক ও মহিলা বেগম দম্পতির বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের মাধইপাড়া এলাকায়। তাঁদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। মহিলা বেগমের বাবার বাড়ি ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ থানার শোলমারি এলাকায়। চার বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে মহিলা বেগম তৃতীয়। অন্য ভাইবোনদের ভারতে বিয়ে হলেও প্রায় ৪০ বছর আগে বাংলাদেশে বিয়ে হয় তাঁর।
ওই দম্পতি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নজমুল হকের আগে আরও চারজন স্ত্রী ছিলেন। তাঁদের চার ছেলেমেয়ে আছে। প্রায় ৪০ বছর আগে পঞ্চগড় সদরের জগদল-হটরাপাড়া এলাকায় ফুপুর বাড়িতে বেড়াতে আসেন মহিলা বেগম। তখন অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদের প্রয়াত চেয়ারম্যান আবদুল জলিলের প্রস্তাবের মাধ্যমে মহিলা বেগমকে বিয়ে করেন নজমুল হক। বিয়ের পর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় মাঝেমধ্যে শ্বশুরবাড়ি-বাবার বাড়িতে যাতায়াত করতেন তাঁরা। পরে সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর পাসপোর্ট–ভিসা করে দুবার বাবার বাড়িতে গেছেন মহিলা বেগম। সর্বশেষ আড়াই বছর আগে ভারতে গেলেও এরপর ভিসা না পাওয়ায় মা–বাবাকে দেখার ইচ্ছা থেকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে বিজিবির সহায়তা চান। পরে সীমান্তের শূন্যরেখায় বিজিবি-বিএসএফের জয়েন্ট রিট্রিট প্যারেডের সময় দুই পরিবারের সাক্ষাৎ হয়।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শূন্যরেখায় বিজিবি-বিএসএফের উপস্থিতিতে দুই পাশ থেকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন বাবা ও মেয়ে, সঙ্গে অন্য স্বজনেরা। কাছে গিয়ে বাবা-মেয়ে প্রথমে হাতে হাত রেখে স্পর্শ করার পর শতবর্ষী বাবা মেয়েকে বুকে টেনে নেন। এ সময় মহিলা বেগমের মাসহ অন্যদের কান্না করতে দেখা যায়।
মহিলা বেগমের স্বামী নজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী মা–বাবাকে দেখার জন্য ছটফট করছিল। আমরা দুজন পাসপোর্ট করলেও ভিসা পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে মোবাইলে যোগাযোগ করে এভাবে দেখা করেছি। সেখানে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় পেয়েছি। পরে কে যেন ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দিছে।’
মহিলা বেগম বলেন, অনেক দিনে ধরে ভিসা দেওয়া বন্ধ করে রেখেছে ভারত। মা–বাবাকে দেখার খুব ইচ্ছা হচ্ছিল। ওই দিন মা–বাবাকে এভাবে সীমান্তে দেখে কলিজায় আগুন ধরে গেছে। বয়স্ক মা–বাবাকে এভাবে অল্প সময়ের জন্য দেখে কষ্টটা আরও বেড়ে গেছে। কবে ভিসা পাবেন আর বাবা-মায়ের কাছে গিয়ে একটু সেবাযত্ন করতে পারবেন, জানেন না।
পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়কে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শূন্যরেখায় প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে জয়েন্ট রিট্রিট প্যারেড হয়। ওই দুটি পরিবার সাক্ষাতের জন্য আগেই মুঠোফোনে যোগাযোগ করেছিল। পরে তাঁরা বিজিবির সহায়তা চাইলে প্যারেডের পর তাঁদের দেখা করার ব্যবস্থা করা হয়। বিএসএফের পক্ষ থেকেও এতে সম্মতি দিয়ে সহায়তা করা হয়। বাবা-মেয়ের মধ্যে এমন ভালোবাসাময় দৃশ্য সত্যি তাঁদের অনেক ভালো লেগেছে।