চট্টগ্রামে আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাস সংযোগগুলো পর্যায়ক্রমে প্রিপেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। মূলত গ্যাসের অপচয় ও চুরি বন্ধে প্রিপেইড মিটারগুলো বসানো হচ্ছে। কিন্তু অতিরিক্ত খরচের ভয়ে গ্রাহকদের একটি অংশ এই প্রিপেইড মিটার বসাতে আগ্রহী নন।
কেজিডিসিএল কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিনামূল্যে মিটার দেওয়া হলেও তিন কারণে প্রিপেইড মিটারে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেক গ্রাহক। প্রিপেইড মিটার বসাতে গেলে বাসাবাড়ির বাইরে থাকা রাইজার থেকে প্রতি চুলায় সংযোগ নিতে পাইপ-ফিটিংসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামে গ্রাহককে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আবার প্রিপেইড মিটার লাগালে সিলিং করা গ্যাসের চেয়ে বেশি ব্যবহার করা যাবে না। এ ছাড়া এক চুলার গ্যাস কয়েক পরিবারে ব্যবহার করার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার ভয় এবং যখন-তখন গ্যাস ফুরালে প্রিপেইড কার্ড সংগ্রহ ও ইনস্টল করাকে বাড়তি ঝামেলা বলে মনে করছেন তারা।
কেজিডিসিএলের একটি প্রকল্পের আওতায় এখন নগরী ও জেলায় এক লাখ প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজ চলছে। ২০২১ সালের ১৮ মে আবাসিক সংযোগে এসব মিটার স্থাপনের প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ২৪১ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে দুই বছরের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত মিটার বসানো হয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার। অন্য গ্রাহকরা মিটার বসাতে গড়িমসি করছেন। মিটার নিয়ে ফিরে আসছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ জন্য তাদের চিঠি দিয়ে, মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা দিয়ে মিটার বসানোর কথা বলছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে শেষ পর্যন্ত হার্ডলাইনে গিয়ে মিটার না বসালে সংযোগ বিচ্ছিন্নের মতো সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহকারী এই সংস্থা।
নগরীর বাকলিয়া এলাকার এক ভবন মালিক বলেন, আমার ছয় তলা ভবনে ১২ পরিবার ভাড়াটিয়া রয়েছে। ফলে আমাকে ১২টি প্রিপেইড মিটার নিতে হবে। এতে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ব্যয় হবে। কিন্তু ভাড়াটিয়া থেকে তো আমি সেই টাকা নিতে পারছি না। এ জন্য প্রিপেইড মিটার নিতে চাইছি না।
‘ইন্সটলেশন অব প্রিপেইড গ্যাস মিটার ফর কেজিডিসিএল’ প্রকল্পের পরিচালক ও কেজিডিসিএলের উপব্যবস্থাপক মো.
কেজিডিসিএলের উপমহাব্যবস্থাপক (ভিজিল্যান্স বিভাগ) প্রকৌশলী সৈয়দ আবু নসর মো. সালেহ বলেন, একটি ভবনে বেশ কিছু গ্যাসের সংযোগ থাকে। এসব সংযোগকে প্রিপেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসতে হলে সেই ভবন মালিককে কিছু অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। কিন্তু সুবিধা পাচ্ছেন ভাড়াটিয়ারা। এ কারণে ভবন মালিকরা বাড়তি খরচ এড়াতে প্রিপেইড মিটারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
কেজিডিসিএলের আওতায় সংযোগ রয়েছে ৬ লাখ ১ হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে আবাসিক সংযোগ রয়েছে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি। অবশিষ্ট সংযোগগুলো শিল্প-বাণিজ্যিকসহ অন্য খাতের। এর মধ্যে ‘ন্যাচারাল গ্যাস ইফিসিয়েন্সি প্রকল্পে’র মাধ্যমে প্রথম দফায় ৬০ হাজার আবাসিক গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনে কেজিডিসিএল। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্যাস সাশ্রয়সহ গ্রাহক ভোগান্তি কমে আসায় প্রিপেইড মিটার স্থাপনে নতুন আরেকটি প্রকল্প হাতে নেয় সংস্থাটি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক জ ড স এল র প রকল প র ভবন ম ল ক র আওত য় গ র হক পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
আশুলিয়ায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা, ককটেল ফাটিয়ে স্বর্ণালংকার লুট
সাভারের আশুলিয়ায় দোকান বন্ধের সময় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ডাকাতরা ককটেল ফাটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে ওই ব্যবসায়ীর স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছে।
রোববার রাতে আশুলিয়ার নয়ারহাট বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত স্বর্ণ ব্যবসায়ীর নাম দিলীপ কুমার দাস (৪৮)। সে আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের দুলাল দাসের ছেলে এবং নয়ারহাট বাজারের দিলীপ স্বর্ণালয়ের মালিক।
জানা যায়, ডাকাতদের হামলায় আহত ওই ব্যবসায়ীকে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান।
পুলিশ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানায়, স্বর্ণ ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার দাস রাতে দোকান বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় একদল ডাকাত দোকানে এসে দিলীপের হাতে থাকা স্বর্ণের ব্যাগ ধরে টান দেয় । এতে তিনি বাধা দিলে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে টাকার ব্যাগ ও সেখানে থাকা প্রায় ২৫ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় ডাকাতরা কয়েকটি ককটেল বোমা ফাটিয়ে বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ ঘটনার পর বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা সেখানে ছুটে এসে দিলীপ দাসকে দোকানের সামনে পড়ে থাকতে দেখে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে তিনি মারা যান।
নিহতের ফুপাতো ভাই খোকন সরকার বলেন, রাত সাড়ে ৮টার দিকে দোকান বন্ধ করে শাটার নামানোর সময় কয়েকজন ডাকাত তার হাতে থাকা ব্যাগ ধরে টান দেয়। কিন্তু দিলীপ ব্যাগ না ছাড়ায় চাপাতি দিয়ে তাকে কুপিয়ে স্বর্ণ এবং টাকার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়।
নিহতের স্ত্রী সরস্বতী দাশ বলেন, আমার স্বামী প্রতিদিন ৯টার মধ্যে বাসায় আসতো। কিন্তু ওরা আর আমার স্বামীকে বাসায় আসতে দিল না। আমি এ হত্যার বিচার চাই।
সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মেরাজুর রেহান পাভেল জানান, আহত অবস্থায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বুকে বড় ক্ষত ছিল, গালের ডানে ক্ষত ছিল এবং পিঠেও ক্ষত ছিল। আমরা চিকিৎসা শুরু করেছিলাম, স্যালাইন এবং ওষুধ চলছিল, পরে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যেই তিনি মারা যান। আমরা ধারনা করছি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তিনি মারা গেছেন।
আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। দোষীদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি ছিনতাই হওয়া মালামাল উদ্ধারে আমাদের কার্যক্রম চলছে।