খুলনায় ভাঙা হলো শেখবাড়ি সারাদেশে আরও ভাঙচুর
Published: 6th, February 2025 GMT
খুলনায় বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে আলোচিত শেখবাড়ি। এ সময় বাড়িটির সামনে বিক্ষোভ করেন ছাত্র-জনতা। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নগরীর শেরেবাংলা রোডের বাড়িটির সামনে জড়ো হন। পরে রাত সোয়া ৯টার দিকে বুলডোজার এনে বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হয়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে।
খুলনা নগরের ময়লাপোতা এলাকায় অবস্থিত ওই বাড়িটি ‘শেখবাড়ি’ নামে পরিচিত। বাড়িটিতে শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সোহেল উদ্দিনসহ আরও কয়েক ভাই থাকতেন। এর আগে গত বছরের ৪ ও ৫ আগস্ট দফায় দফায় শেখবাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল।
সিলেটে এবার বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ম্যুরাল। গতকাল রাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত ম্যুরালটির অবশিষ্ট অংশ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে মুসলিম জনতার ব্যানারে ম্যুরালটিতে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচারকে কেন্দ্র করে গতকাল রাতে চট্টগ্রামে মশাল মিছিল ও বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। পরে তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে গিয়ে পুরোনো একাডেমিক ভবনের সামনে থাকা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করেন। পরে সেখান থেকে তারা জামালখান মোড়ের দেয়ালে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করেন। এর আগে বিক্ষুব্ধরা একটি মশাল মিছিল বের করেন।
কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবউল-আলম হানিফের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে একটি দল। গতকাল রাত ১০টার দিকে এক্সক্যাভেটর নিয়ে তারা বাড়ির সামনের কিছু অংশ ভেঙে ফেলে। প্রায় আধা ঘণ্টা পর দলটি চলে যায়। স্থানীয়রা জানান, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ওই বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ পরিবারের সদস্য ও জাতীয় চার নেতার একজনের নামে থাকা সব স্থাপনার নামফলক, গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখন মুছে দিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বর থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে চারটি আবাসিক হল ও একটি স্কুলের নামফলক ভেঙে নতুন নাম দেন। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘বিজয়-২৪ হল’, নির্মাণাধীন শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান হলের পরিবর্তে ‘শহীদ আলী রায়হান হল’, শেখ হাসিনা হলের পরিবর্তে ‘ফাতিমা আল-ফাহরিয়া হল’ এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের পরিবর্তে ‘নবাব ফয়জুন নেসা চৌধুরানী’ ও শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নাম পরিবর্তন করে ‘রিয়া গোপ মডেল স্কুল’ নাম দিয়ে ব্যানার ঝুলিয়ে দেন।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নামে স্থাপনার নাম মুছে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাতে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম মুছে দিয়ে বিজয় ২৪ নামকরণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের নাম মুছে দিয়ে মুক্তমঞ্চ করা হয়েছে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নামও মুছে দেন শিক্ষার্থীরা।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) প্রধান ফটকে শেখ হাসিনার ঘৃণাসূচক ছবি টানিয়ে গণজুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গতকাল রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ করে তাঁর ফেসবুক লাইভে আসার প্রতিবাদ জানান।
ফেসবুকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়ার প্রতিবাদে কুমিল্লায় তাৎক্ষণিক মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল রাতে নগরীর কান্দিরপাড়ে মিছিল করেন ছাত্ররা। ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’, ‘রশি লাগলে রশি নে, হাসিনারে ফাঁসি দে’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি স্লোগান দেন তারা।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যুরো, অফিস ও প্রতিনিধি]
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গতক ল র ত র স মন র পর ব
এছাড়াও পড়ুন:
গ্যাসের দাম বাড়াতে ‘অবাস্তব’ আশ্বাস
বাড়তি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিন দফায় গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে গত আওয়ামী লীগ সরকার। তবে আমদানি হয়েছে কম, এতে বাড়তি দাম দিয়েও গ্যাস পাননি গ্রাহকেরা। এখন এক বছরে ইতিহাসের সর্বোচ্চ আমদানির কথা বলে শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাম বাড়াতেই আমদানির অবাস্তব আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
দেশে দুটি উৎস থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে দেশি গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন করে সরবরাহ করা হয় ৭৫ শতাংশ। আর ২৫ শতাংশ আসে আমদানি করা এলএনজি থেকে। দিনে সর্বোচ্চ ১১০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহের অবকাঠামো আছে দেশে। যদিও কারিগরি কারণে পুরোটা ব্যবহার করা যায় না। এটি ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ১০৫ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত সরবরাহ করা সম্ভব।
দিনে গড়ে ৮৫ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করার কথা বলে ২০১৯ সালে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। এরপর ২০১৯-২০ অর্থবছরে গ্যাস সরবরাহ করা হয় দিনে ৫৬ কোটি ঘনফুট করে। ২০২২ সালে আবারও একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর আবেদন করে পেট্রোবাংলা। এবার আপত্তি জানায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। আগে ২৯ কোটি ঘনফুট কম সরবরাহ করে আড়াই হাজার কোটি টাকা বাড়তি নেওয়া হয়েছে বলে জানায় কমিশন। তাই ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য দিনে ৬৮ কোটি ঘনফুট আমদানি ধরে দাম বাড়ায় বিইআরসি। ওই অর্থবছরে এলএনজি আমদানি হয়েছে প্রায় ৬৫ কোটি ঘনফুট করে। এরপর নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শিল্পে গ্যাসের দাম ১৫০ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয় সরকারের নির্বাহী আদেশে। এখন আবার একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে দাম বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে।
দিনে সর্বোচ্চ ১১০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহের অবকাঠামো আছে দেশে। যদিও কারিগরি কারণে পুরোটা ব্যবহার করা যায় না। এটি ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ১০৫ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত সরবরাহ করা সম্ভব।ডলার জোগানের চ্যালেঞ্জ
পেট্রোবাংলার অনুমতি নিয়ে এলএনজি আমদানি করে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার ও ওমান থেকে নিয়মিত আমদানি করে তারা। এর বাইরে চাহিদা বুঝে খোলাবাজার (স্পট মার্কেট) থেকে আমদানি করে। আরপিজিসিএলের তথ্য বলছে, বছরে সর্বোচ্চ এলএনজি আমদানি হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে, ৮৩টি। এর মধ্যে ৫৭টি এসেছে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি থেকে, আর ২৬টি কেনা হয়েছে খোলাবাজার থেকে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৪৪টি কার্গো আনা হয়েছে। পুরো অর্থবছরে ১০১টি কার্গো আনার কথা বলেছে পেট্রোবাংলা। তার মানে বাকি ছয় মাসে আনতে হবে ৫৭টি কার্গো। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি থেকে আসবে ২৭টি। খোলাবাজার থেকে কিনতে হবে ৩০টি এলএনজি কার্গো।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, খোলাবাজার থেকে এখন পর্যন্ত বছরে সর্বোচ্চ এলএনজি আমদানি হয়েছে ২৬টি। তাই ছয় মাসে ৩০টি এলএনজি কেনার প্রতিশ্রুতি যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত নয়। ডলার–সংকটে এলএনজির বিল নিয়মিত দিতে পারছে না পেট্রোবাংলা, বকেয়া বাড়ছে। এর মধ্যে এ বছর তাদের চাহিদা ৪৫০ কোটি ডলার। তাই বাড়তি এলএনজি কিনতে ডলার জোগানোয় হিমশিম খেতে হবে তাদের। এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ১১৫ কার্গো থেকে কমিয়ে সম্প্রতি ৯০টি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পেট্রোবাংলার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
আগেও প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলএনজি আনেনি পেট্রোবাংলা। এটা ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা। তাই মূল্যবৃদ্ধি তো করা যাবেই না; বরং মিথ্যাচারের দায়ে শাস্তি দিতে হবে। এবারও যে আমদানির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। এ ছাড়া অযৌক্তিক ব্যয় কমানোর ব্যবস্থা নিলে গ্যাসের দাম কমানো যাবে।ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলমপেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জ্বালানি বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে বিল পরিশোধের উপায় বের করা হচ্ছে।
পেট্রোবাংলা বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তাদের আর্থিক ঘাটতি হবে ১৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। আর ২০২৫ সালে তাদের ঘাটতি হবে ২২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। তাই শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে তারা। ইতিমধ্যে প্রস্তাব মূল্যায়নে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করেছে বিইআরসি। ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থার প্রস্তাব জমা পড়েছে এ সপ্তাহে। প্রস্তাব মূল্যায়নের পর প্রতিবেদন দেবে কারিগরি কমিটি। এরপর প্রস্তাবটি আমলে নেওয়া বা খারিজ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন।
পেট্রোবাংলা বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তাদের আর্থিক ঘাটতি হবে ১৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। আর ২০২৫ সালে তাদের ঘাটতি হবে ২২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা।‘আশ্বাস বাস্তবায়নযোগ্য নয়’
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিরোধিতা করে জ্বালানি বিভাগ ও বিইআরসিতে চিঠি পাঠিয়েছে রপ্তানিমুখী ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বিটিটিএলএমইএ, বিজিএমইএ, বিটিএমএ, বিকেএমইএ। দাম না বাড়ানোর অনুরোধ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, গত দেড় দশকে শিল্পে গ্যাসের দাম বেড়েছে ৪১২ শতাংশ আর শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎ (ক্যাপটিভ) কেন্দ্রে গ্যাসের দাম বেড়েছে ৬৫৪ শতাংশ।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, আগেও প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলএনজি আনেনি পেট্রোবাংলা। এটা ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা। তাই মূল্যবৃদ্ধি তো করা যাবেই না; বরং মিথ্যাচারের দায়ে শাস্তি দিতে হবে। এবারও যে আমদানির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। এ ছাড়া অযৌক্তিক ব্যয় কমানোর ব্যবস্থা নিলে গ্যাসের দাম কমানো যাবে।