জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার
Published: 6th, February 2025 GMT
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর, অর্থাৎ আগামী জুনের মধ্যে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। আজ বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাজেট–বিষয়ক বিশেষ বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে এ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থসচিব মো.
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর করা চলতি অর্থবছরের বাজেটে সার্বিক মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বাজেট পাসের ১ মাস ৫ দিন পর গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আওয়ামী লীগ আমলে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে দেখানোর একটা প্রবণতা ছিল বলে অর্থনীতিবিদেরা বিভিন্ন সময় বলে আসছেন।
এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের কাছে বেশ কয়েকবারই মন্তব্য করেছেন, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে মূল্যস্ফীতির প্রকৃত হিসাব দেওয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বিবিএসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে নেমেছে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে চলতি অর্থবছরের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ওই বৈঠকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল ৭ শতাংশ।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠিত আজকের বৈঠকে চলতি অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রাও ঠিক করা হয়েছে। সূত্রগুলো জানায়, এ হার ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। যদিও বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের বেশি না–ও হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হলেও তা ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি কমানো হচ্ছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এনবিআরের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হচ্ছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
বৈঠক শেষে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৈঠকটি ছিল মূলত সংশোধিত বাজেট নিয়ে আলোচনা। সংশোধিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমছে এবং আগামী রোজার পর তা আরও কমবে। আপনারা দেখতে পাবেন।’ এর বাইরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এডিপি বাস্তবায়নে গতি আনার তাগিদ
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ১৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ করা অর্থের ১০ শতাংশও খরচ করতে পারেনি। এ সময়ে সার্বিক এডিপি বাস্তবায়ন পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাস্তবায়নের হার এডিপি বরাদ্দের মাত্র ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কেও খরচের পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা কম।
পরিকল্পনা বিভাগের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এডিপি বাস্তবায়ন হার এত নিম্ন পর্যায়ে থাকলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) লক্ষ্যগুলো অর্জন কঠিন হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি এডিপি বাস্তবায়নে গতি আনার তাগিদ দিয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি দিয়েছেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন। এর আগেও সব উপদেষ্টার কাছে একই ধরনের চিঠি দেন পরিল্পনা উপদেষ্টা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পরিকল্পনা বিভাগের চিঠিতে বলা হয়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ পরিকল্পনা। এর মাধ্যমে জাতীয় বাজেটে সরকারি বিনিয়োগের সিংহভাগ বাস্তবায়ন হয়। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সম্পদের প্রাপ্যতা, ব্যবহারের সক্ষমতা, জাতীয় অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ খাতের অগ্রাধিকার, সর্বোপরি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে চলতি অর্থবছরে এডিপির আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এতে জানানো হয়, সংশোধিত বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রকৃত ব্যয় পর্যালোচনার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, এসডিজির লক্ষ্যগুলো অর্জন ও কার্যক্রম সচল রাখার মাধ্যমে উন্নয়নের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য এডিপির সফল বাস্তবায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে।
গত কয়েক বছরের এডিপি বাস্তবায়ন বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের অগ্রগতি তুলনামূলকভাবে নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে মূল বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এডিপি বাস্তবায়নের হার ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। তবে কিছু মন্ত্রণালয় বা বিভাগের ব্যয়ের হার ৩০ শতাংশেরও বেশি।
চিঠিতে বলা হয়েছে, সম্পদের সর্বোত্তম ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য এডিপি বাস্তবায়নের হার কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছানো প্রয়োজন। বাজেট বাস্তবায়নের হার বাড়াতে এর আগে গত ২৮ নভেম্বর পরিকল্পনা উপদেষ্টা সব উপদেষ্টার কাছে একটি আধাসরকারি পত্র পাঠান। পরিকল্পনা বিভাগও গত ৮ ডিসেম্বর আরও একটি আধাসরকারি চিঠি দিয়েছে।
সার্বিকভাবে পরিকল্পনা বিভাগের ভাষ্য হচ্ছে, সম্পদের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় রেখে নির্ধারিত মেয়াদে প্রকল্প সমাপ্তি এবং কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের চেয়ে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করে সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি। উন্নয়ন পরিকল্পনার মূলমন্ত্র দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন। এ বিবেচনায় মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বপ্রণোদিত উদ্যোগ এবং নিবিড় মনিটরিং অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। সচিবদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে নিজ মন্ত্রণালয় বা বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন যথাসম্ভব দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হবে।
বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবং পরিকল্পনা উপদেষ্টার আধাসরকারি পত্রের নির্দেশনা বিবেচনায় রেখে নিজ মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অধীন প্রকল্পগুলোর বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয় চিঠিতে। বিশেষ করে বৈদেশিক অর্থায়নে এবং দারিদ্র্য বিমোচন, প্রবৃদ্ধি অর্জন, কর্মসৃজন, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে নেওয়া যেসব প্রকল্প প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখবে, সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে প্রত্যেক সচিবকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে।