চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর, অর্থাৎ আগামী জুনের মধ্যে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। আজ বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাজেট–বিষয়ক বিশেষ বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে এ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থসচিব মো.

খায়েরুজ্জামান মজুমদারসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সব বিভাগের সচিব এবং অর্থ বিভাগের বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত অতিরিক্ত সচিবেরা উপস্থিত ছিলেন। এ বৈঠকে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের কিছু বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর করা চলতি অর্থবছরের বাজেটে সার্বিক মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বাজেট পাসের ১ মাস ৫ দিন পর গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আওয়ামী লীগ আমলে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে দেখানোর একটা প্রবণতা ছিল বলে অর্থনীতিবিদেরা বিভিন্ন সময় বলে আসছেন।

এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের কাছে বেশ কয়েকবারই মন্তব্য করেছেন, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে মূল্যস্ফীতির প্রকৃত হিসাব দেওয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বিবিএসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে নেমেছে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে চলতি অর্থবছরের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ওই বৈঠকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল ৭ শতাংশ।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠিত আজকের বৈঠকে চলতি অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রাও ঠিক করা হয়েছে। সূত্রগুলো জানায়, এ হার ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। যদিও বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের বেশি না–ও হতে পারে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হলেও তা ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি কমানো হচ্ছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এনবিআরের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হচ্ছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

বৈঠক শেষে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৈঠকটি ছিল মূলত সংশোধিত বাজেট নিয়ে আলোচনা। সংশোধিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমছে এবং আগামী রোজার পর তা আরও কমবে। আপনারা দেখতে পাবেন।’ এর বাইরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঠ ক কর সরক র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

রপ্তানি বেড়েছে ১১ শতাংশ

গত মার্চ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় এসেছে ৪ দশমিক ২৫ বিলিয়ন বা ৪২৫ কোটি ডলার। গত বছরের একই মাসের চেয়ে যা ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। গত বছরের মার্চ মাসে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ৮১ বিলিয়ন বা ৩৮১ কোটি ডলার। একক মাসের এ হিসাবের বাইরে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের গত ৯ মাসের গড় রপ্তানিও বেশ ভালো। অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি  আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১১ শতাংশ বেড়েছে। মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৭ দশমিক ১৯ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৭১৯ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৩ দশমিক ৬১ বিলিয়ন  বা ৩ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইপিবি। ইপিবির তথ্য-উপাত্ত  বিশ্লেষণে দেখা যায়, বরাবরের মতো তৈরি পোশাকই এখনও রপ্তানি খাতের মূল ভরসার জায়গা। মোট ৩ হাজার ৩৬১ কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের মধ্যে এই খাত থেকেই এসেছে ৩ হাজার ২৫ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে গত ৯ মাসে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেশি হয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। শুধু মার্চ মাসের হিসাবে পোশাকের রপ্তানি বেশি হয়েছে  ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। যার অর্থমূল্য ৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন বা ৩৪৫ কোটি ডলার। গত বছরের মার্চে এ পরিমাণ ছিল ৩০৭ কোটি ডলার।

তবে আগামীতে রপ্তানি আয়ের এ গতি ধরে রাখা যাবে কিনা তা নিয়ে নানা সংশয় দেখা হয়েছে। কারণ তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যে বর্তমান আমদানি শুল্ক হারের অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এতদিন এ হার ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ। নতুন-পুরোনো মিলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে শুল্ক হার দাঁড়াচ্ছে ৫২ শতাংশ। ঘোষণায় অবশ্য অন্য রপ্তানিকারক দেশের পণ্যেও বিভিন্ন হারে শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে, যা আগামীকাল বুধবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। 
জানতে চাইলে ডেনিম এক্সপার্টের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সমকালকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণায় এ রপ্তানির গতি ধরে রাখা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কিছু ক্রেতা ইতোমধ্যে অনুরোধ করেছেন, পরবর্তী বার্তা না দেওয়া পর্যন্ত উৎপাদন ও রপ্তানি কার্যক্রম যাতে স্থগিত রাখা হয়। অতিরিক্ত শুল্কভারের সম্পূর্ণ শুল্কই যাতে রপ্তানিকারকরা বহন করে অথবা ভাগাভাগি করে নেয় এ ব্যাপারে কিছু ক্রেতা চাপ দিচ্ছেন। ছোট ক্রেতাদের মধ্যেই এ প্রবণতা বেশি, যা নৈতিক অনুশীলন নয়। উন্মুক্ত ব্যয়ের ব্যবসায়িক মডেলে এখন ক্রেতারা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মুনাফার মার্জিন সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত। এ বাস্তবতায় বাড়তি শুল্কের চাপ নেওয়ার সুযোগ নেই রপ্তানিকারকদের পক্ষে। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, ব্র্যান্ডগুলো তাদের সরবরাহকারীদের এবং পোশাকশিল্পের ৪০ লাখেরও বেশি কর্মীর কথা বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্তই নেবে।’
ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, অর্থবছরের গত ৯ মাসে তৈরি পোশাকের বাইরে অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি পরিস্থিতিও মোটামুটি ভালো। চামড়া ও চামড়া পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ৮৫ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াপণ্য। শুধু মার্চ মাসেই এ পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ২৩ শতাংশ। পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানি কমেছে ৮ শতাংশের মতো। তবে একক মার্চ মাসে রপ্তানি বেড়েছে সিকি শতাংশের মতো। এতটুকু রপ্তানিকেও ভালো বলা যায়। কারণ একটা লম্বা সময় ধরে পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানি কেবল কমছেই। হালকা প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বেশ ভালো। ৯ মাসের গড় রপ্তানি ১১ শতাংশের মতো বেশি। একক মাস হিসাবে মার্চে বেড়েছে ৩৩ শতাংশেরও বেশি। হোম টেক্সটাইল পণ্যের গড় রপ্তানি ৫ শতাংশের মতো বেড়েছে। রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৮ কোটি ডলার। পাদুকার রপ্তানি বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে  ৪১ কোটি ডলারের কিছু বেশি মূল্যের পণ্য। মার্চে রপ্তানি বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। তবে রপ্তানির এ প্রবাহের বিপরীতে রয়েছে কৃষিপণ্যের অবস্থান। রপ্তানি খাতের বড় পণ্যের মধ্যে কৃষিপণ্যের রপ্তানি কমেছে ২৬ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ৮১ কোটি ডলার মূল্যের বিভিন্ন কৃষিপণ্য। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৯ শতাংশ হবে, বাড়বে মূল্যস্ফীতি
  • চলতি বছরে মূল‍্যস্ফীতি বেড়ে ১০.২ শতাংশে পৌঁছাবে, কমবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি 
  • প্রবৃদ্ধি হবে ৩.৯%, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের প্রভাব: এডিবি
  • তিন মাস পর কিছুটা বাড়ল মূল্যস্ফীতি
  • মার্চে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি 
  • অর্থনীতিতে গতি বেড়েছে, অক্টোবর–ডিসেম্বর প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ
  • ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ও ১০ হাজার টন মসুর ডাল কিনবে সরকার
  • দেশের পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায়, মার্চে প্রবৃদ্ধি ১১.৪৪%: ইপিবির তথ্য
  • রপ্তানি বেড়েছে ১১ শতাংশ
  • ২৫৪ কোটি টাকার সেদ্ধ চাল কিনবে সরকার