হালুয়াঘাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দু’পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটির জেরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আশরাফুল আলম সোহান আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে চলছিল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহতদের যাচাই-বাছাইয়ের কার্যক্রম। এই যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সদস্য সচিব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন প্রতিনিধিসহ আরও তিনজন সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন কমিটিতে। ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সদস্য থেকে জুলকার নাইন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি এই কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। পদত্যাগের পরও জুলকার নাইন কমিটিতে থাকায় অন্য প্রতিনিধিরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শেষে বেশ কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। এ সময় বাগবিতণ্ডা সৃষ্টি হলে জুলকার নাইন কমিটিতে থাকা নিয়ে ব্যাখ্যা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলীনূর খান। সেই সঙ্গে বিষয়টি অন্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে দেন। পরে ছাত্র প্রতিনিধিরা নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষ থেকে বের হয়ে চলে যাওয়ার সময় সিঁড়ির নিচে ছাত্র প্রতিনিধি আশিকুল ইসলামের সঙ্গে আরেক প্রতিনিধি আশরাফুল আলম সোহানের বাগবিতণ্ডা হয়। এ সময় দু’পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েন প্রতিনিধিরা। পরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আশরাফুল আলম সোহানকে থাপ্পড় মারেন আশিকুল ইসলাম। এতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি। পরে সোহানকে উপজেলা স্বাস্ব্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জুলকার নাইন বলেন, ‘যাচাই-বাছাই কমিটির একটি বোর্ড সভা হয়। সভা শেষে তারা জানতে চান আমি এখানে কেন? এ নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয়। আমি শুরু থেকেই এই আন্দোলনে জড়িত। তাদের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিন ধরে রেষারেষি চলছে। তারা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছে আমার নামে। আজ (বুধবার) নতুন যাচাই তালিকা তৈরি এবং কমিটিতে আমার থাকা নিয়ে তাদের সমস্যা থেকে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।’

আশিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে নিয়ে তিন-চার মাস ধরে আজেবাজে মন্তব্য করছে। আজ ইউএনও অফিসে সবার সামনে বলে আমি নাকি আওয়ামী লীগের দালাল। তারপর মনের ক্ষোভে আমি তাকে একটা থাপ্পড় মারি, পরে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।’

আশরাফুল আলম সোহানের ভাষ্য, আশিকুল ইসলামের সঙ্গে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে তার (সোহান) বাম সাইডে কানের নিচে দুইটা থাপ্পড় মারে। এতে অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। হালুয়াঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। এ ব্যাপারে মামলা করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগামীকাল চিকিৎসা নিয়ে পরে চিন্তা করব।’
চিকিৎসক প্রাণেশ চন্দ্র পণ্ডিতের ভাষ্য, আহত অবস্থায় ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল উন্নত চিকিৎসার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ দেখানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলীনূর খান জানান, আগেও কমিটিতে ছিলেন জুলকার। এই কমিটিও আগের করা। কয়েকজন প্রতিনিধি এসে অভিযোগ করলেন জুলকার কমিটিতে থাকার ব্যাপারে। তারা জুলকারকে চায় না এ নিয়ে তাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা। পরে বিষটি সবার সঙ্গে কথা বলে সমন্বয় করে শান্ত করার চেষ্টা করা হয়। তারা কক্ষ থেকে চলে যাওয়ার পরে সিঁড়ির নিচে হাতাহাতি থেকে মারামারির ঘটনা ঘটে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ময়মনস হ আহত আশর ফ ল আলম স হ ন ই কম ট কম ট ত র ঘটন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে বাংলাদেশের কী হবে

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের ভালো লাগুক আর মন্দ লাগুক এমনটাই কিন্তু আশঙ্কা করা হয়েছিল—ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভালো দেখতে পুরো বিশ্বব্যবস্থাকেই ওলট-পালট করে দিতে পারেন। ইতিমধ্যে জলবায়ু তহবিল আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় অর্থায়ন থেকে তিনি সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ইউএসএআইডি অর্থায়িত প্রকল্প কাটছাঁট করছেন। চীন, মেক্সিকো, কানাডার বিরুদ্ধে বিরাট শুল্ক–বাধা সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন। এমনকি ইউরোপের ২৭টি দেশের বিরুদ্ধেও একই কাজের হুমকি দিচ্ছেন। নিদেনপক্ষে সারা বিশ্ব যেন এক বাণিজ্যযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এর হোতা হচ্ছেন স্বয়ং ট্রাম্প।

এভাবে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে শুল্ক নিয়ে লড়াইয়ে বিশ্ববাণিজ্য কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে সন্দেহ নেই। তবে এ শঙ্কা বড় ধরনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে বাংলাদেশের সামনে বলে অনেকেই বলছেন। মনে হচ্ছে, তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানিতে নতুন করে বাড়তি চাহিদা তৈরি হবে। তুলনামূলক কম শুল্ক সুবিধায় চীন মেক্সিকোর পণ্যের চেয়ে বাংলাদেশের পণ্য পশ্চিমা ভোক্তাদের কাছে দামে সাশ্রয়ী হবে।

ধারণা করা হচ্ছে, কম শুল্কের সুবিধা নিতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কানাডাসহ অনেক দেশই বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়াতে পারে। বড় অর্থনীতির দেশগুলোর পারস্পরিক শুল্ক লড়াই যত তীব্র হবে, ততই কপাল খুলতে পারে বাংলাদেশের। এসব কথা বলেছেন ব্যবসা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞরা। তবে তাঁরা এটাও বলছেন, সঠিক কৌশল নিয়ে এগোতে না পারলে সুযোগ হাতছাড়া হবে।

আমাদের প্রতিযোগী কিছু দেশ নতুন নতুন নীতিসহায়তা নিয়ে আসছে। তাই সুযোগ আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদেরও আটঘাট বেঁধেই নামতে হবে

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে কানাডার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে একই হারে মার্কিন পণ্যেও শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা সরকার। ধারণা করা হচ্ছে, কানাডার অনুসরণে মেক্সিকো ও চীন একই ধরনের পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারে। ইউরোপও এমনটা ভাবছে। বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে এ শুল্ক লড়াইয়ে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিশ্ববাণিজ্য। তবে তৈরি পোশাকের মতো মৌলিক চাহিদার পণ্য ব্যবহার ব্যাপক হারে কমানোর সুযোগও তেমন নেই।

অনেকেই মনে করেন, বড় দেশগুলোর শুল্ক লড়াই বাংলাদেশের রপ্তানি এবং এফডিআইয়ের ক্ষেত্রে বড় সুবিধা তৈরি করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। অন্যদিকে বিপদের কথা হচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইউরোপেও রপ্তানি কমতে পারে। তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে অভিবাসন বাধাগ্রস্ত হবে। রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমতে পারে। এমনটাও আশঙ্কা করা হচ্ছে, চীন ও মেক্সিকো থেকে অনেকেই বিনিয়োগ স্থানান্তর করবেন।

তবে আরেকটি নির্মম সত্য হচ্ছে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিধিবিধানের যে পাকাপোক্ত শিকল আছে, তা মুক্ত করতে না পারলে সুযোগ কাজে লাগানো যাবে না। পাঁচটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে (এসইজেড) উপযুক্ত করা এবং এক ছাদের নিচে সব সেবা নিশ্চিত করা গেলে সেই সম্ভাবনা কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভালো সম্পর্ক। এ রকম অনেক দেশই বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।

তৈরি পোশাক বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য। মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের ওপর আসে এ পণ্যটি থেকে। আবার একক রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র পোশাকের প্রধান রপ্তানি বাজার। মোট রপ্তানি আয়ের ২০ থেকে ২২ শতাংশ আসে দেশটি থেকে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের প্রভাব বেশি। দেশটিতে পোশাক রপ্তানিতে চীনের হিস্যা ২১ শতাংশ।

বাংলাদেশের হিস্যা ৯ শতাংশের কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) সর্বশেষ প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ১০ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। মেক্সিকোর অবস্থান ষষ্ঠ।

শুল্ক লড়াই কোথায় গিয়ে ঠেকে, তা নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে একটা অস্থিরতাও তৈরি হয়েছে। এ কারণে ক্রেতারা বিকল্প দেশ হিসেবে বাংলাদেশে নজর বাড়াবে বলেই মনে হয়। কারণ, তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভিত্তি অনেক মজবুত। এটা বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই একটা বড় সুযোগ।

এ সুযোগ কতটা কাজে লাগানো যায়, সেটাই দেখার বিষয়। কারণ, হঠাৎ আবারও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির মতো নীতি সিদ্ধান্ত উৎপাদন ব্যয় বাড়াবে। ব্র্যান্ড-ক্রেতারা এখনই এ বিষয়ে কৌশল নিচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশের সুযোগ হাতছাড়াও হতে পারে। সুবিধা চলে যেতে পারে প্রতিযোগী ভিয়েতনাম ও ভারতে।

অন্যদিকে কম শুল্ক–সুবিধায় বাংলাদেশি পণ্য ওই দেশগুলোতে দামে সাশ্রয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া সরাসরি রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানোর সুযোগ ছাড়াও প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) আসবে বাংলাদেশে।

যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে বাংলাদেশের পণ্যে গড়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ শুল্কারোপ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে কম হারের এ শুল্কসুবিধা নিতে চীন ও মেক্সিকোর উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াবেন।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমাপ্ত ২০২৪ ক্যালেন্ডার বছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৭২০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা বছরের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ১৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে একসময় বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত বা জিএসপি সুবিধা পাওয়া যেত। অবশ্য তৈরি পোশাক এ সুবিধার আওতায় ছিল না।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর আন্তর্জাতিক মানের শ্রম পরিবেশ না থাকার কারণ দেখিয়ে জিএসপি স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করে বাংলাদেশ। পোশাকশিল্পে নিরাপদ কর্মপরিবেশের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে বিবেচনা করা হয় এখন। এ সুবিধায় চীনাদের জন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগ আরও সহজ হবে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা।

তবে এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে গেলে আমাদের ভাবতে হবে, আমাদের পক্ষে উৎপাদন কতটা বাড়ানো সম্ভব, সে ক্ষেত্রে আবার কী কী নতুন উপকরণ বা যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। আমাদের শ্রমিকদের দক্ষতা এখানে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না তো? বর্তমান আইনশৃঙ্খলা ও জ্বালানি পরিস্থিতি কতটুকু সহায়ক হবে? নতুন উৎপাদন বা সক্ষমতা বৃদ্ধি কার্যক্রমের অর্থায়ন আসবে কোত্থেকে? অন্যদিকে আবার আমাদের প্রতিযোগী কিছু দেশ নতুন নতুন নীতিসহায়তা নিয়ে আসছে। তাই সুযোগ আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদেরও আটঘাট বেঁধেই নামতে হবে।

মামুন রশীদ অর্থনীতি বিশ্লেষক

সম্পর্কিত নিবন্ধ