দেশে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার লক্ষ্যে গৃহীত সরকারের সুরক্ষা কর্মসূচি সংকোচনের বিষয়টি উদ্বেগজনক। বুধবার প্রকাশিত সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদন হইতে ইহা স্পষ্ট, একদিকে টিসিবির ট্রাক সেল কর্মসূচি বন্ধ; অন্যদিকে ৪৩ হাজার ‘ফ্যামিলি কার্ড’ বাতিল করিলেও সমসংখ্যক পরিবারকে এই সুবিধার অন্তর্ভুক্ত করা হয় নাই। যেই সময়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি বৃদ্ধি করা দরকার, সেই সময়ে এই পরিণতি কেন?
অবশ্য সমকালের প্রতিবেদনে স্পষ্ট, সরকারের ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য বিতরণ বৃদ্ধির পরিকল্পনা থাকিলেও অর্থাভাবে তাহা সম্ভব হইতেছে না। সরকারের রাজস্ব আয় হ্রাসের কারণে এবং সামগ্রিক আয় ও ব্যয়ের মধ্যে বড় ঘাটতির প্রভাবে দরিদ্রের সুরক্ষায় ভাটা পড়িয়াছে। কিন্তু বর্তমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা বৃদ্ধির বিকল্প নাই। খাদ্য সহায়তার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। ফলে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় থাকা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি অব্যাহত রাখিতে হইবে।
একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনাও জরুরি। মঙ্গলবার প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাবে, জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা হ্রাস পাইয়াছে বটে, কিন্তু খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০.
মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হ্রাস করিতে হইলে এবং সর্বদা বাজার স্থিতিশীল রাখিতে চাঁদাবাজি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য হ্রাস গুরুত্বপূর্ণ।
এই সময়ে ইহা জরুরি, কারণ রমজান মাস আসন্ন। শীতের শেষে সবজির দাম বৃদ্ধি পাইলে রমজানে পুনরায় ঊর্ধ্বমুখী হইয়া উঠিতে পারে মূল্যস্ফীতি। রমজানে এমনিতেই বাড়তি চাহিদার কারণে প্রায় প্রতি বৎসর এই সময়ে স্বাভাবিকের তুলনায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। রমজানে বাজার সহনশীল পর্যায়ে রাখিতে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করিতে হইবে। ইতোমধ্যে রমজানে পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখিতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়া কার্য সম্পাদনের নির্দেশ দিয়াছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ইতোপূর্বে আমরা দেখিয়াছি, রমজানে ব্যবসায়ীদের একটা শ্রেণি সিন্ডিকেট করিয়া কীভাবে বাজার অস্থিতিশীল করিয়া থাকে। ব্যবসায়ীরা যাহাতে মূল্য বৃদ্ধির কৌশল করিতে না পারে, তজ্জন্য পূর্বেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। বাজার মনিটরিং ও সরবরাহ শৃঙ্খল স্বাভাবিক রাখিতে সবিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা চাই।
এই সময়ে বাজার নিয়ন্ত্রণেও টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিপণন আরও জরুরি হইয়া পড়িয়াছে।
সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারের খাদ্য পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণ কমিটি খাদ্যবান্ধব কার্যক্রম আরও জোরদারকরণের বিষয়টি বিবেচনা করিতেছে। বিশেষ করিয়া কাবিখা-কাজের বিনিময়ে খাদ্য, জিডিএফসহ যেই সকল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বন্ধ রহিয়াছে, সেইগুলির কার্যক্রম চালুসহ চলমান কর্মসূচির পরিধি বৃদ্ধির বিষয়ও বিবেচনা করিতে হইবে। এই সকল কর্মসূচিতে অনিয়ম থাকিলে উহা দূর করিতে হইবে সত্য, তাই বলিয়া সম্পূর্ণ কর্মসূচি বন্ধ করা অনুচিত। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে গরিবের সুরক্ষা যেন অগ্রাধিকার না হারায়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র র রমজ ন ব যবস ই সময়
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ হাজার টন চাল আমদানিতে ব্যয় হবে ২৫৪ কোটি টাকা
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সরকারি সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্যাকেজ-১১ এর আওতায় ৫০ হাজার (+৫%) মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানি করবে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ২৫৪ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এ প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় কমিটির সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, দেশের সরকারি খাদ্য মজুদ বৃদ্ধি করে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার স্বার্থে ৫০ হাজার (+৫%) মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে পাঁচটি দরপত্র জমা পড়ে। পাঁচটি প্রস্তাবই আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশ অনুযায়ী রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল, সিঙ্গাপুর এসব চাল সরবরাহ করবে।
প্রতি মেট্রিক টন চালের দাম ৪১৬.৪৪ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ২ কোটি ৮ লাখ ২২ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ২৫৪ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
চলতি অর্থবছরে চালের মোট চাহিদা ৩৯.৭৮ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৯ লাখ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে ৭.৫০ লাখ মেট্রিক টন চাল কেনার চুক্তি সম্পাদন হয়েছে।
ঢাকা/হাসনাত/রফিক