উচ্চশিক্ষা সংস্কার এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লব
Published: 6th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ বর্তমানে রাজনীতি, প্রশাসন, শৃঙ্খলা, দুর্নীতিসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এগুলোর সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টা ও জটিল প্রক্রিয়া অনুসরণ করা লাগবে। এই চ্যালেঞ্জগুলোর গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত অগ্রাধিকার উপেক্ষিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য দেশকে প্রস্তুত করার বিষয়টি।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বিশ্বের শিল্প, অর্থনীতি ও সমাজকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), বিগডেটা, ব্লকচেইন এবং উন্নত জীবপ্রযুক্তির মাধ্যমে আমূল পরিবর্তন করছে। রুটিন চাকরি দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতের চাকরির ধরন অনিশ্চিত রয়ে গেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো এখনও প্রচলিত স্বল্পদক্ষ, শ্রমনির্ভর শিল্প এবং প্রচলিত ব্যবসা, কৃষি ও সেবা খাত দ্বারা প্রভাবিত। উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয় এবং স্বল্পদক্ষ কর্মীদের নতুন দক্ষতায় দক্ষ করে তোলার ক্ষেত্রে যথেষ্ট উদ্যোগের অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আইওটি, জীবপ্রযুক্তি এবং রোবোটিক্সের মতো উদীয়মান খাতে প্রশিক্ষণের সুযোগ এখনও সীমিত। এই স্থবিরতা দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুতর ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
যদি কৌশলগত উদ্যোগ দ্রুত না নেওয়া হয়, তবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও টেকসই প্রবৃদ্ধির বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, নীতিনির্ধারক, অর্থনীতিবিদ এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের একসঙ্গে কাজ করে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ মোকাবিলার জন্য কার্যকর কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকদের এ-সংক্রান্ত দক্ষতা ও জ্ঞান দেওয়া ক্রমবর্ধমান জটিল কর্মবাজারে টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের পাঠ্যক্রমে উদীয়মান প্রযুক্তির পাশাপাশি অভিযোজনমূলক দক্ষতাগুলো, যেমন– আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা, সমস্যা সমাধান, সৃজনশীলতা, ক্রিটিক্যাল থিংকিং, উদ্ভাবন, সহমর্মিতা, সংঘাত নিরসন এবং উদ্যোক্তা দক্ষতা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এই সমন্বয় চতুর্থ শিল্পবিপ্লব দ্বারা গঠিত গতিশীল ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই রূপান্তর অর্জনের জন্য পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষাদান পদ্ধতির মৌলিক পুনর্গঠন প্রয়োজন।
একদিকে, আজ পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পাঠ্যক্রম মূলত প্রায় তিনশ বছর আগের রেনে দেকার্তের দর্শনের ওপর ভিত্তি করে প্রণয়ন করে থাকে। অন্যদিকে, এখনও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঐতিহ্যগত ‘চক অ্যান্ড টক’ শিক্ষাদান পদ্ধতির ওপর নির্ভর করছে, যা প্রায়ই শিক্ষার্থীদের নিষ্ক্রিয় শিক্ষার্থী করে তোলে। তরুণ মস্তিষ্কের মৌলিক জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াগুলো বোঝার মাধ্যমে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আরও কার্যকরভাবে শিক্ষায় সম্পৃক্ত করতে পারেন, যা কৌতূহল জাগ্রত করা, পূর্ববর্তী জ্ঞানের পুনর্ব্যক্তি এবং সংবেদনশীল ইনপুটের ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়তা করে।
শিক্ষাদানের মাধ্যমে নতুন বিষয় উপস্থাপনের পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক ধারণাগুলো পুনরালোচনা ও শক্তিশালীকরণ প্রয়োজন। ‘সেন্সরি মেমোরি’ যা শুধু মিলিসেকেন্ড থেকে কয়েক সেকেন্ডের জন্য তথ্য সংরক্ষণ করে, তা দৃষ্টিগত, শ্রবণমূলক এবং স্পর্শনীয় পদ্ধতির সমন্বয়ে প্রক্রিয়াকরণে সহায়তা পায়। শিক্ষক অল্প সময়ে অনেক তথ্য লেকচারের মাধ্যমে প্রদান করলে, অতিরিক্ত তথ্যপ্রবাহ সেন্সরি মেমোরিকে বিপর্যস্ত করতে পারে, যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ‘সেন্সরি মেমোরি’ সংগ্রহীত তথ্যাদি ‘শর্ট-টার্ম মেমোরিতে’ পাঠায়। ‘শর্ট-টার্ম মেমোরি’ মাত্র ৫ থেকে ৯টি তথ্য উপাদান ১০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিট পর্যন্ত ধরে রাখতে পারে, তাই বিষয়বস্তুকে খণ্ডিত করে ছোট ছোট ও ব্যবস্থাপনাযোগ্য অংশে বিভক্ত করা, যা ‘চাংকিং’ নামে পরিচিত– বোঝাপড়া এবং তথ্য ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
প্রচলিত শিক্ষাদান পদ্ধতিতে নানা অসুবিধা থাকলেও তাত্ত্বিক জ্ঞান দেওয়ার জন্য গ্রহণ করা যায়। দক্ষতা উন্নয়নের জন্য তা যথেষ্ট নয়। বিকল্প পদ্ধতিগুলো, যেমন– ফ্লিপড ক্লাসরুম, প্রবলেম-ভিত্তিক শিক্ষা, প্রজেক্ট-ভিত্তিক শিক্ষা, এক্সপেরেন্সিয়াল শিক্ষা এবং কেস-ভিত্তিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং অভিযোজনমূলক দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করে।
ফ্লিপড ক্লাসরুম মডেলে প্রচলিত পাঠদানের বিপরীতে শিক্ষার্থীরা ক্লাসের আগে পাঠ্য বিষয়বস্তু অধ্যয়ন করে এবং ক্লাস চলার সময়ে দলগত কার্যক্রমে অংশ নেয়। এই পদ্ধতি দলগত কাজ, যোগাযোগ ও সহপাঠীদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ তৈরি করে, যা আত্মজ্ঞান, সহমর্মিতা, সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধান, ক্রিটিক্যাল থিংকিং এবং আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে, যা আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার গুরুত্বপূর্ণ উপাদন। এটি প্রকৌশল, ব্যবসায় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হলেও শিল্পকলা ও মানবিক বিষয়ে এর ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কম।
সমস্যাভিত্তিক শিক্ষা মূলত সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়ার ওপর গুরুত্ব দেয়, অন্যদিকে প্রজেক্ট-ভিত্তিক শিক্ষা একটি প্রজেক্ট মাধ্যমে নির্দিষ্ট ফলাফল অর্জন বা প্রডাক্ট তৈরির দিকে মনোযোগ দেয় এবং এটি প্রায়ই আন্তঃবিষয়ক হয়। উভয় পদ্ধতিই সমস্যা সমাধান, সৃজনশীলতা, ক্রিটিক্যাল থিংকিং এবং সহনশীলতা বৃদ্ধি করে। মেডিকেল ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, প্রকৌশল, ব্যবসা, সমাজবিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান, অর্থনীতি, জননীতি এবং আইনে সমস্যাভিত্তিক শিক্ষা বহুল ব্যবহৃত হয়, অন্যদিকে প্রকল্পভিত্তিক শিক্ষা সাধারণত চারুকলা, গ্রাফিক ডিজাইন এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের মতো সৃজনশীল ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। তবে গণিত, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, সংগীত এবং ভাষা শিক্ষায় সমস্যাভিত্তিক/প্রকল্পভিত্তিক শিক্ষা তুলনামূলকভাবে কম প্রচলিত।
‘এক্সপেরিয়েন্সিয়াল শিক্ষা’ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা সরাসরি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শেখে, যেমন– ইন্টার্নশিপ, ফিল্ডওয়ার্ক, সিমুলেশন এবং অন্যান্য হাতেকলমের কার্যক্রম। এটি আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা, সৃজনশীলতা এবং সহমর্মিতা উন্নয়নে সহায়তা করে, যেখানে সমস্যা নির্ধারণ এবং সহনশীলতা অর্জন প্রধান ফলাফল হিসেবে বিবেচিত হয়। ব্যবসা, প্রকৌশল, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিল্পকলা প্রোগ্রাম অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়, বিশেষ করে রান্নাশিল্প এবং আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনায় ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে হাতেকলমে প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে।
‘কেস-ভিত্তিক শিক্ষা’, ‘এনকুয়ারি-ভিত্তিক শিক্ষা’ এবং ‘ডিসকভারি-ভিত্তিক শিক্ষা’ শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করে অভিযোজনমূলক দক্ষতা উন্নয়ন করে। আইন, ব্যবসা এবং চিকিৎসাশাস্ত্রে বহুল ব্যবহৃত কোর্সভিত্তিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের জটিল সমস্যা বিশ্লেষণ ও সমাধানে উৎসাহিত করে, যা সমস্যা নির্ধারণ, সৃজনশীলতা এবং সহমর্মিতার মতো গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ‘টি-আকৃতির’ পেশাজীবীদের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে, যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত জ্ঞানের (টি-এর আনুভূমিক অংশ) পাশাপাশি কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে গভীর দক্ষতা (টি-এর উল্লম্ব অংশ) অর্জন করেছেন। জন ডিউই এবং পাওলো ফ্রেইরের মতো স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ পারস্পরিক সংযোগযুক্ত শিক্ষার পক্ষে জোরালো মতামত দেন, যা রেনে দেকার্তের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার বিপরীত। দেকার্তের পদ্ধতিতে জ্ঞানকে পৃথক বিষয়গুলোতে বিভক্ত করা হয়, যা তাদের পারস্পরিক সংযোগকে উপেক্ষা করে। উদাহরণস্বরূপ, ইকোসিস্টেমস অধ্যয়নে যখন উদ্ভিদ, প্রাণী, জলবায়ু এবং মাটিকে আলাদা করে করা হয়, তখন তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝা সম্ভব হয় না।
বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের জরুরি প্রয়োজন, যাতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতামূলক কর্মবাজারের জন্য স্নাতকদের প্রস্তুত করা যায়। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা প্রয়োজন, যা সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকবে এবং একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ক্রমবর্ধমান প্রত্যাশাকে প্রতিফলিত করবে, যাতে ভবিষ্যৎ সাফল্য নিশ্চিত করা যায়। এই প্রেক্ষাপটে, পাঠ্যক্রম প্রণয়নে ‘টি-মডেল’ গ্রহণ করা এবং বিকল্প শিক্ষাদান পদ্ধতি অনুসরণ করা উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এম.
এম. শহিদুল হাসান: ডিস্টিংগুয়িস্ট প্রফেসর, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি এবং প্রাক্তন উপাচার্য, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি
shahidul7371@gmail.com
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র জন য প রচল ত ব যবহ ত স জনশ ল ব যবস থ সহ য ত ক ত কর গ রহণ সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমানো নিয়ে দরকষাকষি
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচির শর্ত অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের শেষ তিন মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দুই লাখ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আহরণ করতে হবে। একই সঙ্গে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সংস্থাটির অতিরিক্ত আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫৭ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ দুই লক্ষ্যমাত্রার কোনোটিই অর্জন সম্ভব নয়। তাই এ বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা কমানোর অনুরোধ জানিয়েছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।
গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে সংস্থাটির চেয়ারম্যানসহ কাস্টমস, আয়কর ও ভ্যাট অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এসব বৈঠকে কর্মকর্তারা জানান, আইএমএফের শর্তের কথা মাথায় রেখে কিছু ক্ষেত্রে করহার বাড়ানো, কর অব্যাহতি তুলে দেওয়াসহ নীতিতে পরিবর্তন নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে আশা করা হচ্ছে, রাজস্ব আহরণ বেশ বাড়বে। তবে যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে তা সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাস্তবসম্মত নয়। তাই এ লক্ষ্যমাত্রা যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার অনুরোধ করেন তারা। এ বিষয়ে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বেশ ইতিবাচক বলেও বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
বৈঠকের বিষয়ে এনবিআরের কর্মকর্তারা সমকালকে বলেন, গত জুন শেষে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এটি চলতি অর্থবছর শেষে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত করার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। এর জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের মার্চ মাস পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের পরবর্তী তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার বাকি রাজস্ব আদায় করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তারা আরও বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাড়তি ৫৭ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে। এসব বাড়তি রাজস্ব কীভাবে আদায় হবে তা জানতে চেয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি অসম্ভব। তাই লক্ষ্যমাত্রা কমানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা আরও বলেন, দেশের রাজস্ব খাত সংস্কারে উদ্যোগী মনোভাবের কথাও তাদের জানানো হয়েছে। আইএমএফ প্রতিনিধি দল বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছে। সামনে আরও বৈঠক হবে। আশা করা হচ্ছে, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনবে আইএমএফ।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে বাংলাদেশ কতটা শর্ত পূরণ করেছে, তা পর্যালোচনায় ঢাকা সফর করছে প্রতিনিধি দলটি। এ দুই কিস্তির জন্য গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কর রাজস্বের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তার চেয়ে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। আইএমএফ গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকসের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি গত রোববার থেকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। মিশনটি আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে।