বিপদের সময় বলতে হবে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন
Published: 6th, February 2025 GMT
যেকোনো ধরনের বিপদ-আপদ সামনে এলে বলা হয় ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’। বিশ্বাসীরা কেবল মুখে বলা নয়; বরং মনে মনে এ কথা স্বীকার করে নেওয়া যে আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন। আর নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁরই দিকে ফিরে যাব—এর অর্থ হচ্ছে, চিরকাল এ দুনিয়ায় থাকা যাবে না। একদিন আল্লাহরই কাছে যেতে হবেই।
বিশ্বাসীরা বিপদে পড়লে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পাঠ করেন। কেউ বিপদে পড়লে যেন এ দোয়াটি পাঠ করে। একাধারে যেমন সওয়াব পাওয়া যায়, তেমনি অর্থের প্রতি লক্ষ রেখে পাঠ করা হয়, তবে বিপদের মধ্যেও শান্তি লাভ করবে বিপদ থেকে উত্তরণও সহজ হয়ে যায়।
কোনো বিপদে বান্দার মুখে উচ্চারিত হয় এই দুটি বাক্য—এর অর্থ আল্লাহর ফয়সালা সর্বান্তঃকরণে মেনে নিচ্ছি। আর আখিরাতে বিশ্বাস করি, তাই এ বিপদে সবরের বিনিময় তাঁর কাছে প্রত্যাশা করছি। দুটি বাক্যে ইমানের মৌলিক সাক্ষ্য দেওয়া হয়। তাই এর ফজিলতও অনেক।
সুরা বাকারার ১৫৬ নম্বর আয়াতটি কোরআন শরিফের প্রসিদ্ধ আয়াত। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। অর্থ (তারাই ধৈর্যশীল) যারা তাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে আমরা তো আল্লাহরই আর নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁরই দিকে ফিরে যাব। কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে পড়েন। অনেকে মনে করেন, মানুষের মৃত্যুসংবাদ পেলে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়তে হয়। বরং ইন্না লিল্লাহ পড়ার অনেক কারণ ও গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত রয়েছে। এই পবিত্র বাক্য আল্লাহকে স্মরণ রাখার বড় উপায়।
আরও পড়ুনহজরত সোলায়মান (আ.) ও রানি বিলকিসের ঘটনা২৪ নভেম্বর ২০২৩যে কারণে ইন্না লিল্লাহ পড়া হয়
আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে (কাউকে) ভয় ও ক্ষুধা দিয়ে, আর (কাউকে) ধনে–প্রাণে বা ফল–ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে পরীক্ষা করব। আর যারা ধৈর্য ধরে, তাদের তুমি সুখবর দাও। (তারাই ধৈর্যশীল) যারা তাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে, [ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন] ‘আমরা তো আল্লাহর আর নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁরই দিকে ফিরে যাব।’ এসব লোকের প্রতি তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে আশীর্বাদ ও দয়া বর্ষিত হয়, আর এরাই সৎ পথপ্রাপ্ত। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭) এ তিনটি আয়াতে বিষয়টি সুস্পষ্ট। কারা ইন্না লিল্লাহ পড়বেন, কোনো পরিস্থিতিতে পড়বেন এবং পড়লে কী উপকার।
বিপদের সময় বলতে হবেউম্মে সালামা (রা.)–এর বরাতে হাদিস থেকে জানা যায়। তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)–কে বলতে শুনেছি, কোনো মুসলিমের ওপর বিপদ এলে যদি সে বলে, আল্লাহ যা হুকুম করেছেন—ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (অর্থাৎ আমরা আল্লাহরই জন্য এবং তারই কাছে ফিরে যাব) বলে এবং এই দোয়া পড়ে, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফলি খাইরাম মিনহা ইল্লা আখলাফাল্ল হুলাহ খয়রাম মিনহা (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে আমার মুসিবতে সওয়াব দান করো এবং এর বিনিময়ে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করো, তবে মহান আল্লাহ তাকে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করে থাকেন।)
উম্মে সালামা (রা.) আরও বলেন, আবু সালামা যখন ইন্তেকাল করেন, আমি মনে মনে ভাবলাম, আবু সালামা থেকে উত্তম মুসলিম আর পাব না। এরপর আমি দোয়া পড়লাম। এরপর মহান আল্লাহ আবু সালামার স্থলে রাসুল (সা.)–এর মতো স্বামী দান করেছেন। উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আমার কাছে রাসুল (সা.) বিয়ের পয়গাম দেওয়ার জন্য হাতিব ইবনে আবু বালতা (রা.)–কে পাঠালেন। আমি বললাম, আমার একটা মেয়ে আছে আর আমার জিদ বেশি। তখন রাসুল (সা.) বললেন, তার মেয়ে সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করব, যাতে তিনি তাকে তার মেয়ের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেন। আর (তার সম্পর্কে) দোয়া করব যেন আল্লাহ তার জিদ দূর করে দেন। (মুসলিম: ৯১৮)
আরও পড়ুনইয়াজুজ–মাজুজের আশ্চর্য কাহিনি ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় চালকল মালিক সমিতির সভাপতির বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি
দেশের অন্যতম শীর্ষ চাল ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশিদের কুষ্টিয়া শহরের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলির ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (৯ এপ্রিল) দুপুর পৌনে দুইটার দিকে সীমানা প্রাচীরের বাইরে থেকে এলোপাথাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। এসময় বাড়িতে উপস্থিত থাকা সবার মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ও র্যাবের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে কী কারণে এ গুলির ঘটনা তা এখনো জানাতে পারেনি পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শহরের গোশালা রোডে অবস্থিত আব্দুর রশিদের একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে। বাড়িটি এখনো নির্মাণাধীন। পরিবারসহ আব্দুর রাশিদ ওই বাড়িতেই থাকতেন। ঘটনার সময় তিনি খাজানগরে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ছিলেন। বড় ছেলে ও পাহারাদার ঘটনার সময় বাড়ির ভেতরেই ছিলেন।
আব্দুর রশিদ বলেন, “ঘটনা জানতে পেরে আমি তাৎক্ষণিক বাড়িতে ফিরি। এরপর বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে দেখতে পাই বেলা পৌনে দুইটার দিকে এক মোটরসাইকেলে হেলমেট পরা দুইজন ব্যক্তি বাণী হলের দিক থেকে এসে বাড়ির সামনে দাঁড়ায়। এরপর বাড়ি লক্ষ্য করে দুই রাউন্ড গুলি চালিয়ে একই রাস্তা ধরা শহরের দিকে চলে যায়। এতে বাড়ির বাইরের কাচের গ্লাস ভেঙে যায়। বিষয়টি আমি সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে জানিয়েছি।”
আব্দুর রশিদের ভাতিজা জিহাদুজ্জামান জিকু বলেন, “সম্প্রতি সদর উপজেলার আইলচারা হাট-বাজারের পুনঃদরপত্র বিজ্ঞপ্তি হয়েছে। আমি দরপত্রের শিডিউল কিনেছি। এরপর থেকেই আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু চাচা (আব্দুর রশিদ) আমাদের পরিবারের অভিভাবক। তার পরামর্শেই আমরা ব্যবসা বাণিজ্য করি। সেই জায়গা থেকে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য আজকের এই ঘটনা ঘটাতে পারে। সদর থানা বিএনপির এক নেতা ও তার এক সহযোগী এই হাট নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা নিজেদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে বলে ধারণা করছি।”
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশাররফ হোসেন বলেন, “গুলির ঘটনায় সিসি ফুটেজসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছি। কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সব রকম পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করব।”
প্রসঙ্গত, আব্দুর রশিদ দেশের অন্যতম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরের রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের মালিক। ঋণখেলাপির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের দায়ের করা মামলা চলমান রয়েছে। গত বছরের ১৬ নভেম্বর বিকেলে প্রতারণা মামলায় কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঢাকা/কাঞ্চন/এস