এক্সকাভেটর দিয়ে ভাঙা হচ্ছে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বাড়ি
Published: 5th, February 2025 GMT
রাজধানীর ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর এক্সকাভেটর বা ভেকু দিয়ে ভাঙা হচ্ছে। বুধবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বাড়িটি ভাঙা শুরু হয়।
এর আগে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভেকুটি সেখানে আনা হয়। রাত ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে প্রবেশ করে ক্রেন। ক্রেন ও ভেকু ঘিরে ছাত্র-জনতাকে উল্লাস করতে দেখা যায়।
এর আগে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের দিকে এগোতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। গেট ভেঙে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঢুকে পড়ে ছাত্র-জনতা। শাবল, হাতুড়ি ও রড দিয়ে বাড়ির দেয়ালসহ বিভিন্ন জায়গায় করা হয় আঘাত। কেউ খুলে নিয়ে যান জানালা, কেউ আবার স্মৃতি হিসেবে একটি করে ইট খুলে নিয়ে যান। পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকলেও ভাঙচুরের সময় তারা বাড়িটির দিকে এগোয়নি। এ ঘটনার পর ওই এলাকার ট্রাফিক পুলিশও রাতে রাস্তা থেকে সরে যান।
৩২ নম্বর সড়কের মুখে জায়ান্ট স্ক্রিনে জুলাই অভ্যুত্থানের নৃশংসতার প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশনের তৈরি প্রামাণ্যচিত্রে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও পুলিশের টানা হত্যাযজ্ঞের নির্মম ঘটনার ভিডিও প্রচার করা হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এই বাড়িতে শেখ মুজিবুর রহমান, তার স্ত্রী–পুত্র, পুত্রবধূসহ আত্মীয়দের হত্যা করা হয়েছিল। পরে এই বাড়িটিকে স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিল বিক্ষুব্ধ জনতা। এর পর থেকে বাড়িটি অনেকটা পরিত্যক্ত ছিল।
এর আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে অবস্থান নেওয়া শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়া নিয়ে ফেসবুকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। পাশাপাশি ঘোষণা করা হয় ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ কর্মসূচিও।
নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের কথা ছড়িয়ে পড়ে। আজ বুধবার বিকেলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য শরিফ ওসমান হাদি। রাত ৯টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে যাওয়ার কথা থাকলেও পরে কর্মসূচি বদলে রাত ৮টায় নিয়ে আসা হয়।
আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের দিকে এগোতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে গেট ভেঙে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঢুকে পড়ে ছাত্র-জনতা। ভেতর থেকে ভাঙচুরের শব্দ আসতে থাকে। শাবল, হাতুড়ি ও রড দিয়ে বাড়ির দেয়ালসহ বিভিন্ন জায়গায় করা হয় আঘাত। কেউ খুলে নিয়ে যান জানালা, কেউ আবার স্মৃতি হিসেবে একটি করে ইট খুলে নিয়ে যান।
এ সময় ছাত্র-জনতা ‘ভুয়া ভুয়া’, ‘খুনি হাসিনার বিচার চাই’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, ‘দলে দলে যোগ দিন, মুজিববাদের কবর দিন’, ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’ ও ‘ধুলায় মেশাও তাড়াতাড়ি, বত্রিশের দালানবাড়ি’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, এ ধরনের কোনো কর্মসূচি বিষয়ে তাদের জানা ছিল না।
সরেজমিন দেখা যায়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় ছাত্র-জনতা। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির পুরো অবকাঠামো ভেঙে ফেলা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভবনের তৃতীয় তলার একটি জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘যে শেখ হাসিনা আমাদের ভাইদের গুলি করে দেশ থেকে পালিয়েছেন। তিনি কী করে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আমরা এ দেশে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার কোনো অস্তিত্ব রাখব না। যারা ছাত্র হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, সেসব ফ্যাসিবাদীর কোনো চিহ্ন বাংলাদেশের মাটিতে রাখতে চাই না। অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নিষিদ্ধ সংগঠনের কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক সালেহ মাহমুদ রায়হান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর এ দেশের প্রথম স্বৈরাচারের চিহ্ন মুছে ফেলতে চাই। আমরা বুলডোজার ভাড়া করেছি, কিছুক্ষণের মধ্যেই সেগুলো আসবে। এখানে কিছুই থাকবে না।’ তবে বুলডোজার কলাবাগান মোড়ে আটকে দেয় পুলিশ।
সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ ত র জনত ধ নমন ড ফ সব ক আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
তোফায়েল আহমেদের বাসভবনে ভাঙচুর, আগুন
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ভোলা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের বাসভবনে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাত ১২টার পর এ ঘটনা ঘটে। রাত সোয়া তিনটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাসভবনের ভেতরে আগুন জ্বলছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভোলা সদরের গাজীপুর সড়কে ‘প্রিয় কুটির’ নামের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন একদল বিক্ষুদ্ধ লোক। পরে তারা ভবনটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। তারা বাড়ির দরজা-জানালা ভেঙে দেয়ালে সাঁটানো বিভিন্ন ছবি, ক্রেস্ট ও কাগজপত্র রাস্তার এনে আগুন ধরিয়ে দেন।
বিক্ষুদ্ধরা জানালার কাঁচ ভেঙে ফেলে। কয়েকটি ফ্যান ও আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যান তারা। একপর্যায়ে কক্ষের ভেতরে থাকা কিছু আসবাবপত্র ভেঙে ঘরের ভেতর আগুন ধরিয়ে দেন। পরে বাড়ির সামনে থাকা একটি পুলিশ বক্স ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পরে তোফায়েল আহমেদ এই বাড়িতে থাকেননি। তিনি বেশির ভাগ সময় বাংলাবাজারের বাড়িতে অবস্থান করতেন।
এ বিষয়ে জানতে ভোলা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফোন দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
ভোলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক লিটন আহমেদকে ফোন করলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাত সোয়া তিনটা পর্যন্ত তারা আগুনের কোনো ফোন পাননি।