ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর ধানমন্ডি ৫/এ–তে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে আগুন দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার পর সেখানে আগুন দেওয়া হয় বলে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষে দায়িত্বরত কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে সুধা সদনে আগুনের খবর পান তাঁরা। সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

ওই এলাকায় দায়িত্বরত ধানমন্ডি সোসাইটির নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, রাত সাড়ে ১০টার পর ১০–১২টি ছেলে এসে সুধা সদনে আগুন দেয়। আগুন ভবনটিতে ছড়িয়ে পড়লে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লোকেরা এসে এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে আশপাশের ভবনের বাসিন্দারা এসে পানি দিয়ে নিচতলার আগুন কিছুটা কমিয়েছেন।

রাত ১২টার সময় ভবনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার বিভিন্ন কক্ষে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে অবস্থান নেওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা বুধবার রাতে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ভাষণ দেন। একে কেন্দ্র করে বিকেলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য শরিফ ওসমান হাদি। পরে সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমিমুক্ত হবে।’

এরপর রাত আটটার দিকে বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারী ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা বাড়িটির ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করেন। পরে ওই ভবনে আগুন দেওয়া হয়। রাত ১২টার দিকে এক্সকাভেটর ও ক্রেন দিয়ে ভবনটি ভাঙা শুরু হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ধ নমন ড

এছাড়াও পড়ুন:

দাবি পূরণের আশ্বাসে গভীর রাতে যমুনা থেকে সরলেন আহতরা

দাবি পূরণের আশ্বাসে গভীর রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে থেকে হাসপাতালে ফিরেছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা। 

সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ ৭ দফা দাবিতে রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দিনভর বিক্ষোভ করেন তারা। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে রাতে যমুনার সামনেও গিয়েও বিক্ষোভ করেন তারা। রাত সোয়া ১২টার দিকে যমুনার সামনে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহসহ আরো কয়েকজন ছাত্রনেতা। হাসনাত দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে রাত পৌনে ২টার দিকে তারা হাসপাতালে ফিরে যান। 

আহতদের দাবিদাওয়া পূরণ না হওয়ার জন্য প্রথমত আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দায়ী করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। বিক্ষুব্ধদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমরা চাইছিলাম কী, দেশটা সুন্দরভাবে চলুক। এ জন্যই তো সৎ উপদেষ্টাদের আইন্যা দিলাম। কিন্তু সৎ উপদেষ্টারা যে এত আমলানির্ভর হবেন, তা আমরা বুঝি নাই। এখনো দেখি তাঁরা আরও বেশি নিয়মতান্ত্রিক। নিয়ম কী, একটা স্লিপ একবার দিছে, এটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দিছে, আরে ভাই আমি হসপিটালে ভর্তি, আমার আবার এই স্লিপ কী কাজে লাগবে?”

আহতদের নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি জানান, আহতদের দাবিগুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে তিনি আলোচনা করবেন। এই দাবি অন্য কোনো সরকার নয়, একমাত্র অন্তর্বর্তী সরকারই পূরণ করবে। 

গতকাল সকালে তাঁরা আগারগাঁও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের সামনে থেকে জাতীয় রাজস্ব ভবন পর্যন্ত সড়কের দুই পাশ আটকে দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে তাঁরা সেখান থেকে শ্যামলী শিশুমেলার সামনে এসে মিরপুর রোড অবরোধ করে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন। এরপর দাবিপূরণে তারা বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময় বেধে দেন। 

আন্দোলনকারীরা ওই সড়ক ছেড়ে দেন সন্ধ্যা ৬টার দিকে। এরপর তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। কেউ হেঁটে, কেউ রিকশায় রওনা হন। সাড়ে ৭টার পর রাজধানীর ভিআইপি সড়কে পৌঁছালে ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। তা উপেক্ষা করে যমুনার সামনে যান তারা। 

আন্দোলনকারীদের দাবি: আন্দোলনকারীদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধাদের সরকারি গৃহায়ণ বা বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, তাঁদের পরিচয়পত্র দেওয়া ও রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা; যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা; নারী যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় বিশেষ ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা; বিনা মূল্যে বিমান, রেল ও বাসে চলাচলের ব্যবস্থা, যানবাহন ক্রয়ে শুল্ক-কর পরিহার করা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক রাষ্ট্রীয় অতিথিশালাসমূহ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া।

এর আগে গত ১৩ নভেম্বর আহত ব্যক্তিদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সবার সঙ্গে দেখা করেননি—এ অভিযোগে তাঁর গাড়ি আটকে বিক্ষোভ করেন আহত ব্যক্তিরা। পরে তাঁরা হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। ওই দিন গভীর রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের চারজন উপদেষ্টা ও একজন বিশেষ সহকারী সেখানে গিয়ে আলোচনা করেন। এর পরদিন ১৪ নভেম্বর সচিবালয়ে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে সরকারের বৈঠক হয়। বৈঠকে সরকার জুলাই আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসার পাশাপাশি পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার কথা জানিয়েছিল।

ঢাকা/রায়হান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তোফায়েল আহমেদের বাসভবনে ভাঙচুর, আগুন
  • এবার শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে আগুন
  • দাবি পূরণের আশ্বাসে গভীর রাতে যমুনা থেকে সরলেন আহতরা