আওয়ামী লীগের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা দ্বিচারিতা: সালাহ উদ্দিন আহমদ
Published: 5th, February 2025 GMT
আওয়ামী লীগের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা দ্বিচারিতা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি না, নির্বাচন করতে পারবে কি না, তা বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্ধারণ হওয়া উচিত। তবে তিনি এ-ও বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে। দলটি যাতে আর আওয়ামী লীগ নামে রাজনীতি করতে না পারে, সেই আওয়াজ তোলা হচ্ছে।
আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আঞ্চলিক সম্পাদক পরিষদের উদ্যোগে ‘জাতীয় ঐক্য ও বর্তমান বাস্তবতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সালাহ উদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকাকে ‘দ্বিচারিতা’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘আপনারা আওয়ামী লীগকে কোনো কর্মসূচি করার জন্য রাজপথে নামতে দেবেন না…মানি, সমর্থন করি। কিন্তু এভাবে আওয়ামী লীগকে আপনি কয় দিন রাজপথে পুলিশ দিয়ে ঠেকাবেন। আপনারা বলবেন, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আমরা চাই না, আওয়ামী লীগ এ দেশে রাজনীতি করতে পারবে না, কিন্তু কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন? আইনি কোনো পদক্ষেপ এই সরকার নিয়েছে? না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘একদিকে চাইবেন আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ হোক, আবার তাদের বিচার করবেন না, আবার পুলিশ দিয়ে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আপনারা বাধা দেবেন, এত স্ববিরোধিতা ঠিক না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের গণহত্যার ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে বিচার দাবি করছি।’
‘সংস্কারের জন্য কত সময় লাগবে আমরা জানি’
সংস্কারের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বেশি সময় নেওয়ার কৌশল নিলে জাতি তা মেনে নেবে না বলে সতর্ক করেন সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনমুখী সংস্কারের জন্য যেসব সংস্কার স্বল্প মেয়াদে বাস্তবায়ন করা দরকার, আপনারা সেটা চিহ্নিত করুন এবং সব মহলের সঙ্গে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করুন এবং সেটার আইনি সংস্কার করুন। আইনি সংস্কারের পর যদি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করার দরকার হয়, সেটা করবেন। এর জন্য কত সময় লাগবে আমরা জানি।’
সংসদ নির্বাচন দিতে দেরি করলে সরকারকে জনগণের সামনে তার যৌক্তিকতা তুলে ধরতে আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘এখনো সময় আছে, আমি মনে করি আপনারা সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রদান করুন এবং সেই নির্বাচনী রোডম্যাপ জনগণের কাছে যৌক্তিক মনে হলে তা তারা মেনে নেবে।’
‘শেখ হাসিনার দোসররা উপদেষ্টা পরিষদে আছে’
শেখ হাসিনার দোসররা এখনো বিভিন্ন উপদেষ্টা পরিষদেরও অন্তর্ভুক্ত আছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘বিচারব্যবস্থা হোক, প্রশাসন হোক, নির্বাচনী ব্যবস্থা হোক—সর্বত্র ফ্যাসিবাদের দোসরদের আপনাকে পরিষ্কার করতে হবে।’
আঞ্চলিক সম্পাদক পরিষদের সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল খানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক সেলিম পারভেজের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাংগঠনিক সম্পাদক এরফানুল হক প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ব এনপ র সরক র র র র জন র জন য র জন ত আপন র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
আলুর ফলন বৃদ্ধিতে আশা দেখাচ্ছে বিনা চাষ পদ্ধতি
আলু উৎপাদনকারী শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। উন্নত চাষপদ্ধতির ফলে দিন দিন আলুর উৎপাদন বাড়লেও দেশ এখনও পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারেনি। আবার আলু উৎপাদনে প্রচলিত চাষ পদ্ধতি এবং প্রয়োজনের অধিক রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে মাটির স্বাস্থ্য দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। তবে এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগের একদল গবেষক। সম্প্রতি তারা ফলন বৃদ্ধিতে সংরক্ষণশীল চাষ পদ্ধতি (কনজারভেশন এগ্রিকালচার) বা বিনা চাষে (জিরো টিলেজ) আলু উৎপাদন প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে সাফল্য পেয়েছেন। দুই মৌসুম ধরে আলুর বিনা চাষ পদ্ধতি ও সমন্বিত পুষ্টি ব্যবস্থাপনা বা ইন্টিগ্রেটেড নিউট্রিয়েন্ট ম্যানেজমেন্টের (আইএনএম) ওপর গবেষণা করে প্রাথমিকভাবে সাফল্য পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গবেষণা প্রকল্পটি চলমান রয়েছে।
২ ফেব্রুয়ারি বাকৃবির কৃষিতত্ত্ব খামার গবেষণাগারে আয়োজিত মাঠ গবেষণা কার্যক্রম পরিদর্শন অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান গবেষক দলের প্রধান কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ খায়রুল হাসান ও সহযোগী গবেষক এফ এম রুহুল কুদ্দুস। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বাকৃবি (রিসার্চ সিস্টেম) পরিচালক অধ্যাপক ড. হাম্মাদুর রহমান। আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষিতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. রমিজ উদ্দিন, অধ্যাপক ড. আবদুল কাদের, অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম, অধ্যাপক ড. পারভেজ আনোয়ার প্রমুখ।
গবেষক দলের দাবি, বিনা চাষে আলুর ফলন প্রচলিত চাষ পদ্ধতির চেয়ে তুলনামূলক বেশি। পাশাপাশি এ পদ্ধতিতে চাষের ফলে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ অনেকাংশে কমে যায়। প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. আহমদ খায়রুল হাসান গবেষণার কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, বারি-৭ (ডায়মন্ড) জাতের আলু নিয়ে গবেষণাটি শুরু করা হয়। এতে দুই ধরনের চাষ পদ্ধতি নিয়ে কাজ করা হয়েছে। একটি প্রচলিত চাষ পদ্ধতি আর অন্যটি সংরক্ষণশীল চাষ বা বিনা চাষ পদ্ধতি। পাশাপাশি আইএনএম পদ্ধতি নিয়েও কাজ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইএনএম পদ্ধতিতে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে পাঁচ ধরনের সারের মাত্রা। প্রথম মৌসুমে আলুর চাষ পদ্ধতি ও সমন্বিত পুষ্টি ব্যবস্থাপনার ওপর ভিত্তি করে একই জমিতে তিন উপায়ে চাষাবাদ করে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। প্রথমটিতে বিনা চাষ ও শতভাগ রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে, দ্বিতীয়টিতে প্রচলিত চাষ ও শতভাগ রাসায়নিক সার পদ্ধতি প্রয়োগ করে এবং তৃতীয়টিতে বিনা চাষ ও শতভাগ জৈব সার প্রয়োগ করে চাষাবাদ করা হয়। তিন পদ্ধতির মধ্যে বিনা চাষ পদ্ধতি ও শতভাগ রাসায়নিক স্যার প্রয়োগকৃত অংশের ফলন বাকি দুই পদ্ধতির তুলনায় হেক্টরপ্রতি প্রায় দুই টন বেশি পাওয়া গেছে। গবেষণার দ্বিতীয় মৌসুমের ফসল এখন মাঠে রয়েছে। তবে মাঠ পরিদর্শন করে প্রথম মৌসুমের মতো প্রচলিত চাষ পদ্ধতির চেয়ে বিনা চাষের পদ্ধতিতে অধিক ফলন আশা করছেন তারা।
সহযোগী গবেষক এফ এম রুহুল কুদ্দুস আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রচলিত চাষাবাদ পদ্ধতিতে সংস্কার এনে সংরক্ষণশীল চাষ পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। সংরক্ষণশীল চাষ পদ্ধতি বলতে, প্রায় বিনা চাষে ফসল উৎপাদন বোঝায়। এ পদ্ধতিতে আলুর ক্ষেতে ট্রাক্টর বা হাল দিয়ে মাটি চাষ করার প্রয়োজন হয় না। হালকা টাইন দিয়ে মাটি খুঁড়ে আলু লাগানো হয় এবং জমিতে প্রয়োজন অনুযায়ী জৈব সার দেওয়া হয়। মাটির ওপর খড় দিয়ে মালচিং প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয়, যা মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।