Samakal:
2025-02-05@20:14:07 GMT

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে হামলা আগুন

Published: 5th, February 2025 GMT

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে হামলা আগুন

রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পরে সেখানে আগুন দিয়েছে ছাত্র জনতা। 

বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের দিকে এগোতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। শাবল, হাতুড়ি ও রড দিয়ে বাড়ির দেয়ালসহ বিভিন্ন জায়গায় করা হয় আঘাত। কেউ খুলে নিয়ে যান জানালা, কেউ আবার স্মৃতি হিসেবে একটি করে ইট খুলে নিয়ে যান। এ সময় ছাত্র-জনতা ‘ভুয়া ভুয়া’, ‘খুনি হাসিনার বিচার চাই’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, ‘দলে দলে যোগ দিন, মুজিববাদের কবর দিন’, ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’ ও ‘ধুলায় মেশাও তাড়াতাড়ি, বত্রিশের দালানবাড়ি’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

৩২ নম্বর সড়কের মুখে জায়ান্ট স্ক্রিনে জুলাই অভ্যুত্থানের নৃশংসতার প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশনের তৈরি প্রামাণ্যচিত্রে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও পুলিশের টানা হত্যাযজ্ঞের নির্মম ঘটনার ভিডিও প্রচার করা হয়। পুলিশের দুটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও ভাঙচুরের সময় তারা বাড়িটির দিকে এগোয়নি। সেনাবাহিনীর একটি দল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাড়িটির ভেতরে ঢুকলে উপস্থিত ছাত্র-জনতার চাপে তারা সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। এ ঘটনার পর ওই এলাকার ট্রাফিক পুলিশও রাতে রাস্তা থেকে সরে যান। 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিল বিক্ষুব্ধ জনতা। এর পর থেকে বাড়িটি অনেকটা পরিত্যক্ত ছিল।



এর আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে অবস্থান নেওয়া শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়া নিয়ে ফেসবুকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। পাশাপাশি ঘোষণা করা হয় ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ কর্মসূচিও। 

নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের কথা ছড়িয়ে পড়ে। আজ  বিকেলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য শরিফ ওসমান হাদি। রাত ৯টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে যাওয়ার কথা থাকলেও পরে কর্মসূচি বদলে রাত ৮টায় নিয়ে আসা হয়। 

একপর্যায়ে গেট ভেঙে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঢুকে পড়ে ছাত্র-জনতা। ভেতর থেকে ভাঙচুরের শব্দ আসতে থাকে। লাঠিসোটা ও শাবল হাতে ভাঙচুরে যোগ দেন অনেকে। ভেতর থেকে নারায়ে তাকবির ধ্বনিও দিচ্ছিলেন কেউ কেউ। 

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, এ ধরনের কোনো কর্মসূচি বিষয়ে তাদের জানা ছিল না।

সরেজমিন দেখা যায়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় ছাত্র-জনতা। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির পুরো অবকাঠামো ভেঙে ফেলা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভবনের তৃতীয় তলার একটি জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়। 

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘যে শেখ হাসিনা আমাদের ভাইদের গুলি করে দেশ থেকে পালিয়েছেন। তিনি কী করে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আমরা এ দেশে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার কোনো অস্তিত্ব রাখব না। যারা ছাত্র হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, সেসব ফ্যাসিবাদীর কোনো চিহ্ন বাংলাদেশের মাটিতে রাখতে চাই না। অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নিষিদ্ধ সংগঠনের কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক সালেহ মাহমুদ রায়হান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর এ দেশের প্রথম স্বৈরাচারের চিহ্ন মুছে ফেলতে চাই। আমরা বুলডোজার ভাড়া করেছি, কিছুক্ষণের মধ্যেই সেগুলো আসবে। এখানে কিছুই থাকবে না।’ তবে বুলডোজার কলাবাগান মোড়ে আটকে দেয় পুলিশ।

সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি।’

পরে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফেসবুকে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।’ এর আগেই বুধবার বিকেলে আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর ইলিয়াস হোসাইন ও পিনাকী ভট্টাচার্য ফেসবুকে ‘ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ ঘোষণা করেন। একটি ফটোকার্ড শেয়ার করেন এই দুই কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তাতে বলা হয়, ‘হাজারো ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়ে দিল্লি পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকেই খুনি হাসিনার বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতার প্রতিবাদে ২৪-এর বিপ্লবী ছাত্র-জনতার উদ্যোগে রাত ৯টায় এই কর্মসূচি পালিত হবে।’
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধ নমন ড ছ ত র জনত ধ নমন ড ফ সব ক

এছাড়াও পড়ুন:

বইমেলায় আফরোজা খাতুনের ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় পাওয়া যাচ্ছে আফরোজা খাতুনের বই ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’। বইটি মেলায় এনেছে শোভা প্রকাশ। প্রচ্ছদ করেছেন আদনান আহমেদ রিজন। বইমেলার ৩ নম্বর প্যাভিলিয়নে পাওয়া যাচ্ছে বইটি।

বইটির মুদ্রিত মূল্য ৩৭৫ টাকা। বইমেলায় ২৫ শতাংশ ছাড়ে ২৮০ টাকায় পাওয়া যাবে এটি।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে যুগান্তকারী অধ্যায়। ছাত্র-জনতার অদম্য শক্তি, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে এই অভ্যুত্থান। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের বিক্ষোভ, সরকারবিরোধী আন্দোলনের তীব্রতা, গণমানুষের অংশগ্রহণ এ ঘটনাকে অনন্য করে তুলেছে।

আরো পড়ুন:

বইমেলার দ্বিতীয় দিনে ১৩ নতুন বই প্রকাশিত

বইমেলায় ‘সেরা লেখক’ স্বীকৃতির আয়োজনের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার

‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ বইয়ে গণঅভ্যুত্থানের ধারণা, ইতিহাস, পটভূমি, টাইমলাইন এবং তার পরিণতির বিস্তৃত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে উঠে এসেছে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, সুশীলসমাজের ভূমিকা, ছাত্র-জনতার অগ্রণী ভূমিকা এবং সাধারণ জনগণের দৃঢ় প্রতিরোধ। বইটির অন্যতম দিক হলো— এতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান-২০২৪ এর শহীদদের গেজেট সংযুক্ত করা হয়েছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মূলে ছিল রাজনৈতিক দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানের ক্রমাবনতি। নানাবিধ বৈষম্য এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের অভাব জনগণের ক্ষোভকে তীব্র করে তোলে।

বইয়ে দেখানো হয়েছে, কীভাবে জনগণ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাস্তায় নেমে আসে। উঠে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন—কেন রাষ্ট্রীয় কাঠামো এত দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে, জনগণকে এমন গণঅভ্যুত্থানর দিকে এগিয়ে যেতে হলো?

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তরুণসমাজের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা তাদের সোচ্চার কণ্ঠ, প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে আন্দোলনকে সুসংহত করেছিল। তারা নেতৃত্ব দিয়েছিল এমন এক আন্দোলনে, যেখানে প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষ একত্র হয়েছিল।

এছাড়াও বইয়ে রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া, প্রশাসনিক দমন-পীড়ন এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বইটি কেবল ইতিহাস নয়; এটি একটি প্রামাণ্য দলিল। এতে ব্যবহৃত হয়েছে সরাসরি অংশগ্রহণকারীদের অনেকের বক্তব্য, সংবাদ প্রতিবেদন এবং সমসাময়িক গবেষণার তথ্য।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে,  যখন মানুষ একত্রিত হয়, তাদের চাহিদা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠিত হয়, তখন ক্ষমতার কাঠামো কেঁপে ওঠে।

আফরোজা খাতুনের ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ বইটি শুধু ঘটনার প্রামাণ্য বিবরণ নয়; এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি শিক্ষা। এতে প্রজন্মের কাছে একটি বার্তা রয়েছে—মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, স্বাধীনতার জন্য এবং ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রাম সব সময় প্রাসঙ্গিক।

ঢাকা/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেখ হাসিনার যেকোনো রাজনৈতিক পদক্ষেপের জন্য ভারত দায়ী থাকবে: নাহিদ
  • হাসিনার যেকোনো রাজনৈতিক পদক্ষেপের জন্য ভারত দায়ী থাকবে: নাহিদ
  • সংস্কারের নামে সুবিধা না নিয়ে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থান ইতিহাসের অনন্য ঘটনা: নাহিদ
  • ঢাবিতে মানবাধিকার বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত 
  • গণঅভ্যুত্থানকারীদের বিক্ষোভ ও সরকারের মনোযোগ
  • বইমেলায় আফরোজা খাতুনের ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’
  • ন্যূনতম সংস্কার ছাড়া ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হবে না: জামায়াত আমির
  • ভোটাধিকার হারিয়ে যাওয়ার কারণেই গণঅভ্যুত্থানের অবতারণা: ইসি সানাউল্লাহ