জুলাই–আগস্ট অভ্যুত্থানে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁরা একটি বৈষম্যহীন, মানবিক ও দুর্নীতি-দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ চেয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘তাঁদের দিকে তাকিয়ে বিপ্লবের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ এমন কোনো অপকর্ম কেউ করবেন না। যদি করেন, শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে, তাঁদের রক্তকে অপমান করা হবে।’

আজ বুধবার দুপুরে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জুলাই ২০২৪ বিপ্লবের শহীদ স্মারক’–এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে শফিকুর রহমান এ কথাগুলো বলেন। জামায়াতে ইসলামী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ঢাকার বাইরে আরও ১০টি জায়গায়—চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও কুমিল্লা মহানগরীতে একযোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়, জুলাই ২০২৪ বিপ্লবের শহীদ স্মারকে ৭১৫ জন শহীদের নাম –পরিচয় এবং তাঁরা কীভাবে শহীদ হয়েছেন, সে তথ্য তুলে আনা হয়েছে। ১০ খণ্ডে আড়াই হাজার পৃষ্ঠার এই স্মারকের কাজ অব্যাহত থাকবে। সে জন্য শহীদ পরিবারের সদস্যদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘দেশ আমাদের সবার, কিন্তু দিন শেষে দেশের পাহারাদারিত্ব করা কিন্তু সব নাগরিকের কর্ম নয়। এই কাজ কিছু লোক করে। আবার কিছু লোক নাগরিকদের শান্তি কেড়ে নেওয়ার মতো অপকর্মে লিপ্ত হয়। আর অপকর্মটি যারা করে, তারা এটিকে তাদের পেশা মনে করেই করে। একটা সময় তা নিজের অধিকার বলেই মনে করে, জনগণকে নিজের প্রজা মনে করে আর নিজেরা রাজা হয়ে বসে। কিন্তু গাছের ডালে যখন ঝাঁকুনি দেওয়া হয়, ডালের রাজারা তখন উড়ে গিয়ে পড়ে যায়।’

এখনো পরিপূর্ণভাবে ইতিহাস রচনা করতে পারেননি উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে আহত ব্যক্তিরা এখন হতাশায় পড়ে যাচ্ছেন। এ সময় জাতির পক্ষ থেকে একটি দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া দরকার। অতীতে যারা ফ্যাসিস্ট শাসক ছিল, তাদের নাম ধর্মগ্রন্থেও উঠে এসেছে। একই পরিণতি সবাইকে ভোগ করতে হয়। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিস্টরা ইতিহাস পড়ে, কিন্তু তা থেকে শিক্ষা নেয় না।’

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘পলায়ন করা নেত্রী বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, আমার কী অপরাধ? আল্লাহ যখন ইবলিসকে বিতাড়িত করেছিল, তখন ইবলিস সে কথাই বলেছিল, আমার কী অপরাধ। আমি আদমকে কেন সেজদা করব। দুই হাজার দামাল সন্তানকে হত্যার পর অপরাধ খুঁজে পান না? এর চেয়ে জঘন্য অপরাধ কী হতে পারে!’

অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শহীদ মুনতাসির রহমান আলিফের বাবা গাজীউর রহমান, শহীদ নাসিব হাসান রিয়ানের বাবা গোলাম রাজ্জাক, শহীদ ফারহান ফায়েজের বাবা শহীদুল ইসলাম, শহীদ মাহফুজুর রহমানের বাবা আবদুল মান্নান ও ইমাম হোসেন তায়েমের ভাই রবিউল আউয়াল বক্তব্য দেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁরা বলেন, তাঁদের নিয়ে ভাবনার সময় এখন আর কারও নেই। কেউ কেউ লুটপাট নিয়ে ব্যস্ত। কেউ ১৬–১৭ বছরের বিলুপ্ত প্রায় দল গোছাতে ব্যস্ত। কেউ কেউ আবার এই সরকারকে দ্রুত ব্যর্থ ও অকার্যকর করে এককভাবে ক্ষমতায় যেতে দ্রুত নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। তাঁরা কার কাছে যাবেন?

অনলাইনে যুক্ত হয়ে খুলনা থেকে অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ার। এতে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের সাবেক শিক্ষক সুকোমল বড়ুয়া, ১২–দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম প্রমুখ।

জামায়াতের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি মুহাম্মদ রেজাউল করিম।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র রহম ন ল ইসল ম অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

ইনজেকশন পুশ করেন আয়া

আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের আসমা বেগম ঠান্ডায় আক্রান্ত এক দিন বয়সী শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। ব্যবস্থাপত্র নিয়ে নার্সের সন্ধানে গেলে জোসনা বেগম নামে এক নারী তাঁর সন্তানকে ইনজেকশন পুশ করেন। বিনিময়ে ২০০ টাকা দাবি করলে তাঁকে ১০০ টাকা দেওয়া হয়। পরে আসমা জানতে পারেন, নার্স পরিচয় দেওয়া জোসনা হাসপাতালের আয়া।
জাহানপুর ইউনিয়নের আবুল কাশেম ফরাজী এসেছিলেন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত সন্তানকে নিয়ে। তাঁর সন্তানকেও জোসনা বেগম স্যালাইন পুশ করেছেন। 
শুধু আসমা বেগম বা কাশেম ফরাজীর ক্ষেত্রে নয়, চরফ্যাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা এমন অনেক রোগীকেই স্যালাইন ও ইনজেকশন পুশ করছেন জোসনা বেগম ও রোকেয়া বেগমের মতো আয়া-ঝাড়ুদার। বিষয়টি কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স স্বীকার করে বলেন, জনবল সংকটের সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে এ ধরনের কাজ চলছে। 
আয়া জোসনা বেগম ও রোকেয়া বেগম জানান, নার্সদের কাছ থেকে ক্যানোলা ও স্যালাইন পুশ করা শিখেছি। রোগীর চাপ থাকলে তারা কুলিয়ে উঠতে পারেন না। তখন রোগীর স্বজনরাই ডেকে সাহায্য করতে বলেন। এতে তাদের উপকার হয়। তাই বিনিময়ে খুশি হয়ে টাকাও দেন।  
উপজেলার সাত লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০২৩ সালে হাসপাতালটি ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বাড়ানো হয়নি জনবল ও অবকাঠামো। এ সুযোগে হাসপাতালে কর্মরত আয়া ও আউটসোর্সিং কর্মীরা অপকর্ম করে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী জানান, ১৭ জন নার্স রয়েছেন। এর পরও আয়া ও ঝাড়ুদার দিয়ে চলছে শিশু, কিশোর ও বয়স্কদের চিকিৎসাসেবা। কর্তব্যরত নার্সদের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই রোগীরা না জেনে বা বাধ্য হয়ে আয়া ও ঝাড়ুদারের কাছ থেকে সেবা নিচ্ছেন। নার্সদের দাবি, রোগীর তুলনায় নার্স কম। এ কারণে রোগীর স্বজনরা না বুঝে আয়াদের শরণাপন্ন হন। আয়ারা তাদের না জানিয়ে গোপনে এসব অপকর্ম করছেন। কর্মতর্কাদের বিষয়টি জানালেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. হানিফের অভিযোগ, রোগী এলে নার্সদর খুঁজে পাওয়া যায় না। পেলেও ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ছাড়া সেবা দেন না। এ সুযোগে আয়া ও ঝাড়ুদাররা গ্রাম থেকে আসা  সহজ-সরল মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ১০০ টাকা নিয়ে স্যালাইন ও ইনজেকশন পুশ করছেন। 
চরফ্যাসন হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স অপরাজিতা রানী জানান, জনবল সংকটের কারণে অনেক সময় আয়াদের সহায়তা নিতে হয়। তবে তারা নিজেরা একা এ কাজ করতে পারেন না। টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকে সেবা পেয়ে নার্সদের খুশি হয়ে টাকা দিয়ে থাকেন। টাকা দিয়ে পরে কেউ অভিযোগ করলে কিছু করার নেই।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন বসাক বলেন, আয়া বা ঝাড়ুদার এসব কাজ করতে পারেন না। বিষয়টি জানতে পেরে রোকেয়া বেগম নামে আউটসোর্সিংয়ের এক আয়াকে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর জবাব পেলে সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে সচিবালয়ে শিক্ষার্থীরা
  • ইনজেকশন পুশ করেন আয়া
  • রূপগঞ্জে বিএনপির ছত্রছায়ায় আওয়ামী দোসর জাহাঙ্গীর ও সন্ত্রাসী রুবেল ফের বেপরোয়া