নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ছাড়া নির্বাচনে যাওয়া ভুল হবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের সোয়াস বিশ্ববদ্যালয়ের অধ্যাপক মুশতাক খান। তিনি বলেন, জাতির সামনে এখন সুযোগ এসেছে। যে ঐক্য তৈরি হয়েছে, তা ধরে রেখেই সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বন্দোবস্ত তৈরি করতে হবে। তা না হলে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা মানুষকে সেবা দিতে পারবে না।

মুশতাক খান বলেন, ‘বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এমন ঐকমত্যে আসতে হবে যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত আমাদের সবার জন্যই জরুরি। আমরা যে বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা করি, সেই বাংলাদেশ পেতে পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ভাঙার বিকল্প নেই।’

আজ বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ণ টাওয়ারে জাতীয় নাগরিক কমিটি আয়োজিত ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের রাজনৈতিক–অর্থনৈতিক কর্মসূচি’ শীর্ষক বক্তৃতায় এ কথা বলেন মুশতাক খান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পল্লবী রায়। বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নাসীর উদ্দীন পাটওয়ারী ও সারোয়ার তুষার।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বা ক্ষমতার বিন্যাস ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এই কাজ ধীরগতিতে এগোচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মুশতাক খান।

সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে মুশতাক খান সতর্কবার্তা দেন, যে অলিগার্কি বা গোষ্ঠীশাসন শেখ হাসিনার শাসনামলে গড়ে উঠেছিল, তার বদলে আবার কোনো গোষ্ঠীশাসন যে গড়ে উঠবে না, তার নিশ্চয়তা নেই। অভ্যুত্থান হয়ে গেছে বলে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সব হয়ে যাবে, এটা মনে করার কারণ নেই।

মুশতাক খান বলেন, সব সময় এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। নতুন গোষ্ঠীশাসন যেন গড়ে না ওঠে, সে জন্য পাল্টা ক্ষমতার ভিত তৈরি করতে হবে। আইন করে এটা করা যাবে না, যদিও কখনো কখনো আইনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেই আইন প্রয়োগ করা হবে কি হবে না, বা কতটুকু প্রয়োগ করা হবে, তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিযোগিতামূলক ধনতন্ত্র চাই। যে ধনতন্ত্রের চালিকাশক্তি হবে মাঝারি শিল্প খাত, অর্থাৎ মাঝারি শিল্প খাতে বিপুল পরিমাণ ঋণ দিতে হবে, যাতে তারা কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে পুরোনো গোষ্ঠীশাসন অক্ষুণ্ন রেখে আমরা প্রতিযোগিতামূলক ধনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারব না।’

মুশতাক খান এই মুহূর্তে করণীয় হিসেবে চারটি কাজ চিহ্নিত করেন। সেগুলো হলো নির্বাচনের আগে অবশ্যই ক্ষমতা কাঠামোর পরিবর্তন; পুরোনো ক্ষমতাকাঠামো ভাঙতে যাঁরা টাকা পাচার করেছেন, তাঁদের সম্পদ বিক্রি করে সেই অর্থ পুনরুদ্ধার ও বিদেশ থেকে টাকা ফেরত আনার ব্যবস্থা করা; বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যেসব চুক্তি হয়েছে, সেগুলো নিয়ে পুনরালোচনা এবং ভারত প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান পুনর্নির্ধারণ।

নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নির্মাণ প্রসঙ্গে মুশতাক খানের পরামর্শ হলো উঠতি ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা এবং এর মধ্য দিয়ে ব্যাপক হারে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। ভর্তুকি দিলে হবে না, বরং তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। এ প্রসঙ্গে দেশ গার্মেন্টস থেকে কর্মীদের যেভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছিল, সেই উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি।

মুশতাক খানের মতে, পুরোনো বন্দোবস্ত ভাঙতে কেবল আইন করলে হবে না, সে জন্য ক্ষমতার বিন্যাস ভাঙতে হবে। যে গোষ্ঠীশাসন গড়ে উঠেছিল, তা ভেঙে প্রতিযোগিতামূলক ধনতন্ত্র গড়ে তুলতে হবে। পুঁজিবাদের মধ্যে স্বৈরতন্ত্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে; সে জন্য এ বিষয়ে রাজনৈতিক সচেতনতা ও সতর্কতা জরুরি।

জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য নাসীর উদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, দেশে নির্বাচন ও সংস্কার—এই দুটি বিষয়কে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা মনে করছেন, আগের বন্দোবস্ত টিকিয়ে রেখে নির্বাচনে যাবেন, তাঁরা ভোটারদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হবেন বলে তিনি সতর্ক করে দেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের পাশাপাশি তিনি সর্বক্ষেত্রে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তায় গুরুত্ব আরোপ করেন।

নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সারোয়ার তুষার বলেন, অর্থনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কার জরুরি। সব ক্ষেত্রেই নতুন বন্দোবস্ত হতে হবে। তিনি মনে করেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান বাংলাদেশের মানুষের সামনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। কিন্তু অনেক রাজনৈতিক দল তা বুঝতে পারছে না। সে জন্য নির্বাচন ও সংস্কার—এই দুটি বিষয়কে পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম শত ক খ ন কম ট র ক ষমত সতর ক

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত না করে নির্বাচনে যাওয়া ভুল হবে: মুশতাক খান

নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ছাড়া নির্বাচনে যাওয়া ভুল হবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের সোয়াস বিশ্ববদ্যালয়ের অধ্যাপক মুশতাক খান। তিনি বলেন, জাতির সামনে এখন সুযোগ এসেছে। যে ঐক্য তৈরি হয়েছে, তা ধরে রেখেই সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বন্দোবস্ত তৈরি করতে হবে। তা না হলে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা মানুষকে সেবা দিতে পারবে না।

মুশতাক খান বলেন, ‘বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এমন ঐকমত্যে আসতে হবে যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত আমাদের সবার জন্যই জরুরি। আমরা যে বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা করি, সেই বাংলাদেশ পেতে পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ভাঙার বিকল্প নেই।’

আজ বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ণ টাওয়ারে জাতীয় নাগরিক কমিটি আয়োজিত ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের রাজনৈতিক–অর্থনৈতিক কর্মসূচি’ শীর্ষক বক্তৃতায় এ কথা বলেন মুশতাক খান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পল্লবী রায়। বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নাসীর উদ্দীন পাটওয়ারী ও সারোয়ার তুষার।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বা ক্ষমতার বিন্যাস ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এই কাজ ধীরগতিতে এগোচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মুশতাক খান।

সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে মুশতাক খান সতর্কবার্তা দেন, যে অলিগার্কি বা গোষ্ঠীশাসন শেখ হাসিনার শাসনামলে গড়ে উঠেছিল, তার বদলে আবার কোনো গোষ্ঠীশাসন যে গড়ে উঠবে না, তার নিশ্চয়তা নেই। অভ্যুত্থান হয়ে গেছে বলে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সব হয়ে যাবে, এটা মনে করার কারণ নেই।

মুশতাক খান বলেন, সব সময় এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। নতুন গোষ্ঠীশাসন যেন গড়ে না ওঠে, সে জন্য পাল্টা ক্ষমতার ভিত তৈরি করতে হবে। আইন করে এটা করা যাবে না, যদিও কখনো কখনো আইনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেই আইন প্রয়োগ করা হবে কি হবে না, বা কতটুকু প্রয়োগ করা হবে, তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিযোগিতামূলক ধনতন্ত্র চাই। যে ধনতন্ত্রের চালিকাশক্তি হবে মাঝারি শিল্প খাত, অর্থাৎ মাঝারি শিল্প খাতে বিপুল পরিমাণ ঋণ দিতে হবে, যাতে তারা কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে পুরোনো গোষ্ঠীশাসন অক্ষুণ্ন রেখে আমরা প্রতিযোগিতামূলক ধনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারব না।’

মুশতাক খান এই মুহূর্তে করণীয় হিসেবে চারটি কাজ চিহ্নিত করেন। সেগুলো হলো নির্বাচনের আগে অবশ্যই ক্ষমতা কাঠামোর পরিবর্তন; পুরোনো ক্ষমতাকাঠামো ভাঙতে যাঁরা টাকা পাচার করেছেন, তাঁদের সম্পদ বিক্রি করে সেই অর্থ পুনরুদ্ধার ও বিদেশ থেকে টাকা ফেরত আনার ব্যবস্থা করা; বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যেসব চুক্তি হয়েছে, সেগুলো নিয়ে পুনরালোচনা এবং ভারত প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান পুনর্নির্ধারণ।

নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নির্মাণ প্রসঙ্গে মুশতাক খানের পরামর্শ হলো উঠতি ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা এবং এর মধ্য দিয়ে ব্যাপক হারে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। ভর্তুকি দিলে হবে না, বরং তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। এ প্রসঙ্গে দেশ গার্মেন্টস থেকে কর্মীদের যেভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছিল, সেই উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি।

মুশতাক খানের মতে, পুরোনো বন্দোবস্ত ভাঙতে কেবল আইন করলে হবে না, সে জন্য ক্ষমতার বিন্যাস ভাঙতে হবে। যে গোষ্ঠীশাসন গড়ে উঠেছিল, তা ভেঙে প্রতিযোগিতামূলক ধনতন্ত্র গড়ে তুলতে হবে। পুঁজিবাদের মধ্যে স্বৈরতন্ত্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে; সে জন্য এ বিষয়ে রাজনৈতিক সচেতনতা ও সতর্কতা জরুরি।

জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য নাসীর উদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, দেশে নির্বাচন ও সংস্কার—এই দুটি বিষয়কে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা মনে করছেন, আগের বন্দোবস্ত টিকিয়ে রেখে নির্বাচনে যাবেন, তাঁরা ভোটারদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হবেন বলে তিনি সতর্ক করে দেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের পাশাপাশি তিনি সর্বক্ষেত্রে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তায় গুরুত্ব আরোপ করেন।

নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সারোয়ার তুষার বলেন, অর্থনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কার জরুরি। সব ক্ষেত্রেই নতুন বন্দোবস্ত হতে হবে। তিনি মনে করেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান বাংলাদেশের মানুষের সামনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। কিন্তু অনেক রাজনৈতিক দল তা বুঝতে পারছে না। সে জন্য নির্বাচন ও সংস্কার—এই দুটি বিষয়কে পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ