চট্টগ্রামে কনসার্টের জন্য বইমেলা বন্ধ
Published: 5th, February 2025 GMT
নিরাপত্তার অজুহাতে চট্টগ্রামে কনসার্টের জন্য অমর একুশে বইমেলা এক দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে। স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম চত্বরে চলছে ২৬ দিনব্যাপী অমর একুশে বইমেলা।
কনসার্টের জন্য বইমেলা বন্ধ রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রকাশকরা। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কনসার্টের জন্য অর্ধলাখের বেশি মানুষ জমায়েত হতে পারে। ভিড়ে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কায় বইমেলা এক দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরদিন আবার চালু থাকবে।
চট্টগ্রামের সাগরপারে ডিসি পার্কে মাসব্যাপী ফুল উৎসবের আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে গালা নাইট কনসার্টের আয়োজন করা হয়। এ কনসার্টে দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড নগরবাউল, সোলস, আর্টসেল, শিরোনামহীন, তীরন্দাজ, লালন, আভোয়েড রাফা, আর্বোভাইরাস, উন্মাদসহ কয়েকটি ব্যান্ড দল পারফর্ম করবে।
এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের চত্বরে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে অমর একুশে বইমেলা আয়োজন করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এখানে ১৪০টি স্টলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ১০৭টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সিটি করপোরেশনের সমাজকল্যাণ ও সংস্কৃতি কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বলেন, ‘কনসার্টকে ঘিরে বইমেলায় নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এ জন্য এক দিন বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আলী প্রয়াস বলেন, ‘বইমেলার আগেই কনসার্টের দিন বন্ধ রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রকাশক বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, কনসার্ট উপলক্ষে বইমেলা আরও জমে উঠবে। কিন্তু প্রশাসন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
গত ১ ফেব্রুয়ারি বইমেলার উদ্বোধন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন মেলা বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে। ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত স্টল খোলা থাকে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল দ ন বন ধ র খ র বইম ল
এছাড়াও পড়ুন:
দ্রুত পথরেখা ঘোষণা করা হোক
রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতদ্বৈধতা সত্ত্বেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছেন। এত দিন লোকচক্ষুর আড়ালে থাকলেও গত ঈদের ছুটিতে ছোট–বড় ও পুরোনো–নতুন দলের নেতারা প্রকাশ্যে এসেছেন। অনেকে দলের নামে দোয়া চেয়ে পোস্টারও ছেড়েছেন। যদিও এটি নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আগস্ট অভ্যুত্থানে নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা ৩৯টি আসনে জনসংযোগ করেছেন ঈদের ছুটিতে। এসব গণসংযোগ হয়েছে নানা উপলক্ষে। কোথাও আগস্ট অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার ও আহতদের সহায়তা করতে, কোথাও প্রীতি ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা উপলক্ষে।
এ কথার অর্থ এই নয় যে অন্য দলগুলোর নেতারা চুপচাপ বসে ছিলেন। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, বামপন্থী দলের নেতারা ঈদের ছুটিতে জনসংযোগ করেছেন। জনসংযোগের ক্ষেত্রে বিএনপির সমস্যা হলো, প্রায় সব আসনে তাদের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী আছেন। এ নিয়ে ভবিষ্যতে যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে কোথাও কোথাও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে, তার আলামত ইতিমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপির নেতা–কর্মীদের মধ্যে যে বিভিন্ন স্থানে হানাহানি চলছে, তার পেছনেও আছে নির্বাচনী হিসাব–নিকাশ।
রাজনৈতিক নেতাদের এই জনসংযোগ দেখে এ ধারণা করা অমূলক হবে না যে ভেতরে–ভেতরে তাঁরা নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সংস্কারের বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসলেও এখনো অনেক দল বাকি আছে। যেকোনো সিদ্ধান্তে আসতে হলে সব দলের সঙ্গে আলোচনার পর্বটি দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা যখন চলমান, তখন রাজনৈতিক মহলে দুটি বিপজ্জনক প্রচার লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রথমটি হলো সংস্কারের কী প্রয়োজন, দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক। দ্বিতীয় প্রচার হলো আপাতত নির্বাচনের প্রয়োজন নেই, যত দিন দরকার এই সরকার থাকুক।
স্বাভাবিকভাবেই সংস্কার ও নির্বাচন দুটি বিষয় নিয়েই জনমনে একধরনের সংশয় ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। আগে কারও সঙ্গে দেখা হলে প্রথম প্রশ্ন আসত, নির্বাচনটি কবে হবে। এখন অনেকেই প্রশ্ন করেন, নির্বাচন হবে তো?
রাজনীতিকদের অনেকেই সংস্কারকে নির্বাচনের এবং নির্বাচনকে সংস্কারের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখতে চাইছেন। কিন্তু বাস্তবে তো একটি আরেকটির প্রতিপক্ষ নয়; বরং পরিপূরক। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যেমন সংস্কারের অংশ, তেমনি স্বৈরতন্ত্রের পুনরাগমন ঠেকাতে সংস্কার জরুরি। কতটা সংস্কার নির্বাচনের আগে হবে, কতটা পরে হবে, এ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু সংস্কার অপরিহার্য।
আমরা মনে করি, সংস্কার ও নির্বাচন করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে ন্যূনতম ঐকমত্যে আসতে হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সব দলের সঙ্গে কথা না বললেও তাদের মতামত পেয়েছে; এর ভিত্তিতে তারা কোনো উপসংহার টানতে পারে। তবে উত্তম পন্থা হলো সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এ ক্ষেত্রে খুব বেশি বিলম্ব কাম্য নয়, তাতে সংশয়–সন্দেহ আরও বাড়বে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষ করে সরকার সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে দ্রুত একটা পথরেখা ঘোষণা করবে, এটাই প্রত্যাশিত।