আওয়ামী লীগের শাসনামলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমানের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলো যুবলীগ ক্যাডার মোটা কবির। দীর্ঘ  ৫ বছর তার বাড়িতে ভাড়া ছিল সে। ফলে সিরাজ হত্যা মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামি হওয়ার পরও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে মজিবুর রহমানের বাড়িতে যায়নি। 

এমনকি নানা অপকর্ম করেও বারবার সে পার পেয়ে যায় মজিবুর রহমানের কারণে। মজিবুর রহমানকে ব্যবহার করে অবৈধ উপায়ে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে মোটা কবির। কেপিআই এলাকা হওয়ার পরও আদমজী ইপিজেডের ভেতরে তার আস্তায় সে মাদকের আসর বসাতো। কেউ প্রতিবাদ করলে ইপিজেডের বাইরে গেলে ক্ষতি করার হুমকি দিতো কবির। 

ইপিজেডের ভেতর মদের বার ছিল। সেই বার থেকে মাদক এনে বাইরে চড়া দামে বিক্রি করতো সে। তার গাড়িতে সব সময় বিদেশী মদের দুই-চারটা বোতল থাকতো। ইপিজেডের কাস্টম গেট বা নিরাপত্তা গেইটে তার গাড়ি চেক করতে চাইলে নানাভাবে হুমকি ধামকি দিতো। মোটকথা গত ১৬-১৭ বছর ইপিজেডের ভেতর রামরাজত্ব কায়েম করে মোটা কবির ও তার বাহিনী।

এদিকে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমানের বাড়িতে  থেকে ওই বাড়ির নিচ তলায় ছোট একটি রুমে বসে কম্পিউটারে মামলার এজাহার লেখার সময় বিভিন্ন সময় কবির বিএনপির নেতাকর্মীদের নাম ঢুকিয়ে দিতো মামলায়। 

কবিরের দায়িত্ব ছিল ওই সময় সরকার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির যে সকল নেতাকর্মী ফ্রন্ট লাইনে থাকতো সেই সকল নেতাকর্মীদের ছবি ও নাম কালেক্ট করতো। 

মোটা কবির তার লোকজন দিয়ে এই ছবি ও নাম কালেক করাতো। পরে তাদের মামলায় ঢুকিয়ে দিতো। এছাড়া আদমজী ইপিজেডের ব্যবসা দখল করতেও অনেক নিরিহ মানুষকে মামলায় ঢুকিয়ে দিয়েছে কবির। তবে নানা অপকর্মের কারণে যুবলীগ ক্যাডার হওয়ার পরও মামলা থেকে রক্ষা পায়নি মোটা কবির ওরফে লোহা চোর কবির। 

বর্তমানে তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যাসহ এক ডজন মামলা রয়েছে। ৫ আগস্টের পর আত্মগোপন করে কবির। সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে যোগাযোগ রয়েছে তার। তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।

আবার কৌশলে বিএনপির কতিপয় লোককে টাকা দিয়ে বিএনপিতে ঢুকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি একাধিক নেতাকর্মী জানান, সব সরকারের আমলে সুযোগ নিয়েছে মোটা কবির। কিন্তু এবার আর সেই সুযোগ তাকে দেয়া হবে না। বাসায় ঢুকে নেতাদের পা ধরে বসে থাকে সুবিধার জন্য। এটা তার অন্যতম কৌশল। 

বিভিন্ন বাজার থেকে কমদামে ফরমালিনযুক্ত মাছ কিনে নিয়ে বলে ‘স্যার’ আপনার জন্য মেঘনা নদী, কখনো বলে মাওয়া ঘাট, কখনো বলে ভৈরব থেকে এই মাছ কিনে এনেছি। ইপিজেডের ব্যবসায়ি হাতিয়ে নিতে নানা ছলছাতুরী ছিল তার। আর নেতাদের ম্যানেজ করতো অবৈধ টাকার ভাগ ও বিদেশী মদ দিয়ে। কবির পালিয়ে যাওয়ার পর ইপিজেডের ভেতর থেকে ভয়ঙ্কর তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে। 

আর সেটা হলো গ্রাম থেকে কাজের সন্ধানে আসা গরীব অসহায় সুন্দরী মেয়েদের কাজ দেয়ার কথা বলে ইপিজেডের ভেতর বিভিন্ন ফ্যাক্টরীতে বিদেশী কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জনের জন্য পাঠাতো কবির। নারী সাপ্লাইয়ের বিনিময়ে অবৈধ সুবিধা নিতো মোটা কবির। 

তার অপকর্মের নানা তথ্য এখন আদমজী ইপিজেডের ভেতর, মিজমিজি, সিআইখোলা, সিদ্ধিরগঞ্জপুল এলাকার মানুষের মুখে মুখে। কবিরের মালিকানাধীন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘এ কে এন্টারপ্রাইজ’ এর বিষয়ে খোঁজ খবর নিলে তার আয়ের তথ্য বেরিয়ে আসবে। তবে সে তার অবৈধ অর্থ-সম্পদ রক্ষায় নানাভাবে দৌড়ঝাপ করছে। 

আর সুযোগ খুঁজতেছে ৫ আগস্টের পর হত্যা মামলাগুলোর জামিন করাতে। আত্মগোপনে থাকা কবিরকে আইনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন বিএনপি তথা তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: য বল গ ব এনপ ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ স দ ধ রগঞ জ ন ত কর ম ব এনপ র র জন য আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

এই প্রজন্মের প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করা প্রয়োজন: জামায়াত আমির

সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, একটা দায়িত্বশীল দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর কিছু করণীয় আছে বলে আমরা মনে করি। ২৪ এর আন্দোলনে আমরাও শহীদ ছিলাম। আন্দোলনের মাধ্যমে পুরো জাতি যেমন মুক্তি পেয়েছে, তেমনই সবচেয়ে নির্যাতিত রাজনৈতিক দলটিও একইভাবে মুক্তি পেয়েছে। সুতরাং, এই প্রজন্মের প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করা প্রয়োজন।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ‘জুলাই ২০২৪ বিপ্লবের শহীদ স্মারকের’ মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

জামায়াতের আমির বলেন, আমরা শহীদ পরিবারগুলোর কাছে গিয়েছি, তাদের প্রতি সম্মান দিতে ও তাদের থেকে দোয়া নিতে। কারণ তারা সৌভাগ্যবান, তাদের পরিবার দেশের জন্য জীবন দিয়েছে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, কিছু ইতিহাস মানুষের জন্য হয় আনন্দের, কিছু হয় বিষাদের, আর কিছু হয় গৌরবের। বিশেষত যারা দেশের জন্য জীবন দেন, অতীতেও দিয়েছেন ৪৭ সালে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও ৭১ সালে এবং সর্বশেষ ২৪ এর জুলাইয়ে। তাদের ইতিহাসটা গৌরবের।

তিনি বলেন, আজ যে গণমাধ্যমগুলো এখানে এসেছে, তারাও কিন্তু ফ্যাসিবাদের থাবা থেকে মুক্ত ছিলেন না। সেসময় তাদেরকেও জীবন দিতে হয়েছে, রিমান্ডের নামে নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। বিদেশে বসে যারা বাক এবং কলমযুদ্ধ চালিয়েছিলেন, দেশের মাটিতে তাদের পরিবারকে হেনস্থা করা হয়েছে, জেলে পুরে দেওয়া হয়েছে। এমনকি নারীদেরকেও ছাড় দেওয়া হয়নি। তাদের রুচি যে কত নিম্নস্তরের ছিল, এসব কর্মকাণ্ড থেকেই তা বোঝা যায়। যারা নিজেদের জীবনটা বিলিয়ে দিয়ে আমাদের আজকের এই পরিবেশটি উপহার দিলেন, তাদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

জামায়াতের আমির বলেন, দেশ আমাদের সবার। কিন্তু দিন শেষে দেশের পাহারাদারিত্ব করা কিন্তু সব নাগরিকের কর্ম নয়। এই কাজ কিছু লোক করে। আবার কিছু লোক নাগরিকদের শান্তি কেড়ে নেওয়ার মতো অপকর্মে লিপ্ত হয়। আর অপকর্মটি যারা করে, তারা এটিকে তাদের পেশা মনে করেই করে। একটা সময় তা নিজের অধিকার বলেই মনে করে, আর জনগণকে নিজের প্রজা মনে করে, আর নিজেরা রাজা হয়ে বসে। কিন্তু গাছের ডালে যখন ঝাঁকুনি দেওয়া হয়, ডালের রাজারা তখন উড়ে গিয়ে পড়ে যায়।

তিনি বলেন, আমরা এখনও পরিপূর্ণভাবে ইতিহাস রচনা করতে পারিনি। জুলাই আন্দোলনে আহতরা এখন হতাশায় পড়ে যাচ্ছেন। এসময় জাতির পক্ষ থেকে একটি দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া দরকার। অতীতে যারা ফ্যাসিস্ট শাসক ছিল, তাদের নাম ধর্মগ্রন্থেও উঠে এসেছে। একই পরিণতি সবাইকে ভোগ করতে হয়। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিস্টরা ইতিহাস পড়ে, কিন্তু তার থেকে শিক্ষা নেয় না। আমাদের দেশের ইতিহাস বিকৃতির ইতিহাস। দেশের ইতিহাস অনেকে যার যার মতো রচনা করেছেন।

এম জি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাইয়ের শহীদেরা দুর্নীতি-দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ চেয়েছিলেন: জামায়াতের আমির
  • অভ্যুত্থানের শহীদদের জীবনীগ্রন্থ তৈরি করেছে জামায়াত
  • ফ্যাসিস্টরা ইতিহাস পড়ে কিন্তু শিক্ষা নেয় না: জামায়াত আমির
  • এই প্রজন্মের প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করা প্রয়োজন: জামায়াত আমির
  • সিদ্ধিরগঞ্জে অবৈধ অর্থ-বিত্ত রক্ষায় বিএনপিতে ঢুকার মিশনে সেই মোটা কবির