গাজীপুরে ৫৯ শতাংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার, যা রাজশাহীতে ৩৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। দুই জেলায় গড়ে ৪৯ দশমিক ২০ শতাংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার। এ তথ্য উঠে এসেছে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ব্যাপকতাভিত্তিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে।

বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সহিংসতার প্রতিকার বিধানে নীতি পরিবর্তন ও পরিপূর্ণ আইন প্রণয়নে অ্যাডভোকেসির উদ্দেশ্যে এ গবেষণা চালানো হয়।

অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রোগ্রাম অফিসার নার্গিস সুলতানা। সভাপতিত্ব করেন আসকের নির্বাহী কমিটির সদস্য রোকসানা খন্দকার। স্বাগত বক্তব্য দেন আসকের উপদেষ্টা মাবরুক মোহাম্মদ।

অনুষ্ঠানে গবেষণা ফলাফল তুলে ধরেন ডেটাস্কেপ কনসালট্যান্ট মোশাররেফ হোসেন। তিনি জানান, ব্র্যাকের সহযোগিতায় আসক গাজীপুর ও রাজশাহীতে অ্যাওয়ারনেস অ্যাকশন অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ফর জেন্ডার ইকুয়াল অ্যান্ড সেফ স্পেসেস ফর উইম্যান অ্যান্ড গার্ল-অগ্নি প্রকল্পের আওতায় গবেষণা চালায়। ৩১১ নারী-পুরুষের ওপর দুই সপ্তাহ ধরে গবেষণা চলে। এতে দেখা যায়, ৯৪ দশমিক ৫০ শতাংশের জেন্ডারবেজড ভায়োলেন্স (জেবিভি) সম্পর্কিত জ্ঞান আছে। দুই জেলায় ৫৯ দশমিক ২০ শতাংশ নারী জেবিভির শিকার। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ৩৬ শতাংশ নারী নির্যাতনের শিকার হন। এর মধ্যে ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি, ৭৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ নির্যাতনের শিকার। সচেতনতার অভাবে যেমন, শিক্ষার অভাবে ৭৭ দশমিক ৪০ শতাংশ নারী যৌন সহিংসতার শিকার হন। সচেতনতার অভাবে ৬৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ সহিংসতার শিকার হন। সংস্কৃতিগত প্রতিবন্ধকতার জন্য ২৪ দশমিক ৮০ শতাংশ সহিংসতার শিকার হন। কমিউনিটির মধ্যে আলোচনার অভাবে ১৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ সহিংসতার শিকার হন।

নার্গিস সুলতানা বলেন, অনেক নারী নির্যাতন সহ্য করে চাকরিতে টিকে থাকে। কাউকে কিছু বলতে পারে না। সহ্য করতে না পারলে চাকরি ছেড়ে দেয়। অনেক স্থানে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে কমিটি আছে। কিন্তু কার্যকর নয়। এ বিষয়টি আমলে আনতে হবে। পরিবার থেকে শিশুদের গুড টাচ, ব্যাড টাচ শিখিয়ে দিতে হবে।

রোকসানা সুলতানা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করতে গিয়ে মনে হয়, কিছু নারী পিছিয়ে পড়ছে, যা আমলে আনা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কর্মক্ষেত্রে নারীকে সুরক্ষা দিতে পারছি না। বেসরকারি সংস্থায় অনুদানকারী কমে গেছে। এখন কাজটাকে কীভাবে এগিয়ে নিতে হবে, তা ভাবতে হবে।

মাবরুক মোহাম্মদ বলেন, সহিংসতা বন্ধ করতে না পারার কারণ হচ্ছে, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নির্যাতনের বিষয়গুলো ঢুকে আছে। সমাজে নারী নির্যাতনের ঘটনা যেন না ঘটে, সেজন্য সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করতে হবে। আর যদি সহিংসতার ঘটনা ঘটে, তাহলে যেন প্রতিকার পাওয়া যায়, সেই পদক্ষেপ নিতে হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইন ও স ল শ ক ন দ র আসক দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

শান্তি প্রক্রিয়া কার্যকরে প্রস্তুত ইসরায়েল-হামাস 

গাজায় দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল। তারা কাতারের দোহায় আলোচনার জন্য একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে। স্থায়ী যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে হামাস দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ইসরায়েলকে চাপ দিয়ে আসছিল। অবশেষে যুদ্ধের স্থায়ী অবসান ঘটবে বলে আশা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠনটির। তবে হামলা অব্যাহত থাকায় ফিলিস্তিনিরা আবারও যুদ্ধের আশঙ্কা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে।

রয়টার্স জানায়, হামাসের একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কাতারের কর্মকর্তারাও এই আলোচনায় যুক্ত রয়েছেন। হামাসের মুখপাত্র আবদেল লতিফ আল-কানুয়া এক বিবৃতিতে বলেন, গাজার ওপর থেকে অবরোধ তুলে নিয়ে ত্রাণ সরবরাহ জোরদার করা হোক। একটি সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন হওয়ার আগ পর্যন্ত গাজা পরিচালনায় ‘স্বাধীন কমিটি’ গঠনে তারা সম্মত। 

গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে হামাসের কাছে থাকা বাকি ইসরায়েলি জিম্মিদের ছেড়ে দেওয়ার শর্ত রয়েছে। এর পর তৃতীয় ধাপে গাজা পুনর্গঠনের আলোচনা ও সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের সমাপ্তি টানার কথা। যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে হামাস। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধবিরতি আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র হামাসের সঙ্গে আরও সরাসরি আলোচনা চায়। 

এদিকে গাজা পুনর্গঠনে আরব পরিকল্পনায় সমর্থন দিয়েছে ইউরোপের চার দেশ। গত শনিবার ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা পরিকল্পনাটিকে ‘বাস্তবসম্মত’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন। এই পরিকল্পনায় পাঁচ বছরের মধ্যে গাজা পুনর্গঠনের কথা বলা আছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩ বিলিয়ন ডলার।

আলজাজিরা জানায়, ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখলের পরিকল্পনা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে জানিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান। সম্প্রতি সৌদিতে অনুষ্ঠিত ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সভায় তিনি বলেন, যারা ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে গাজা দখল করতে চায়, তাদের জানা উচিত সংকটের মূলে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব। এ সময় কায়রোতে গৃহীত পরিকল্পনাকে তিনি সমর্থন জানান। 

অন্যদিকে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় তিন ফিলিস্তিনি নিহত ও সাতজন আহত হয়েছেন। দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের পূর্বে আবু হালাওয়েহ এলাকায় এ হামলা চালানো হয়। রাফায় ফিলিস্তিনি বাড়িঘরে গুলি হয়েছে। তারা ট্যাঙ্ক থেকে সাউন্ড গ্রেনেডও নিক্ষেপ করেছে। গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে সাত লাশ উদ্ধার হয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৪৫৩ নিহত ও ১ লাখ ১১ হাজার ৮৬০ জন আহত হয়েছে।   

জ্বালানির অভাবে গাজার খান ইউনিসে ছয়টি বেকারি বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলোর ওপর হাজার হাজার পরিবার নির্ভরশীল। গাজা উপত্যকায় কোনো বিনামূল্যে খাবার থাকবে না বলে হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এ ছাড়া ইসরায়েলি বাহিনী জেনিনের মসজিদগুলোতে আজান বন্ধ করে দিয়েছে।  

গত সপ্তাহে গাজায় প্রথম দফা যুদ্ধবিরতি শেষ হয়। ইসরায়েল প্রথম দফা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে ছিল। হামাস এতে সায় দেওয়ায় গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেয় ইসরায়েল। তাদের দাবি ছিল, সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। তেলআবিবের আশঙ্কা, হামাসের হাতে থাকা ৫৯ জিম্মির মধ্যে অর্ধেকও আর বেঁচে নেই। গতকাল তেলআবিবে জিম্মিদের স্বজনরা বিক্ষোভ করেছে। তারা হামাদের দাবি মেনে নিয়ে জিম্মিদের মুক্তির জন্য নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। 

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের পর লেবাননের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের জন্য ১১ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার সরকারি খাতে ও  অবকাঠামো খাতে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে ৬ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ