সাবেক এমপিসহ বিএনপির দুই নেতাকে ১১ বছর আগে গুমের অভিযোগ অপরাধ ট্রাইব্যুনালে
Published: 5th, February 2025 GMT
কুমিল্লার লাকসামে বিএনপির দুই নেতাকে অপহরণের পর গুমের অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে লাকসাম পৌরসভার ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা ও গুম হওয়া বিএনপি নেতা মো. হুমায়ুন কবিরের ছোট ভাই গোলাম ফারুক বাদী হয়ে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর অভিযোগটি দাখিল করেন। প্রায় ১১ বছর ৩ মাস আগে গুমের শিকার ওই দুই নেতার এখনো কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
গুমের শিকার দুই নেতা হলেন লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মো.
ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা অভিযোগে সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও কুমিল্লা-৯ আসনের (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) মো. তাজুল ইসলামের পাশাপাশি অপর অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন র্যাব-১১–এর বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া সাবেক অধিনায়ক (সিইও) ও নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, র্যাব-১১–এর তৎকালীন কুমিল্লা ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা কোম্পানি-২–এর মেজর শাহেদ হাসান রাজীব, উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) মো. শাহজাহান আলী, উপপরিদর্শক (এসআই) কাজী সুলতান আহমেদ ও অসিত কুমার রায় এবং লাকসাম থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের।
অভিযোগ দায়েরের তথ্য নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ বদিউল আলম আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর অভিযোগটি করা হয়েছে। চিফ প্রসিকিউটর আশ্বস্ত করেছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
মুহাম্মদ বদিউল আলম বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সঠিকভাবে তদন্ত হলেই সব বেরিয়ে আসবে। কারণ, ওই দুই বিএনপি নেতাকে গুমের পর প্রথমে থানায় জিডি এবং পরে আদালতে মামলা হলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একবারও কোনো তদন্ত সংস্থা জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করেনি। সবাই ঘটনাটি প্রভাবশালীর চাপে ধামাচাপা দিয়েছে। সাঈদ মোহাম্মদসহ অন্য আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব বেরিয়ে আসবে।’
আরও পড়ুনকুমিল্লায় দুই বিএনপি নেতা ১১ বছর আগে ‘গুম’, আজও অপেক্ষায় স্বজনেরা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া অভিযোগ এবং গুম হওয়া দুই নেতার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির টানা অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে লাকসামে বিশেষ অভিযান চালায় র্যাব-পুলিশসহ যৌথ বাহিনী। একপর্যায়ে র্যাবের সদস্যরা উপজেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি ও সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামের মালিকানাধীন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘লাকসাম ফ্লাওয়ার মিলে’ প্রায় এক ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেন। খবর পেয়ে ওই রাতেই সাইফুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির এবং একই কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে লাকসাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। তাঁদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের আলীশ্বর এলাকায় পৌঁছালে একদল লোক অ্যাম্বুলেন্সটির গতি রোধ করে। পরে গতিরোধকারীরা নিজেদের র্যাব পরিচয়ে চালক ও হেলপারকে মারধর করে বিএনপির তিন নেতাকে আটক করে অন্য একটি গাড়িতে তুলে কুমিল্লার দিকে নিয়ে যায়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ওই দিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে জসিম উদ্দিন (অ্যাম্বুলেন্সে থাকা) এবং লাকসামে গ্রেপ্তার হওয়া ৯ জনকে লাকসাম থানায় হস্তান্তর করেন র্যাব-১১–এর কুমিল্লা শাখার তৎকালীন ডিএডি শাহজাহান আলী। পরের দিন সকালে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। তবে সেই থেকে বিএনপি নেতা সাইফুল ও হুমায়ুনের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এই গুমের সঙ্গে সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, সাইফুল ইসলাম লাকসামের জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং সফল ব্যবসায়িক নেতা ছিলেন। তাঁর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত ছিলেন তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম। তা ছাড়া তৎকালীন বিরোধী দলের আহ্বান করা সব কর্মসূচি স্থানীয়ভাবে পালিত হতো সাইফুল ইসলাম ও হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে। এতে মারাত্মক ক্ষিপ্ত হন তাজুল ইসলাম। সাইফুল ইসলাম ও হুমায়ুন কবির রাজনীতির মাঠে থাকলে তাজুল ইসলামের রাজনৈতিক বৈতরণি পার হওয়া অত্যন্ত কঠিন ছিল। সে জন্য তাজুল ইসলাম পথের কাঁটা সরাতে চেয়েছিলেন।
আরও পড়ুনলাকসামে বিএনপির দুই নেতার হদিস মেলেনি সাত বছরেও২৭ নভেম্বর ২০২০অভিযোগের বিষয়ে বাদী গোলাম ফারুক বলেন, ‘২০১৪ সালে এ ঘটনায় আদালতে মামলা করা হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ ও সিআইডির যারাই মামলার তদন্ত করেছে, তাদের কেউই ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। কারণ, কেউই চায়নি মামলাটি আলোর মুখ দেখুক। এ জন্য সময়ক্ষেপণ করেছে তারা। এ ছাড়া রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। বর্তমানে দেশের পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়ায় আমরা আশাবাদী, দেশজুড়ে আলোচিত এই অপহরণ ও গুমের সব রহস্য বেরিয়ে আসবে। আমরা দুই নেতার ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী হয়েছে, সেটা জানতে চাই। জড়িত ব্যক্তিদের বিচার চাই।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত জ ল ইসল ম র তৎক ল ন ল ইসল ম র ব এনপ র র জন ত সদস য তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
৪ আবাসিক হলের নতুন নাম দিলেন শিক্ষার্থীরা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শেখ পরিবারের সদস্য ও জাতীয় চার নেতার একজনের নামে থাকা সব স্থাপনার নামফলক, গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখন মুছে দিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বর থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে চারটি আবাসিক হল ও একটি স্কুলের নামফলক ভেঙে নতুন নাম দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘বিজয়-২৪ হল’, নির্মাণাধীন শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের পরিবর্তে ‘শহীদ আলী রায়হান হল’, শেখ হাসিনা হলের পরিবর্তে ‘ফাতিমা আল-ফাহরিয়া হল’ এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের পরিবর্তে ‘নবাব ফয়জুন নেসা চৌধুরানী’ ও শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নাম পরিবর্তন করে ‘রিয়া গোপ মডেল স্কুল’ নাম দিয়ে ব্যানার ঝুলিয়ে দেন।
বিক্ষোভে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ‘স্বৈরাচারের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘মুজিববাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘মুজিব বাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘আবু সাঈদ মুদ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ইত্যাদি নানা স্লোগান দেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের নামফলক পরিবর্তনের সময় হলের ভেতর থেকে নারী শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা নাম পরিবর্তনকারী শিক্ষার্থীদের দিকে স্যান্ডেল ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় বাইরে থেকেও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের হলে অবস্থিত নারী শিক্ষার্থীদের দিকে ঢিল ছুটে দেখা যায়। হলের নারী শিক্ষার্থীরা নতুন করে লাগানো হলের নাম ফলকের ব্যানার ছিড়ে ফেলেন।
এর আগে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাত ৯টায় শিক্ষার্থীরা দলে দলে শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে জড়ো হন। পরে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে যায়। পরে তারা হলটির নামফলক, উদ্বোধনী ফলকসহ শেখ মুজিবের চিহ্ন সম্বলিত স্থাপনাগুলো রড, হাতুড়ি, কোদাল দিয়ে ভেঙে দেন। এ সময় তারা হলটির নতুন নাম ‘বিজয় ২৪’ ঘোষণা করে রঙ দিয়ে দেয়ালে দেয়ালে নাম লিখে দেন। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে নির্মাণাধীন এ এইচ এম কামারুজ্জামান, শেখ হাসিনা ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলেরও নামফলক ভেঙে দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের হলের নাম পরিবর্তন আমরা করব। বাইরে থেকে অন্য শিক্ষার্থীরা এসে সেটি করবে কেন। যেহেতু আগে থেকে ব্যানার নিয়ে আসা হয়েছে, এর মানে বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত। এ বিষয়ে আমাদেরকে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় রিয়া গোপ মডেল স্কুল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা বলেন, ‘গতকাল শেখ হাসিনা লাইভে এসে ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার প্রতিবাদে আমাদের এ কর্মসূচি। আমার ভাইদের রক্তের দাগ না শুকাতেই খুনি হাসিনা প্রকাশ্যে আসার সাহস দেখায় কীভাবে? আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের রেখে যাওয়া পদচিহ্ন ও রাবি থেকে তাদের শেকড় মুছে দিতে আমাদের আজকের এ আন্দোলন।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করেছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নাম পরিবর্তনের কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। সেটি যদি করা হয়ে থাকে; তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই করা হবে।