মিয়ানমারের গণতন্ত্র রক্ষা অথবা স্বৈরাচারের কাছে আত্মসমর্পণ করুন
Published: 5th, February 2025 GMT
সর্বত্রই গণতন্ত্র আক্রমণের মুখে। এতে সামনের সারিতে রয়েছে মিয়ানমার। একটি সামরিক একনায়কতন্ত্র নির্বাচিত নেতাদের কারারুদ্ধ করেছে, জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে এবং দেশকে সন্ত্রাসের যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে। এ অবস্থায় বিশ্বনেতাদের সাধারণ জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন দেশটির লেখক ও অনুসন্ধানী সাংবাদিক অ্যালান ক্লেমেন্টস এবং লেখক ও মানবাধিকারকর্মী ফার্গাস হার্লো। খবর ইরাবতীর।
চিঠিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমার তার অস্তিত্বের জন্য লড়াই করছে। ২১ হাজারেরও বেশি রাজনৈতিক নেতাকর্মী কারাগারে। হত্যা করা হয়েছে ৬ হাজার ২০০ জনেরও বেশি নিরীহ বেসামরিক নাগরিককে। ৫০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত এবং হাজার হাজার মানুষকে অনাহারে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। বোমা হামলা, মৃত্যুদণ্ড ও গণগ্রেপ্তারের মতো জান্তার নৃশংস অভিযান দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তবুও জনগণ আত্মসমর্পণের পরিবর্তে লড়াই করে যাচ্ছে।
মিয়ানমারের সংকট কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়– উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, এটি সর্বত্র গণতন্ত্রের জন্য একটি পরীক্ষা। যদি বিশ্ব ৫ কোটিরও বেশি মানুষের ইচ্ছা মুছে ফেলার জন্য একটি সহিংস অভ্যুত্থানের অনুমতি দেয়, তবে এটি বিশ্বব্যাপী স্বৈরশাসনের একটি নজির স্থাপন করবে। তাছাড়া জনগণের বিরুদ্ধে জান্তার এ যুদ্ধ ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক সংকটে ইন্ধন জোগাচ্ছে। চীনের দুর্বৃত্তদের মদদে সামরিক শাসন দেশকে ফেন্টানাইল, হেরোইন ও মেথামফেটামিনের একটি বৈশ্বিক কেন্দ্রে রূপান্তরিত করেছে। এই মাদকগুলো যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানে ছড়িয়ে পড়ছে।
মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে খোলা চিঠিতে তারা বলেন, ইতিহাস আমাদের প্রতিক্রিয়া বিচার করবে। অং সান সু চির তাৎক্ষণিক মুক্তি দাবি করুন। তাঁর স্বাধীনতা ছাড়া মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরবে না। সর্বোচ্চ নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে জান্তাকে জবাবদিহি করতে হবে। আর এটি কেবল মিয়ানমার নয়, বৈশ্বিক গণতন্ত্রের রক্ষার লড়াই। বিশ্ব যদি নীরব থাকে, তবে এটি সামরিক অভ্যুত্থানকে সহায়তা করা হবে। এতে একনায়কতন্ত্র বিকশিত এবং গণতন্ত্র অতল গহ্বরে ডুবে যায়। আমরা মিয়ানমারকে বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতার কবরস্থান হতে দিতে পারি না। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিতে হবে। শুধু কথায় নয়, বরং কাজেও। বিশ্বকে বেছে নিতে হবে– মিয়ানমারের পাশে দাঁড়ানো অথবা স্বৈরাচারের কাছে আত্মসমর্পণ করা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ন ত সরক র গণতন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
মার্কিন নীতিতে হতভম্ব ইউরোপে নতুন যুগ
যুগ যুগ ধরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে বিভক্ত করা। তাদের ভাবনা ছিল, এ বিভক্তির কারণে ভেঙে পড়বে পশ্চিমা জোট, যারা ইউরোপের প্রুশিয়া অঞ্চলে সোভিয়েত ইউনিয়নের ট্যাঙ্ক প্রবেশে বাধা দিয়ে আসছিল। কিন্তু এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন এক উপহার মস্কোর হাতে তুলে দিয়েছেন, যার জন্য তারা ‘শীতল যুদ্ধ’ বা তারও আগে থেকে অপেক্ষা করছিল।
শনিবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ট্রাম্পের সামগ্রিক আচরণে ইউরোপ কার্যত হতভম্ব। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভিত্তি স্বাধীনতা। তারা গণতন্ত্রের পক্ষে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে এলেও এখন মিত্রতে পরিণত হয়েছে ভ্লাদিমির পুতিনের। এতে ইউরোপ নিজেদের উপেক্ষিত ভাবছে। তারা আবারও নিজেদের শক্তি-সক্ষমতা (সামরিক) বাড়ানোয় নজর দিচ্ছে। তারা মার্কিন নীতিতে বিস্মিত ও ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।
ইউরোপের বিভিন্ন নেতার মুখে উঠে আসছে বিষয়টি। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মধ্যপন্থি রিনিউ ইউরোপ গ্রুপের সভাপতি ভ্যালেরি হায়ার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে সেই স্তম্ভ, যাকে কেন্দ্র করে শান্তির ব্যবস্থাপনা হয়। কিন্তু তারাই এখন অবস্থান পরিবর্তন করেছে।’ তিনি বলেন, ‘পুতিন যে অপপ্রচার চালান, সেটাই এখন ট্রাম্পের মুখে। আমরা নতুন যুগে প্রবেশ করেছি।’
ইউরোপের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানা পদক্ষেপ ও আচরণের আবেগি প্রভাব অনেক গভীর। ১৯৪৫ সালে শেষ হওয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে যে সমৃদ্ধ ও মুক্ত মহাদেশের দীর্ঘ যাত্রা শুরু হয়েছিল, তার মূলে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে ‘পশ্চিম’ বলতে যা বোঝায় তা ক্রমেই পাল্টাচ্ছে। বহু বছর ধরে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নানা উত্তেজনার মধ্যেও একটি বিষয়ে ছিল মতৈক্য, তা হলো– উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। বর্তমানে এ প্রশ্নে ইউরোপ, রাশিয়া, চীন আর যুক্তরাষ্ট্র– প্রত্যেকেই আলাদা। ‘পশ্চিম’ এখন কেবল এক ধারণা। কীভাবে শূন্যতা পূরণ হবে, তা পরিষ্কার নয়। তবে সহিংসতার বিষয়টি নিশ্চিত। কারণ, পরাশক্তিগুলো এটা চাচ্ছে।
প্যারিসের পো ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নিকোল বাচারন বলেন, ‘ট্রাম্প যেটা করছেন এর সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে, উদার গণতন্ত্রের অবদমন।’
ইউরোপের পপুলিস্টরা বিপাকে
ট্রাম্পের নানা পদক্ষেপের কারণে ইউরোপের জনপ্রিয় রাজনীতিকরা (পপুলিস্ট) পড়েছেন বিপাকে। শনিবার দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই রাজনীতিকরা ইউক্রেন প্রশ্নে কতটা ট্রাম্পের সঙ্গে থাকবেন, বা কতটা দূরত্বে– তা নির্ণয় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। কেউ কেউ মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবস্থান থেকে একেবারেই দূরে থাকার কথা ভাবছেন। যেভাবে ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আচরণ করা হয়েছে, তা নিয়ে ইউরোপের নেতাদের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে। নরডিক দেশসহ পশ্চিম ইউরোপে রাশিয়ার প্রতি বিদ্বেষ রয়েছে ব্যাপক। এর বিপরীতে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোয় রুশ সহমর্মীদের পাওয়া যায়।
এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ন্যাটো জোটকে আক্রমণ করেন। তিনি ইউরোপের মিত্রদের সতর্ক করে বলেন, যদি তারা নিজেদের প্রতিরক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যয় না করে, তাহলে ওয়াশিংটন তাদের সুরক্ষা দিতে পারবে না। গত বৃহস্পতিবার তিনি ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা তো কমন সেন্স, তাই না। যদি তারা খরচ না করে, আমি তাদের সুরক্ষা দিতে যাব না। না, আমি সুরক্ষা দেব না।’ ট্রাম্প জানান, ন্যাটো নিয়ে তাঁর এমন দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বছরের। তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের প্রথম মেয়াদে তাঁর এ দৃষ্টিভঙ্গি ন্যাটো মিত্রদের কাছে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, এ জন্য ৭৫ বছর পুরোনো ট্রান্সআটলান্টিক জোটের অন্য সদস্যরা প্রতিরক্ষায় ব্যয় বাড়িয়েছে, যদিও এখনও তা পর্যাপ্ত নয়। তাদের আরও খরচ করা উচিত।