খুলনায় বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচার বাড়ি।

আজ বুধবার রাত নয়টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ঘোষণা দিয়ে ওই ভাঙচুর চালান। পরে তাঁরা সিটি করপোরেশনের দুটি বুলডোজার নিয়ে বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়া শুরু করেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।

খুলনা নগরের ময়লাপোতা এলাকায় অবস্থিত ওই বাড়িটি খুলনায় ‘শেখ বাড়ি’ নামে পরিচিত। এই বাড়িতে শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সোহেল উদ্দিনসহ আরও কয়েক ভাই থাকতেন। ওই বাড়ি থেকেই মূলত পদ্মার এপারের আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হতো। গত ৪ আগস্ট প্রথম দফায় বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন ছাত্র-জনতা। সেদিন বাড়িতে কেউ ছিলেন না। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর আবারও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। এরপর বাড়িটিতে শুধু ইট–পাথরের কাঠামোই অবশিষ্ট ছিল।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

 ৪ আবাসিক হলের নতুন নাম দিলেন শিক্ষার্থীরা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শেখ পরিবারের সদস্য ও জাতীয় চার নেতার একজনের নামে থাকা সব স্থাপনার নামফলক, গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখন মুছে দিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বর থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে চারটি আবাসিক হল ও একটি স্কুলের নামফলক ভেঙে নতুন নাম দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘বিজয়-২৪ হল’, নির্মাণাধীন শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের পরিবর্তে ‘শহীদ আলী রায়হান হল’, শেখ হাসিনা হলের পরিবর্তে ‘ফাতিমা আল-ফাহরিয়া হল’ এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের পরিবর্তে ‘নবাব ফয়জুন নেসা চৌধুরানী’ ও শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নাম পরিবর্তন করে ‘রিয়া গোপ মডেল স্কুল’ নাম দিয়ে ব্যানার ঝুলিয়ে দেন।

বিক্ষোভে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ‘স্বৈরাচারের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘মুজিববাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘মুজিব বাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘আবু সাঈদ মুদ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ইত্যাদি নানা স্লোগান দেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের নামফলক পরিবর্তনের সময় হলের ভেতর থেকে নারী শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা নাম পরিবর্তনকারী শিক্ষার্থীদের দিকে স্যান্ডেল ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় বাইরে থেকেও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের হলে অবস্থিত নারী শিক্ষার্থীদের দিকে ঢিল ছুটে দেখা যায়। হলের নারী শিক্ষার্থীরা নতুন করে লাগানো হলের নাম ফলকের ব্যানার ছিড়ে ফেলেন।

এর আগে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাত ৯টায় শিক্ষার্থীরা দলে দলে শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে জড়ো হন। পরে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে যায়। পরে তারা হলটির নামফলক, উদ্বোধনী ফলকসহ শেখ মুজিবের চিহ্ন সম্বলিত স্থাপনাগুলো রড, হাতুড়ি, কোদাল দিয়ে ভেঙে দেন। এ সময় তারা হলটির নতুন নাম ‘বিজয় ২৪’ ঘোষণা করে রঙ দিয়ে দেয়ালে দেয়ালে নাম লিখে দেন। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে নির্মাণাধীন এ এইচ এম কামারুজ্জামান, শেখ হাসিনা ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলেরও নামফলক ভেঙে দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের হলের নাম পরিবর্তন আমরা করব। বাইরে থেকে অন্য শিক্ষার্থীরা এসে সেটি করবে কেন। যেহেতু আগে থেকে ব্যানার নিয়ে আসা হয়েছে, এর মানে বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত। এ বিষয়ে আমাদেরকে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় রিয়া গোপ মডেল স্কুল।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা বলেন, ‘গতকাল শেখ হাসিনা লাইভে এসে ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার প্রতিবাদে আমাদের এ কর্মসূচি। আমার ভাইদের রক্তের দাগ না শুকাতেই খুনি হাসিনা প্রকাশ্যে আসার সাহস দেখায় কীভাবে? আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের রেখে যাওয়া পদচিহ্ন ও রাবি থেকে তাদের শেকড় মুছে দিতে আমাদের আজকের এ আন্দোলন।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করেছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নাম পরিবর্তনের কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। সেটি যদি করা হয়ে থাকে; তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ