সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার ও যুব অধিকার পরিষদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
Published: 5th, February 2025 GMT
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খানের বিরুদ্ধে ‘স্যার না বলায়’ অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ করেছেন জেলা যুব অধিকার পরিষদের নেতারা। এ–সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে পুলিশ সুপার উল্টো অভিযোগ করেন, ‘স্যার বলা, না বলা কিছু না। তাঁরা যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন, সেটি খুবই দুঃখজনক।’
আজ বুধবার দুপুরে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সুনামগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি করে জেলা গণ অধিকার পরিষদ। এরপর একটি মামলার বিষয়ে কথা বলতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যান যুব অধিকার পরিষদের কয়েকজন নেতা–কর্মী। পুলিশ সুপারের সঙ্গে তাঁর কক্ষে কথা বলার সময় তিনি উত্তেজিত হয়ে তাঁদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও গলাধাক্কা দিয়ে তাঁদের বের করে দেওয়ার হুমিক দেন বলে অভিযোগ করেন যুব অধিকার পরিষদের নেতারা।
জেলা গণ অধিকার পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক মোহাম্মদ হান্নান জানান, কর্মসূচি শেষে তাঁরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে প্রথমে সাক্ষাৎ করেন। পরে বেলা দুইটার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যান। এর আগে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আছেন কি না, জানতে দলের সদস্য মাছুম আহমদ এসপির মুঠোফোনে কল দেন। তিনি কার্যালয়ে আছেন জেনে তাঁরা সেখানে যান। তখন কে তাঁকে ফোন দিয়েছিলেন জানতে চান এসপি। বিষয়টি নিয়ে কথার একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে তাঁদের গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, এসপি গণ অধিকারের কর্মী মাছুম আহমদকে বলছেন, ‘ফোনে কথা বলার সময় তিনি (মাছুম) যেভাবে কথা বলেছেন, ভাষা মার্জিত ছিল না। ঔদ্ধত্যপূর্ণ ছিল।’ তখন মাছুম বলেন, ‘আমি সালাম দিয়েছি, এসপি সাহেব বলেছি। কিন্তু স্যার না বলায় এখন আপনি (এসপি) রাগ করছেন। আপনি বলেন আপনাকে আমরা কী ডাকব।’
কথার একপর্যায়ে এসপি উত্তেজিত হয়ে তাঁদের বের হয়ে যেতে বলেন। তখন বিষয়টি নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল হক নুরের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান এসপি। পরে সেখানে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ পরিস্থিতি শান্ত করেন। এরপর ভিডিওতে যুব অধিকার পরিষদের নেতাদের বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করতেও শোনা যায়।
জানতে চাইলে মাছুম আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসলে স্যার না বলাতেই উনি ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের সঙ্গে এমন দুর্ব্যবহার করেছেন। তিনি বিএনপি করে এসেছেন। চাকরি ছাড়লে বিএনপি থেকে এমপি হতে পারবেন, এসব নানা কথা আমাদের শুনিয়েছেন। একপর্যায়ে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার কথা বলেন।’ তাঁরা পুলিশ সুপারকে সুনামগঞ্জ থেকে প্রত্যারের দাবি জানান।
জেলা গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি মো.
পুলিশ সুপার আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁদের আচরণে ঔদ্ধত্য ছিল। আমি শুধু এটা বলেছি। কিন্তু তাঁরা এটাকে স্যার বলা, না বলাতে নিয়ে আমাকে উত্তেজিত করে তোলেন। এরপর আমি কিছুটা রাগান্বিত হয়ে পড়ি। পরে সবাই মিলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে, চা খেয়ে তাঁরা চলে যান। এখন ভিডিও দেখে মনে হচ্ছে, তাঁরা পরিকল্পিতভাবে এটা করেছেন। তাঁরা তো আগেও আমার এখানে একাধিকবার এসেছেন, তখন তো এই পরিস্থিতি হয়নি।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ কর ছ ন ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
হাজারো দর্শকের উপস্থিতিতে জয়পুরহাটের সেই মাঠে খেললেন নারী ফুটবলাররা
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সেই মাঠে নারী ফুটবল দলের খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার বিকেলে ঢাকা বনাম জয়পুরহাট নারী ফুটবল দলের মধ্যে খেলা হয়। তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে নারীদের এ ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন।
জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফরোজা আকতার চৌধুরী বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুটবল ম্যাচের উদ্বোধন করেন। এ সময় জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব, বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান (চন্দন), জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর জেলা শাখার সহকারী সেক্রেটারি এস এম রাশেদুল আলম সবুজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিসি আফরোজা আকতার চৌধুরী বলেন, ভুল–বোঝাবুঝির কারণে একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। দুই পক্ষই তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। যাঁরা ঘটনা ঘটিয়েছিলেন, তাঁরা দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। আসলে তাঁদের খেলায় বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল না।
এর আগে নারীদের ফুটবল ম্যাচ দেখতে দুপুর থেকেই মাঠে আসতে শুরু করেন দর্শকেরা। বিকেল চারটার মধ্যে পুরো মাঠ দর্শকে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। খেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরাও কাজ করেছেন। সেনাবাহিনীরও একটি দল ছিল। নারী ফুটবলাররা যখন মাঠে নামেন, তখন দর্শকেরা করতালি দিয়ে তাঁদের স্বাগত জানান। খেলায় স্বাগতিক জয়পুরহাট নারী ফুটবল দল এক গোলে জয়ী হয়। পরে বিজয়ী ও রানার্সআপ দলের অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে দেন প্রধান অতিথি। লতা পারভিন ম্যাচটি পরিচালনা করেন। সহায়তা করেন স্বপ্না ও রহিমা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় টি স্টার ক্লাবের উদ্যোগে তিলকপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রায় দেড় মাস আগে ছেলেদের আন্তজেলা ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। টুর্নামেন্টের প্রতিটি ম্যাচ মাটিতে বসে দেখার জন্য ৩০ টাকা ও চেয়ারে বসে দেখার জন্য ৭০ টাকা মূল্যের টিকিটের ব্যবস্থা রাখা হয়। টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছে পার্বতীপুর ও জয়পুরহাট ফুটবল দল।
ফাইনাল ম্যাচের আগে গত ২৯ জানুয়ারি জয়পুরহাট ও রংপুর নারী ফুটবল দলের মধ্যে একটি প্রীতি ম্যাচ আয়োজনের ঘোষণা দেন আয়োজকেরা। খেলার আগের দিন মঙ্গলবার বিকেলে একদল ব্যক্তি মিছিল নিয়ে এসে খেলার মাঠের বেড়া ভাঙচুর করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে ভাঙচুরের দৃশ্য প্রচার করা হয়। ওই ঘটনার পর আয়োজকেরা নারীদের প্রীতি ম্যাচটি বাতিল করেন।
এ ঘটনায় প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে জেলা প্রশাসন এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। দুটি কমিটিই তদন্ত করেছে। এরপর একটি তদন্ত কমিটির গণশুনানিতে ভাঙচুরে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা অনুতপ্ত হয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান। এরপর তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে আজ ওই মাঠে নারীদের ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন।
হাকিমপুরে নারীদের স্থগিত খেলাটি কাল অনুষ্ঠিত হবেএদিকে দিনাজপুরের হাকিমপুরে বিক্ষোভ ও বাধার মুখে স্থগিত হওয়া নারী ফুটবল দলের প্রীতি ম্যাচটি কাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে। বেলা তিনটায় উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নের বাওনা গ্রামের অস্থায়ী মাঠে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করেছেন খেলার আয়োজক সংগঠন বাওনা ছাত্রকল্যাণ সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল।
খেলা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, কাল বিকেলে দিনাজপুর জেলা নারী ফুটবল একাডেমির সঙ্গে রংপুর বিভাগীয় নারী ফুটবল দলের মধ্যে ওই প্রীতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে আজ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ ডিসেম্বর পুরুষদের ১৬টি দলের অংশগ্রহণে বাওনা মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে বাওনা ছাত্রকল্যাণ সমবায় সমিতি। ওই দিন টুর্নামেন্টের প্রথম ও কোয়ার্টার পর্যায়ের খেলা অনুষ্ঠিত হয়। টুর্নামেন্টের মধ্যে এক দিনের জন্য নারীদের একটি প্রীতি ম্যাচের আয়োজনের ঘোষণা দেয় আয়োজক কমিটি। ২৮ জানুয়ারি বিকেলে ওই খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নারীদের খেলা বন্ধের দাবিতে তৌহিদী জনতার ব্যানারে স্থানীয় একটি পক্ষ বিক্ষোভ মিছিল করে। ২৮ জানুয়ারি দুপুরে তারা নারীদের খেলা বন্ধ করতে মাঠে গেলে আয়োজক কমিটির সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের ২০ থেকে ২৫ জন আহত হন। এরপর নারীদের খেলাটি স্থগিত করেন আয়োজকেরা।
এ ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এক প্রেস উইং থেকে দিনাজপুর ও জয়পুরহাট জেলা প্রশাসনকে স্থগিত ফুটবল ম্যাচ আবার চালু করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরই বাওনা গ্রামের মাঠে স্থগিত হওয়া খেলাটি আবার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় আয়োজক কমিটি।
বাওনা ছাত্রকল্যাণ সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এখনো আতঙ্কে আছেন। খেলা নিয়ে তৌহিদী জনতার পক্ষের কেউ আর কিছু বলেননি। কাল বেলা তিনটায় বাওনা মাঠে আগের নারী দলের খেলাটি হবে। মাঠে দর্শকদের একটি সুন্দর খেলা উপহার দেওয়ার জন্য আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় প্রথম আলোকে বলেন, আয়োজকদের একজন বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। বিষয়টি তাঁরা পর্যবেক্ষণ করছেন। খেলাকে কেন্দ্র করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছে না প্রশাসন। এরপরও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঠে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুজন মিঞা বলেন, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। আয়োজক কমিটি জানিয়েছে, স্থগিত খেলাটি কাল অনুষ্ঠিত হবে। কাল ওই এলাকায় পুলিশের টহল থাকবে।