দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের ‘রিসিভার’ মো. রুহুল আমিনকে বরখাস্ত করেছে সরকার। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক। নতুন রিসিভার হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকেরই আরেক নির্বাহী পরিচালক খসরু পারভেজকে গতকাল মঙ্গলবার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত নভেম্বরে হাইকোর্টের এক আদেশ অনুযায়ী বেক্সিমকো গ্রুপে ‘রিসিভার’ নিয়োগ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই রিসিভারের দায়িত্ব ছিল গ্রুপটির সব প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। কিন্তু তিনি আশানুরূপ সাফল্য দেখাতে না পারায় তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত ২৮ জানুয়ারি এ–সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.

) এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, বেক্সিমকোকে নিয়ে তিনটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। লে-অফ করা ১৩টি কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়া, বেক্সিমকোর রিসিভারকে বরখাস্ত করা এবং ঋণদাতা ব্যাংকগুলোর কাছে বন্ধক থাকা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ার বিক্রি করে লে-অফ কোম্পানির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের ব্যবস্থা করা।

শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন তখন আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির চেয়েও বড় কেলেঙ্কারি করেছে বেক্সিমকো গ্রুপ। টেক্সটাইল ও অ্যাপারেলস বা বস্ত্র ও পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর মাধ্যমেই গ্রুপটি ঋণ নিয়েছে ২৮ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। বেক্সিমকো শিল্পপার্কের আওতাধীন যে ৩২ কোম্পানির কথা বলা হয়, এর মধ্যে ১৬টিই অস্তিত্বহীন। এসব অস্তিত্বহীন কোম্পানির বিপরীতে রয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকার ঋণ।

বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাবন্দী। দেশের পোশাক রপ্তানি ও ওষুধ উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হলো বেক্সিমকো।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বরখ স ত

এছাড়াও পড়ুন:

ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার পরও বাড়েনি সরবরাহ

বেশ কয়েকদিন ধরে বাজারে বোতলজাত তেলের সরবরাহ কম। আমদানিকারক ও বাজারজাতকারীর দাবির প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে ১৪ টাকা বাড়ানো হয়। এর পরও বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়েনি। বিশেষ করে ছোট-বড় সব বাজারেই পাঁচ লিটার তেলের বোতল সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। তবে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের পর্যাপ্ত সরবরাহ দেখা গেছে। গতকাল বুধবার ঢাকার মহাখালী, তেজকুনিপাড়া ও কারওয়ান বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

তবে আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, শুল্কছাড় সুবিধার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রতি লিটারে তাদের এ বাবদ খরচ বেড়েছে ২১ টাকা। সরকার ১৪ টাকা বাড়ানোর পরও লিটারে তাদের ৭ টাকার মতো লোকসান গুনতে হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়বে বলে জানান তারা।    

এদিকে তেলের বর্ধিত দাম প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনটি বলছে, সয়াবিন তেলের দর বাড়ানো অন্যায্য ও অযৌক্তিক। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রমজান উপলক্ষে গত ডিসেম্বরে সব ধরনের পরিশোধিত ও অপরিশোধিত ভোজ্যতেলের ওপর আমদানি পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছিল। এই সুবিধা ছিল গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এর আগে গত ১৭ অক্টোবর পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েল সরবরাহের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়। শুল্ক-কর ছাড়ের এসব সুবিধার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গত ১ এপ্রিল থেকে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় আমদানিকারকরা। সেই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই গত মঙ্গলবার দর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে ১৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তাতে এক লিটার বোতলের দাম দাঁড়িয়েছে ১৮৯ টাকায়। আর পাঁচ লিটার বোতলের দাম পড়বে ৯২২ টাকা। এ ছাড়া লিটারে ১২ টাকা বাড়ানোর ফলে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েল কিনতে ভোক্তাকে খরচ করতে হবে ১৬৯ টাকা।

তবে দাম বাড়ার পরও বাজারে বোতলজাত তেলের সরবরাহ বাড়েনি। সরেজমিন কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ দোকানে পাঁচ লিটারের বোতল নেই। কয়েকটি দোকানে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ব্র্যান্ডের নতুন দরের তেল দেখা গেছে। যদিও রূপচাঁদাসহ দু-একটি কোম্পানি নতুন ক্রয়াদেশ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। সাধারণত বাজারে পাঁচ লিটার বোতলের তেলের চাহিদা বেশি থাকে।

বোতলের সংকট থাকলেও খোলা ভোজ্যতেলের সরবরাহে ঘাটতি নেই। তুলনামূলক কম দরে মিলছে পাম অয়েল। সরকার প্রতি লিটার পাম অয়েলের দাম ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করলেও কেনা যাচ্ছে ১৬৫ বা এর চেয়ে কিছুটা কম দরে। 

কারওয়ান বাজারের তুহিন জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. রায়হান সমকালকে বলেন, তিন-চার দিন ধরে পাঁচ লিটারের বোতল নেই। দাম বাড়ার পর বুধবার ফ্রেশের বোতল এসেছে। রূপচাঁদা চাহিদাপত্র নিয়েছে। বৃহস্পতিবার দেবে বলেছে।

তবে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে লিটারে ৪ টাকা কমে পাম অয়েল বিক্রি করছেন বলে জানান একই বাজারের আব্দুর রব স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. নাঈম। তিনি বলেন, খোলা পাম ও সয়াবিনের সংকট নেই। ক্রেতারা পাঁচ লিটার বোতলের বেশি খোঁজ করেন। তবে সেগুলোর সরবরাহ বাড়াচ্ছে না কোম্পানিগুলো। 

তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ক্যাব। সংগঠনটি বলছে, সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অন্যায্য ও অযৌক্তিক। এ কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হবে। সাধারণ ভোক্তারা আর্থিক চাপে পড়েছেন। ক্যাব মনে করে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম স্থিতিশীল থাকার পরও দেশে এভাবে দাম বাড়ানো ভোক্তাবিরোধী ও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার ইঙ্গিত দেয়।

এদিকে ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণের এক দিনের মাথায় এ পণ্যের আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহার করেছে এনবিআর। একই সঙ্গে অপরিশোধিত পাম অয়েলের ক্ষেত্রেও এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার এক বিশেষ আদেশে আগাম কর প্রত্যাহার করে আদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে আদেশটি প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল। 

তবে এতে তেল আমদানি ও পরিশোধনকারী মিলগুলোর লাভ-লোকসান নেই বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। মিলাররা বলছেন, তাদের আমদানিতে আগাম কর নেই। যারা ছোট আকারে আমদানি করে অন্য মিলে পরিশোধন করতে চান তাদের জন্য এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আথহার তাসলিম সমকালকে বলেন, শুল্কছাড়ের সুবিধার মেয়াদ শেষ হওয়ায় লিটারে ২১ টাকা খরচ বেড়েছে। কিন্তু সরকার ১৪ টাকা বাড়ানোর পরও লিটারে ৭ টাকা করে লোকসান হচ্ছে।

তিনি বলেন, দর নির্ধারণে সরকারের হস্তক্ষেপ, ব্যবসা পর্যায়ে অসহযোগিতাসহ নানা কারণে বাজার থেকে তেল পরিশোধনকারী ব্যবসায়ীরা হারিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের এখন যেসব বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, তাতে কেউ এককভাবে তেল ব্যবসা করতে পারবেন না, যদি পাশাপাশি তার অন্য ব্যবসা না থাকে।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ