রাজশাহীর পুঠিয়ায় যুব মহিলা লীগ নেত্রীর আওয়ামী লীগের প্রচারপত্র বিলির জেরে স্বামীকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দের পর বাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়েছে। উপজেলার পচামাড়িয়া গ্রামে ভাঙচুর হওয়া বাড়িটি বর্তমানে মানুষশূন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

গত সোমবার পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি মৌসুমী রহমানের লিফলেট বিতরণের ছবি আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করা হয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে একটি কালভার্টের ওপর তাঁর স্বামী অহিদুর রহমানকে (৪৫) মারধরের পর পুলিশে সোপর্দ করা হয়। বিকেলে বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। অহিদুর আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তিনি নিজ বাড়িতে থেকে স্বাভাবিকভাবে চলাফেলা করছিলেন। পরে তাঁকে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে পুঠিয়া থানার পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে পুঠিয়া যুবদলের একাংশ আওয়ামী লীগের প্রচারপত্র বিতরণের বিরুদ্ধে ‘সাঁড়াশি অভিযান’ কর্মসূচি করে। এ কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় ‘রোড মার্চ পুঠিয়া টু পচামাড়িয়া’। উপজেলা যুবদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার সরকার আল আমীন তাঁর ফেসবুকের এক পোস্টে এই সাঁড়াশি অভিযানে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

আরও পড়ুনস্ত্রী আওয়ামী লীগের প্রচারপত্র বিতরণ করায় স্বামীকে মারধর, তারপর গ্রেপ্তার০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পুঠিয়া উপজেলার সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তরে উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের পচামাড়িয়া গ্রাম। এ গ্রামের ছোট্ট বাজারের পাশেই মৌসুমী রহমানের বাড়ি। আজ বুধবার দুপুরে পচামাড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মৌসুমী রহমানে বাড়িতে নতুন তালা লাগানো হয়েছে। স্থানীয় লোকজন বলতে পারেননি কে এ তালা লাগিয়েছে। বাড়ির টিনের দরজায় কুড়াল দিয়ে কোপ দেওয়ার চিহ্ন রয়েছে। জানালার থাই গ্লাস ভেঙে বাইরে পড়ে আছে। জানালা দিয়ে ভেতরে তাকিয়ে দেখা যায়, ঘরের ভাঙা সব জিনিসপত্র তছনছ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

বাড়ির সামনে একটি দোকান রয়েছেন। কারা এ হামলা চালিয়েছে—জানতে চাইলে দোকানি কিছুই বলতে পারবেন না বলে জানান। এ রকম আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু কেউ ভয়ে মুখ খোলেননি। একজন প্রতিবন্ধী নারী বলেন, ‘মোটরসাইকেলে একদল লোক আইসি ভাঙচুর কইরি গিচে। বুইলি গিচে এবির আইসি পুড়াই দিবি।’ মৌসুমী রহমান কোথায় আছেন কেউ বলতে পারেননি। তাঁর মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়।
সাঁড়াশি অভিযান কর্মসূচির পর মৌসুমী রহমানের বাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা যুবদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ২০০ থেকে ২৫০টি মোটরসাইকেল নিয়ে অভিযানে গিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁরা মোটরসাইকেল থেকে নামেননি এবং মৌসুমী রহমানের বাড়িও চিনেন না বলে জানান।

যুব মহিলা লীগ নেত্রীর ভাঙচুর হওয়া বাড়ির জানালা। আজ বুধবার দুপুরে পুঠিয়া উপজেলার পচামাড়িয়া গ্রামে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল র রহম ন র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আগুন, ক্রেনের পর এলো ভেকু

রাজধানীর ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের সামনে ক্রেনের পর এবার এলো এক্সকাভেটর বা ভেকু। বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভেকুটি প্রবেশ করে। এর আগে রাত ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে ধানমন্ডি-৩২ নম্বর এলাকায় প্রবেশ করে ক্রেন। ক্রেন ও ভেকু ঘিরে ছাত্র-জনতাকে উল্লাস করতে দেখা যায়।

এর আগে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের দিকে এগোতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। গেট ভেঙে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঢুকে পড়ে ছাত্র-জনতা। শাবল, হাতুড়ি ও রড দিয়ে বাড়ির দেয়ালসহ বিভিন্ন জায়গায় করা হয় আঘাত। কেউ খুলে নিয়ে যান জানালা, কেউ আবার স্মৃতি হিসেবে একটি করে ইট খুলে নিয়ে যান। পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকলেও ভাঙচুরের সময় তারা বাড়িটির দিকে এগোয়নি। এ ঘটনার পর ওই এলাকার ট্রাফিক পুলিশও রাতে রাস্তা থেকে সরে যান।

৩২ নম্বর সড়কের মুখে জায়ান্ট স্ক্রিনে জুলাই অভ্যুত্থানের নৃশংসতার প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশনের তৈরি প্রামাণ্যচিত্রে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও পুলিশের টানা হত্যাযজ্ঞের নির্মম ঘটনার ভিডিও প্রচার করা হয়।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিল বিক্ষুব্ধ জনতা। এর পর থেকে বাড়িটি অনেকটা পরিত্যক্ত ছিল।

এর আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে অবস্থান নেওয়া শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়া নিয়ে ফেসবুকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। পাশাপাশি ঘোষণা করা হয় ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ কর্মসূচিও। 

নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের কথা ছড়িয়ে পড়ে। আজ বুধবার বিকেলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য শরিফ ওসমান হাদি। রাত ৯টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে যাওয়ার কথা থাকলেও পরে কর্মসূচি বদলে রাত ৮টায় নিয়ে আসা হয়। 

আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের দিকে এগোতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে গেট ভেঙে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঢুকে পড়ে ছাত্র-জনতা। ভেতর থেকে ভাঙচুরের শব্দ আসতে থাকে। শাবল, হাতুড়ি ও রড দিয়ে বাড়ির দেয়ালসহ বিভিন্ন জায়গায় করা হয় আঘাত। কেউ খুলে নিয়ে যান জানালা, কেউ আবার স্মৃতি হিসেবে একটি করে ইট খুলে নিয়ে যান। 

এ সময় ছাত্র-জনতা ‘ভুয়া ভুয়া’, ‘খুনি হাসিনার বিচার চাই’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, ‘দলে দলে যোগ দিন, মুজিববাদের কবর দিন’, ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’ ও ‘ধুলায় মেশাও তাড়াতাড়ি, বত্রিশের দালানবাড়ি’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, এ ধরনের কোনো কর্মসূচি বিষয়ে তাদের জানা ছিল না।

সরেজমিন দেখা যায়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় ছাত্র-জনতা। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির পুরো অবকাঠামো ভেঙে ফেলা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভবনের তৃতীয় তলার একটি জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়। 

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘যে শেখ হাসিনা আমাদের ভাইদের গুলি করে দেশ থেকে পালিয়েছেন। তিনি কী করে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আমরা এ দেশে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার কোনো অস্তিত্ব রাখব না। যারা ছাত্র হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, সেসব ফ্যাসিবাদীর কোনো চিহ্ন বাংলাদেশের মাটিতে রাখতে চাই না। অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নিষিদ্ধ সংগঠনের কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক সালেহ মাহমুদ রায়হান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর এ দেশের প্রথম স্বৈরাচারের চিহ্ন মুছে ফেলতে চাই। আমরা বুলডোজার ভাড়া করেছি, কিছুক্ষণের মধ্যেই সেগুলো আসবে। এখানে কিছুই থাকবে না।’ তবে বুলডোজার কলাবাগান মোড়ে আটকে দেয় পুলিশ।

সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি।’

পরে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফেসবুকে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।’ এর আগেই বুধবার বিকেলে আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর ইলিয়াস হোসাইন ও পিনাকী ভট্টাচার্য ফেসবুকে ‘ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ ঘোষণা করেন। একটি ফটোকার্ড শেয়ার করেন এই দুই কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তাতে বলা হয়, ‘হাজারো ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়ে দিল্লি পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকেই খুনি হাসিনার বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতার প্রতিবাদে ২৪-এর বিপ্লবী ছাত্র-জনতার উদ্যোগে রাত ৯টায় এই কর্মসূচি পালিত হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ