সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (টিটিসি) এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য অনুমোদিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সরকার অনুমোদিত মাত্র ২৩টি বেসরকারি টিটি কলেজ থেকে বিএড সনদ অর্জনকারীরা উচ্চতর স্কেল পাবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি চিঠিতে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এই চিঠি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

২১ জানুয়ারির এ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল মামলা নং ৯৯/২০১৪ রায়ের আদেশ এবং কনটেম্পট পিটিশন নং ১৫৩/২০১৪ বহালের পরিপ্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার মাধ্যমে রায়ের পূর্বে পিটিশনারদের ২৩টি কলেজের বিএড ডিগ্রি অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের বিএড স্কেল দিয়ে আসছে। এখন হাইকোর্টের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার মাধ্যমে ২৩টি কলেজের নামের তালিকা প্রকাশপূর্বক পত্র জারি করা প্রয়োজন। 

তবে এই চিঠির ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত অন্য বেসরকারি বিএড কলেজের সনদধারিদের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা বিভাগ (ডিআইএ) সরকারি টিটি কলেজ এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য অনুমোদিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সরকার অনুমোদিত ২৩টি বেসরকারি কলেজ থেকে বিএড সনদ অর্জনকারিদের উচ্চতর স্কেল দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। ভুয়া বিএড সনদ নিয়ে উচ্চতর স্কেল প্রাপ্তির বিষয়টি তদন্তে ডিআইএ ঢাকার সবচেয়ে নামকরা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে অবাক করা তথ্য পান। সেখানে ৪৩ জন শিক্ষক বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড সনদ নিয়ে উচ্চতর স্কেল গ্রহণ করছেন বলে ডিআইএর তথ্যে উঠে এসেছে। 

সরকার অনুমোদিত যে ২৩টি বেসরকারি টিটি কলেজের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো হলো; হাজী ওয়াজেদ আলী টিচার্স ট্রেনিং  কলেজ, সাতক্ষীরা; মহানগর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, আজিমপুর, ঢাকা; আমিরুল ইসলাম কাগজী টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, পাইকগাছা, খুলনা; হাজীগঞ্জ আইডিয়াল কলেজ অব এডুকেশন, চাঁদপুর; পিরোজপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ; কলেজ অব এডুকেশন বিএড বরিশাল; মুন্সী মেহেরুউল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, যশোর; জয়পুরহাট বিএড কলেজ; মঠবাড়িয়া টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, পিরোজপুর; বগুড়া বিএড কলেজ; দক্ষিণ বঙ্গ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, পটুয়াখালী; কক্সবাজার টির্চাস ট্রেনিং কলেজ; পরশ পাথর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, চট্টগ্রাম; ড.

মিয়া আব্বাস উদ্দীন টি.টি কলেজ, মোড়েলগঞ্জ, বাগেরহাট; শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, পালবাড়ী, যশোর; উপশহর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, যশোর; মাগুরা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, এ জি একাডেমী, মাগুরা; খান টিচার্স ট্রেনিং কলেজ; সেকান্দার টিচার্স ট্রেনিং কলেজ; সিটি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ; ন্যাশনাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ; কলেজ অব এডুকেশন বিএড নর্থ আমানত গঞ্জ; সিটি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, চট্টগ্রাম। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব সরক র কল জ র ড কল জ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম আলোতে প্রতিবেদনের পর ময়মনসিংহ মিনি চিড়িয়াখানা সিলগালা, জব্দ ৪৮ প্রাণী

ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানে অনুমোদনবিহীন মিনি চিড়িয়াখানায় অভিযান চালিয়ে ৪৮টি প্রাণী জব্দ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে বন অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে চিড়িয়াখানাটি সিলগালা করে দিয়েছে।

‘ময়মনসিংহ মিনি চিড়িয়াখানায় ভালুকের শরীরে পচন’ শিরোনামে আজ প্রথম আলো অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক নার্গিস সুলতানার নেতৃত্বে একটি দল বিকেল সাড়ে চারটায় চিড়িয়াখানায় অভিযান চালায়। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চলে এ অভিযান।

ময়মনসিংহ মিনি চিড়িয়াখানায় দেশি-বিদেশি ১১৪টি প্রাণী ছিল। অভিযানে সরকারি অনুমোদন না নিয়ে চিড়িয়াখানায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণের অভিযোগে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২-এর ৩৪–এর খ ধারায় কুমির, ময়ূর, অজগর, হরিণ, মদনটাক, ধনেশ, লজ্জাবতী বানরসহ দেশি ৪৮টি প্রাণী জব্দ করা হয়। এর মধ্যে ২৭টি প্রাণী জব্দ করে নিয়ে গেলেও ২১টি প্রাণী বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের জিম্মায় রেখে যাওয়া হয়। পাশাপাশি চিড়িয়াখানাটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।

অভিযানে চিড়িয়াখানার ঠিকাদারের আত্মীয় পরিচয় দেওয়া মিজানুর রহমান যথাযথ কাগজপত্র আছে দাবি করলেও বন্য প্রাণীর সপক্ষে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো অনুমতিপত্র দেখাতে পারেননি। বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাসকে কিছু নথিপত্র এনে দেখান চিড়িয়াখানার কর্মীরা। সেখানে ২০১৪ সালের ১০ জুলাই ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে চারটি চিত্রা হরিণ কেনার অনুমতি দিয়ে ব্যক্তিপর্যায়ে হরিণের লাইসেন্স ও পজিশন সার্টিফিকেট নেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল বন সংরক্ষকের দপ্তর। তৎকালীন ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়রকে এ অনুমতি দেওয়া হলেও ব্যক্তিপর্যায়ে হরিণের লাইসেন্স ও পজিশন সার্টিফিকেট দেখাতে পরেনি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

এ ছাড়া ২০১৪ সালের ৩০ জুন নগরের গোহাইলকান্দি এলাকার মো. সেলিম মিয়া নামের একজনকে মিনি চিড়িয়াখানাটি ৩০ জুন ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়ার একটি চুক্তিপত্র দেখানো হয়। সেখানে সাক্ষীর ঘরে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. মাহবুবুর রহমানের স্বাক্ষর আছে। ৯টি শর্ত জুড়ে দিয়ে ১০ বছরের জন্য চিড়িয়াখানাটি ইজারা দেওয়া হয়। ইজারার ২ নম্বর শর্ত ছিল সরকারের বন, পরিবেশ এবং পশুপালন মন্ত্রণালয়ের আইনানুযায়ী জয়নুল উদ্যানে মিনি চিড়িয়াখানাটি পরিচালনা করতে হবে। ৫ নম্বর শর্তে চিড়িয়াখানায় সার্বক্ষণিক একজন পশু চিকিৎসক রাখার কথা উল্লেখ থাকলেও চিড়িয়াখানায় কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। সেখানে থাকা কর্মী কামাল হোসেন প্রাণীর চিকিৎসার দেখভাল করতেন বলে জানান। পরে ঠিকাদারের আত্মীয় পরিচয় দেওয়া মিজানুর রহমানের কাছ থেকে মুচলেকা নেয় বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।

বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, এখানে অবৈধভাবে বেশ কিছু বন্য প্রাণী খাঁচায় বন্দী রেখে প্রদর্শন করা হচ্ছিল, যা বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থী। তথ্যের আলোকে তাঁরা সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখতে পান, অযত্নে ও আইন লঙ্ঘন করে প্রাণীগুলোকে রাখা হয়েছে। এমন অবস্থায় তফসিলভুক্ত বন্য প্রাণীগুলো জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু সাফারি পার্কে এবং কিছু ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রেখে প্রাকৃতিক পরিবেশে অবমুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, অসুস্থ ভালুকটি এখানে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে। সুস্থ হওয়ার পর সেটি নিয়ে যাবেন। এখন এটি সরিয়ে নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।

কাগজপত্র অনুযায়ী ২০১৪ সালের জুনে জয়নুল আবেদিন উদ্যানের ভেতরে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মিনি চিড়িয়াখানাটি গড়ে তোলা হয়। ৩০ টাকায় টিকিট কেটে দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানাটিতে ঢুকতে পারতেন। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের জায়গা ইজারা নিয়ে চিড়িয়াখানাটি গড়ে তোলা হয়েছিল। ভেতরে প্রবেশের টিকিটে মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজ উল্লেখ থাকলেও সেটি পরিচালনা করছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান। সাবেক সিটি মেয়র ইকরামুল হক সেখানে প্রাণীর জোগান দিতেন বলে কর্মীরা জানান।

আরও পড়ুনঅনুমোদন নেই, প্রাণীর জোগানদাতা সাবেক মেয়র, পরিচালনায় সাবেক কাউন্সিলর৪ ঘণ্টা আগে

দীর্ঘদিন অনুমোদনবিহীন চিড়িয়াখানা চললেও কেন নজরে এল না জানতে চাইলে বন্য প্রাণী পরিদর্শক নার্গিস সুলতানা বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে এসব মিনি চিড়িয়াখানায় তাঁদের অভিযান চলছিল। সিরিয়ালে আসতে কিছুটা দেরি হয়েছে। ৫ আগস্টের আগেও আমরা পার্ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিলাম। দেশে এমন যত চিড়িয়াখানা আছে, সব কটির বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা পার্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করব। দেশি প্রাণীগুলো জব্দ করা হয়েছে। চিড়িয়াখানাটি আজ থেকে সিলগালা করা হয়েছে।’

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজিদ বলেন, চিড়িয়াখানাটি কিছু শর্তে ইজারা দেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে ইজারার মেয়াদও শেষ। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথম আলোতে প্রতিবেদনের পর ময়মনসিংহ মিনি চিড়িয়াখানা সিলগালা, জব্দ ৪৮ প্রাণী