সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার আগে দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। যেকোনো মূল্যে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের বিচার করতে হবে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় আয়োজিত জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

বিএনপি দেশ ও জনগণ নিয়ে ভাবে দাবি করে তারেক রহমান বলেন, পতিত স্বৈরাচার বিগত ১৭ বছর মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। সে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে লড়াই করে বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়েছেন। বিএনপির নেতাকর্মীসহ অসংখ্য মানুষকে গুম-খুন করে স্বৈরাচার ভারতে পালিয়ে গেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ, বিগত ১৭ বছরের লড়াই এবং সর্বশেষ জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের চেতনায় আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে সংগ্রামে থাকতে হবে।

সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে সংস্কারের নামে যেন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর না হয়, সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের মাঝে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।

দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। সব শহীদের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের দেশ বিনির্মাণ করা হবে।

বিএনপি দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে প্রস্তুত উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি সব সময়ই দেশ ও জনগণের কল্যাণ নিয়ে ভাবে। আমাদের দ্রব্য মূল্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং কর্মসংস্থানের কী হবে। তাই জনগণের এসব প্রত্যাশার দিকেও আমাদের নজর দিতে হবে। দেশের জনগণ বিএনপির ওপর আস্থা রাখতে চায়। কীভাবে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এবং দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজে আসবে নেতাকর্মীদের সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে বলে জানান তিনি।

সভায় উপস্থিত ছিলেন, আমরা বিএনপি পরিবার কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্যসচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সাবেক এমপি জয়নাল আবেদীন ফারুকসহ অনেকে।

পরে ২০১৬ সালের ২৫ জুন র‌্যাবের গুলিতে নিহত মোহাম্মদ মাসুদের পরিবারকে ঘর এবং ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে ৪৫ জন শহীদ পরিবারের মাঝে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন তারেক রহমান।

বিএইচ

.

উৎস: SunBD 24

কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন দ শ ও জনগণ ব এনপ র ভ জনগণ র

এছাড়াও পড়ুন:

পোশাক বদলালেই কি পুলিশ বদলাবে?

পোশাক তো বদলাতেই হয়। ধুলোবালিতে নোংরা হলে বদলাতে হয়; আবহাওয়া অনুযায়ী বদলাতে হয়; হাল ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়েও বদলাতে হয়। ষাটের দশকের শেষ দিকে ‘টেডি’ পোশাক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল; সত্তরের দশকে ‘বেলবটম’। এখন আর সেসব কেউ পরে না। ফ্যাশন বদলেছে; বদলেছে পোশাক। মানুষ কিন্তু তেমনই আছে; বদলায়নি। কেউ কেউ অবশ্য বদলেছে; পোশাকের কারণে নয়; বদলেছে অন্তর্সত্তা। আসলে মানুষের বদলটা ঘটে ভেতর থেকেই; পোশাক থেকে নয়।

ইদানীং কথা চলছে পুলিশ বাহিনীর পোশাক বদলের। অনেক জল্পনাকল্পনার পর চূড়ান্ত হয়েছে নতুন পোশাক। ২০ জানুয়ারি সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এমনটিই জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা রকমের মন্তব্য চলছে। কেউ কেউ বলছেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে পুলিশ বাহিনীর আচরণের কারণে পোশাকের পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছিল। কেউবা আবার এতে ষড়যন্ত্রের আভাসও দেখছেন।

যতটুকু জানা যায়, ২০২০ সাল থেকেই পুলিশের বর্তমান পোশাক পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা চলছিল। ২০২১ সালের শুরুর দিকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের জন্য বেশ কয়েকটি পোশাকের ট্রায়ালও হয়। তার পরও নানা কারণে নতুন পোশাক পাননি পুলিশ সদস্যরা। এরই মাঝে পতন ঘটে গেছে সরকারের। ধরে নেওয়া যায়, আগের সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায়ই বর্তমান সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে।
অখণ্ড ভারতীয় উপমহাদেশে পুলিশের ইউনিফর্মের রং ছিল খাকি। ব্রিটিশ অফিসার স্যার হ্যারি লুমসডেনের পরামর্শে ১৮৪৭ সালে এটি চালু হয়। তার একশ বছর পর ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান হয়েছে; কিন্তু পুলিশের পোশাকের রং খাকিই রয়ে গিয়েছিল। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশেও খাকি রং চালু ছিল। 

বাংলাদেশ পুলিশের পোশাকে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে ২০০৪ সালে; মহানগরগুলোয় হালকা জলপাই রং, জেলা পুলিশের গাঢ় নীল। র‍্যাবের কালো ও এপিবিএনের পোশাক তৈরি করা হয় খাকি, বেগুনি আর নীল রঙের মিশ্রণে। এমনকি ২০০৯ সালেও কিছুটা পরিবর্তন আসে। প্রতিবারই এর পেছনে ‘অকাট্য যুক্তি’ দেখানো হয়েছে।
যে যুক্তিতেই পুলিশের পোশাক পরিবর্তন হোক না কেন; গত অর্ধশতাব্দীতে পুলিশের আচরণে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন এসেছে? উনিশ শতকের মাঝামাঝি আনুষ্ঠানিক যাত্রার সময় থেকেই পুলিশ বাহিনী শাসক শ্রেণির লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলে যেহেতু আজকের মতো রাজনৈতিক ‘ক্যাডার’ ছিল না; পুলিশই ছিল শাসক শ্রেণির ভরসা। পুলিশ কাজটি দক্ষতার সঙ্গে চালিয়ে গেছে। 

আশা করা হয়েছিল, স্বাধীনতার পর অন্তত স্বাধীন দেশের উপযোগী পুলিশ বাহিনী গড়ে উঠবে। কিন্তু তা ঘটেনি। না ঘটারই কথা। কারণ স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে শাসক বদলালেও শাসকের শ্রেণি বদলায়নি। শাসক শ্রেণি তার শ্রেণিস্বার্থেই তা হতে দেয়নি। সেই হিসাবে বলা যায়, যতদিন শাসক শ্রেণির চরিত্র বদল না হবে; পুলিশের গুণগত পরিবর্তন আশা করা বাহুল্য হয়েই থাকবে।

বলা হয়– পুলিশ জনগণের বন্ধু। বন্ধুই তো হওয়ার কথা! কিন্তু হতে পারেনি। হতে দেওয়া হয়নি। কারণটা খুবই স্পষ্ট। রাষ্ট্র নিজেই যেখানে শোষণের মাধ্যম, পুলিশ যে মাধ্যমের হাতিয়ার; সেখানে পুলিশ জনগণের বন্ধু হয় কেমন করে? মানুষ আসলে পুলিশকে ভয় পায়; যেমন ভয় পেয়েছে ব্রিটিশ আমলে, তেমনি পাকিস্তান আমলে। এখনও তেমনটিই চলছে। ভয়কে জিইয়ে রেখে বন্ধু হওয়া যায় না। কিন্তু পুলিশের প্রতি এই ভয়টা শাসক শ্রেণির খুব প্রয়োজন। প্রয়োজন ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য। গণতন্ত্রহীন কিংবা দুর্বল গণতন্ত্রের দেশে পুলিশ কখনও জনগণের বন্ধু হতে পারে না।
আমাদের দেশে সুবিদিত, পুলিশকে ম্যানেজ করতে পারলে অনেক কিছু ম্যানেজ করা যায়। পুলিশ হাতে থাকলে নির্বাচনে জেতা যায়; প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা যায়; জমির দখল নেওয়া বা উচ্ছেদ করা; ইত্যাকার কাজ! এ কারণে প্রবল পরাক্রমশালী মন্ত্রী-এমপিরা পর্যন্ত পুলিশকে সমঝে চলেন। চলতে তারা বাধ্য। কারণ স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করতে পারেনি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে জনগণের ক্ষমতায়নও ঘটেনি। সংবিধানে যা-ই লেখা থাকুক; জনগণ কেবলই ‘প্রজা’। আসল রাজা ‘রাষ্ট্র’। আর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামোতে আরোহণে পুলিশের সহযোগিতা অনিবার্য।
নিজেদের অনিবার্যতা সম্পর্কে পুলিশও বিলক্ষণ সচেতন। তাই তারাও সুযোগ গ্রহণ করে। কিছুদিন আগেই কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় বিএনপির কর্মিসভায় হাজির হয়ে নিজেকে আওয়ামী লীগ আমলে নির্যাতিত দাবি করে বক্তৃতা করলেন থানার ওসি মঈনুল ইসলাম (সমকাল, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪)। বোঝাতে চাইলেন, তিনি বিএনপির লোক। 

মঈনুল ইসলাম মনে করেছেন, রাজনীতির যে অবস্থা, তাতে আগামী নির্বাচনে বিএনপিরই ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই তিনি এখন থেকেই ভবিষ্যতের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছেন। এ ধরনের কাজ আমরা আওয়ামী লীগ আমলেও দেখেছি। পুলিশ সদস্যরা আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জন্য ভোটের প্রচারণা করেছেন। বিরোধী দল মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডারের মতো আচরণ করেছেন। 
২০২৩ সালের আগস্টে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার ওসি তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের জন্য প্রকাশ্যেই ভোট চেয়ে বক্তৃতা করেছিলেন। একই কাজ করেছিলেন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থানার ওসি। তিনিও আওয়ামী লীগকে নিজের দল দাবি করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে বক্তব্য দেন। এসব খবর সে সময়কার পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। সমালোচনাও হয়েছে। কিন্তু সরকার তা গায়ে লাগায়নি। কেনইবা লাগাবে! সরকারি দল আর পুলিশ– ইতিহাসের সব পর্যায়েই মিলেমিশে রাষ্ট্র নামে শোষণযন্ত্রকে পাহারা দিয়ে আসছে। সম্পর্কটি তাই সিমবায়োটিক; দু’পক্ষই লাভবান তাতে। যতদিন এই সম্পর্ক ভাঙা না যাবে, পোশাক বদলে কোনো কাজ হবে না।

মোদ্দাকথা, পোশাকের ক্ষেত্রে যতই পরিবর্তন আনা হোক; রাষ্ট্র নিজে যতদিন জনগণের বন্ধু না হবে, ততদিন পুলিশও বন্ধু হবে না। হতে পারবে না। সবার আগে তাই রাষ্ট্রকে জনগণের হতে হবে। কিন্তু চরিত্র না বদলালে রাষ্ট্রও জনগণের হবে না। তাই রাষ্ট্রের চরিত্রকে বদলাতে হবে সর্বাগ্রে। শোষক পুঁজির মালিকানা ভেঙে রাষ্ট্রকে নিয়ে আসতে হবে জনগণের মালিকানায়। লিখতে হবে নতুন খতিয়ান। তখনই কেবল পুলিশ হবে জনগণের বন্ধু। মানুষ তখন পোশাকের দিকে নয়, তাকাবে পোশাকের ভেতরের মানুষটার দিকে।

মোশতাক আহমেদ: কলাম লেখক; অবসরপ্রাপ্ত পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার, জাতিসংঘ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করছে কিছু মানুষ: তারেক রহমান
  • চেয়ারম্যান গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে জনগণের তোপের মুখে ডিবি পুলিশ
  • গণ-অভ্যুত্থানে হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • রমজানে কম লাভ করে জনগণের পাশে দাঁড়াতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
  • পোশাক বদলালেই কি পুলিশ বদলাবে?
  • নির্বাচন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ নেই: অনিন্দ্য ইসলাম
  • পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে কানাডার সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
  • বিশৃঙ্খলা ঘটানোর চেষ্টা করলেও সফল হবে না আ.লীগ: আসিফ মাহমুদ