আওয়ামী লীগের বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট না করলে যমুনা ঘেরাও: গণ অধিকার পরিষদ
Published: 5th, February 2025 GMT
আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গণহত্যার বিচার এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট না করলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ। তা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা ব্যর্থ দাবি করে তাঁদের কাছ থেকে দলটি কোনো ধরনের রাষ্ট্র সংস্কার প্রত্যাশা করে না বলেও জানিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর পল্টনে গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে দলটি এ কথাগুলো বলে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যা, একদলীয় ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থাসহ গত ১৬ বছরের অপরাধের বিচার ও রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন গণ অধিকারের নেতারা।
সমাবেশে দলটির সাধারণ সম্পাদক মো.
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা ব্যর্থ উল্লেখ করে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সরকারের অযোগ্য উপদেষ্টা পরিষদের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভব নয়। রাষ্ট্র সংস্কার করতে বিপ্লবী উপদেষ্টা দরকার। কিন্তু এই উপদেষ্টাদের অধিকাংশই সুশীল। তাই তাঁদের কাছে রাষ্ট্র সংস্কার প্রত্যাশা করি না।’
উপদেষ্টাদের আর্থিক হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়ে রাশেদ খাঁন বলেন, ‘তাঁরা আগে নিজেদের জবাবদিহি নিশ্চিত করুন।’
সরকারের দপ্তরগুলোতে ছাত্র প্রতিনিধি দেওয়ার সমালোচনা করে রাশেদ বলেন, কমিটিতে ছাত্রদের কাজ কী? সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁদের খবরদারি খারাপ বার্তা দিচ্ছে।
ছাত্রদের নতুন দল গঠনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে গণ অধিকারের এই নেতা বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা এককভাবে দখল করে সরকারের সহযোগিতায় কিংস পার্টি জনগণ মানবে না।...আওয়ামী লীগ যে পাপ করেছে, তাতে কোনো ক্ষমা পেতে পারে না। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গণহত্যার বিচার এবং আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট না করলে যমুনা ঘেরাও করা হবে।
গণ অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ সমাবেশ। রাজধানীর পল্টনে গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণহত য র ব চ র উপদ ষ ট র অবস থ সরক র র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
ভাসানী বললেন ‘লা-কুম দ্বীনুকুম অলইয়াদ্বীন’
একাত্তরের মার্চ মানেই অগ্নিঝরা সময় আর বাংলাদেশ স্বপ্নের আবাহন। এ মাসেই মুক্তির সংগ্রাম জোরালো হতে থাকে। সেই সঙ্গে আসন্ন সহিংসতার ধ্বনিও শোনা যাচ্ছিল। একাত্তরের ৭ মার্চ জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দেন। সেখানে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানানো ছাড়াও ছিল পূর্ব বাংলার মানুষের মনের আকাঙ্ক্ষা। ৮ মার্চ থেকে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়। ব্রিটেনপ্রবাসী প্রায় ১০ হাজার বাঙালি এদিন লন্ডনে পাকিস্তান হাইকমিশনের সামনে স্বাধীন বাংলার দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
সরকারি এক প্রেস নোটে সেদিন দাবি করা হয়, আন্দোলনে ১৭২ জন নিহত হয়েছেন; আহত ৩৫৮ জন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ আরেকটি বিবৃতিতে সামরিক কর্তৃপক্ষের ওই প্রেস নোটের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সেখানে হতাহতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ক্ষেত্রেই গুলিবর্ষণ করা হয়েছে’ বলে কথিত বক্তব্য সত্যের অপলাপ। নিজেদের অধিকারের সপক্ষে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভরত নিরস্ত্র বেসামরিক অধিবাসীদের ওপরই নিশ্চিতভাবে গুলি চালানো হয়েছে। পুলিশ ও ইপিআর গুলিবর্ষণ করেছে বলে যে প্রচারণা করা হয়েছে, তা বাঙালির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে।’
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে লে. জেনারেল টিক্কা খানকে শপথ পাঠ করাতে অস্বীকৃতি জানান পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বি এ সিদ্দিকী। তিনি অসুস্থতার অজুহাত দিলেও এ অস্বীকৃতি প্রকারান্তরে চলমান অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি তাঁর সমর্থন বলে মনে করা হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল পল্টনে মওলানা ভাসানীর বিশাল জনসমাবেশ।
পল্টনের জনসভায় ভাষণ দিতে মওলানা ভাসানী ৯ মার্চ সকালে সন্তোষ থেকে ঢাকা এসে পৌঁছান। তিনি যখন মঞ্চে উপস্থিত হন, তখন জনসভা প্রকম্পিত হচ্ছিল– ‘বাংলায় একই কথা; স্বাধীনতা, স্বাধীনতা।’ সমাবেশে তিনি ব্রিটিশ বাহিনীর জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যার নজির টেনে বলেন, “একদিন ভারতের বুকে নির্বিচার গণহত্যা করিয়া জালিয়ানওয়ালাবাগের মর্মান্তিক ইতিহাস রচনা করিয়া অত্যাচার অবিচারের বন্যা বহাইয়া দিয়াও প্রবল পরাক্রমশালী ব্রিটিশ সরকার শেষ রক্ষায় সক্ষম হয় নাই। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকেও তাই বলি, অনেক হইয়াছে, আর নয়। তিক্ততা বাড়াইয়া আর লাভ নাই। ‘লা-কুম দ্বীনুকুম অলইয়াদ্বীন’-এর নিয়মে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করিয়া লও।”
পাকিস্তানের সামরিক শাসকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ভাসানী বলেন, ‘ইয়াহিয়া খান, তোমার যদি পশ্চিম পাকিস্তানের পাঁচ কোটি মানুষের জন্য দরদ থাকে, তাহলে তুমি পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করো। এতে করে দুই পাকিস্তানে ভালোবাসা থাকবে, বন্ধুত্ব থাকবে। কিন্তু এক পাকিস্তান আর থাকবে না, থাকবে না, থাকবে না!’
মওলানা ভাসানীর ওই সমাবেশ সম্পর্কে জাহানারা ইমাম লিখেছেন, “ছেলে-ছোকরারা স্বাধীনতা-স্বাধিকারের তর্কে একমতে আসতে পারছে না, ওদিকে আশি বছরের বৃদ্ধ ভাসানী গতকালকার পল্টন ময়দান মিটিংয়ে স্বাধীনতার দাবি ঘোষণা করে বসে আছেন। গতকাল বিকেল তিনটেয় পল্টন ময়দানে ‘স্বাধীন বাংলা আন্দোলন সমন্বয় কমিটি’র উদ্যোগে যে জনসভা হয়, তাতে সভাপতি ছিলেন মওলানা ভাসানী। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার যদি ২৫শে মার্চের মধ্যে আপসে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা না দেয়, তা হলে ’৫২ সালের মতো মুজিবের সঙ্গে একযোগে বাংলার মুক্তিসংগ্রাম শুরু করব।’
তথ্যসূত্র: ১৯৭১ সালের ৯ ও ১০ মার্চের দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ, দৈনিক পাকিস্তান, আজাদ, রয়টার্স, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আর্কাইভ এবং স্বাধীনতাযুদ্ধ, দলিলপত্র, দ্বিতীয় খণ্ড