ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিভাগের আনোয়ারুল আজিম চৌধুরী লেকচার গ্যালারিতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

বিভাগীয় চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. শাকিলা নার্গিস খানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড.

মামুন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. এনামুল হক।

বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আরাফাত ইসলাম ও ফজিলাতুন্নেছা অনামিকার সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড. মো. আনিছুর রহমান খান এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিভাগের অধ্যাপক ড. সানযুক্তা আহসান।

এ সময় উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বলেন, “বর্তমানে দেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ অবস্থায় সবাইকে পারস্পরিক ঐক্য ও হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। সব ধরনের অস্থিরতা ও আবেগ পরিহার করে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধে জাগ্রত হতে হবে। পরিবার, সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সদ্ভাব ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। জীবনের সব্ক্ষেত্রে সংযত আচরণ করতে হবে।”

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যকার পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্য তিনি সবাইকে আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল ও সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখায় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বোঝার উপর শাকের আঁটি

বাংলাদেশ যখন ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা লইয়া হিমশিম খাইতেছে, তখনই নূতন করিয়া আরও অনুপ্রবেশ আমাদের উদ্বেগকে বৃদ্ধি করিয়াছে। সোমবার সমকালে প্রকাশিত শীর্ষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য হইতে গত শনিবার পর্যন্ত নূতন করিয়া ১ লক্ষ ১৩ সহস্র রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করিয়াছে। শুধু উহাই নহে; বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন যৌথভাবে নবাগত রোহিঙ্গাদের আঙ্গুলের ছাপও গ্রহণ করিয়াছে। সরকার অবশ্য তাহাদের আইরিশের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তের অনুমতি এখনও দেয় নাই। নবাগত রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের ব্যবস্থা করিতে হাইকমিশন প্রেরিত পত্রেরও উত্তর দেয় নাই। উপরন্তু, মৌখিকভাবে সংস্থাটিকে জানাইয়া দিয়াছে, বিদ্যমান বাস্তবতায় লক্ষাধিক নূতন রোহিঙ্গার জন্য আবাসস্থলের ব্যবস্থা সুকঠিন। তবে ২০১৭ সালে যেই মানবিক কারণে বাংলাদেশ মিয়ানমার জান্তার ভয়ংকর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের প্রেক্ষাপটে আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের সীমান্ত অতিক্রম করিতে অনুমতি দিয়াছিল, সেই মানবিকতা এইবারও বৃহৎ দোহাই হইয়া উঠিতে পারে। ফলস্বরূপ, রোহিঙ্গাদের লইয়া বাংলাদেশ নূতন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়িতে যাইতেছে। 

বিপুলসংখ্যক নূতন রোহিঙ্গা এমন সময়ে অনুপ্রবেশ করিল যখন ইতোপূর্বে আগত রোহিঙ্গাদের স্বীয় দেশে প্রত্যাবাসন লইয়া বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহিত দেনদরবার চালাইতেছে। এই আশঙ্কা অমূলক নহে, নূতন আবাসস্থল নির্মাণের মাধ্যমে কার্যত প্রত্যাবাসনের পরিবর্তে আরও অধিক সংখ্যক রোহিঙ্গাকে এই দেশে স্বাগত জানানো হইবে। কারণ ইহাতে রাখাইনে অবস্থানকারী অপরাপর রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসিতে উৎসাহ পাইবে। পরিণামে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও জটিল হইয়া পড়িবে। প্রসংগত, রাখাইন রাজ্যে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় প্রত্যাশী আরাকান আর্মির অব্যাহত আক্রমণের মুখে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় জান্তা সরকার পশ্চাদপসরণ করিলেও রোহিঙ্গারা শান্তিতে নাই। বরং সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর প্রাধান্য বিস্তারে অঙ্গীকারবদ্ধ আরাকান আর্মির আচরণে অতিষ্ঠ হইয়া নূতনভাবে বাংলাদেশে পালাইয়া আসিতেছে। এখন প্রায় প্রতিদিন শুধু নাফ নদ পারই নহে, পাহাড়ি পথেও রোহিঙ্গারা প্রবেশ করিতেছে। 

আমরা জানি, যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর হইতে রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ সংকট দেখা দিতেছে। যৌথ সাড়াদান কর্মসূচির আওতায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কক্সবাজারে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য যেই আর্থিক সহায়তা দেয়, তাহা প্রতি বৎসর প্রতিশ্রুতির তুলনায় ক্রমহ্রাসমান। এই বাস্তবতায় নূতনভাবে রোহিঙ্গা প্রবেশ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করিতেছে।

স্মরণযোগ্য, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের সামর্থ্য নাই। বোঝার উপর হইতে শাকের আঁটি অপসারণের বিকল্প নাই। আশ্রিত জনগোষ্ঠীর কারণে বিশেষত পরিবেশ-প্রতিবেশগতভাবে স্পর্শকাতর কক্সবাজার ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের নাজুকতা কী মাত্রায় বৃদ্ধি পাইয়াছে, তাহাও এখন অজানা নহে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহিত রোহিঙ্গাদের বিবিধ প্রকার সংঘাতমূলক ঘটনাও ঘটিতেছে। এই কথাও সর্বজনবিদিত, আশ্রয় শিবিরগুলি মিয়ানমার হইতে পাচারকৃত মাদক কারবারিদের আখড়ায় পরিণত হইয়াছে। কক্সবাজারের শিবিরগুলিতে মিয়ানমারভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠনের সমাজবিরোধী তৎপরতার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিতেছে। পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকার নিয়ন্ত্রণ সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হস্তে যাইবার পর হইতে সীমান্ত নিরাপত্তাও ভঙ্গুর হইয়া পড়িয়াছে। এই অবস্থায় একটা দেশের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়া স্বাভাবিক। বাস্তবে সেই আশঙ্কাই ক্রমশ দৃঢ় হইতেছে।
আমরা মনে করি, সময় সমাগত বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গা প্রশ্নে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করিবার। যত চাপই থাকুক; মানবিকতা প্রদর্শন করিতে গিয়া কোনোক্রমেই রাষ্ট্রের সংহতি ও নিরাপত্তাকে লঘু করিয়া দেখা যাইবে না। বরং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক মহলের উপর চাপ বৃদ্ধির কৌশল অন্বেষণ করিতে হইবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ