আওয়ামী লীগ যে স্টাইলে লুটপাট ও দখলদারত্বের রাজনীতি করেছে, সেই একই স্টাইলে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতারা রাজনীতি করছেন। বুধবার দুপুরে কুষ্টিয়া শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন দলটির পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। সেখান থেকে বর্তমান মেয়াদ শেষ হওয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি দ্রুত বাতিলের দাবি করা হয়েছে।

গত ৪ নভেম্বর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা কমিটি বাতিলের দাবিতে করে আসছেন। সংবাদ সম্মেলনে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামিমুল হাসান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যে স্টাইলে রাজনীতি করেছে, হানিফ-আতা (আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের এমপি মাহবুব উল আলম হানিফ এবং তাঁর চাচাতো ভাই পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান) সেই স্টাইলে তাঁদেরই যোগসাজশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করছেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ ও সদস্যসচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার।’

শামিমুল হাসান আরও বলেন, ‘৫ আগস্টের পর রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কুষ্টিয়ায় প্রতিষ্ঠিত লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়ে হানিফের স্ত্রীকে বাদ দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন হয়েছে। সেখানে কুতুব উদ্দিন ও জাকির হোসেন মালিকানা নিয়েছেন। তদন্ত করে দেখেছি, একটা মিথ্যা কথাও বলছি না।’

সংবাদ সম্মেলনে পদবঞ্চিত নেতারা জানান, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির বিতর্কিত আহ্বায়ক কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর যে কয়েকটি উপজেলার আহ্বায়ক কমিটি করেছে, সেই কমিটিগুলো জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির স্টাইলে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে অযোগ্য, দুর্বল ও আওয়ামী সরকারের সঙ্গে আঁতাতকারীদের নিয়ে কমিটি করেছে।

জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘চাঁদাবাজি দখলদারত্বের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে এই আহ্বায়ক কমিটি। সন্ত্রাস করছে, মাদকের টাকা খাচ্ছে। আওয়ামী লীগের এজেন্টদের স্থান দেওয়া হচ্ছে। গৌতম চাকীর (আওয়ামী লীগ রাজনীতি করেন) কাছ থেকে প্রতি মাসে জেলা বিএনপির নামে দুই লাখ করে টাকা নেওয়া হচ্ছে। কারা নিচ্ছে, কে গ্রহণ করছে, সাংবাদিক ভাইয়েরা আছেন, তাঁরা খোঁজ নেন। আজ কারা মসজিদের জায়গা দখল করছে?’

জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজল মাজমাদার বলেন, ‘কুতুব-জাকিরের কথা প্রশাসন শোনে, আমাদের কথা শোনে না। কারণ তাঁরা ক্ষমতাবান। যত দিন জেলা কমিটি পরিবর্তন হবে না, তত দিন আন্দোলন চলবে।’

দাবি আদায়ের লড়াই এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে শিগগিরই নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পদবঞ্চিত নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বশিরুল আলম চাঁদ, জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মেজবাউর রহমানসহ জেলা ও বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ৩০ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় গত ১২ সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাতিল করা হয়। ২০১৯ সালের ৮ মে সৈয়দ মেহেদী আহমেদকে সভাপতি ও সোহরাব উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রেখে জেলা বিএনপির ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এর আগে ২০১২ সালে গঠিত কমিটিতে এই দুজন একই পদে ছিলেন।

২৫ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকারকে সদস্যসচিব করে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এরপর ৪ নভেম্বর ৩১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, কমিটিতে যাঁদের রাখা হয়েছে, তাঁদের অনেকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন ও অত্যাচারের সময় মাঠে ছিলেন না।
১৭ নভেম্বর কমিটি বাতিলের দাবিতে শহরের এনএস রোডে দলটির একাংশের নেতা-কর্মীরা মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। একই দাবিতে ৬ নভেম্বর বিক্ষোভ সমাবেশ করে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন নেতা-কর্মীরা। ৮ জানুয়ারি দাবি আদায়ে তিন দিনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও অনশন কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র স ব ক পদবঞ চ ত ন ত সরক র র র জন ত কর ম র উপজ ল আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

নাটোরে বিএনপির নতুন কমিটি: ‘হৃদয়ে রক্তক্ষরণ’ নিয়ে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের প্রতিবাদ

নাটোর জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে গত রোববার। এর পর থেকে ওই কমিটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল ও স্লোগান দিচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীদের একাংশ। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের দত্তপাড়া বাজার-সংলগ্ন মহাসড়কে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতা-কর্মীরা ‘ওরা কারা’ লেখা ব্যানার হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। আগের দুই দিনও তাঁরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন।

গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা মিছিল শেষে শহরের চালপট্টি মোড়ে দাঁড়িয়ে স্লোগান দেন। তাঁরা ‘ভুয়া কমিটি...’, ‘ভুয়া কাশেম...’, ‘ভুয়া ডিউক...’ প্রভৃতি স্লোগান দিচ্ছিলেন। এ কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন জেলা বিএনপির বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ফরহাদ আলী দেওয়ান (শাহীন)। ওই প্রতিবাদের ভিডিও তিনি তাঁর ফেসবুক পেজেও পোস্ট করেছেন।

নতুন কমিটির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ এবং সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান। ছয় যুগ্ম আহবায়ক হলেন, আবদুল আজিজ, জিল্লুর রহমান চৌধুরী (বাবুল) মিজানুর রহমান (ডিউক), মোস্তাফিজুর রহমান (শাহীন), সাইফুল ইসলাম (আফতাব) ও দাউদার মাহমুদ। কমিটির সদস্যরা হলেন, শহিদুল ইসলাম (রাজু), সাবিনা ইয়াসমিন, আবুল কাশেম, তারিকুল (টিটু), আবু হেনা মোস্তফা, সুফিয়া হক ও রঞ্জিত কুমার সরকার।

এ সম্পর্কে ফরহাদ আলী দেওয়ান বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে নাটোর জেলা বিএনপির যে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, তা অসংগতিপূর্ণ। এখানে নাটোরের ত্যাগী ও সাহসী নেতাদের স্থান হয়নি। বেশ কিছু বিতর্কিত ব্যক্তিকে পদ দেওয়া হয়েছে। যার ফলে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা ব্যথিত, আমরা মর্মাহত। আমরা এ কমিটির সংশোধন চাই। নইলে নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ অব্যাহত রাখব। প্রয়োজনে গণপদত্যাগ করব। তবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে। আশা করি, তিনি আমাদের অভিযোগ তদন্ত করে ত্যাগী নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি সংশোধন করবেন।’

আগের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক (ভারপ্রাপ্ত) শহিদুল ইসলাম (বাচ্চু) বলেন, ‘আজীবন দলের জন্য কাজ করেছি। দলের জন্য তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছি, মাথায় ১৮টি সেলাইয়ের এখনো ঘা শুকায়নি, এখনো ডান হাতে খেতে পারি না। স্বাক্ষর করতে পারি না, লিখতে পারি না। এই কমিটি দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান তারেক রহমানের করা হলে আমার কোনো বক্তব্য নেই। আর অন্য কোনো কায়েমি স্বার্থবাদী মহলের মাধ্যমে হলে হতাশার শেষ নেই।’ গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উপযুক্ত নেতাদের নিয়ে তিনি পুনরায় কমিটি গঠনের দাবি জানান।

নাটোর জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে গত রোববার।নতুন কমিটির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ এবং সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান। ছয় যুগ্ম আহবায়ক হলেন, আবদুল আজিজ, জিল্লুর রহমান চৌধুরী (বাবুল) মিজানুর রহমান (ডিউক), মোস্তাফিজুর রহমান (শাহীন), সাইফুল ইসলাম (আফতাব) ও দাউদার মাহমুদ।

সদ্য বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শহিদুল্লাহ সোহেল বলেন, ‘১৭ বছরে যাঁরা বিএনপির মিটিং–মিছিলে আসেননি এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সঙ্গে ব্যবসা–বাণিজ্য করেছেন, তাঁদের অনেককে নব্য ঘোষিত কমিটিতে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন রুহুল কুদ্দুস তালুকদারকে (দুলু) নির্বাচনে হারানোর জন্য আওয়ামী লীগকে অর্থ প্রদানকারী আবুল কাসেম, দল থেকে বহিষ্কৃত মিজানুর রহমান (ডিউক) ও অপরিচিত শহিদুল ইসলাম (রাজু)। তাঁদের বাদ দিয়ে ত্যাগী নেতাদের যুক্ত করে কমিটি সংশোধন করতে হবে। আমরা দুলু ভাইয়ের নেতৃত্বে নাটোর জেলা বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছি, থাকব।’

আহ্বায়ক কমিটিতে পদ পাওয়া কয়েকজন নেতাও বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আছে। তাঁদের মধ্যে আছেন যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ও সাইফুল ইসলাম। তাঁরাও কমিটি সংশোধনের দাবির সাথে একাত্মতা জানিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, নতুন কমিটিতে কিছু ত্যাগী নেতা থাকলেও অনেককে পদ দেওয়া হয়েছে, যাঁদের বিএনপিতে কোনো অবদান নেই।

যোগ্য বলেই শীর্ষ নেতা আমাদের পদ দিয়েছেন। ২০১৩ সালে দিনাজপুরে দুলু সাহেবের নির্দেশে আমার ওপর হামলা হয়েছিল। চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আমাকে সিঙ্গাপুর যেতে হয়েছিল।আবুল কাশেম, নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য

নতুন কমিটির ২ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান চৌধুরী (বাবুল) পদবঞ্চিত নেতাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি। তবে ফেসবুকে ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘আমরা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজমুক্ত নাটোর গড়ার জন্য কাজ করব। দলের সব পর্যায়ের নেতা–কর্মীদের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা করব।’

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির সদস্য আবুল কাশেম বলেন, ‘যোগ্য বলেই শীর্ষ নেতা আমাদের পদ দিয়েছেন। ২০১৩ সালে দিনাজপুরে দুলু সাহেবের নির্দেশে আমার ওপর হামলা হয়েছিল। চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আমাকে সিঙ্গাপুর যেতে হয়েছিল। বিষয়টি তারেক রহমানসহ সবাই জানতেন।’ আবুল কাশেম আরও বলেন, ‘আমি “আমরা বিএনপি পরিবার”–এর উপদেষ্টা। ২০১৩ সাল থেকেই পুরো গাজীপুরের দায়িত্বে আছি। এরপরও বলব, যাঁরা আপনাদের কাছে আমার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন, তাঁদের বলবেন, তারেক রহমান সাহেবকে বললেই জানা যাবে কাশেম কে? তাঁকে কেন নাটোরের কমিটিতে রাখা হলো?’

নাটোরে বিএনপির রাজনীতিতে প্রভাবশালী নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার (দুলু), যিনি দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। নতুন কমিটিতে তাঁর নিয়ন্ত্রণ কমেছে বলে মনে করছেন দলের নেতা-কর্মীরা। এ সম্পর্কে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নতুন কমিটি সম্পর্কে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কারণ, আমার দলের সম্মানিত নেতারা কমিটি ঘোষণা করেছেন। বরাবরের মতো তাঁদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা রয়েছে। শুধু এটুকু বলা যায়, যাঁরা পদ পেয়েছেন, তাঁরাও যেমন যোগ্য, আবার যাঁরা পদবঞ্চিত হয়েছেন, তাঁদের অনেকেরই দলে বড় অবদান রয়েছে। আগামী দিনে হয়তো তাঁদের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাটোরে বিএনপির নতুন কমিটি: ‘হৃদয়ে রক্তক্ষরণ’ নিয়ে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের প্রতিবাদ