রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মৃত্যুর ১০ বছর পর হত্যার অভিযোগ এনে আদালতে মামলা করা হয়েছে। মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আদালত মামলা গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন।

আহ বুধবার দুপুরে নাসির উদ্দিন পিন্টুর ভাই নাসিম আহমেদ রিন্টু (৫০) বাদী হয়ে রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ মামলা করেন। তাঁর পক্ষে আদালতে এজাহার দাখিল করেন আইনজীবী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহসম্পাদক শফিকুল হক মিলন। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আবদুল মালেক রানা।

আদালতে রিন্টুর সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহীর সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইটসহ দলীয় নেতাকর্মীরা ছিলেন।

মামলার আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনা, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ঢাকার সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আসাদুজ্জামান কামাল, আনিসুল হক, হাজী মো.

সেলিম, সোলায়মান সেলিম, ইরফান সেলিম, মনির হোসেন, এএস শরিফ উদ্দিন ওরফে ব্ল্যাক শরিফ। এছাড়াও তৎকালীন আইজিপি, তৎকালীন আইজি প্রিজন, তৎকালীন ঢাকা ও রাজশাহীর ডিআইজি প্রিজন, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের তৎকালীন সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম, জেলার শাহাদত হোসেন, কারা চিকিৎসক আবু সায়েম, কয়েদি রাব্বানী ও বিডিআর বিদ্রোহ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবু কাহার আকন্দকে।

ছাত্রদলের সভাপতি থাকা অবস্থায় ২০০১ সালের নির্বাচনে ঢাকার লালবাগ-কামরাঙ্গীরচর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নাসির উদ্দিন পিন্টু। পরে তিনি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হন। পিলখানা হত্যা মামলায় তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। এছাড়া একটি অস্ত্র লুটের দায়ে তাঁর ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছিলেন। তবে আদালতে সাজা হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। 

নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল পিন্টুকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। কয়েক দিন পরে তিনি অসুস্থ বোধ করলে ২৬ এপ্রিল তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর তাকে আবার কারাগারে নেওয়া হয়। পরে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে চিঠি দিয়ে কারাগারে চিকিৎসক ডাকা হয়। চিঠি পেয়ে একজন চিকিৎসক গেলেও তাকে কারাগারে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ২০১৫ সালের ৩ মে দুপুরে কারাগার থেকে পিন্টুকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ কারণে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন-২০১৩ এর ৭ (১) ধারামতে আদালতে এ মামলার আবেদন করা হয়।

নাসির উদ্দিন পিন্টুর ভাই নাসিম আহমেদ রিন্টু বলেন, ‘আমার ভাইয়ের জনপ্রিয়তা ও বিএনপির প্রতি তার অবদানকে ভয় পাচ্ছিল হাসিনা সরকার। তাই তাকে পরিকল্পিতভাবে পিলখানা মামলায় ফাঁসিয়ে সাজা দেওয়া হয়। এরপর কারাগারে নিয়ে হত্যা করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর নির্যাতনের কারণে আমার ভাই প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তার সুচিকিৎসা নিশ্চিতে পরিবারের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছিল। হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ আই হসপিটালে নিজ খরচে তাঁর নিয়মিত চিকিৎসা চলবে। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে তাকে ঢাকায় না রেখে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ ও পরে রাজশাহী কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর তাঁর চিকিৎসা না করে সুপরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়।’

তার আইনজীবী আবদুল মালেক রানা জানান, ‘আদালত মামলা গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। আগামী ১৩ মার্চ মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখ। এই সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ চ ক ৎসক ব এনপ র তৎক ল ন

এছাড়াও পড়ুন:

রাষ্ট্র কাঠামোর নানা পরতে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদের ছায়া

গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটলেও রাষ্ট্র কাঠামোর নানা পরতে ফ্যাসিবাদের ছায়া বিদ্যমান বলে মনে করেন বিশিষ্টজন। তারা বলেছেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার যেসব নিবর্তনমূলক আইনের মাধ্যমে জনগণের ওপর শোষণ-পীড়নের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করেছিল, সেসব আইন এখনও বলবৎ রয়েছে।

শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো ১১৯ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা ছিল মানুষের স্বাধীনতা খর্বকারী ও পীড়নমূলক সব আইন বিলোপের মধ্য দিয়ে মর্যাদা সংহত করা। কিন্তু ঘটছে উল্টো। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সাইবার নিরাপত্তা আইনের নামে প্রতিস্থাপিত করে ফ্যাসিবাদী জমানার পীড়ন ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। যার মধ্য দিয়ে সামাজিক ফ্যাসিবাদের বিকাশের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। বিদ্যমান এসব আইনের সুযোগ নিয়ে মুক্তিকামী নাগরিকদের ওপর আইনি পীড়ন এবং গোষ্ঠীবদ্ধ উষ্মার সুযোগ পাচ্ছে বিভিন্ন কায়েমি গোষ্ঠী ও ব্যক্তি।

এতে বলা হয়, সম্প্রতি লেখক-সংগঠক রাখাল রাহা ও নাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’-এর অভিযোগে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। কবি সোহেল হাসান গালিব একই আইনে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খাটছেন। গোষ্ঠীবদ্ধ উষ্মা উৎপাদনের মধ্য দিয়ে তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলা হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক সমাজে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। রাখাল রাহা ও নাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি নিবর্তনমূলক আইনকে সম্পূর্ণ বিলোপের দাবি জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।

বিশিষ্ট নাগরিকরা মনে করেন, ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতার সংস্কৃতিকে জলাঞ্জলি দিয়ে কোনোভাবেই দেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কায়েম হতে পারে না। আর রাষ্ট্রও এমন কোনো আইন জারি রাখতে পারে না, যা ভিন্নমত দমনে ব্যবহৃত হয়, অসহিষ্ণুতাকে উৎসাহিত করে।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন আনু মুহাম্মদ, সংগীতশিল্পী কফিল আহমেদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত কাইয়ুম, আইনজীবী সারা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুমন সাজ্জাদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ আল মামুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর রাজী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত প্রমুখ।


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আদালত প্রাঙ্গণে ইনু বললেন, আমি ঠিক আছি, চিন্তা করবেন না
  • চকবাজার থানার মামলায় আসামি শেখ হাসিনাসহ ১৩ জন
  • ইনু বললেন, আমি ঠিক আছি, আপনারা চিন্তা করবেন না
  • গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিশেষ নিরাপত্তা প্ররক্ষা নির্দেশিকা বাতিল
  • অন্তর্বর্তী পরিষদ পুনর্গঠন প্রশ্নে রুল, দুজন সদস্যের কার্যক্রম পরিচালনা স্থগিত
  • কুষ্টিয়ার আদালতে হাস্যোজ্জ্বল ইনু, আইনজীবীদের বললেন ‘কোনো চিন্তা কইরেন না’
  • মাগুরার সেই শিশুটির জন্য আইনি সহায়তায় বিএনপির আইনজীবী প্যানেল
  • বিচারালয়ের দুর্নীতি তুলে ধরতে সাংবাদিকদের আহ্বান অ্যাটর্নি জেনারেলের
  • বিএনপিপন্থি আইনজীবীর সুদিন
  • রাষ্ট্র কাঠামোর নানা পরতে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদের ছায়া