গত জানুয়ারিতে যখন লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়ে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচারক অ্যালেক্স জোন্স তাঁর এক্স হ্যান্ডলে (আগেকার টুইটার) লিখেছিলেন, এই আগুন আসলে ‘একটি বড় বিশ্বায়নবাদী চক্রান্তের অংশ, যার লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে দুর্বল করা এবং শিল্পকারখানা বন্ধ করে দেওয়া।’

জোন্সের দাবিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন হলেও দাবানলের সঙ্গে বিশ্বায়নের কিছু যোগ সত্যিই আছে। গত বছর ছিল পৃথিবীর উষ্ণতম বছর, যা রেকর্ড সংরক্ষণ শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বেশি গরম এবং এটি অন্তত ১ লাখ ২৫ হাজার বছরে সর্বোচ্চ উষ্ণতম বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এটি ২০২৩ সালের আগের রেকর্ডও ছাড়িয়ে গেছে।

প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা প্যারিস জলবায়ু চুক্তির নির্ধারিত সীমা প্রাক্‌-শিল্প যুগের চেয়ে ১ দশমিক ৫ সেলসিয়াস বেশি হয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা একমত, এর জন্য প্রধানত মানুষের সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী।

বিশ্বায়ন মানে হলো, এক দেশের ওপর আরেক দেশের নির্ভরশীলতা। যেমন ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য হলে সেটা আঞ্চলিক নির্ভরশীলতা; কিন্তু ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের বাণিজ্য হলে সেটাকে বিশ্বায়ন বলে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর শুল্ক বসিয়ে এই নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছেন। তিনি মনে করেন, বিশ্বায়নই যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শিল্প ও কর্মসংস্থান হারানোর জন্য দায়ী।

শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ও অভিবাসন অনেক বেড়েছিল। উন্নত প্রযুক্তি ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে দেশগুলোর মধ্যে অর্থ, পণ্য ও মানুষের চলাচল সহজ হয়। কিন্তু এখন জনতুষ্টিবাদী নেতাদের প্রভাব বাড়ায় অনেক দেশ শুল্ক ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ কঠোর করছে। এটি অর্থ, পণ্য ও মানুষের চলাচল কমিয়ে দিতে পারে।

বিশ্ববাণিজ্যের কারণে চাকরির বাজার কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা নিয়ে অর্থনীতিবিদেরা এখনো তর্ক করে যাচ্ছেন। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, বিদেশি প্রতিযোগিতার কারণে লাখ লাখ লোক চাকরি হারিয়েছেন। তবে চাকরি হারানোর এটিই একমাত্র কারণ নয়। অনেক অর্থনীতিবিদের মতে, চাকরি খোয়ানোর পেছনে এর চেয়ে বড় কারণ হিসেবে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি বা অটোমেশন কাজ করেছে।

মেশিনের ব্যবহার উৎপাদন বাড়ায়, কিন্তু অনেক মানুষ চাকরি হারায়। অনেক মানুষের জন্য তা অর্থনৈতিক সংকটও তৈরি করে। তবে সাধারণ মানুষকে বোঝানো সহজ করতে জনতুষ্টিবাদী নেতারা মেশিনের বদলে বিদেশিদের ঘাড়ে দোষ চাপান। তাঁরা অভিবাসীদেরও দোষ দেন, যদিও অভিবাসীরা দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতির জন্য উপকারী হতে পারেন। কিন্তু স্বল্প মেয়াদে পরিবর্তনের কারণ হিসেবে তথা স্থানীয় জনগণের চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে অভিবাসীদের দায়ী করা সহজ হয়।

আসলে মানুষ যখন প্রথম আফ্রিকা ছেড়ে অন্য জায়গায় বসবাস শুরু করে, তখনই বিশ্বায়ন শুরু হয়। আজকের যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশই এই অভিবাসনের ফল। কিন্তু যেসব মানুষ আগে এসেছিল, তারা নতুন আসা অভিবাসীদের বিষয়ে সব সময় অভিযোগ করত—তারা চাকরি নিয়ে নিচ্ছে বা তাদের সংস্কৃতি আলাদা। এখনো ঠিক একই ঘটনা ঘটে চলেছে।

যখন অভিবাসন বেড়ে যায় (অথবা সংবাদমাধ্যমে অভিবাসনের খবর অতিরঞ্জিত করে প্রচার করা হয়), তখন রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা যাওয়া স্বাভাবিক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রায় সব গণতান্ত্রিক দেশে জনতুষ্টিবাদী নেতারা সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে অভিবাসনকেই মূল ইস্যু বানিয়েছেন। ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনে এই ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ২০২৪ সালেও ইস্যুটি বড় ভূমিকা রেখেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) হয়তো সমাজে আরও বড় পরিবর্তন আনছে। কিন্তু এগুলো চোখে দেখা যায় না। তাই জনগণকে ভয় দেখানোর জন্য এগুলোর বদলে অভিবাসীদের দোষ দেওয়া সহজ।

অনেকেই মনে করেন, প্রায় সব গণতান্ত্রিক দেশে জনতুষ্টিবাদীদের উত্থানের কারণ হলো বিশ্বায়নের দ্রুত বিস্তার। আর জনপ্রিয় নেতারা দেশের সমস্যার জন্য বিদেশি বাণিজ্য ও অভিবাসনকে দায়ী করেন।

শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ও অভিবাসন অনেক বেড়েছিল। উন্নত প্রযুক্তি ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে দেশগুলোর মধ্যে অর্থ, পণ্য ও মানুষের চলাচল সহজ হয়। কিন্তু এখন জনতুষ্টিবাদী নেতাদের প্রভাব বাড়ায় অনেক দেশ শুল্ক ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ কঠোর করছে। এটি অর্থ, পণ্য ও মানুষের চলাচল কমিয়ে দিতে পারে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিশ্বায়ন কি পুরোপুরি থামিয়ে দেওয়া সম্ভব? ইতিহাস বলে, হ্যাঁ, এটা হতে পারে। উনিশ শতকে বাণিজ্য ও অভিবাসন দ্রুত বাড়ছিল, কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর হঠাৎ তা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯১৪ সালের আগের বাণিজ্যের মাত্রায় ফিরে যেতে প্রায় ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সময় লেগেছিল।

এখন কিছু আমেরিকান রাজনীতিবিদ চীনের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতার পক্ষে কথা বলছেন। তাহলে কি এটা আবার ঘটতে পারে? যদিও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য কিছুটা কমতে পারে, তবে বছরে অর্ধট্রিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যমানের এই সম্পর্ককে ত্যাগ করলে অনেক মূল্য দিতে হবে। তাই বিচ্ছিন্নতা সম্ভবত ঘটবে না। তবে ‘সম্ভব নয়’-এর মানে কিন্তু একেবারে ‘অসম্ভব’ নয়। উদাহরণস্বরূপ, তাইওয়ান নিয়ে যুদ্ধ হলে মার্কিন-চীন বাণিজ্য সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

বিশ্বায়নের ভবিষ্যৎ বোঝার জন্য শুধু অর্থনীতি দেখলেই হবে না। বিশ্বব্যাপী সামরিক, পরিবেশগত, সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত অনেক ধরনের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা আছে। যুদ্ধ ভয়াবহ ধ্বংস ডেকে আনে। তবে মনে রাখা দরকার, কোভিড-১৯ মহামারিতে আমেরিকায় যত মানুষ মারা গেছে, তা দেশটির সব যুদ্ধের মৃত্যুসংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।

একইভাবে বিজ্ঞানীরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে বরফ গলে যাবে এবং উপকূলীয় শহরগুলো পানিতে ডুবে যেতে পারে। কাছাকাছি সময়ের কথাই যদি ধরি, তাহলে বলা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হারিকেন ও দাবানলের সংখ্যা ও ভয়াবহতা বাড়ছে।

বিরক্তিকর ব্যাপার হলো, আমরা সেই বিশ্বায়ন থামানোর চেষ্টা করছি, যা কিনা উপকারী। অথচ যেগুলো কেবল ক্ষতি করছে, সেগুলোর সমাধান নিয়ে কিছুই করছি না।

দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই ট্রাম্প প্রশাসন প্রথম যে কাজগুলো করল, তার একটি হলো, তারা আমেরিকাকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে বের করে আনল।

তাহলে প্রশ্ন আসে, বিশ্বায়নের ভবিষ্যৎ কী?

মানুষ যত দিন চলাফেরা করতে পারবে এবং যোগাযোগ ও পরিবহনপ্রযুক্তি থাকবে, তত দিন দূরবর্তী দেশগুলোর পারস্পরিক নির্ভরশীলতা থাকবেই।

এখন আমরা তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের যুগে আছি। এটি সেবাভিত্তিক অর্থনীতিকে বদলে দিচ্ছে। একুশ শতকের শুরুতে ইন্টারনেট সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছায়। আজ বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ এমন মুঠোফোন ব্যবহার করছেন, যা ৫০ বছর আগের বিশাল কম্পিউটারের চেয়ে শক্তিশালী। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আরও এগোলে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের গতি, পরিমাণ ও সুযোগ আরও বেড়ে যাবে।

বিশ্বযুদ্ধের সময় বিশ্বায়ন থমকে গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বাণিজ্যে বাধা (প্রটেকশনিজম) এটিকে ধীর করেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সব পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি। কিন্তু যত দিন প্রযুক্তি থাকবে, বিশ্বায়নও চলবে। তবে সেটা সবার জন্য ভালো হবে কি না, সেটাই প্রশ্ন।

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

জোসেফ এস নাই জুনিয়র হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জনত ষ ট ব দ র জন য র জন ত ন র জন জলব য়

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলিম বিশ্বের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আহ্বান

ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে এবং নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজধানীতে র‍্যালি করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই কর্মসূচি।

র‍্যালি–পূর্ব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘অন্য যেকোনো সভার চেয়ে এই প্রতিবাদ মিছিল অস্বাভাবিক বড় হয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরাও এতে অংশ নিয়েছেন। আমি অনেক দূর থেকে এসেছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।’

ফিলিস্তিনে যা ঘটছে, তা শুধু তাদের ধ্বংস নয়, এটা বিশ্ব মুসলমানদের নিঃশেষ করার একটি ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন মির্জা আব্বাস। মুসলিম বিশ্ব কার্যকরভাবে ঐক্যবদ্ধ হলে ইহুদিরা এতটা সাহস দেখাতে পারত না বলে অভিমত দেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনে চলমান সহিংসতার ছবি দেখলে সহ্য করা যায় না বলেও উল্লেখ করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় যেমন জিয়াউর রহমান ভূমিকা রেখেছিলেন, তিনি বেঁচে থাকলে আজ ফিলিস্তিনের পক্ষে কার্যকর উদ্যোগ নিতেন এবং ইসরায়েল এমন সহিংসতা চালানোর সাহস পেত না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিশ্বের কয়েকটি পরাশক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে বহু আগেই ফিলিস্তিনে গণহত্যা শুরু হয়েছে। আজ ফিলিস্তিনের মানুষ নিজেদের দেশেই পরবাসী। অথচ মুসলিম বিশ্বের মোড়লদের কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই। তারা মুখ খুলছে না, অবস্থান নিচ্ছে না।’

গাজায় গণহত্যা বন্ধে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন চলছে, কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে এই নির্মমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং গণহত্যা বন্ধের জোর দাবি করছি।’

সালাহ উদ্দিন অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ ইসরায়েলকে পরোক্ষভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং বিরোধী দলের ওপর নিপীড়নের সঙ্গে ইসরায়েলের কাছ থেকে আড়িপাতার যন্ত্র কিনেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসে জিয়াউর রহমান ইয়াসির আরাফাতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই থেকেই বিএনপি ফিলিস্তিনের জনগণের সংগ্রামের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এসেছে। আজ গাজা যেন অবরুদ্ধ খাঁচা, যেখানে শিশু ও নারীদের ওপর বর্বরতা চালানো হচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার।’

ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটকারীদের বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, তারা ইসরায়েলের পক্ষে কাজ করছে বলেই মনে করব। তাদের প্রতিহত করতে হবে, তবে কোনোভাবেই মারপিট নয়—পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ফিলিস্তিনে যুগের পর যুগ ধরে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চলছে। নারী-পুরুষ কেউ রেহাই পাচ্ছে না। এটা সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধ। দেশের সাধারণ মানুষ দল–মতনির্বিশেষে ফিলিস্তিনের পক্ষে, কিন্তু বুদ্ধিজীবীদের থেকে তেমন কোনো অবস্থান দেখা যাচ্ছে না। জাতিসংঘও নিষ্ক্রিয়—একটি ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে গেছে।’

র‍্যালি–পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু। সঞ্চালনায় ছিলেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু। আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

বিএনপির এই কর্মসূচি বিকেল চারটায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা আড়াইটা থেকেই নয়াপল্টনে নেতা–কর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। হাতে প্ল্যাকার্ড, ফিলিস্তিনের পতাকা ও কালো ব্যানার নিয়ে নেতা–কর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করেন নয়াপল্টন এলাকা।

র‍্যালিটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে শান্তিনগর, মৌচাক, মগবাজার হয়ে বাংলামোটরে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে র‍্যালি শুরু হয়। সারা পথজুড়েই ছিল ব্যাপক জনসমাগম ও প্রতিবাদী স্লোগান। বিএনপির নেতা–কর্মীরা ‘ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করো, দুনিয়ার মুসলিম এক হও লড়াই করো’, ‘ফিলিস্তিনে হামলা কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

বিএনপির নেতারা জানান, এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে বার্তা দেওয়া হয়েছে—গণহত্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশি জনগণ ফিলিস্তিনের পাশে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ