শুক্রবার জামায়াতের জনসভা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন
Published: 5th, February 2025 GMT
আগামী শুক্রবার সকালে নগরীর ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে জামায়েতে ইসলামীর জনসভা নিয়ে ও কেন্দ্রীয় আমীরের আগমন উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন করেছে না
রায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জামায়েতে ইসলামী। বুধাবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এই সংবদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জনসভা বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ আবদুল জব্বার লিখিত বক্তব্যে বলেন, দীর্ঘ সময়কাল ধরে ধর্ম-বর্ণ, দলমত নির্বিশেষে আমরা সকলেই আওয়ামী লীগের জুলুমতন্ত্রদ্বারা নিষ্পেষিত হয়েছিলাম, যার কারণে এদেশের সিংহভাগ মানুষ তাদের মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। গুম-খুন, জেল-জুলুম, নির্যাতন, দুর্নীতি, অনিয়ম, কালোবাজারি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, মাদক বাণিজ্য ও শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মাধ্যমে দেশকে এক অনিশ্চিত পথে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। জনগনের শেষ ভরসাস্থল বিচারালয়কেও আওয়ামী লীগ তাদের দলীয়করণের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে জনগণের ন্যায্য বিচার পাওয়ার অধিকারকে কেড়ে নিয়েছিল। মোট কথা আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগিরা দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। এহেন চরম দূর্বিসহ পরিস্থিতিতে নির্যাতিত মজলুম জনগনের রোনাজারিতে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিল। আল্লাহ তা'য়ালা মজলুমের ফরিয়াদ কবুল করেছেন। তাঁর মেহেরবানীতে ছাত্র জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে ৫ আগস্টের দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের জনপদ হিসেবে অতীতে চিহ্নিত হয়েছিল। এ কারণে এ শহর সমৃদ্ধি-স্বস্তির নারায়ণগঞ্জের পরিবর্তে নৈরাজ্যের নারায়ণগঞ্জে পরিণত হয়েছিল। আমরা জুলাই-আগস্ট এর ছাত্র-জনতার অনন্য ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন বিজয়কে বুকে লালন করে সবাই মিলে ধ্বংস-ভাঙ্গা রাষ্ট্রকে মেরামতের মাধ্যমে নতুন নিরাপদময় একটি বাংলাদেশ এবং কাঙ্ক্ষিত ও প্রত্যাশিত বসবাস যোগ্য নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলতে চাই। যেখানে থাকবে না কোন বৈষম্য। কেউ আইনের বাইরে থাকবেনা। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলগণ হবেন জনগনের সেবক ও বন্ধু।
লিখিত বক্তব্যে জামায়েতের এই নেতা আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে অনেকগুলো সমস্যার পাশাপাশি অঢেল সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সমস্যাগুলোর সমাধান করে এবং সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগিয়ে আমরা নারায়ণগঞ্জকে একটি আদর্শ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির নারায়ণগঞ্জ হিসেবে রূপান্তরিত করতে পারব ইনশাআল্লাহ। যে নারায়ণগঞ্জে থাকবেনা সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মহড়া, কিশোরগ্যাঙ্গ, মাদক সেবন ও বিপণন, মাস্তানী ও দখলদারিত্ব। থাকবেনা বেকারত্বের আহাজারি। যে নারায়ণগঞ্জ হবে বসবাসযোগ্য, ভয়হীন, বৈষম্যমুক্ত একটি আদর্শ নগরী। সেই প্রত্যাশাকে নারায়ণগঞ্জবাসির উদ্দেশ্যে তুলে ধরতে আগামীকাল ৭ই ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, নারায়ণগঞ্জ মহানগরী ও জেলা শাখার উদ্যোগে ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে এক বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর, বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম নেতা, মজলুম জননেতা ডাঃ শফিকুর রহমান। তিনি নারায়ণগঞ্জবাসীর উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন। এছাড়াও জনসভায় কেন্দ্রীয় এবং জেলা ও মহানগরীর নেতৃবৃন্দ গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন। আশাকরি উক্ত জনসভা জন সমুদ্রে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ। এই জনসভা হবে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জুলমবাজ, দখলবাজদের বিরুদ্ধে হুসিয়ারী উচ্চারণ, এই জনসভা হবে নারায়ণগঞ্জসহ দেশবাসীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশের প্রতীক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রেীয় জামায়াতের নির্বাহী সদস্য ও ঢাকা দক্ষিন অঞ্চলের পরিচালক সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রেীয় কর্ম পরিষদের সদস্য মাওলানা মঈনুউদ্দিন আহমদ,কেন্দ্রেীয় মজলিসে সূরা সদস্য জেলা আমীর মমিনুল হক সরকার, মহানগরী নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল কাইয়ুম, মহানগরী সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার মানয়োর হোসাইন, কেন্দ্রেীয় মজলিসে সূরা সদস্য জাকির হোসাইন, কেন্দ্রেীয় মজলিসে সূরা সদস্য প্রফেসর ড.
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: র জন ত ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ ত হয় ছ আল ল হ হয় ছ ল ইসল ম সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
হাসিনার বন্ধ করে রাখা ত্বকী হত্যার বিচারসহ সব হত্যার বিচার দাবি
নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১২ বছর উপলক্ষে মোমশিখা প্রজ্বালন অনুষ্ঠানে নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি অভিযোগ করে বলেন, ‘শেখ হাসিনা ত্বকীসহ দেশে বহু হত্যার বিচার বন্ধ করে রেখেছিলেন। আমরা ত্বকী, সাগর-রুনি, তনুসহ সব হত্যার বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
শনিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মসূচিতে তিনি এ দাবি করেন। সংগঠনটির সভাপতি জিয়াউল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি রথীন চক্রবর্তী, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ভবানী শংকর, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক প্রমুখ বক্তব্য দেন।
রফিউর রাব্বি বলেন, শেখ হাসিনা ত্বকীসহ দেশে বহু হত্যার বিচার বন্ধ করে রেখেছিলেন। গুম, খুন, আয়নাঘর প্রতিষ্ঠা করে বিচারব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ভয়াবহ এক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রাষ্ট্রক্ষমতার মোহ তাঁকে উন্মাদ করে ফেলেছিল। হাজারো ছাত্র-তরুণদের হত্যা করেও তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি। তিনি পুরোপুরি নির্ভর করেছিলেন পুলিশ ও মাফিয়া গোষ্ঠীর ওপর। জনগণ ছিল উপেক্ষিত। নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারকে দিয়ে মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে রেখেছিলেন। সেই পরিবার আজকে তাঁর মতোই পালিয়ে গেছে।
রফিউর রাব্বি আরও বলেন, ‘ওসমান পরিবারের সম্পত্তি নারায়ণগঞ্জের মানুষের রক্তে গড়া সম্পত্তি। আমাদের দাবি, ওসমান পরিবারের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রের কোষাগারে জমা করতে হবে। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। দলের সর্বোচ্চ মহল থেকে মন্ত্রী, এমপি, আমলা—সব পর্যায়ে তারা লুটের টাকা বণ্টন করেছে।’
রফিউর রাব্বি বলেন, ‘তাদের নিজ দলীয় নেতারা বলেছেন, মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে ১০ কোটি টাকা দিয়ে “নাসিম ওসমান সেতু”, “শামসুজ্জোহা সড়ক” ও “নাগিনা জোহা সড়ক” নামকরণ করা হয়েছে। তখন আমি প্রশ্ন করেছিলাম, নারায়ণগঞ্জে এই মানুষগুলোর অবদান কী? কেন একসঙ্গে তিনটি রাস্তা ও সেতুর নাম একই পরিবারের নামে করা হলো। তারা তখন আমার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়েছিল। আমরা আজকে সরকারের কাছে এই খুনি পরিবারের নামে থাকা সেতু ও সড়কের নাম পরিবর্তন দাবি করছি।’
অনুষ্ঠানে সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা কমিটির সভাপতি হাফিজুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি প্রদীপ ঘোষ, বাসদের জেলার সদস্যসচিব আবু নাইম, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, সামাজিক সংগঠন সমমনার উপদেষ্টা দুলাল সাহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু আজও অভিযোগপত্র পেশ করা হয়নি। গত ৫ আগস্ট সরকার বদলের পরে অন্তর্বর্তী সরকার ছয়জন ঘাতককে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের মধ্যে কাজল হালদার নামের একজন জবানবন্দি দেন। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখে ধারাবাহিকভাবে মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।