দাবিদাওয়ার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের মাঠ ব্যবহারের পরামর্শ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
Published: 5th, February 2025 GMT
যৌক্তিক-অযৌক্তিক বিভিন্ন আন্দোলনের নামে রাস্তাঘাট বন্ধ না করে প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের নিজেদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমি ছাত্রদের বলব, তাঁরা যেন তাঁদের দাবিদাওয়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান এবং আন্দোলনের প্রয়োজনে তাঁদের নিজস্ব কলেজের মাঠ ব্যবহার করেন।’ রাস্তা বন্ধ করার কারণে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর গুলশানে পুলিশ প্লাজা কনকর্ডে নৌ পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় নদীপথের সার্বিক নিরাপত্তা বিধান, চাঁদাবাজি ও জলদস্যুতা প্রতিরোধ এবং ইলিশ ও মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ অভিযানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছে নৌ পুলিশ। জনবল ও জলযানের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তারা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানেও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অবৈধ কারেন্ট জাল প্রস্তুতকারী ফ্যাক্টরির মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বৈঠকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাপ্রাপ্ত আসামিদের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন, তাঁদের অনেকেই বাংলাদেশে নেই। তাঁদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারির অনুরোধ করা হয়েছে। আর যাঁরা দেশে আছেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, উত্তরা পশ্চিম থানাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের ওপর হামলা করে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়ীদের শনাক্ত করতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশের প্রশিক্ষণে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। পুলিশ যেন আরও বেশি মানবিক হয়, সে বিষয়টিকে প্রশিক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
মতবিনিময় সভায় নৌ পুলিশের সার্বিক কার্যক্রমের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র ও পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়। সাংবাদিকদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আলাপকালে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, নৌ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি কুসুম দেওয়ান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল কর্মী নিহত
নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া বালুর মাঠ এলাকায় ছুরিকাঘাতে অপূর্ব নামের এক ছাত্রদল কর্মী নিহত হয়েছেন। তিনি পঞ্চবটির বিসিক শিল্পনগরীর টি-শার্ট গার্মেন্টসের শ্রমিক ছিলেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে আয়োজিত ছাত্রদলের মিছিল শেষে রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছাত্রদল কর্মীরা সম্রাট নামের একজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা নিহত ও হামলাকারী দুইজনকেই ছাত্রদল কর্মী বললেও, স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, হামলাকারী বিএনপির কেউ না। তাদের কর্মসূচি বানচাল করতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মোহাম্মদ ইয়ামিন জানান, ধর্ষণের প্রতিবাদে ছাত্রদলের মিছিলের কর্মসূচি শেষ করে তারা চাষাড়াস্থ শহীদ মিনারের পেছন দিয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় তিনি দেখতে পান, পপুলারের পেছন দিকে নিহত অপূর্ব ও হামলাকারী সম্রাটের মধ্যে বাকবিতণ্ডা চলছে। এক পর্যায়ে দুইজনের মধ্যে হাতাহাতি লেগে যায়। এসময় তিনি অপূর্বকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখেন। পরে তার বুকে ছুরিবিদ্ধ দেখতে পান।
তিনি জানান, হামলার পরে সম্রাট পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাকে ধরে গণপিটুনি দেয়। তাকে ছাড়িয়ে নিতে তার ভাই আসলে তাকেও গণপিটুনি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে সম্রাটকে উদ্ধার করে। এসময় অপূর্বকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ও সম্রাটকে পুলিশ নারায়ণগঞ্জ তিনশ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক অপূর্বকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বাবা মাসদাইর জামালের গ্যারেজ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ খোকন ও নিহতের স্ত্রী সাথী আক্তার জানান, নিহত যুবক বিসিকের টি-শার্ট গার্মেন্টসের শ্রমিক। তিনি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবচেয়ে ছোট ছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার জাবুটিয়া গ্রামে। কি কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা তারা বুঝতে পারছেন না।
হাসপাতালে সম্রাট হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে জানান, যারা হামলা করেছিল তারা চলে গেছে। তিনি শহীদ মিনারের পাশের বেইলি টাওয়ারের একটি ফাস্টফুডের দোকানের কর্মচারী।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপু জানান, সারাদেশে ধর্ষণের বিভিন্ন ঘটনার প্রতিবাদে ধর্ষণকারীদের বিচারের দাবিতে ছাত্রদলের মিছিলে নিহত অপূর্ব এসেছিল। যে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে তিনি বিএনপির কেউ না। আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাদের কর্মসূচি বাতিল করতে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।