জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত-আহতদের সহযোগিতার জন্য বিশেষ অধিদপ্তর হচ্ছে: উপদেষ্টা ফরিদা
Published: 5th, February 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যাঁরা নিহত হয়েছেন তাঁদের পরিবারকে সহযোগিতা ও আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্য আলাদা অধিদপ্তর করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধীন এ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে।
আজ বুধবার দুপুরে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার হরিহরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে খামারি সমাবেশে ফরিদা আখতার এ কথা বলেন। জেলার ‘খামারি পরিষদ’ আয়োজিত ওই সমাবেশে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, বিল-বাঁওড় প্রকৃত মৎস্যজীবীদের কাছে ইজারা দিতে হবে। অমৎস্যজীবীদের হাতে এসব জলাধারের ইজারা দেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তাঁর দাবি, তিন মন্ত্রণালয় ইজারা ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছে। দ্রুতই এর সমাধান হবে।
স্থানীয় খামারি তরিকুল ইসলাম তুরকির সভাপতিত্বে খামারি সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো.
এ ছাড়া বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি গ্যাক্রিয়েল পিনেদাছ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল, এলডিডিপির প্রকল্প পরিচালক ড. মো. জসিম উদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. আমিনুল হক, তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ফরিদুল ইসলাম, তানজির আলম রবিন, শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নিগ্ধা দাস, শৈলকুপা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন বাবর ফিরোজ, শৈলকুপা সম্মিলিত খামারি পরিষদের সদস্যসচিব ওসমান আলী প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে আহতের তালিকা নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে সংঘর্ষে আহত হন মো. ফাহিম। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে সেখানে। হাত ও পায়ে আঘাত পান ফাহিম। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, ‘সামান্য আহত’। শারীরিক যাবতীয় বিষয় বিবেচনা করে তাঁর নাম ‘সি’ ক্যাটেগরিভুক্ত করেছে প্রশাসন। তবে এটি মানতে নারাজ তিনি।
ফাহিমের দাবি, ‘হামলায় তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পায়ের লিগামেন্ট।’ তাই তিনি বাড়তি সুবিধা পেতে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে নাম তালিকাভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে। এ জন্য নানা পরীক্ষা করে গুরুতর আহত হওয়ার বিষয় প্রমাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিচিত কয়েকজন সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়ক দিয়ে দায়িত্বশীলদের কাছে করাচ্ছেন তদবির।
শুধু ফাহিম নন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আঘাত পাওয়া অনেকেই চাচ্ছেন ‘এ’ কিংবা ‘বি’ ক্যাটেগরির সুবিধা। আন্দোলনে আহতদের তিন ক্যাটেগরিতে ভাগ করা হয়েছে। বাড়তি সুবিধা পেতে ‘সি’ ক্যাটেগরির কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে করাচ্ছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, দেখাচ্ছেন ডাক্তারও। বিষয়টি নিয়ে চাপে আছে প্রশাসন। তবে শত কৌশল কিংবা চাপ প্রয়োগ করে কেউ অনৈতিকভাবে কোনো তালিকায় ঢুকতে পারবে না বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীলরা।
চট্টগ্রামে আন্দোলনে আহতদের তালিকা করা, জমা দেওয়া কাগজপত্র বাছাইসহ যাবতীয় বিষয় তদারকি করছে জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন কার্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালসহ কয়েকটি দপ্তর। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আহতদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে আবেদন পড়েছে সাড়ে ৫০০-এর বেশি। চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই করে এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরিভুক্ত করা হয়েছে পাঁচজনকে। ‘বি’ ক্যাটেগরিভুক্ত ৪৩ জন এবং ৫০৭ জন তালিকাভুক্ত হয়েছেন ‘সি’ ক্যাটেগরিতে। ক্যাটেগরিতে বৈষম্য হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন আহতদের অনেকেই।
কয়েকটি দপ্তরে গিয়ে দেখা গেছে, আহত বেশ কয়েকজন চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে এক কর্মকর্তার কক্ষ থেকে আরেক কর্মকর্তার কক্ষে ছুটছেন। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দেখা হয় শরীফুল ইসলামের সঙ্গে। আন্দোলনে আহত শরীফুল আছেন ‘সি’ ক্যাটেগরিতে। টানা কয়েকদিন এখানে এসেছেন তিনি। তাঁর দাবি, আন্দোলনে গিয়ে একাধিকবার গুরুতর আহত হয়েছেন। গ্রেড নিয়ে তাঁর সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। তিনি ‘এ’ কিংবা ‘বি’ গ্রেডে নাম তালিকাভুক্ত করাতে চাচ্ছেন।
শরীফুল বলেন, ‘আন্দোলনের সময় নগরের নিউমার্কেট ও দুই নম্বর গেটে আমার ওপর কয়েক দফায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা। হাত, পা, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পেয়েছি। এখনও ভালোভাবে হাঁটতে পারি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বেশ কয়েক কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেছি। তাদের বলেছি, ডাক্তার আমার এক পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু টাকা না থাকায় এমআরআই পরীক্ষা করাতে পারিনি। কর্মকর্তারা বলেছেন, লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রমাণ করতে হবে। তারপর ক্যাটেগরি সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনা করবেন তারা।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ও গঠিত কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “আমাদের পাঁচ সদস্যের টিম অত্যন্ত সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত যাচাই থেকে শুরু করে সব কাজ করছি। এর প্রধান লক্ষ্য প্রকৃত আহতরা যাতে তালিকায় সঠিক ক্যাটেগরিভুক্ত হন ও কোনো সুবিধাবাদী যেন সুযোগ নিতে না পারে। ডাক্তারি সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র একাধিকবার খতিয়ে দেখে এরই মধ্যে সাড়ে ৫০০-এর অধিক আহতকে ক্যাটেগরিভুক্ত করা হয়েছে। ‘সি’ ক্যাটেগরির অনেকেই ‘এ’ বা ‘বি’ ক্যাটেগরিভুক্ত হতে চেষ্টা করছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত।” এখনও অনেকেই তালিকাভুক্ত হতে আবেদন করছেন বলে জানান তিনি।
কমিটিতে থাকা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অনেকের চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে আমাদের মনে হয়েছে, সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। বিষয়টি চিকিৎসকরাও কাগজপত্রে উল্লেখ করেছেন। তার পরও তা মানতে নারাজ তারা। ক্যাটেগরি সংশোধন করতে তারা নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করছেন।’ চমেক হাসপাতালের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আহতদের অনেকেই গুরুতর আঘাত পেয়েছেন, অনেক মুমূর্ষু ছিলেন– এমন উল্লেখ সংবলিত সার্টিফিকেট পেতে নানাভাবে চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ অন্যকে দিয়ে তদবিরও করছেন।’
‘এ’ ক্যাটেগরিভুক্তদের এককালীন ৫ লাখ টাকা, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ২ লাখ, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। ‘বি’ ক্যাটেগরিভুক্তরা এককালীন ৩ লাখ টাকা, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ১ লাখ টাকা, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ২ লাখ টাকা পাবেন। তারা মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। ‘সি’ ক্যাটেগরিভুক্তরা এককালীন ১ লাখ টাকা, মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন।
আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী কলি আক্তার বলেন, “আন্দোলনে গিয়ে আমার স্বামীর ডান হাত ভেঙেছে। আট মাস ধরে তিনি শয্যাশয়ী। এমন অবস্থায় বাচ্চাদের নিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অথচ আমার স্বামীকে দেওয়া হয়েছে ‘সি’ ক্যাটেগরি।” আহত রিয়াদ সুলতানা বলেন, ‘সাহস নিয়ে লাগাতার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম। অথচ আজ কেন আমাদের এর কাছে ওর কাছে যেতে হবে? আহতদের যাবতীয় বিষয় দেখভালের জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা এখন নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। কে কোন কমিটিতে কী পদ বাগিয়ে নেবেন, সেটিই তাদের এখন বড় মিশন।’
আহত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সহযোগিতা নিতে গেলে আগে সমন্বয়কদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। চিকিৎসা নিতে গেলে সমন্বয়কদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে আসতে বলা হয়। চোখ নষ্ট হওয়ার মতো গুরুতর আহত বেশ কয়েকজনকে ‘সি’ ক্যাটেগরিতে রাখা হয়েছে। যাদের সঙ্গে সমন্বয়ক কিংবা সহসমন্বয়কদের সখ্য আছে, তাদেরই ভালো সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রামে আন্দোলনে আহতদের অধিকাংশই চিকিৎসা নেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। হাসপাতালের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় শতাধিক মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন। শহীদ হয়েছেন ১১ জন। এর মধ্যে পাঁচজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। অন্যদের মৃত্যু হয় চিকিৎসাধীন অবস্থায়।