শিবলী রুবাইয়াত ও গোলাম মোহাম্মদ কারাগারে, রিমান্ড শুনানি বৃহস্পতিবার
Published: 5th, February 2025 GMT
দুর্নীতির মামলায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এবং ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন আজ বুধবার বিকেলে এ আদেশ দেন।
এর আগে পৃথক দুটি মামলায় শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ও গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ।
আদালত আগামীকাল বৃহস্পতিবার রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানির দিন রেখেছেন। একই সঙ্গে দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ধানমন্ডি থেকে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরকে গতকাল রাতে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত ২০২০ সালের ১৭ মে প্রথম দফায় বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। চার বছর দায়িত্ব পালনের পর পুনর্নিয়োগ পেয়ে গত বছরের ১৬ মে তিনি আবার বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ আছে। অভিযোগ রয়েছে, শেয়ারের দাম বাড়াতে তিনি কারসাজিকারকদের নানাভাবে সহায়তা করতেন। এ ছাড়া তাঁর প্রশ্রয়ে শেয়ারবাজারে একটি চক্র গড়ে ওঠে। এই চক্র শেয়ারবাজার থেকে অর্থ লোপাটে নানাভাবে তাঁর কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা পেত।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৭৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে আজ বুধবার মামলা করেছে দুদক। অন্যদিকে গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের বিরুদ্ধে ২৭ কোটি ৮৬ লাখ ২০ হাজার ৯০৮ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ৪ ফেব্রুয়ারি মামলা করে দুদক।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল গঠন করবে বিএসইসি
পুঁজিবাজারে নতুন শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল (এসএসি) গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি বিএসইসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ফলে, আগের নয় সদস্যের শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল বাতিল হতে যাচ্ছে।
এর আগে ২০২৩ সালের ২৮ মে বিএসইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা জারি করেন। দেশের পুঁজিবাজারে ইসলামী শরিয়াভিত্তিক বিভিন্ন প্রকার সিকিউরিটিজ ইস্যু আনা, ইসলামিক ক্যাপিটাল মার্কেট গঠন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শরিয়াহসম্মত সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করেছিল বিএসইসি। ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সিকিউরিটিজ মার্কেট শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল) বিধিমালা, ২০২২ নামে গেজেটটি প্রকাশ করা হয়।
শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের কাজ হলো— বিএসইসির চাহিদা অনুসারে বিভিন্ন ইস্যুতে পরামর্শ দেওয়া, শরিয়াহ-সংক্রান্ত গাইডলাইন প্রণয়ন, ইসলামী শরিয়াহসম্মত সিকিউরিটিজের মান প্রণয়ন, কোনো সিকিউরিটিজ শরিয়াহসম্মত কি না, সে বিষয়ে মতামত দেওয়া।
গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে পুনর্গঠিত বিএসইসি পুঁজিবাজারের জন্য গঠিত শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্ত
বিএসইসির পক্ষ থেকে শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল সম্পর্কে কমিশনকে অবহিত করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আলোচনা ও সার্বিক দিক বিবেচনা করে কমিশনের ২০২৩ সালের ২৮ মে জারি করা আদেশের মধ্যেমে গঠিত শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল বিলুপ্ত করা হবে। একইসঙ্গে নতুন শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল গঠন করা হবে।
কমিশন আরো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচনের জন্য ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জারি করা আদেশের মাধ্যমে গঠিত কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ বিষয়ে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
শরিয়াহভিত্তিক সিকিউরিটিজ ইস্যু করতে এবং ইসলামিক ক্যাপিটাল মার্কেট গঠন করতে কমিশন শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল গঠনের প্রয়োজন মনে করছে। এজন্য নয় সদস্যের শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রশিদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কাউন্সিলের জন্য নির্বাচিত পাঁচ জন শরিয়াহ স্কলার হলেন—অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ (ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), মুফতি শহীদ রাহমানী (চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, সেন্টার ফর ইসলামিক ইকোনমিকস বাংলাদেশ), মুফতি ইউসুফ সুলতান (ফাউন্ডার অ্যান্ড চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, এডিএল অ্যাডভাইজরি, মালয়েশিয়া), মুফতি ড. ওয়ালিউর রহমান খান (ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিনিধি) এবং মাওলানা শাহ ওয়ালী উল্লাহ (খতিব, সোবহানবাগ মসজিদ অ্যান্ড মাদ্রাসা কমপ্লেক্স)।
ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্ট চার সদস্য হলেন—অধ্যাপক আবু তালেব (ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং এক্সপার্ট), এ কে এম নুরুল ফজল বুলবুল (লিগ্যাল এক্সপার্ট), অধ্যাপক মো. নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া (অ্যাকাউন্টিং এক্সপার্ট) এবং মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ (ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপার্ট)।
শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক সিকিউরিটিজ নিয়ে আসার সুযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং শরিয়াহভিত্তিক সিকিউরিটিজে আগ্রহী দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরো উৎসাহী হবেন।
ঢাকা/এনটি/রফিক