জ্বালানি–বিদ্যুৎনীতি ভুল পথে অগ্রসর হয়েছে: বাপা
Published: 5th, February 2025 GMT
দেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। সংগঠনটি বলছে, বাংলাদেশের জ্বালানি–বিদ্যুৎনীতি সম্পূর্ণ ভুল পথে অগ্রসর হয়েছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হয়েছে। দেশের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আরও হবে। স্থানীয় বাসিন্দারা উচ্ছেদের সম্মুখীন হয়েছেন এবং সন্তোষজনক বিকল্প জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করা হয়নি।
‘কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অভিঘাত-অভিজ্ঞতা কী বলে’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলা হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এটি বাপা আয়োজিত সেমিনারে উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, জ্বালানিনীতি ঢেলে সাজাতে হবে। কয়লা থেকে সরে আসতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। জাতীয় সক্ষমতার অধীনে দেশে তেল–গ্যাসের অনুসন্ধান বাড়াতে হবে।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ২০১২ সাল থেকেই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। তবে আওয়ামী লীগ সরকার একগুঁয়ে ছিল। তারা বলেছিল, এতে কোনো ক্ষতি হবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব তারা বিবেচনায় নেয়নি। এমন সব উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়েছে, তাতে নদী নষ্ট হচ্ছে, বন উজাড় হচ্ছে, সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আন্দোলনের কারণে কিছু প্রকল্প বাতিল করেছে। কিন্তু যা করা হয়েছে, তা সর্বনাশের জন্য যথেষ্ট। মাতারবাড়ি, রামপাল, পায়রা এলাকায় এখন ফসলের ক্ষতি হচ্ছে, মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা হচ্ছে। এটি আরও বাড়বে।
গত সরকার যে শোষণ, লুণ্ঠন, সম্পদ পাচার করেছে, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত এর মধ্যে অন্যতম বলে সেমিনারে উল্লেখ করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, এ খাতে বর্তমান সরকারের তিনটি বড় ভুল তাঁর নজরে এসেছে। প্রথমত, দায়মুক্তি আইন বাতিল করেও ওই আইনে করা চুক্তি হুবহু বলবৎ রেখে আগের করা লুণ্ঠনের অনুমোদন দিয়েছে এ সরকার। দ্বিতীয়ত, চুক্তি বাতিল করতে না পারার কথা বলাটা আসলে গত সরকারের ধারাবাহিকতা। আর তৃতীয়ত, বিডার চেয়ারম্যান সগর্বে প্রচার করেছেন, একটি মার্কিন কোম্পানি থেকে এলএনজি কেনার চুক্তির কথা। নতুন একটা কোম্পানি, যে কখনো এলএনজি সরবরাহ করেনি; তার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছে। বিডার তো এই চুক্তি করার কথা নয়। দরপত্র ছাড়া ওই কোম্পানিকে কীভাবে বাছাই করা হলো, পুরোটাই হয়েছে আগের সরকারের মতো।
অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, কোনো একটা প্রকল্প শুরুর আগে তার দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা বিশ্লেষণ করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক। এ কারণে বিশ্বজুড়ে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চলমান আছে। তাই কয়লার ব্যবহার লাভজনক নয়। প্রাথমিক বিকল্প হতে পারে দেশীয় গ্যাসের ব্যবহার। দীর্ঘমেয়াদি বিকল্প হতে পারে সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাপার সভাপতি নূর মোহাম্মদ তালুকদার। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংগঠনটির কোষাধ্যক্ষ জাকির হোসেন। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির। আর মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি নজরুল ইসলাম।
বাপার নিবন্ধে বলা হয়, বিদ্যুৎ খাতের প্রথম মহাপরিকল্পনায় ৫০ শতাংশ কয়লার ব্যবহার ধরা হয়। সমালোচনার পর ২০১৬ সালে সংশোধন করে ৪০ শতাংশ করা হয়। এ মহাপরিকল্পনা মূলত জ্বালানি খাতকে আমদানির দিকে নিয়ে যায়। বিদ্যুৎ খাত যেখানে অর্থনীতির চালিকাশক্তি হওয়ার কথা, সেখানে এটি এখন বোঝায় পরিণত হয়েছে।
তিনটি বড় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা থেকে বাসিন্দারা এসে সেমিনারে তাঁদের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেন। এর মধ্যে মহেশখালীর মাতারবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মো.
পটুয়াখালীর পায়রা এলাকার বাসিন্দা জি এম মাহবুব বলেন, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য উচ্ছেদ হওয়া ১৩০টি পরিবারকে স্বপ্নের ঠিকানা করে দিয়েছে। তিন গুণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও দিয়েছে দেড় গুণ। ওখানে মূল পেশা মাছ ধরা, নদী দূষিত হয়ে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। কারখানা করে চাকরি দেওয়ার কথা, সেটি হয়নি। মানুষের শরীরে চুলকানি হচ্ছে। ত্বকের রোগ দেখা দিচ্ছে। জমি অধিগ্রহণ করে মহিষ পালছে বিদ্যুৎকেন্দ্র; অব্যবহৃত জমি ফেরত দেওয়ার দাবি করেন তিনি।
বাগের হাটের রামপাল এলাকার বাসিন্দা এম এ সবুর রানা বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নানা ক্ষতি হচ্ছে। অধিকাংশ সময় চারপাশ ধোঁয়াচ্ছন থাকে। মাছের প্রজনন কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমে গেছে। মানুষের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা হচ্ছে, চুলকানি হচ্ছে।
বাপার নিবন্ধে বলা হয়, গত সরকার দায়মুক্তি আইনের অধীনে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে স্বজনপ্রীতি, লুটপাট করেছে। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ–সক্ষমতার ভাড়া দিতে হচ্ছে। ব্যয়বহুল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বহাল রেখেছে। জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে ভাড়া দিতে হচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব যবহ র র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ডাম্পিং গ্রাউন্ড নেই, পৌর মিনিবাস টার্মিনালে ভাগাড়
দুই যুগ আগে সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ইতোমধ্যে পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হলেও ময়লা ফেলার জন্য নিজস্ব ডাম্পিং স্টেশন নেই। এতে পৌর এলাকার বিভিন্ন এলাকায় ময়লা-আবর্জনা ফেলছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এমনকি বিয়ানীবাজার পৌর মিনিবাস টার্মিনালেও দীর্ঘদিন ধরে ময়লা ফেলা হচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি টার্মিনালটি ব্যবহারকারী যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌরসভার প্রতিবছরের বাজেটে ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণে জমি কিনতে অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়। গত কয়েকটি বাজেটে ধারাবাহিকভাবে এ খাতে ৪ থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ বাজেটে বরাদ্দ রেখেই তাদের দায় সারছে। কাজের কাজ কিছুই করছে না। পৌর মিনিবাস টার্মিনালসহ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ময়লা ফেলে পরিবেশ দূষণ করা হচ্ছে।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, গত ৪-৫ বছর ধরে মিনিবাস টার্মিনাল এলাকায় ময়লা ফেলছে পৌরসভা। সম্প্রতি মিনিবাস টার্মিনাল এলাকার পাশাপাশি খাসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ও কটুখালীপাড় এলাকার লোলাখাদেও ময়লা ফেলা হচ্ছে। নিজস্ব ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় পৌরসভার বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
বেসরকারি একটি ব্যাংকে চাকরি করেন আলী হোসেন। তিনি বলেন, পৌর শহরে আসতে বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর সড়ক ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু পৌর মিনিবাস টার্মিনাল এলাকায় ফেলা ময়লার গন্ধে যাত্রী ও চালকদের এ সড়ক দিয়ে চলাচল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
লাসাইতলা ও কদুগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন, রহিম উদ্দিনসহ স্থানীয়দের ভাষ্য, অন্যত্র বসবাসের মতো পরিস্থিতি থাকলে পুরো গ্রামের মানুষ এ ময়লার কারণে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতেন। তাদের অভিযোগ, গত কয়েক বছর থেকে পৌরসভাকে বারবার প্রতিবাদ জানানোর পরও তারা মিনিবাস টার্মিনালে ময়লা ফেলা বন্ধ করেনি। এতে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মিনিবাস টার্মিনালটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
ডাম্পিং গ্রাউন্ড না থাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মুস্তফা মুন্না বলেন, মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি নজরে আসায় বিকল্প পন্থা হিসেবে সিলেট সিটি করপোরেশনের ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে সপ্তাহে দুইবার ট্রাকে করে ময়লা নিয়ে যাওয়া হবে। ইতোমধ্যে সেখানে পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা নেওয়া হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচ বেশি হচ্ছে, যা পৌরসভার আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।