নাটোরে বিএনপির নতুন কমিটি: ‘হৃদয়ে রক্তক্ষরণ’ নিয়ে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের প্রতিবাদ
Published: 5th, February 2025 GMT
নাটোর জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে গত রোববার। এর পর থেকে ওই কমিটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল ও স্লোগান দিচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীদের একাংশ। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের দত্তপাড়া বাজার-সংলগ্ন মহাসড়কে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতা-কর্মীরা ‘ওরা কারা’ লেখা ব্যানার হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। আগের দুই দিনও তাঁরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন।
গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা মিছিল শেষে শহরের চালপট্টি মোড়ে দাঁড়িয়ে স্লোগান দেন। তাঁরা ‘ভুয়া কমিটি.
নতুন কমিটির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ এবং সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান। ছয় যুগ্ম আহবায়ক হলেন, আবদুল আজিজ, জিল্লুর রহমান চৌধুরী (বাবুল) মিজানুর রহমান (ডিউক), মোস্তাফিজুর রহমান (শাহীন), সাইফুল ইসলাম (আফতাব) ও দাউদার মাহমুদ। কমিটির সদস্যরা হলেন, শহিদুল ইসলাম (রাজু), সাবিনা ইয়াসমিন, আবুল কাশেম, তারিকুল (টিটু), আবু হেনা মোস্তফা, সুফিয়া হক ও রঞ্জিত কুমার সরকার।
এ সম্পর্কে ফরহাদ আলী দেওয়ান বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে নাটোর জেলা বিএনপির যে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, তা অসংগতিপূর্ণ। এখানে নাটোরের ত্যাগী ও সাহসী নেতাদের স্থান হয়নি। বেশ কিছু বিতর্কিত ব্যক্তিকে পদ দেওয়া হয়েছে। যার ফলে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা ব্যথিত, আমরা মর্মাহত। আমরা এ কমিটির সংশোধন চাই। নইলে নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ অব্যাহত রাখব। প্রয়োজনে গণপদত্যাগ করব। তবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে। আশা করি, তিনি আমাদের অভিযোগ তদন্ত করে ত্যাগী নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি সংশোধন করবেন।’
আগের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক (ভারপ্রাপ্ত) শহিদুল ইসলাম (বাচ্চু) বলেন, ‘আজীবন দলের জন্য কাজ করেছি। দলের জন্য তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছি, মাথায় ১৮টি সেলাইয়ের এখনো ঘা শুকায়নি, এখনো ডান হাতে খেতে পারি না। স্বাক্ষর করতে পারি না, লিখতে পারি না। এই কমিটি দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান তারেক রহমানের করা হলে আমার কোনো বক্তব্য নেই। আর অন্য কোনো কায়েমি স্বার্থবাদী মহলের মাধ্যমে হলে হতাশার শেষ নেই।’ গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উপযুক্ত নেতাদের নিয়ে তিনি পুনরায় কমিটি গঠনের দাবি জানান।
নাটোর জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে গত রোববার।নতুন কমিটির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ এবং সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান। ছয় যুগ্ম আহবায়ক হলেন, আবদুল আজিজ, জিল্লুর রহমান চৌধুরী (বাবুল) মিজানুর রহমান (ডিউক), মোস্তাফিজুর রহমান (শাহীন), সাইফুল ইসলাম (আফতাব) ও দাউদার মাহমুদ।সদ্য বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শহিদুল্লাহ সোহেল বলেন, ‘১৭ বছরে যাঁরা বিএনপির মিটিং–মিছিলে আসেননি এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সঙ্গে ব্যবসা–বাণিজ্য করেছেন, তাঁদের অনেককে নব্য ঘোষিত কমিটিতে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন রুহুল কুদ্দুস তালুকদারকে (দুলু) নির্বাচনে হারানোর জন্য আওয়ামী লীগকে অর্থ প্রদানকারী আবুল কাসেম, দল থেকে বহিষ্কৃত মিজানুর রহমান (ডিউক) ও অপরিচিত শহিদুল ইসলাম (রাজু)। তাঁদের বাদ দিয়ে ত্যাগী নেতাদের যুক্ত করে কমিটি সংশোধন করতে হবে। আমরা দুলু ভাইয়ের নেতৃত্বে নাটোর জেলা বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছি, থাকব।’
আহ্বায়ক কমিটিতে পদ পাওয়া কয়েকজন নেতাও বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আছে। তাঁদের মধ্যে আছেন যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ও সাইফুল ইসলাম। তাঁরাও কমিটি সংশোধনের দাবির সাথে একাত্মতা জানিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, নতুন কমিটিতে কিছু ত্যাগী নেতা থাকলেও অনেককে পদ দেওয়া হয়েছে, যাঁদের বিএনপিতে কোনো অবদান নেই।
যোগ্য বলেই শীর্ষ নেতা আমাদের পদ দিয়েছেন। ২০১৩ সালে দিনাজপুরে দুলু সাহেবের নির্দেশে আমার ওপর হামলা হয়েছিল। চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আমাকে সিঙ্গাপুর যেতে হয়েছিল।আবুল কাশেম, নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যনতুন কমিটির ২ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান চৌধুরী (বাবুল) পদবঞ্চিত নেতাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি। তবে ফেসবুকে ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘আমরা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজমুক্ত নাটোর গড়ার জন্য কাজ করব। দলের সব পর্যায়ের নেতা–কর্মীদের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা করব।’
এসব অভিযোগ সম্পর্কে জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির সদস্য আবুল কাশেম বলেন, ‘যোগ্য বলেই শীর্ষ নেতা আমাদের পদ দিয়েছেন। ২০১৩ সালে দিনাজপুরে দুলু সাহেবের নির্দেশে আমার ওপর হামলা হয়েছিল। চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আমাকে সিঙ্গাপুর যেতে হয়েছিল। বিষয়টি তারেক রহমানসহ সবাই জানতেন।’ আবুল কাশেম আরও বলেন, ‘আমি “আমরা বিএনপি পরিবার”–এর উপদেষ্টা। ২০১৩ সাল থেকেই পুরো গাজীপুরের দায়িত্বে আছি। এরপরও বলব, যাঁরা আপনাদের কাছে আমার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন, তাঁদের বলবেন, তারেক রহমান সাহেবকে বললেই জানা যাবে কাশেম কে? তাঁকে কেন নাটোরের কমিটিতে রাখা হলো?’
নাটোরে বিএনপির রাজনীতিতে প্রভাবশালী নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার (দুলু), যিনি দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। নতুন কমিটিতে তাঁর নিয়ন্ত্রণ কমেছে বলে মনে করছেন দলের নেতা-কর্মীরা। এ সম্পর্কে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নতুন কমিটি সম্পর্কে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কারণ, আমার দলের সম্মানিত নেতারা কমিটি ঘোষণা করেছেন। বরাবরের মতো তাঁদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা রয়েছে। শুধু এটুকু বলা যায়, যাঁরা পদ পেয়েছেন, তাঁরাও যেমন যোগ্য, আবার যাঁরা পদবঞ্চিত হয়েছেন, তাঁদের অনেকেরই দলে বড় অবদান রয়েছে। আগামী দিনে হয়তো তাঁদের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র ন ক কম ট র কর ম দ র কম ট র স ল ইসল ম র রহম ন কর ছ ন হয় ছ ল কম ট ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি ছুটির দিনে শিশু আদালতের কার্যক্রম চলমান রাখতে নির্দেশনা
সরকারি ছুটির দিনগুলোতে শিশু আদালতের কার্যক্রম চলমান রাখতে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার (বিচার) মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেনের সই করা বিজ্ঞপ্তির ভাষ্য, শুক্র/শনিবারসহ সরকারি ছুটির দিনগুলোতে শিশুদের গ্রেপ্তার বা আটক করার পর তাদের সংশ্লিষ্ট আদালতে উপস্থাপন না করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে হাইকোর্ট বিভাগের নজরে এসেছে। অথচ এসব শিশুর জামিন, রিমান্ড, হেফাজত, বয়স নির্ধারণসহ অন্তর্বর্তীকালীন কোনো আদেশ দেওয়ার বিষয়ে এসব আদালতের আইনগত এখতিয়ার না থাকায় ওই শিশুদের গ্রহণ ও তাদের বিষয়ে যেকোনো আদেশ/সিদ্ধান্ত প্রদানে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটরা অপারগতা প্রকাশ করে থাকেন। এ পরিস্থিতিতে সরকারি ছুটির দিনগুলোতে শিশু আদালতের কার্যক্রম চলমান রাখাসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট বিভাগ।
নির্দেশনায় বলা হয়, ২০১৩ সালের শিশু আইন (সংশোধিত ২০১৮) এবং মো. হৃদয় বনাম রাষ্ট্র মামলায় হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে সরকারি কার্যদিবসের ন্যায় সাপ্তাহিকসহ অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতে উপস্থাপিত আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুর (ভিকটিম/সংবাদদাতা/সাক্ষী) হেফাজত এবং আটক শিশুদের জামিন, রিমান্ড, বয়স নির্ধারণ, হেফাজতসহ অন্তর্বর্তী যেকোনো দরখাস্ত শিশু আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক আদালতে উপস্থিত হয়ে কিংবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আদালত কর্তৃক ২০২০ সালের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইনের বিধিবিধান অনুসরণ করে শুনানি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করবেন।
অপর নির্দেশনায় বলা হয়, সরকারি কার্যদিবসের ন্যায় ছুটির দিনগুলোতে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শিশু আদালতের নির্দেশে আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু (ভিকটিম/সংবাদদাতা/সাক্ষী) বা আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশুর জবানবন্দি দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট লিপিবদ্ধ করতে পারবেন।
নির্দেশনায় বলা হয়, আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুর (ভিকটিম/সংবাদদাতা/সাক্ষী) জবানবন্দি রেকর্ড প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তাদের জিম্মা হেফাজতসহ অন্য যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান এবং আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশুকে আটক/গ্রেপ্তারের পর পুলিশ কর্তৃক জামিন প্রদান না করা হলে ওইরূপ শিশুর জবানবন্দি রেকর্ড, তার বয়স নির্ধারণ, রিমান্ড, নিরাপদ হেফাজতসহ যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরকারি কার্যদিবসের ন্যায় সাপ্তাহিক ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতে অভিযুক্ত/আটক করা শিশুকে সংশ্লিষ্ট শিশু আদালতে উপস্থাপন করবে।
অপর নির্দেশনায় বলা হয়, আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু ও আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশুদের হেফাজত, জামিন, রিমান্ড, বয়স নির্ধারণসহ যেকোনো অন্তর্বর্তী বিষয়ে সরকারি কার্যদিবসের ন্যায় সরকারি ছুটির দিনগুলোতেও সংশ্লিষ্ট শিশু আদালত ২০১৩ সালের শিশু আইন (সংশোধিত ২০১৮) মো. হৃদয় বনাম রাষ্ট্র মামলায় দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করে নিষ্পত্তি করবেন।
২০১৩ সালের শিশু আইনের (সংশোধিত ২০১৮) বর্তমান অস্পষ্টতা ও অসংগতি দূর করতে শিশু আইন সংশোধন কিংবা এই কোর্ট (হাইকোর্ট বিভাগ) থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত উল্লিখিত নির্দেশনাগুলো কার্যকর/বহাল থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।